ট্রেনটা আছে পাকশীতে
রূপসা-বাগেরহাট সেকশনে প্রথম চালু হওয়া ন্যারোগেজ (২ ফুট ৬ ইঞ্চি) ট্রেন এটি। ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৮ চলা শুরু করে। এখন ব্রডগেজ, মিটারগেজের কথা সবাই জানে। আগে মিটারগেজের সঙ্গে ন্যারোগেজও ছিল, আর ছিল বাষ্পচালিত ইঞ্জিন। ট্রেনটি এখন কালের সাক্ষী।
পাকা রাস্তাটি গেছে লালন সেতুর দিকে। আমরা অবশ্য ওদিকে যাই না। ডান দিকে আরেকটি রাস্তা গিয়ে ঢুকেছে একটি সুড়ঙ্গে। ভাবসাব দেখে মনে হলো ব্রিটিশ আমলের। ওপর দিয়ে চলে গেছে রেললাইন। সুড়ঙ্গে ঢুকে দাঁড়াই খানিক, রেলগাড়ি যায়। শরীর-মন ঝমঝম করে ওঠে। সুড়ঙ্গ পার হতেই রাশি রাশি সবুজের মধ্যে ঢুকে যাই। রাস্তার দুই পাশে বড় বড় গাছ। পাঁচ শহীদের মোড় হয়ে চলে যাই পাকশীর রেলপাড়ায়।
দিনটি ছিল শুক্রবার। দুই বন্ধু মিলে আরেক বন্ধুর বাড়িতে এসেছি। দিনভর ঘোরাঘুরি আর আড্ডাবাজি করব। বন্ধু শামীম ঈশ্বরদী উপজেলার সরকারি লোক। আগের রাতে ঢাকার শ্যামলী থেকে চড়েছিলাম ঈশ্বরদী এঙ্প্রেসে। কাকডাকা ভোরে নামিয়ে দিয়েছিল। শহুরে মন ভোলাতে এমন একটা ভোরই যথেষ্ট। বাসস্ট্যান্ড থেকে একটি রিকশায় চেপে উপজেলার ভেতরে শামীমের ডেরায় গিয়ে উঠি।
ঘণ্টা দুয়েক ঘুমিয়ে ক্লান্তি তাড়াই। তারপর নাশতা খিচুড়ির সঙ্গে পদ্মার মাছ। চা খেয়ে আর জিরাই না। দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে দৌড় লাগাই। প্রথমে পাকশী, ঈশ্বরদীর সাতটি ইউনিয়নের একটি। পুরোটাই রেলওয়ের জায়গা ছিল। হার্ডিঞ্জ ব্রিজটিও পাকশীতেই।
রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ে গিয়ে থামি। জায়গাটা নিরিবিলি লাগে, তবে দালানকোঠা দেখে বুঝতে পারি, একসময় গমগমে ছিল। বড় বড় কড়ইগাছ এদিক-ওদিক। ছায়া ছড়িয়ে রেখেছে। ভবনগুলোর দরজা-জানালা সে আমলের লোহাকাঠের তৈরি। জুয়েল ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখতে লাগল।
ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ের সামনে ইঞ্জিনসমেত ছোট একটি ট্রেন। বগিটির রং হালকা নীল, মাঝে সাদা প্রলেপ। ইঞ্জিনে সাদা-কালোর মাঝে লাল রঙের ফোঁটা। ওয়েস্টার্ন ছবিতে এমন ট্রেন দেখেছি। এই বুঝি ধোঁয়া উড়িয়ে বিরানভূমির মাঝ দিয়ে ছুট লাগাবে।
শামীম জানাল, রূপসা-বাগেরহাট সেকশনে প্রথম চালু হওয়া ন্যারোগেজ (২ ফুট ৬ ইঞ্চি) ট্রেন এটি। ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৮ চলা শুরু করে। এখন ব্রডগেজ, মিটারগেজের কথা সবাই জানে। আগে মিটারগেজের সঙ্গে ন্যারোগেজও ছিল, আর ছিল বাষ্পচালিত ইঞ্জিন। ট্রেনটি এখন কালের সাক্ষী। এরপর শামীম আমাদের নিয়ে যায় রেলওয়ের একটি বাংলোর কাছে। বাংলোটি বিশাল। নাম গেইল কুঠি। গেইল সাহেব প্রকৌশলী ছিলেন। বাড়িটি নিজে থাকার জন্য তৈরি করেছিলেন। ঢুকতে গিয়ে ঠেকে গেলাম। প্রবেশমুখে সাইনবোর্ড। তাতে জেলা প্রশাসকের অনুমতি ছাড়া প্রবেশ নিষেধ লেখা। তাই দূর থেকেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখি। এরপর যাই চন্দ্রপ্রভা বিদ্যাপীঠে। সামনে বড় মাঠ। কবি শঙ্খ ঘোষের নাকি এই বিদ্যালয়ে হাতেখড়ি হয়েছিল। সূর্যটা মাথার ওপর সটান। ফিরতে হবে। ফিরতে থাকি। সুড়ঙ্গটা পেছনে পড়ে যায়।
লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক কালেরকন্ঠে, প্রকাশকাল: ২ অক্টোবর ২০১১
© 2011 – 2018, https:.
Lekhati pore atripti pelam mone holo lekhati sesh hoini. Many many thanks.
apnar kothai thik. likhati onak soto kora sapa hoycha.