ক্যাটাগরিহীন

রক্তে রাঙা একাত্তর

এই পৃথিবীতে যা কিছুকে ভালোবাসা সম্ভব তার মধ্যে সবচেয়ে তীব্র ভালোবাসাটুকু হতে পারে শুধুমাত্র মাতৃভূমির জন্যে। আমাদের খুব সৌভাগ্য আমাদের মাতৃভূমির জন্যে যে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছিল তার ইতিহাস হচ্ছে গভীর আত্মত্যাগের ইতিহাস, অবিশ্বাস্য সাহস ও বীরত্বের ইতিহাস এবং বিশাল এক অর্জনের ইতিহাস। যখন কেউ এই আত্মত্যাগ, বীরত্ব আর অর্জনের ইতিহাস জানবে, তখন সে যে শুধুমাত্র দেশের জন্যে একটি গভীর ভালোবাসা আর মমতা অনুভব করবে তা নয়, এই দেশ, এই মানুষের কথা ভেবে গর্বে তার বুক ফুলে উঠবে।
এই গ্রন্থটি একাত্তরের গণহত্যার সরেজমিন অনুসন্ধানী অভিযাত্রার লিখিত রূপ। পাশাপাশি লেখক যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাষ্য থেকে নিংড়ে বের করে এনেছেন দেশের প্রতি তাদের আত্মত্যাগ, ভালোবাসা, কষ্টের অনুভূতি ও পরবর্তী প্রজম্মের প্রতি আকাক্সক্ষা আর স্বপ্নগুলোকে। উপস্থাপন করেছেন গল্পের ছলে, একেবারে সরল গদ্যে।
‘রক্তে রাঙা একাত্তর’ গ্রন্থটি পাঠ করে নতুন প্রজন্ম মাতৃভূমিকে ভালোবাসার তীব্র আনন্দটুকু অনুভব করতে শিখবে। মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজে বের করে তাদের চোখের দিকে তাকিয়ে একদিন তারা বলবে, তোমরা যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলে সেই বাংলাদেশকে আমরা গড়ে তুলব। তোমাদের রক্তের ঋণ আমরা শোধ করব।

বইয়ের পেছনের গদ্য :
বছর দুয়েক আগের কথা। আদিবাসীদের নিয়ে একটি কাজে গিয়েছি দিনাজপুরের বিরল উপজেলায়। সেখানে স্থানীয় এক সাংবাদিকের মুখে শুনি বহলার হত্যাযজ্ঞের কথা। ১৯৭১-এর ১৩ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনারা ৩৯জন নিরীহ নিরাপরাধ মানুষকে সেখানে হত্যা করে নির্মমভাবে। তাঁদের ভেতর ৩৩জন শহীদের ছিন্নভিন্ন রক্তাক্ত লাশ দাফন করা হয় সেখানকার একটি গণকবরে। বহলায় গিয়ে আবিষ্কার করি, জংলি গাছে ভরে আছে কবরটি। কবরঘেরা ছোট্ট দেয়ালে বসে জিরিয়ে নিচ্ছিল কয়েকজন মজুর। আনমনে তারা ক্লান্তির থুথু ছুঁড়ে দিচ্ছে কবরের দিকে।
বিষয়টি ভীষণ নাড়া দেয় আমাকে। যাদের জীবনের বিনিময়ে এ দেশটা স্বাধীন হলো তাদের আমরা মনে রাখিনি। সারাদেশে বহলার মতো শহীদদের বহু গণকবর পড়ে আছে অনাদর আর অযত্নে। শহীদদের ওই গণকবরটির বেহাল দশা দেখেই মনের ভেতর একরকম দায়িত্ববোধ জাগ্রত হয়। মূলত সে থেকেই শুরু গণকবর ও গণহত্যা নিয়ে কলম ধরা।ঐ বছরই বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে আলাপ হয় এক যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাদের মাইনের আঘাতে তার বাঁ পা’টি উড়ে যায়। পঙ্গু ওই মুক্তিযোদ্ধা আক্ষেপের সুরে বললেন, প্রতি বছর আমাদের সংবর্ধনা দিতে আসেন মন্ত্রী ও এমপিরা। তাঁদের বলা সমস্ত কথাই পরদিন পত্রিকায় ছাপা হয়, কিন্তু আমাদের কথা কেউ শোনেন না। তাই না বলা কথাগুলো ঘুরপাক খায় মনের গভীরেই। একজন মুক্তিযোদ্ধার এমন আকুতি আমাকে স্পর্শ করে। আমি ব্যথিত হই। সেদিনই সিদ্ধান্ত নিই যুদ্ধাহতদের ভাষ্য সংগ্রহের। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে রেকর্ড করি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের একেকজনের ভাষ্য।
‘রক্তে রাঙা একাত্তর’ বইটিতে গণকবর ও গণহত্যা নিয়ে লেখাগুলোতে উঠে এসেছে গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, শহীদদের স্মৃতি রক্ষার আবেদন, রাজাকার, আলবদর ও আলশামসদের অত্যাচারের কাহিনী এবং স্বাধীনের পর শহীদ পরিবারগুলোর বেঁচে থাকার লড়াইয়ের কথা। পাশাপাশি লেখাগুলোতে যুক্ত করা হয়েছে গণকবর ও প্রত্যক্ষদর্শীদের একাধিক আলোকচিত্র। এছাড়া যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাষ্য থেকে স্পষ্টভাবে বেরিয়ে এসেছে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট, মুক্তিযুদ্ধের সময় সাধারণ মানুষের মনোভাব, পাকিস্তান আর্মি ও রাজাকারদের অত্যাচারের চিত্র, যুদ্ধের বিভীষিকা, মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তাক্ত ইতিহাস ও স্বাধীনতাপ্রাপ্তির পরের দেশ নিয়ে তাঁদের ভাবনাগুলো। প্রায় প্রত্যেকটি ভাষ্যে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা অকাট্য আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পরবর্তি প্রজম্মের প্রতি। দেশ নিয়ে তাঁরা তাঁদের স্বপ্নের কথাগুলোও বলেছেন তাদের উদ্দেশেই। বইটিতে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেসব কথা উপস্থাপন করা হয়েছে সরল গদ্যে, একেবারে গল্পের মতো করে।

প্রকাশক : ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ
মূল্য : ২০০ টাকা।
ফোন : ০১৭১৫৪২৮২১০

ঘরে বসেই বই কিনতে ফেস বুকে অর্ডার করুন : click here

এছাড়া অর্ডার করতে পারেন : রকমারি.কমে, ফোন- ১৬২৯৭ অথবা ০১৫ ১৯৫২ ১৯৭১

অনলাইনে অর্ডার করতে : www.rokomari.com

বইটি নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য :

বুক রিভিউ > দৈনিক সমকালে, ২১ জুন ২০১৩

ঢাকা টাইমস২৪.কম >

ইউকে বিডিনিউজ

পরিবর্তন.কম >

জলভূমি >

চর্তুমাত্রিক  ব্লগে >

© 2013 – 2018, https:.

এই ওয়েবসাইটটি কপিরাইট আইনে নিবন্ধিত। নিবন্ধন নং: 14864-copr । সাইটটিতে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো তথ্য, সংবাদ, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Show More

Salek Khokon

সালেক খোকনের জন্ম ঢাকায়। পৈতৃক ভিটে ঢাকার বাড্ডা থানাধীন বড় বেরাইদে। কিন্তু তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঢাকার কাফরুলে। ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর। ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক সংস্কৃতির প্রতি। নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। যুক্ত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও থিয়েটারের সঙ্গেও। তাঁর রচিত ‘যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য’ গ্রন্থটি ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ হিসেবে ‘কালি ও কলম’পুরস্কার লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী ও ভ্রমণবিষয়ক লেখায় আগ্রহ বেশি। নিয়মিত লিখছেন দেশের প্রথম সারির দৈনিক, সাপ্তাহিক, ব্লগ এবং অনলাইন পত্রিকায়। লেখার পাশাপাশি আলোকচিত্রে নানা ঘটনা তুলে আনতে ‘পাঠশালা’ ও ‘কাউন্টার ফটো’ থেকে সমাপ্ত করেছেন ফটোগ্রাফির বিশেষ কোর্স। স্বপ্ন দেখেন মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী এবং দেশের কৃষ্টি নিয়ে ভিন্ন ধরনের তথ্য ও গবেষণামূলক কাজ করার। সহধর্মিণী তানিয়া আক্তার মিমি এবং দুই মেয়ে পৃথা প্রণোদনা ও আদিবা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back to top button