‘নতুন প্রজন্ম সত্য জানতে চায়’
‘‘ট্রেনিং তখন শেষ। এবার রণাঙ্গনে যাওয়ার পালা। কে কোন এলাকায় যুদ্ধ করবে? আমরা নিজ এলাকায় যাওয়ার ইচ্ছার কথা বলি। অপারেশনের সময় ওই এলাকার রাস্তাঘাট চেনা থাকলে খুব সহজেই আক্রমণ করে সরে পড়া যায়। এতে অপারেশনে সফলতা আসে। আমাদের যুক্তিটা বিফলে গেল না। ৫ নং সেক্টরের অধীনে আমাদের তিনটি দলে ভাগ করা হল। দলগুলোর নামকরণ করা হল- বালাট, ভোলাগঞ্জ ও টেকেরহাট। আমি ছিলাম বালাট দলে। আমাদের কমান্ড করতেন একজন বিহারী মেজর। নাম ডি সুজা। পরবর্তী সময়ে কমান্ডে আসেন মেজর এম এ মোতালেব। ডি সুজার পরিকল্পনায় বেশকিছু ভুল ছিল। বিহারী বলে আমরা তাকে সহজভাবে নিতে পারতাম না। ফলে তার কমান্ডগুলো আমাদের ওপর নির্যাতন মনে হত। তবুও কমান্ড অমান্য করার সাধ্যি কার! প্রথমদিকে বাংলাদেশের ভেতর আক্রমণ করে আমরা ফিরে আসতাম। কিন্তু এভাবে আর কতদিন! আমরা দেশের ভেতর ডিফেন্স রেখে আক্রমণের প্রস্তুতি নিলাম।’’
শুনছিলাম যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এস এম সামছুল ইসলামের মুক্তিযুদ্ধে আহত হওয়ার গল্প। ১২ মে ২০১৩। সকাল ১১ টা। সারাদেশে চলছে জামায়াতের হরতাল। মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতা কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের প্রতিবাদে ছিল হরতালটি। হরতাল উপেক্ষা করে যেতে হবে নওয়াবপুর রোডে। সেখানে লালচাঁন মকিম লেনে থাকেন সামছুল ইসলাম। মুঠোফোনে আমরা জেনে নিই তার ঠিকানা।
লালচাঁন মকিম লেনের ৬৩ নং বাড়িতে সামছুল ইসলাম থাকছেন ১৯৭৭ সাল থেকে। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বাড়িটি সরকার থেকে প্রাপ্ত। কিন্তু নানা আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এখনও মেলেনি বাড়ির চিরস্থায়ী দলিল।
স্ত্রী ফারজানা ইসলাম আর এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে এ মুক্তিযোদ্ধার ছোট্ট সংসার। মেয়ে শামীমা ইসলাম শশী পড়ছেন ইডেনে আর ছেলে এস এম রায়হান সাকিব স্টামফোর্ড ইউনির্ভাসিটিতে। পরিচয় শেষে হতেই শুরু হয় আলাপচারিতা। অন করি রেকর্ডারটি। স্মৃতির হাওয়ায় ভেসে সামছুল ইসলামও ফিরে যান বিয়াল্লিশ বছর আগের সময়টাতে।
‘‘পাকিস্তানি সেনাদের শক্তিশালী ডিফেন্স ছিল বৈশারপাড় গ্রামে। মঙ্গলকাটা বাজার থেকে আমরা তাদের ওপর আক্রমণ করি। প্রবল আক্রমণের মুখে তারা পিছু হটে। ডিফেন্স সরিয়ে নেয় ৫শ গজ পেছনে। ষোলঘর গ্রামে। আমরাও এগিয়ে আসি। বৈশারপাড় গ্রামেই পাকাপোক্ত ডিফেন্স গাড়ি।
দিনটি ছিল ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১। বিকেল ৫টা। আমরা বৈশারপাড়েই। খবর ছিল আমাদের ওপর অ্যাটাক হওয়ার। আমরাও প্রস্তুত। বাঙ্কারের ভেতর পজিশন নিয়ে আছি। বাঙ্কারটি একটি বাড়ির ভেতর। বাড়ির পূর্বদিকে ছিল হাওর অঞ্চল। সবার দৃষ্টি সামনে। চোখের পলক যেন পড়ছেই না। থমথমে পরিবেশ। কখন আক্রমণ হয় সে অপেক্ষাতে আছি! হঠাৎ দেখলাম দূরে ধানখেতের ওপাশে একজন লোক। সে দূর থেকে হাত উঁচিয়ে আমাদের অবস্থান দেখিয়ে দিচ্ছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাদের ওপর মর্টার হামলা শুরু হল। আমরা ছিলাম ষোলজন। সবাই বেরিয়ে বাইরে পজিশন নিলাম।
আমি আশ্রয় নিই একটি মেরাগাছের নিচে। ট্রেনিংয়ে নির্দেশ ছিল গাছের সোজাসুজি পজিশন না নেওয়ার। এতে গাছ ভেদ করে কিংবা ছিটকে এসে গুলি লাগার ভয় থাকে। আমার পজিশন তাই গাছের আড়াআড়িতে। পাশেই ছিলেন এলএমজিম্যান। কোথা থেকে গুলি আসছে তা দেখে আমি তাকে নির্দেশ করি। এলএমজিম্যানও ওই অবস্থানে গুলি চালায়। চারদিকে শুধু গোলাগুলির শব্দ। হঠাৎ পূর্ব-দক্ষিণ দিকে ব্রাশফায়ার শুরু হয়। সতর্ক হওয়ার আগেই একটি গুলি আমার বামহাতের পেছন দিয়ে শরীরের ভেতর ঢুকে যায়। আমি শব্দ করতে পারছিলাম না। চোখ দুটো ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে আসছিল। বারবার মনে হচ্ছিল বাবা-মায়ের কথা। পজিশন অবস্থাতেই আমার মুখটা শুধু মাটিতে হেলে পড়ল।
মাটিতে মুখ পড়ে আমার দাঁতগুলো বেরিয়ে ছিল। আমার দিকে চোখ পড়ে সহযোদ্ধা আবু লেস ও সিরাজুল ইসলামের। তারা ভেবেছিল আমি হাসছি। খানিকটা অবাকও হল। কিন্তু মুখ দিয়ে যখন গলগলিয়ে রক্ত বেরোতে থাকল তখন তারা ছুটে এল। সহযোদ্ধা পাগলা সফি ও ভুইয়াও সেদিন গুলিবিদ্ধ হয়েছিল।
আমাকে প্রথমে নেওয়া হয় বালাট ইয়ুথ ক্যাম্পে। পরে শিলং মিলিটারি হাসপাতালে। সেখানে আমার পিঠ কেটে বের করে আনা হয় একটি গুলি। গুলিটি আমার স্পাইনাল কর্ডে আঘাত করে। ফলে আমার দু পা প্যারালাইজড হয়ে যায়। কী এক ভাবনায় ডাক্তারকে বলে ওই গুলিটি আমি সংগ্রহ করেছিলাম। গুলিটির দিকে আজও তাকালে সবকিছু জীবন্ত হয়ে উঠে।
হাসপাতালে এক মেজর আমার পা দেখে বলেছিলেন, ‘তুমি একদিন ভালো হয়ে যাবে।’ উন্নত চিকিৎসার জন্য আমাকে প্রথমে গৌহাটি ও পরে পাঠিয়ে দেওয়া হল লাকনো কম্বাইন্ড মিলিটারি হাসপাতালে। চিকিৎসাও চলল। কিন্তু মেজরের কথা সত্য হল না! হুইল চেয়ারই হল আমার চিরসঙ্গী’’- মুক্তিযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাটি এভাবেই বলছিলেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এস এম সামছুল ইসলাম।
সামছুল ইসলামের পিতার নাম এস এম তাহের মিয়া ও মাতা জহিরুন নেছা। বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার লামাপাড়া গ্রামে। দু ভাই ও চার বোনের সংসারে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। ১৯৭১ সালে তিনি সুনামগঞ্জ বুলচাঁদ হাই স্কুলের ক্লাস টেনের ছাত্র ছিলেন। তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে গ্রামের বাড়িতেই। শিক্ষাজীবন শুরু চালেরতল প্রাইমারি স্কুলে। চাচাতো ভাই আজিজুল হক, বন্ধু আবু তালেব ও আবদুল হান্নানই ছিলেন সঙ্গী। হাডুডু, দাঁড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুট খেলেই কাটত সময়গুলো।
দেশের খবর কীভাবে জানতেন, প্রশ্ন করতেই উত্তর মিলে সামছুল ইসলামের মুখে। চাচা হাজী রুসমত আলীর বাড়িতে ছিল একটি রেডিও। নেতাদের মুখের সংবাদ, রেডিও, দৈনিক আজাদ আর ইত্তেফাক পত্রিকাই ছিল ভরসা। এছাড়াও বাবা ছিলেন সমাজসচেতন মানুষ। তিনি নানা খবর ও যুক্তি দিয়ে সবাইকে বোঝাতেন। বাবা বলতেন, ‘দেশকে ভালবাসা ঈমানের অঙ্গ। জাতিকে মনের মধ্যে ধারণ করে রাখ। জাতির বিপদে এগিয়ে যাও।’ তিনি আরও বলতেন, ‘আমরা মুসলিম। সে হিসেবে সবাই ভাই ভাই। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের উপর চলছে নানা বৈষম্য। মার্শাল ল দিয়ে তারা নির্যাতন চালাচ্ছে। কথায় কথায় আমাদের বাঙাল বলে গালাগাল করছে। এভাবে তো তাদের সঙ্গে থাকা যায় না।’
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ সামছুল ইসলাম শোনেন রেডিওতে। রক্ত গরম করা সে ভাষণে উদ্দীপ্ত হন তিনি। তার ভাষায়, ‘‘বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘তোমাদের যার যা কিছু আছে তা নিয়েই শত্রুর মোকাবেলা কর। ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল।’ মনে হয়েছে যেন ওয়ারফিল্ডের নির্দেশনা। ভাষণ শুনে আমরা সে সময় মৃত্যুর জন্যও তৈরি ছিলাম।’’
২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় আর্মি নামে। সে খবর পৌঁছে যায় সারাদেশে। সুনামগঞ্জে আনসার-মুজাহিদ, ইপিআর ও স্থানীয় জনতা মিলে আক্রমণ করে এসডিওর বাংলো। নিজেকে বাঁচাতে গ্রামের অনেক যুবকই তখন যোগ দিচ্ছিল শান্তি কমিটিতে। কিন্তু বাবার উৎসাহে মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সামছুল ইসলাম।
মে মাসের মাঝামাঝি সময়। জয় বাংলা বাজার হয়ে তিনি চলে আসেন ভারতের বালাটে। সঙ্গী ছিলেন বন্ধু সিরাজুল ইসলাম ও আবুল কালাম আযাদ। গিয়াস উদ্দিন সুবেদার ট্রেনিংয়ের জন্য রিক্রুট করেন তাদের। সামছুল ইসলামের ভাষায়, ‘‘অনেকেই ছিলেন ১৮ বছরের কমবয়সী। তবুও বয়স বাড়িয়ে নাম লিখাল। যুদ্ধে যাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষার তাদের। তাই কাউকেই ফেরানো গেল না। ট্রেনিংয়ে ফায়ার করার সময় এদের অনেকেই পিছনে ছিটকে পড়ত। শরীরের জোর নেই। কিন্তু মনে ছিল অদম্য শক্তি।’’
সামছুল ইসলামরা একমাসের ট্রেনিং নেন মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে, ইকো-১ ক্যাম্পে। ৫ নং ব্যাচে তারা ছিলেন ১০৫ জন। ব্যাচ কমান্ডার ছিলেন শ্রী জগৎজ্যোতি দাস বীর বিক্রম। ট্রেনিংয়ের দায়িত্ব ছিল ভারতের গুরখা রেজিমেন্টের।
পাহাড়ে ওঠানামাই ছিল তাদের প্যারেড। ট্রেনিংয়ে শিখানো হয় হাতিয়ার রাখার কৌশল, এইম করা, ফায়ার করা, থার্টি সিক্স হ্যান্ড গ্রেনেড, অ্যান্টি ট্যাংক গ্রেনেড, পারসোনাল মাইন, ডিনামাইড, এক্সক্লুসিভ প্রভৃতি বিষয়ে। সমরে এসে সামছুল ইসলাম খুব কাছ থেকে দেখেছেন সহযোদ্ধাদের রক্তাক্ত দেহ আর মৃত্যুযন্ত্রণা। তবুও যুদ্ধ করেছেন অকুতোভয়ে। তিনি অংশ নেন ৫ নং সেক্টরের ছফের গাঁও, ডালার পাড়, বৈশারপাড়, ইসলামপুর অপারেশনে।
আমরা আলাপে বিভোর। এমন সময় নাস্তার ট্রে নিয়ে আসেন সামছুল ইসলামের ছেলে সাকিব। আলাপের স্বাদ নিতে সেও বসে পড়ে চেয়ার টেনে। চা খেতে খেতেই আবার শুরু হয় কথোপকথন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার খবরে আপনার অনুভূতি? প্রশ্ন শুনে এ বীর মুক্তিযোদ্ধা নীরব থাকেন খানিকটা সময়। নিজেকে তিনি ধরে রাখতে পারছিলেন না। কান্নাজড়ানো কণ্ঠে বলেন, ‘‘আমরা তখন লাকনো হাসপাতালে। দেশ স্বাধীনের খবর পেয়ে খুব কেঁদে ছিলাম। বাঁচমু কিনা তাই জানতাম না। মা কোথায় আছে, ভাইবোন কোথায় আছে- জানি না। পা দুইটাই অচল। তাদের কাছে ফিরতে পারব কিনা তাও জানি না। তবুও আনন্দে বুকটা ভরে যাচ্ছিল।’’
হাসপাতালের স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ইন্দিরা গান্ধী দেখতে এসেছিলেন। বললেন, ‘তোমারা দেশ আজাদ হো গিয়া’। বাংলাদেশের খবর শুনতে তিনি সেদিন আমাদের একটি করে ফিলিপস রেডিও দিয়েছিলেন।’’
ওইদিন তিনি তার ভাষণে বলেছিলেন, ‘‘দেশপ্রেম কাকে বলে জানতে চাইলে, যাও বাংলার লোকদের দেখে এসো। কারও দাড়ি নাই। দুধের শিশুর মতো বয়স। সেও দেশের জন্য রক্ত দিয়েছে। তাদের দেখে মাতৃভূমির জন্য নিজের ভালবাসা জাগ্রত কর।’’ এরপরই শতশত লোক ফুল নিয়ে দেখতে আসে আমাদের।
কেন মুক্তিযুদ্ধে গেলেন এমন প্রশ্নে মুক্তিযোদ্ধা সামছুল ইসলামের সরাসরি উত্তর, ‘‘আমার বাবা, মা, ভাই, বোনের শান্তির জন্য আমি যুদ্ধ করেছি। আমি মনে করি সারাদেশের মানুষ আমার মা, বাবা, ভাই, বোন। সবাই আমার রক্ত। আমরা তাদের জন্য যুদ্ধ করেছি।’’
হুইল চেয়ারে চললেও কারও কাছে হাত পাততে রাজি নন এ মুক্তিযোদ্ধা। তাই স্বাধীনতার পর তিনি টিকিট কাটার কাজ করেন মুন ও গুলিস্তান সিনেমা হলে।
মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বাধীন দেশে কষ্টের অনুভূতির কথা অকপটে বললেন সামছুল ইসলাম। তার ভাষায়, ‘‘মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে আমরা স্বাধীনতার পাতাকা ছিনিয়ে এনেছি; যারা আমাদের রক্ত ঝরিয়েছে, মা-বোনদের ইজ্জত লুটেছে, সে পতাকাই আবার সে দেশবিরোধী রাজাকারদের গাড়িতে উড়েছে- এটা মনে হলেই লজ্জায় মাথা হেড হয়ে যায়।’’ তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। অথচ তার দলে রাজাকাররা আছে। বঙ্গবন্ধুর দলেও আছে রাজাকার। সবাই এখন রাজনীতি করছে স্বার্থের জন্য। এ দুঃখ আমরা কাকে বলব! দু দল থেকেই রাজাকারদের বিতাড়িত করা গেলে দেশের চেহারা সত্যি অন্যরকম হত।’’
কথা উঠে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নিয়ে। মুচকি হেসে মুক্তিযোদ্ধা সামছুল ইসলাম বলেন, ‘‘এ তালিকা স্বাধীনের পরপরই হওয়া উচিত ছিল। তখন ১১টি সেক্টরেই ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের সকল তথ্য। বেড়া দিলাম ধানখেত রক্ষা করতে, সেই বেড়াই ধান খেয়ে ফেলল। যারা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্বে ছিলেন তাদের মাধ্যমেই অনেক অমুক্তিযোদ্ধা তালিকায় চলে আসে। এর জন্য দায়ী মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের তৎকালীন কিছু অসাধু কর্মকর্তা।’’
মুক্তিযোদ্ধারা এক প্লাটফর্মে থাকলে দেশের জন্য মঙ্গল হত বলে তিনি মনে করেন। তার ভাষায়, ‘‘জামায়াতে ইসলামীরও এখন মুক্তিযোদ্ধা দল আছে। এরা করা। এরা আমাদেরই মুক্তিযোদ্ধা। লোভ আর স্বার্থচিন্তা আমাদের শেষ করে দিয়েছে।’’
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা সামছুল ইসলাম বলেন, ‘এদের বিচার আরও আগে হওয়া দরকার ছিল।’ বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমার বিষয়টি যুক্তিযুক্ত সিদ্ধান্ত বলেই মনে করেন তিনি। তার ভাষায়, ‘‘মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেকেই শান্তি কমিটিতে যোগ দিয়েছিল। অনেকে পাহারার কাজ করত কিন্তু অন্য কোনো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। মুসলিম লীগ করতেন কিন্তু কোনো খারাপ কাজ করেননি- এমন লোকও কম ছিল না। এ ধরনের অপরাধীদের ক্ষমা করাটা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু সে তালিকায় ছিল না কোনো চিহিৃত যুদ্ধাপরাধী কিংবা রাজাকারের নাম।’’
মাইক্রো-বায়োলজিতে পড়ছেন সাকিব। মুক্তিযোদ্ধা বাবার কথা বলতে গিয়ে শুধু বললেন, ‘আমার প্রেরণা আমার বাবা। নিজের মেধা দিয়ে আমি দেশকে আরও এগিয়ে নিতে চাই।’ বর্তমান প্রজন্মের দেশভাবনার কথা উঠতেই সাকিব বলেন, এখন যারা আছে তারা খুবই দেশপ্রেমিক। উদাহরণস্বরূপ যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে রাজপথে নামা গণজাগরণ মঞ্চের তরুণদের কথা জানালেন।
এদেশের ছেলেরা যখন নতুন কিছু আবিষ্কার করে সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশের সুনাম প্রতিষ্ঠিত করে, তখন আনন্দে বুক ভরে যায় যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা সামছুল ইসলামের। নতুন প্রজন্মের প্রতি পাহাড়সম আশা তার। চোখেমুখে আশা ছড়িয়ে তিনি নতুন প্রজন্মের উদ্দেশে তিনি বললেন, ‘‘নতুন প্রজন্ম সত্যটা জানতে চায়। তোমরা দেশকে ভালবেসে দেশটাকে আরও উন্নত করবে। একদিন এ দেশটাকে তোমরা অনেক এগিয়ে নিয়ে যাবে। মনে রাখবে, দশে মিলে করি কাজ হারি যিতি নাহি লাজ। দেশপ্রেম ঈমানের একটি অঙ্গ। নিজের জাতিকে যে ভালবাসে না সে নিমোখারাম।’’
লিখাটি প্রকাশিত হয়েছে বিডিনিউজ২৪.কমে, ২৮ জুন ২০১৩
© 2013 – 2021, https:.