প্যাক খেলা ও হাজং কথা
ইলশে গুড়ি বৃষ্টি। আকাশে চলছে রোদ-মেঘের খেলা। এরই মধ্যে আমরা পা রাখি উত্তর লেংগুরা গ্রামে। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ছোট্ট একটি নদী। মেঘালয়ের পাহাড় থেকে নেমে আসা নদীর দু’তীরেই মানুষের জটলা। সবাই ব্যস্ত পাথর তোলায়। নদীর জলে শরীর ডুবিয়ে বাঁশের টুকরি ভরে দিচ্ছে নারী শ্রমিকরা। তাদের মাঝে কয়েকজন আদিবাসীও নজরে এলো। বাঙালিদের সঙ্গে এক হয়েই কাজ করছে তারা। এখানকার হাট-বাজারেও রয়েছে আদিবাসী-বাঙালিরদের সহ অবস্থান। অন্য অঞ্চলে যা ততটা দেখা যায় না।
লেংগুরা নেত্রকোনা জেলার একটি আদিবাসী গ্রাম। নিজেদের আদি রীতিনীতি মেনে এখানেই বসবাস করছে প্রায় ৭০ টি হাজং পরিবার।
আমরা পা রাখি নদী পাড়ের একটি হাজং বাড়িতে। বাড়ির ভেতর চলছে ধান মাড়াইয়ের কাজ। আবাল-বৃদ্ধ সবাই ব্যস্ত। কেটে আনা ধান কেউ শুকিয়ে তা থেকে ধান ছাড়িয়ে নিচ্ছে কেউ কেউ, কেউ আবার ধান থেকে চাল তৈরি করে নিচ্ছে। কাজ থামিয়ে বাড়ির কর্তা দেবেন্দ্র হাজং আমাদের বসতে দেন। পরিচয় শেষে আমরা আলাপ জমাই হাজং আদিবাসীদের নানা বিষয়ে।
গারো ভাষায় ‘হা’ মানে মাটি, ‘জং’ মানে পোকা বা কীট। সূদূর অতীত থেকেই মাটির সঙ্গে সখ্য এদের। তাদের কৃষি কাজের কৌশল দেখেই গারোরা তাদের নাম দিয়েছিল হাজং।
ধারণা করা হয় আগে হাজং নামে কোনো জাতি ছিল না। এ বিষয়ে হাজংরা বলেন, ‘গারো গিলা আমলা নাম থুছে হাজং’ অথ্যাৎ গারোরা আমাদের নাম রেখেছে হাজং। আবার অনেকেরই ধারণা প্রাচীন আসামের কামাখ্যা এলাকার কোচ রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ‘হাজো’ বা ‘হাজু’ এর নামানুসারে প্রতিষ্ঠিত রাজ্যের হাজো নগরের বাসিন্দা ছিল বলেই কালক্রমে স্থানীয় লোকদের কাছে তারা হাজং নামে পরিচিতি লাভ করে।
তবে হাজংদের ভাষ্য মতে, হাজং শব্দের অর্থ প্রস্তুত হই, সজ্জিত হই, সংগঠিত হই। এরা মনে করেন, অতীতে তারা বারবার ছত্রভঙ্গ হয়ে পরে আবার সংগঠিত হয়েছে। আর এই অবস্থার কারণেই হাজং নামের উৎপত্তি।
হাজংদের নিজস্ব ভাষা আছে। পরিবার এবং নিজেদের মধ্যে তারা নিজ ভাষায় কথা বলে। তবে হাজং ভাষার কোন লিখিত বর্ণমালা নেই। বর্তমানে বিভিন্ন অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষা থেকে অনেক শব্দ প্রবেশ করেছে হাজং ভাষাতে। দেবেন্দ্র আমাদের বুঝিয়ে দেন তাদের ভাষাটিকে। কারও নাম জানতে হাজং ভাষায় বলে-‘তোলা কি নামে ?’ ‘আমি তোমাকে ভালবাসি’ বাক্যটিকে হাজংরা বলেন- ‘ময় তগে ভালবাচে’, কোথায় বাঁশি বাজে- বাক্যটিকে বলে- ‘কুমায় বাঁশি বাজে’ প্রভৃতি। হাজংদের সুখ-দুঃখ, মান-অভিমান, নান্দনিক রূপ এবং বিচিত্র ভাবনা প্রকাশ পায় তাদের ভাষাতে। দেবেন্দ্রের মুখে শুনি হাজংদের সমাজ কাঠামোর কথা। অন্যান্য আদিবাসীদের মতোই এরাও একেক জায়গায় পাড়া করে বাস করে। পাড়া প্রধানকে এরা বলে ‘গাওবুড়া’। তিনিই পাড়ার বিচার সালিশীসহ নানা দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কয়েকটি পাড়া মিলে হাজংদের একটি গ্রাম হয়। গ্রাম প্রধানকে এরা বলে ‘মোড়ল’। গাওবুড়াদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে বিচক্ষণ তাকেই হাজংরা মোড়ল বানায়। মোড়ল গাওবুড়াদের সহযোগিতায় গ্রামের নানা সমস্যার সমাধান এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এভাবে কয়েকটি গ্রাম মিলে হয় একটি চাকলা বা জোয়ার। এর প্রধানকে বলে চাকলাদার বা জোয়ারদার। মোড়লদের মধ্য থেকে একজনকে এ পদে মনোনিত করা হয়। আবার কয়েকটি চাকলা বা জোয়ারের সমন্বয়ে হয় একটি পরগণা। পরগণার সর্বময় কর্তা রাজা।
হাজং সমাজে গাওবুড়া ও মোড়লের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই তাদের মর্যাদা ও ক্ষমতাও বেশি। হাজং পাড়া বা গ্রামের শান্তি-শৃঙ্খলা গাওবুড়া ও মোড়লদের বিচক্ষণতা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের উপর নির্ভর করে।
কুলা দিয়ে আপন মনে ধান ঝাড়ছেন এক নারী। বয়স ষাটের ওপর। নাম রুবিলা হাজং। দেবেন্দ্রর বোন তিনি। আমাদের দিকে চোখ পড়তেই তিনি মুচকি হাসেন। বাড়ির এককোণে ছোট্ট একটি প্রার্থনা ঘর। মাটির তৈরি ধুপের ঘটি ও প্রদীপ পড়ে আছে। সেখানে সামান্য একটু জায়গা উঁচু করে মাটি লেপা। কি এটি? প্রশ্ন করতেই রুবিলা বলে, ‘হরিমন্দির’। তার ভাষায়, ‘প্রতিদিন আমরা ধুপ, কলা, ফুল দিয়ে হরির নামে ভক্তি দিই।’ এছাড়াও হাজংরা কড্ডা পূজা, শিব পূজা পালন করে থাকে।’ ধর্মের কথা উঠতেই তিনি বলেন, ‘আমরা সনাতন ধর্মের অনুসারী। হিন্দু ধর্মের বর্ণ এবং সূর্য বংশীয় ব্রাহ্ম ক্ষত্রিয়। দিওলী আমাদের প্রধান উৎসব।’
বড় একটি মাঠ পেরিয়ে নরেশ হাজংয়ের বাড়ি। নরেশের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে দেবেন্দ্রর মেয়ে স্বপ্না হাজংয়ের। নিজের কাজের অবসরে নরেশ গড়ে তুলেছেন একটি গানের দল। তাই হাজংদের উৎসবগুলোতে আশপাশ থেকে ডাক পড়ে নরেশের। দেবেন্দ্রকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আসি নরেশের বাড়িতে। তার মুখে শুনি হাজংদের ভিন্ন ধরণের একটি উৎসবের কথা। হাজংরা এটিকে বলে ‘প্যাক খেলা’। সাধারণত রোয়া (ধান গাছের চারা) লাগানোর সময় গ্রামের মোড়ল বা যাদের সামর্থ আছে তারা এই উৎসবের আয়োজন করে থাকে। এটি হাজংদের একটি আদি উৎসব।
হাজংরা জমিতে রোয়া লাগায় ভাদ্র মাসে। একটি জমি ফাঁকা রেখে গ্রামের মোড়ল তার সব জমির রোয়া লাগানো শেষ করে। অতঃপর তিনি গ্রামের সবাইকে ডেকে আনতে নির্দেশ করেন চাকোরাকে (গ্রাম সমাজের একটি পদ)। সবাই উপস্থিত হলে ঠিক হয় একটি তারিখ। মোড়ল সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, ‘আমার জমির শেষ রোয়া ওইদিন হবে। সবাই আসবেন।’ সাধারণত প্রতিঘর থেকে একজন নারীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কখনও কখনও পুরুষ ও শিশুরাও অংশ নেয় এ আনন্দ উৎসবে। পুরুষেরা জালা ভাঙ্গে (বীজতলা থেকে চারা তোলা) আর হাল বায়। আর মেয়েরা রোয়া লাগায়। ওইদিন জমির এক দিক রোয়া লাগালে অন্যপাশে সবাই গোল হয়ে নাচ-গানে মেতে উঠে। মহিলারা তখন গান গাইতে গাইতে একে অপরকে প্যাক মাখিয়ে দেয়। নরেশ থামতেই স্বপ্নার কন্ঠে শুনি প্যাক খেলার গানটি।
নরেশ বলেন, প্যাক খেলার গানকে হাজংরা বলে গুপনি গান। এদের প্যাক খেলার নাচও অন্য উৎসব থেকে ভিন্ন। সকালে শুরু হয়ে প্যাক খেলা শেষ হয় বিকেলে। এ সময় উলু ধ্বনি দিয়ে হাজং নারীরা রোয়া লাগায় এবং সবাই সবার শরীরে প্যাক মেখে দেয়। এভাবে গ্রামের সবাই মিলে মোড়লের শেষ জমিটিতে রোয়া লাগানো শেষ করে। খেলা শেষে দুটি হাড়িতে জমির প্যাক তোলা হয়। অতঃপর মোড়ল ও তার স্ত্রীকে বাড়ির উঠানে বসিয়ে সারা শরীরে প্যাক ঢেলে দেওয়া হয়। এরপরই মোড়ল সবাইকে খাওয়ার নিমন্ত্রণ করে। গোসল সেরে সবাই খেতে আসে মোড়লের বাড়িতে। এ উৎসবে খাওয়ানো হয় বিন্নি ধানের ভাত, কাছিম (কাচ্ছোয়া) বা মাছ ও ডাল। আটা ও চাউলের গুড়া দিয়ে তৈরি কাসা মদ উৎসবের আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দেয়। প্যাক খেলার নাচ-গানে হাজংরা খোল, ধাপা করতাল, জরি (মন্দিরা) প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে। পারস্পারিক সৌহাদ্য ও আনন্দ করাই এ উৎসবের মূল উদ্দেশ্য। এর মাধ্যমে হাজংদের দলবদ্ধতারও প্রমাণ মিলে। গেল বছর এ গ্রামের মোড়ল লিলি হাজং প্যাক খেলার আয়োজন করলেও ধীরে ধীরে প্যাক খেলা হারিয়ে যাচ্ছে আদিবাসী সমাজ থেকে। হাজংদের জমি কমে যাওয়া, জমি বর্গা দিয়ে দেওয়া, নিমন্ত্রণ খরচ বেশি হওয়া ও আয় কমে হওয়াই এর মূল কারণ।
অন্য উৎসবের কথা জানতে চাইলে দেবেন্দ্র জানায় হাজংদের নবান্নর উৎসবের আচারগুলোর কথা। অগ্রাহায়ণে বাস্তদেবতার পূজা ছাড়া হাজংরা নতুন ধান ঘরে তোলে না। নবান্নর দিন এরা হয়গ্রীব দেবতা, কামাখ্যা ও লক্ষ্মী দেবীর উদ্দেশ্যে সর্বপ্রথম ধানের চাল করে ভোগ দেয়। ওইদিন প্রতি ঘরে ঘরে চিড়া, মুড়ি, খৈ ও পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। এ সময় এরা দলবেধে নাচগান করে। সুরেশের কন্ঠে শুনি হাজংদের একটি নবান্নের গান।
এছাড়াও হাজংরা মাগ মাসে মাগের পূজা, দোল পূজা, শিব পূজা পালন করে থাকে। দুর্গাপূজায় এরা অংশ নিলেও নিজেরা প্রতিমা বানায় না।
হঠ্যাৎ শুরু হয় ঝুম বৃষ্টি। উঠান থেকে আমরাও সরে আসি বাড়ির বারান্দাতে। গাছ থেকে কাঠাল পেরে মুড়ি দিয়ে পরিবেশন করে স্বপ্না হাজং। সঙ্গে লেবু পাতার সুগন্ধি চা। খেতে খেতে দেবেন্দ্র জানান, হাজংদের বিয়ে নিয়ে নানা তথ্য।
এদের বিয়ে বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ। বিয়ের বয়স হলেই হাজং ছেলে বা মেয়েকে পুরোহিতের কাছে মন্ত্র নিয়ে শুদ্ধ হতে হয়। মন্ত্র না দেওয়া পর্যন্ত কোনো ছেলে বা মেয়ের বিয়ে হতে পারে না। এমনকি বিয়ের কোন আলাপ আলোচনাও হতে পারে না। হাজং সমাজে বিয়েতে যৌতুক ও পণ উভয় প্রথারই প্রচলন রয়েছে। এদের মাঝে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা প্রচলিত। বিয়ের পর মেয়েরা স্বামীর গোত্র গ্রহণ করে। অবিবাহিত মেয়েরা নামের পরে সাধারণত রাণী, দেবী, সরকার ও বিয়ের পরে নামের পূর্বে শ্রীযুক্তা উপাধী ব্যবহার করে। পুরুষরা নামের আগে শ্রীমান, শ্রী হাজং এবং নামের পরে ব্যবহার করে রায়, সরকার, মন্ডল, অধিকারী, দেবর্ষী, জোয়ারদার, তালুকদার ওঝা, কবিরাজ, কীর্ত্তনীয়া প্রভৃতি উপাধী। হাজং সমাজে বাল্য বিবাহ নিষিদ্ধ।
এদের বিবাহ প্রথার মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। পুরোহিত শ্রেণীর হাজংরা বিয়ে অনুষ্ঠান পুরোহিতের দ্ধারা এবং অ-পুরোহিত শ্রেণীর হাজংরা নিজস্ব প্রথা অনুসারণ করে নিজেরাই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে থাকে। বিয়েতে এরা গীতলু গীত (পদ্মা-বেহুলা-লক্ষ্মীন্দর-চাঁদ-সাগরের কাহিনী ) ও গোপিনী গীত (রাধা-কৃষ্ণের প্রেম লীলা’র কাহিনী) গেয়ে থাকে।
হাজং সমাজে চার ধরণের বিয়ের প্রচলন রয়েছে। সামাজিক ভাবে সবার স্বীকৃতিতে যে বিয়ের আয়োজন করা হয় সেটি আয়োজিত বিয়ে। এই বিয়েতেই নারী শাঁখা ও সিদুঁর পরে সামাজিক মর্যাদা লাভ করে। মা-বাবা ছাড়াও ধর্ম পিতামাতা, যাহুও এবং আইড়োদের বিয়েতে বিশেষ দায়িত্ব পালন করতে হয়। ৫-৭জন সধবা মহিলা যারা বিয়ে অনুষ্ঠানের প্রতিটি ক্ষেত্রে কনে ও বরের সঙ্গে থেকে অনুষ্ঠান পরিচালনায় সহযোগিতা করে তাদেরকেই আইড়ো বলে। বিয়ের মূল অনুষ্ঠানের পর কনেকে বরের বাড়িতে থাকতে হয়।
দায়-পড়া এক প্রকার প্রণয় ঘটিত বিয়ে। প্রেমিক-প্রেমিকা পরস্পরকে ভালবেসে ঘর থেকে পালিয়ে এ বিয়ে করে। এ ধরণের বিয়েতে বিশেষ ব্যবস্থা মেনে নিয়ে প্রায়শ্চিত্য, অর্থদন্ড এবং ভোজের আয়োজন করতে হয়। মেয়ের বেলায় সিঁথিতে সিঁদুর ধারণ থেকে বিরত থাকতে হয়।
আবার নারী পুরুষের প্রেম বিনিময়ের পর যদি কোন কারণে পুরুষ নারীকে গ্রহণ করতে অসম্মতি জানায় তবে তখন নারী সরাসরি পুরুষের বাড়িতে এসে উঠে এবং তাকে স্বীকার করে বিয়ে করতে বাধ্য করে। এভাবে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াকে ‘ডাঙো হান্দা’ বলে। এর জন্য পুরুষকে দায়ী করা হয় এবং বেশ কিছু বিধি নিষেধ পালন করতে হয়।
হাজং সমাজে বিধাব বিবাহকে হাঙা বলে। বিধাব মহিলার বিয়ে হলেও সিঁথিতে সিঁদুর এবং হাতে শাঁখা পরার অধিকার পায় না। এদের সমাজে নারী পুরুষের অবৈধ যৌন সম্পর্ককে ঘৃণার চোখে দেখা হয় এবং তা পাপের সমতুল্য বলে বিবেচিত হয়।
হাজং সমাজে গোত্র হলো পিতার বংশ পরিচয় যার মাধ্যমে সন্তানেরা পরিচয় লাভ করে। অন্যদিকে নিকনী হলো মাতার বংশ পরিচয়। হাজং সমাজে প্রায় ২৬টি গোত্র ও দুটি নিকনী রয়েছে।। এদের গোত্রগুলোর মধ্যে কাশ্যপ, ভরদ্বাজ, সাবন, কাত্যায়ন, কৌশিক, বিশ্বমিত্র, পরাশয়, গর্গ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
নরেশ বলেন হাজংদের লোকচিকিৎসার কথা। এরা আজও বিশ্বাস করে পাহাড়ের দুধখড়ি গাছের ছাল পানিতে সিদ্ধ করে সে পানি খেলে কৃমি ও জ্বর থেকে মুক্তি মিলে। ভল্লুকের লোম গলায় জড়িয়ে দিলে ম্যালেরিয়ার জ্বর ভাল হয়ে যায়। কিন্তু বর্তমানে হাজংরা আধুনিক চিকিৎসার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে।
এদেশে বসবাসরত অন্যান্য জাতির মানুষদের সরকার আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি না দিলেও হাজংরা মনে করে তারাই আদিবাসী। দেবেন্দ্রের ভাষায়, ‘ দাদার আমলে এখানে জঙ্গল কেটে বসতি তৈরি করে হাজংরা। তখন এখানটায় ছিল না কোনো বাঙালি। আমাদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা, আচার ও সংস্কৃতি। টংক ও হাতিখেদাসহ বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে সরাসরি যুক্ত ছিল হাজংরা। আমরা কোনো ক্ষুদ্র জাতি নই। আমরা আদিবাসী।’
গারোরা ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করলেও হাজংদের অধিকাংশই তাদের পূর্বপুরুষদের জাতধর্মকে আগলে রেখেছে। হাজংরা কেন ধর্মান্তরিত হয় নি? এমন প্রশ্নের উত্তর মিলে এ অঞ্চলে হাজংদের নেতা মতিলাল হাজংয়ের কাছে। তার ভাষায়, ‘হাজংরা নিজের ধর্মের বিষয়ে কট্টর। এরা অন্য ধর্মকে সহজভাবে নিতে পারে না। সুবিধা লাভ তাদের কাছে বড় বিষয় নয়। ফলে ধর্মান্তরিত হওয়ার প্রস্তাব এরা বারবার ফিরিয়ে দিয়েছে। দুর্গাপুরের শংকরা, আরাপাড়া, খুজিপাড়া গ্রামের দন্তধর হাজং, মুহু হাজং, রমেন্দ্র হাজং, ভবসিন্দুর হাজংয়ের মতো কিছু হাজং ধর্মান্তরিত হলেও তারা আবার ফিরে এসেছে হাজংদের আদি ধর্মে।’
লিখাটি প্রকাশিত হয়েছে বাংলানিউজ২৪.কমে, ১৮ জানুয়ারি ২০১৪
WARNING :
If anyone wants to share this content, please contact me. If any unauthorised use or reproduction of salekkhokon.me content for commercial purposes is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.
© 2014 – 2018, https:.