দেশটা তো মায়ের মতো
‘‘আমগো সংসারডা ছিল বড়। চার বোন পাঁচ ভাই। জমিজমা ছিল না। গরিব খাইট্টা খাওয়া মানুষ। একবেলা খাতি পারতাম, একবেলা পারতাম না। বাবার সঙ্গে আমরাও অইন্যের বাড়িতে মুনিস খাটতাম। পড়াশোনা করতি পারি নাই। মাঠে-ঘাটে থাইকতাম। গরু চরাতাম। লাঙলও ধইরতাম। স্কুলে পড়ার সময় কই? কুনো স্কুলে পড়ি নাই। স্বাক্ষরটা শুধু দিতে জাইনতাম।’’
যুদ্ধদিনের কথা শুনতে দেখা করেছিলাম যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা নূর ইসলামের সঙ্গে। তাঁর বাড়ি মেহেরপুরের রাজাপুর গ্রামে। বাবা মকসেদ আলী ছিলেন খেটে খাওয়া কৃষক। আর মা রাহেলা বেগম সাধারণ গৃহিণী। নূর ইসলাম যখন মুক্তিযুদ্ধে যান তখন তাঁর বয়স মাত্র সতের। তা নিয়ে তিনি কথা বলছিলেন প্রাণ খুলে, একান্ত নিজের ভাষায়।
‘‘আমার বন্ধু ছিল জিন্না, আক্কাস, হাশেম ও আনসার। মাঠেঘাটের মানুষের বন্ধুত্ব তেমন বুঝা যায় না। ছাত্রদের যেমন একসাথে থাকা-খাওয়ায় ঘনিষ্ঠতা হয়, আমগো তো তেমন ছিল না। কাজ শেষে বিকাল বেলা হাডুডু খেলা করতাম। একবার খেলতি গিয়া আনসারের পা-ডা কট কইরে ভাঙি যায়। ওরে আমরা ধরাধরি কইরে মেহেরপুর হাসপাতালে নিয়া যাই। সেই দিনডার কথা ভুলতে পারি নাই।
আমরা তো মুর্খ মানুষ। মাঠেঘাটে থাকি, এত কইতে পারি না। রাজনীতি বুঝি না। খবর পাইতাম আন্দোলন হইতেছে। ছাত্রদের মিছিল হইতেছে। মরি যাইতেছে। এইসব খবর মাইনসের মুখ দিয়া শুনতাম। তহন মেহেরপুরের নেতা ছিল মৈনুদ্দিন। এসডিও ছিল তৌফিক-ই-এলাহী সাহেব।
শেখের কথা মইনসের মুখে শুনিছি। শেখ তো আমগো কথাই কইত। ৭ মার্চে শেখের ভাষণ শুনিছি রেডিওতে। শেখ সাহেব কইল– ‘ভায়েরা আমার… সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না… এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম…।’ তাঁর কথা আমগো বুকে বাঁধিছিল। আমরাও তখন বলিছি– ‘আমরা বাংলা চাই’।’’
নূর ইসলাম যুদ্ধে গিয়েছিলেন আরও পরে, একাত্তরের মে মাসের একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে। তাঁর গ্রামে কেউ মুক্তিযুদ্ধে যায়নি, সবাই যোগ দিয়েছে রাজাকারদের দলে। নূর ইসলাম একদিন মেহেরপুর বাজারে গিয়ে আটা-চাল কিনছেন। পাশেই ভৈরব নদী। নদী পার হয়ে নূর ইসলামদের বড়ি যেতে হয়। রাজাকারেরা নদীর পাড়ে ডিউটি করছিল সেদিন। ওখান দিয়ে ফিরছেন নূর ইসলাম। তাঁর ব্যাগ ওরা চেক করে। কিছু না পেয়ে তাঁর গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দেয়। ‘তুই মাইরলি ক্যান আমারে’, বললেন নূর ইসলাম। কোনো উত্তর নেই ওই রাজাকারের মুখে।
সেদিনই বাবাকে গিয়ে বললেন মুক্তিযুদ্ধে যাবার ইচ্ছার কথা। পনের দিন পর তিনি চলে যান সরাসরি বিহার চাকুরিয়ায়, ট্রেনিং সেন্টারে। ৪ নং উইংএর ৪ নং তাঁবুতে ছিলেন। এফএফ (ফ্রিডম ফাইটার) নং ছিল-৪৬৮৭। ১ মাসের ট্রেনিংয়ে ওরা শেখাল রাইফেল, এলএমজি, এসএলআর, টুইনস মর্টার, থ্রিস মর্টারের ব্যবহার। ট্রেনিং ছিল খুব কষ্টের। যেমন একদিন কেউ ফায়ার করতে পারছে না, বারবার বলার পরও হচ্ছে না। এক ওস্তাদ এসে দিল একটা লাথি, তখন কাজ হল।
আরও শিখছেন কীভাবে ম্যাগজিন ভরতে হয়, কীভাবে ব্রিজ উড়াতে হয়, মাইন ব্লাস্ট করতে হয়, সে সবও। গোপনে শত্রুদের ক্যাম্পে গিয়ে গ্রেনেড থ্রো করে চলে আসতে হত। ট্রেনারদের দীক্ষা ছিল– ‘মাইর দিয়ে এস, কিন্তু মাইর খেয়ে এস না।’ এভাবেই শেষ হয় নূর ইসলামের গেরিলা ট্রেনিং। শেষে শপথ হয় কল্যাণীতে আর হাতিয়ার দেয় শিকারপুর থেকে।
ট্রেনিংয়ের বর্ণনা দিলেন নূর ইসলাম-
ট্রেনিংয়ের পর তাঁদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে বলা হল, ‘তোমরা যে জায়গাগুলো চেন, সেখানে গিয়ে যুদ্ধ কর’। ৮নং সেক্টরের শিকারপুরেই নূর ইসলামরা চৌদ্দ-পনের জনের একটা গ্রুপ তৈরি করেন। কমান্ডার ছিলেন সৈতুল্লাহ আর ডেপুটি কমান্ডার আলাউদ্দিন। তাঁরা ভারতের আওতবাড়ি কিছুদিন থেকে চলে গেলেন সুবরাজপুর গ্রামে। এ গ্রামেই লুকিয়ে থাকতেন। রাতে মেহেরপুরের বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে অপারেশন করতেন। নূর ইসলামের কাছে থাকত রাইফেল, অন্যদের কাছে এলএমজি ও এসএলআর।
কোথায় কোথায় যুদ্ধ করেছেন?
স্মৃতি হাতড়ে খানিকটা মলিন মুখে নূর ইসলাম বলেন–
‘‘কারও বাড়ির ভেতরে আমরা থাকতাম না। মাটির ঘরের বারান্দায় থাকতাম। দুজন ডিউটি করলে বাকিরা বিশ্রাম নিত। আমরা অপারেশন করি মেহেরপুরের উজলপুর, কুতুবপুর, বিটের মাঠ, সোলমারি, মেহেরপুরে। অপারেশন শেষ হলেই চলে যেতাম সুবরাজপুর গ্রামে। তখন ভাতা পেতাম ৫০ টাকা। ওইটা দিয়ে চাল-ডাল কিনে খিচুড়ি রান্না করে খাইতাম। এভাবে যুদ্ধ করি তিন থেকে চার মাস।’’
একাত্তরে রাজাকারদের কার্যক্রম সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি সে সময়কার একটি ঘটনার কথা বলেন–
‘‘আমরা বাঙ্কার রেইকি করতে যেতাম। সুযোগ পেলেই সেখানে গ্রেনেড মেরে সরে পড়তাম। সৈলমারি এলাকায় একটা ছেলে ছিল। সে আমাদের নানা খবরাখবর পৌঁছে দিত। একদিন সেখানে রেইকি করতে যায় রাজাকারদের একটি দল। বাঙালি দেখে ওই ছেলে ভেবেছে এরা মুক্তিযোদ্ধা। দৌড়ে গিয়ে সে তাদের কাছে পাঞ্জাবিদের নানা খবর দিতে থাকে। রাজাকাররা ওইদিন তাকে গ্রেনেড দিয়ে খুঁচিয়ে মেরেছিল। দূর থেকে তা দেখে আমরা ঠিক থাকতে পারি না। পরে তাদের সঙ্গে আমাদের গোলাগুলি হয়।’’
আরেকটি অপারেশনের কথা বললেন তিনি–
‘‘আমরা ভিটের মাঠ, কুতুবপুর অঞ্চলে। বিকেল তখন চারটা। কাটুলি ধলা এলাকার দিকে পাঞ্জাবিরা চলে আসে। তাদের কাছে আমাদের খবর ছিল। আমরাও এগোচ্ছিলাম। হঠাৎ মুখোমুখি হয়ে যাই। প্রায় ১ ঘণ্টা চলে গোলাগুলি। গুলি শেষ হতেই আমরা ব্যাক করি। ওইদিন আমরা হারাই এক সহযোদ্ধাকে।’’
১৯৭১এ রেইকি করতে গিয়ে রাজাকারদের হাতে ধরা পড়েন মুক্তিযোদ্ধা নূর ইসলাম। পরে তারা তাঁকে তুলে দেয় পাকিস্তানি আর্মিদের হাতে। এরপর তাঁর ওপর চলে অমানুষিক অত্যাচার। এখনও তাঁর সারা শরীরে ফাটা দাগ। হাতের কব্জিতে ব্যথা হয়। বয়সের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শরীরের ব্যথাও। একটানা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকতে পারেন না তিনি।
আহত হওয়ার কথা বললেন নূর ইসলাম
কী ঘটেছিল একাত্তরের সেই দিনটিতে? নূর ইসলামের মুখেই শুনি তার আদ্যোপান্ত–
‘‘ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ। সারা দেশেই পাকিস্তানি সেনারা বাধার মুখে। আমরা তখন সুবরাজপুর গ্রামে। পরিকল্পনা হয় মেহেরপুর শহর আক্রমণের। রেইকি করার দায়িত্ব পড়ে আমার ওপর। শহরে ঢুকতেই রাজাকাররা আমার পিছু নেয়। এক জায়গায় তারা আমাকে ঘেরাও করে আটকে ফেলে। আমার কাছ থেকে সহযোদ্ধাদের তথ্য নিতে আমাকে তারা মারতে থাকে। বিকেলের দিকে নিয়ে যায় মেহেরপুর কলেজে। সেখানে ছিল পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্প। তাদের হাতে আমাকে তুলে দেয় রাজাকাররা।
ওরা আমারে মারে আর বলে, ‘শালা, তুম মুক্তি হ্যায়’। আমি বলি, ‘আমি মাঠে কাজ করি। গ্রাম থেকে ফিরছিলাম’। ওরা আমার কথা বিশ্বাস করে না। আমাদের পরিকল্পনা কী জানতে আমাকে হাত বেঁধে গাছে ঝুলিয়ে দেয়। অতঃপর পা থেকে সারা শরীরে অনর্গল লাঠিপেটা করে। আমার মুখ থেকে কোনো তথ্য না পেয়ে এক অফিসার বলে, ‘উসকো গুলি কার দে’। সে একটা লাঠি দিয়ে আমার হাতের কব্জিতে জোরে বাড়ি দেয়। সঙ্গে সঙ্গে আমি জ্ঞান হারাই।
এরপর আর কিছুই বলতে পারি না। চোখ মেলতেই দেখি আমি মেহেরপুর হাসপাতালে। আমার সারা শরীর ফাটা। উঠতে পারি না। দাঁড়াতেও পারি না। ডান হাতের কবজি ভেঙে গেছে। দেশটা তখন স্বাধীন। কীভাবে হাসপাতালে আসলাম, কারা আনল কিছুই জানি না! বাবা-মার সাথে যোগাযোগ ছিল না। তারা জানত আমি মরে গেছি। খবর পেয়ে মা আসে হাসপাতালে। বলে, ‘আল্লাহ আমার ছেলেরে ফিরায়া দিছে’। মাকে ধরে সেদিন খুব কাঁদছিলাম। বয়স বাড়ছে। শরীরের হাড্ডি এখনও কনকন করে। তখন ওইদিনটার কথা পইড়া যায়।’’
মায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা বলছেন নূর ইসলাম
দেশ স্বাধীন হলেও মুক্তিযোদ্ধা নূর ইসলামের দিন কেটেছে অনাহারে, অর্ধাহারে। তাঁর ভাষায়–
‘‘শরীরে তখন ব্যথা। মুনিস খাটতে পারি না। না খেয়ে কষ্ট করি। অনেক কষ্ট গেছে জীবনে। প্রথম ভাতা পেতাম ৭৫ টাকা। এতে তো চলে না। হুমায়ুন কবির নামে মেহেরপুর কোর্টে এক সেকেন্ড অফিসার ছিল। আমারে দেখে তার দয়া হয়। তার মাধ্যমেই পাখা টানার কাজ পাই কোর্টে। পরে কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনেই শ্রমিক হিসেবে কাজ করি মিমি চকলেট কারখানায়।’’
যে দেশের জন্য আহত হলেন স্বপ্নের সে দেশ কি পেয়েছেন?
মুক্তিযোদ্ধা নূর ইসলামের উত্তর–
‘‘পাইছি বাবা, দেশ পাইছি। কিন্তু মানুষ পাই নাই। স্বাধীনের পর হাজারটা দল হইছে। লুটেরারা দেশের ক্ষমতায় ছিল। এদেশের টাকায় বিদেশে শ্বেতপাথরের বাড়ি বানাইছে তারা। কারও দশটা করে বাড়ি আছে। কেউ আবার খেতে পারে না। কিছু লোক আবার দশ টাকাতেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। এমন দেশটা তো আমরা চাই নাই।’’
কথা ওঠে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রসঙ্গে। নূর ইসলামের অভিমত, স্বাধীনতার পরপরই এ তালিকা চূড়ান্ত করা দরকার ছিল। তখন ভারতের লিস্ট ছিল, সেটার ওপরই তো লিস্ট হয়েছে। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের মনে লোভ থাকলে কোনো সরকারই এই তালিকা ঠিক করতে পারবে না। তবে এখন সরকার যা করছে এটা ভালো উদ্যোগ, সচিবরাও যে সনদ জালিয়াতি করছেন সেটাও তারা প্রকাশ করে বাতিল করছে। তাদের যদি লজ্জা না থাকে তাহলে তো বারবারই সনদ চুরি করবেন।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে এ বীর মুক্তিযোদ্ধার আক্ষেপ এখানেই– রাজাকারদের কারণেই তো যুদ্ধে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কষ্ট পেয়েছেন স্বাধীন দেশে তাদের গাড়িতে বাংলাদেশের ফ্ল্যাগ উড়তে দেখে। বিএনপি কোনোদিনও এই দায় মুছে ফেলতে পারবে না। ক্ষমতার জন্য গোটা দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের তারা অসম্মান করেছে, এটাই মনে করেন তিনি।
বিচার প্রসঙ্গে তাঁর মত, শেখ সাহেব বিচারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন, কিন্তু সময় পাননি। একটা যুদ্ধবিধস্ত দেশ, কিছুই নেই সেখানে, আগে তো খাদ্য দিতে হবে। তবু পরে রাজাকারদের বিচারও শুরু হল। কিন্তু হত্যা করা হল শেখ সাহেবকে। এখন সেই শেখ সাহেবের মেয়েই রাজাকারদের বিচার করছেন, এটা তাঁর কাছে বড় বিষয়। তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এদের রায় দিয়ে তা কার্যকর করতে হবে। রায় ঝুলে থাকলেই এদের নিয়ে রাজনীতি হবে, এটাই তাঁর আশঙ্কা।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা নূর ইসলাম অকপটে তুলে ধরেন নিজের অনুভূতির কথা। কোনো মুক্তিযোদ্ধাই এ হত্যা মেনে নিতে পারেন না। সাড়ে সাত কোটি মানুষের তিনি ছিলেন ‘অভিভাবক’। সাড়ে সাত কোটি সন্তান তাঁর। যাঁর জন্য দেশ স্বাধীন হয়েছে তাঁকেই আমরা স্বাধীন দেশে বাঁচতে দিইনি, ইতিহাসে এর চেয়ে বড় কলঙ্কজনক অধ্যায় আর কী হতে পারে?
নূর ইসলাম তবু মনে করেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাবার সোনার বাংলা গড়ার নীতিতেই এগোচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর অসম্পন্ন কাজ তিনি সম্পন্ন করছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের তিনি সম্মান দিয়েছেন। আগে ভাতা পেতেন ৮ হাজার টাকা, এখন পান রেশনসহ ১৬ হাজার টাকা। এটা না হলে পরিবার নিয়ে পথে নামতে হত তাদের।
কী করলে দেশটা আরও এগোবে বলে মনে করেন?
এমন প্রশ্নের উত্তরে খানিকটা নিরব থেকে মুক্তিযোদ্ধা নূর ইসলাম দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। অতঃপর বলেন–
‘‘আমি মুর্খ লোক। তবুও বলি, কৃষির দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে সবচেয়ে বেশি। আমাদের মন্ত্রী এমপিদের ছেলেমেয়েরা পড়ছে বিদেশে। দেশের শিক্ষা তাইলে ভালো হবে কীভাবে? প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী-এমপিরা চিকিৎসা নিতে চলে যান বিদেশ। এগুলার পরিবর্তন হওয়া উচিত। তাদের পয়সা আছে। মুখের কথায় সিঙ্গাপুর,কানাডা, ভারত চলে যায়। দেশের পয়সা বিদেশে খরচ হয়। কই, অভাবী লোক তো এদেশে চিকিৎসা পায় না? আমরা ভারতের অনেক সমালোচনা করি। ওদের কয়জন মন্ত্রী বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করায়?’’
মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বাধীন দেশে ভালোলাগার অনুভূতি জানতে চাই আমরা। নূর ইসলাম জানান, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার যখন দেশের ক্ষমতায় আসে তখন ভালো লাগে। তখন সাহস পান, বুকটাও ভরে যায়।
পাঁচ বছর বয়সী নাতনি আয়শার ভারি ভাব তাঁর মুক্তিযোদ্ধা দাদু নূর ইসলামের সঙ্গে। ঘুমানোর আগে তার মাথায় হাত বুলিয়ে নুর ইসলাম তাকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনান। স্বপ্ন দেখেন তাঁর নাতনি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ নিয়ে একদিন বড় হয়ে দেশের জন্য অনেক বড় কাজ করবে। বুকভরা আশা নিয়ে আয়শার মতো পরবর্তী প্রজন্মের উদ্দেশে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা নূর ইসলাম বলেন–
‘‘তোমরা লেখাপড়া করে জ্ঞান লাভ কর। নিজের কথা, পয়সা কামানোর কথা চিন্তা করে বিদেশে চলে যেও না। মনে রেখ, দেশটা তো মায়ের মতো। দেশের অভাবি মানুষ নানা কষ্টে থাকে। তাদের দেখার দায়িত্ব তোমাদেরই নিতে হবে।’’
লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে বিডিনিউজ২৪.কমে, অক্টোবর ১৬, ২০১৪
© 2014 – 2021, https:.