বঙ্গবন্ধুর মেয়ে রাজাকারের সঙ্গে আঁতাত করতে পারে না
নাম তাঁর মাহমুদ পারভেজ জুয়েল। সবাই ডাকে ‘জুয়েল’ নামে। বাবা আবদুল মালেক পুলিশ অফিসার। আজ এক থানায় তো কাল অন্য কোনো থানায়। গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার দেহের গতি গ্রামে হলেও, জুয়েলের জন্ম টাঙ্গাইলের গোপালপুরে। তাঁর বাবা তখন ওই থানারই সেকেন্ড অফিসার ছিলেন।
৫ ভাই ১ বোনের সংসারে জুয়েল ভাইদের মধ্যে দ্বিতীয়। লেখাপড়ায় হাতেখড়ি গফরগাঁও প্রাইমারি স্কুলে। অতঃপর ঘাটাইল বাইলেটারাল পাবলিক স্কুল থেকে এসএসসি এবং ভৈরব হাজী আসমত আলী কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৬৯ সালে অনার্সে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগে। তাঁর বড় ভাই মাসুদ পারভেজ (চিত্রনায়ক সোহেল রানা) ছিলেন সার্জেন্ট জহিরুল হক হলের ভিপি। সোহেল রানা, মাহমুদ পারভেজ জুয়েল ও কামাল পারভেজ, তিন ভাই-ই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।
এক সকালে মাহমুদ পারভেজ জুয়েলে মোহাম্মদপুরের বাসায় আমাদের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় আমাদের জানালেন মুক্তিযুদ্ধের কথা।
আলাপচারিতা
ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি ঝোঁক ছিল জুয়েলের। আন্তঃস্কুল ও আন্তঃকলেজ টুর্নামেন্টের পর পরিচিতি পান ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে। ভৈরব ও কিশোরগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকেরা তাঁকে এক নামে চিনত। বন্ধু রুনুর সঙ্গে বোঝাপড়াটা ছিল বেশি। রাইট ইনে খেলতেন রুনু আর জুয়েল রাইট আউটে।
১৯৭০ সাল। আগাখান গোল্ড কাপে রানার্স আপ হওয়া পেশোয়ারের একটি ফুটবল টিম আসে সিলেটে। তারা একটি প্রীতি ম্যাচ খেলবে। জুয়েল তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। পাশাপাশি খেলছেন ফাস্ট ডিভিশনে। সিলেটে ডাক পড়ে তাঁর। প্রীতি ম্যাচে দুই গোলে হেরে যায় পোশোয়ার দলটি। অথচ আগাখান গোল্ড কাপে কোনো দলই তাঁদের হারাতে পারেনি। দুটি গোলই করেছিলেন জুয়েল।
ওই সময় পাঞ্জাবিরা বাঙালিদের ভালো চোখে দেখত না। তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করত। প্রতিনিয়ত জুয়েলরা তা মোকাবেলা করতেন। সিনেমা দেখতে গেলে টিকেটের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা পাঞ্জাবিরা বলত– ‘‘ওই বাঙাল, পিছে হটো।’’ ট্রেনে ফার্স্ট ক্লাসে টিকিট কাটতে গেলে বলত– ‘‘এদার তোমহারা জায়গা নেহি, ওদার যাও।’’ কোনো সরকারি অফিসে ঢুকতে গেলে নানা প্রশ্ন বাধা হয়ে দাঁড়াত– ‘‘কিসলিয়া আয়া? ক্যায়সে আয়া? কিউ আয়া?’’ অথচ চোখের সামনে অবাঙালিরা ঢুকে যেত অনায়াসে। রেজাল্ট ভালো করলেও বাঙালি ছাত্রদের ভাগ্যে মিলত না ভালো স্কলারশিপ। বাঙালিদের চেপে রাখার পাকিস্তানি মানসিকতা জুয়েলদের মনে দারুণভাবে ঝড় তুলত।
জুয়েল তখন এফএইচ (ফজলুল হক মুসলিম) হলের ছাত্রলীগের স্পোর্টস সেক্রেটারি। পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি বৈষম্যগুলো তাঁর চোখে স্পষ্ট হয়ে ওঠে বঙ্গবন্ধুর ছয় দফায়। এদেশের পাট বিক্রি হয়ে টাকা চলে যেত পশ্চিম পাকিস্তানে। পূর্ব পাকিস্তান নদীমাতৃক হলেও নেভাল হেড কোয়ার্টার করা হয় পশ্চিম পাকিস্তানে। বঙ্গবন্ধু দাবি তোলেন– ‘তোমার স্টেটের টাকা তোমরা খরচ কর। আমাদের টাকা এখানেই খরচ করতে হবে।’ ’’
বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-চেতনা ধারণ করতেন জুয়েল। বঙ্গবন্ধুর নানা কথা এখনও তাঁর কানে বাজে। তিনি বলতেন– ‘‘তুমি দেশ থেকে কী পাবা সেটা ভাববা না। চিন্তা কর দেশটাকে তুমি কী দিতে পারবা।’’ জুয়েলের কাছে মানুষকে ভালোবেসে কাছে টেনে নেওয়ার সবচেয়ে বড় উদাহরণ বঙ্গবন্ধু। বলতে বলতেই আবেগে আপ্লুত হন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ পারভেজ জুয়েল।
৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন– ‘‘আমি ছিলাম মঞ্চের ডানদিকে। মঞ্চ থেকে মাত্র পঞ্চাশ গজ দূরে। আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল, বঙ্গবন্ধু আজ যা বলবেন আমরা তাই করব। চেয়েছিলাম বঙ্গবন্ধু আজ স্বাধীনতার ঘোষণা করুন। কিন্তু সরাসরি তা তিনি করলেন না। বরং পরিষ্কারভাবে বলে দিলেন, ‘তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা কিছু আছে, আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি তোমরা বন্ধ করে দেবে।….এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।’ আমাদের কাছে এটাই ছিল স্বাধীনতার ঘোষণা।’’
কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের উপ-সেনাপতি এ কে খন্দকার সম্প্রতি তাঁর একটি বইতে লিখেছেন সেদিন বঙ্গবন্ধু ‘জয় পাকিস্তান’ও বলেছিলেন?
মুক্তিযোদ্ধা জুয়েলের উত্তর– ‘‘এগুলো পাগলের প্রলাপ। আপনিও তো অনেক যুদ্ধাহতের ইন্টারভিউ নিয়েছেন। তাদের অনেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তারা কি আপনাকে এমন কোনো তথ্য দিয়েছে? তাহলে বিদেশি গণমাধ্যমগুলোও তা প্রচার করত। পশ্চিম পাকিস্তানিরাও এ ইস্যু নিয়ে বসে থাকত না।’’
ইতিহাসের পথ ধরে হাঁটতে থাকি আমরা। জিজ্ঞেস করি, একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতের কথা।
‘‘১৭ মার্চে আমি চলে আসি মধুপুরে, বাবা-মায়ের কাছে। বাবা তখন মধুপুর থানার ওসি। ২৬ তারিখ সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইন থেকে বেঁচে আসা তিন পুলিশ সদস্যের মুখে আমরা ঢাকার গণহত্যার কথা জানতে পারি। বুকের ভেতরটা তখন দপ করে ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ছিলেন বড় ভাই সোহেল রানা। তাঁকে নিয়ে নানা দুশ্চিন্তা ঘুরপাক খায় মনে।
রাণী ভবানী হাইস্কুলের হেড মাস্টার, শেখর, বাচ্চু, মজিদ, রাজ্জাক, জীবন, আক্তারসহ আমরা বসি মধুপুর বাজারে। সিদ্ধান্ত হয় প্রতিরোধ গড়ার। কিন্তু হাতিয়ার কোথায় পাই? মধুপুর থানায় ছিল ১৭টি থ্রি নট থ্রি। সরকারি চাকুরি করলেও বাবা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। তাঁর অনুপস্থিতিতে একদিন আমরা মালখানা লুট করি। অতঃপর ট্রেনিং চলে জলছত্র ও টেংরিবাড়ি পাহাড়ে। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের হাবিলদার মনসুর আলী ছিলেন আমাদের ট্রেনার। একুশ দিনের ট্রেনিং নিই আমরা ৩৪জন।’’
ট্রেনিং থেকে যুদ্ধে যোগ দেন এই যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। নিজের যুদ্ধদিনের অভিজ্ঞতা বললেন তিনি–
‘‘১১ নং সেক্টরের অধীনে প্রথমে অপারেশন করি মধুপুর বাজার ও কালিহাতিতে। আহত হওয়ার পরে সুস্থ হয়ে যোগ দিই ঢাকার আজমল হকের গ্রুপে। রাজার দেউড়ি পুলিশ লাইনের জেনারেটর উড়িয়ে দেওয়ার অপারেশনে আজমল, এমদাদ, কানা আজিজ, ঠাণ্ডু ও রহমানদের সঙ্গে আমিও ছিলাম।’’
এভাবেই এক অপারেশনে মারাত্মকভাবে আহত হন এই মুক্তিযোদ্ধা। পাকিস্তানি সেনাদের গুলি তাঁর ডান হাতের কব্জির নিচ দিয়ে হাড় ভেঙে, মুখ দিয়ে ঢুকে, বাম গালের হাড় উড়িয়ে দিয়ে বেরিয়ে যায়। রক্তাক্ত সে দিনটির কথা জানালেন তিনি–
‘‘১৮ এপ্রিল, ১৯৭১। মধুপুর থেকে মুভ করে আমরা যাব টাঙ্গাইলে। খবর আসে পাকিস্তানি সেনারা টাঙ্গাইল থেকে মুভ করে হামিদপুর হয়ে কালিহাতি ব্রিজে আসছে। তার আগেই ব্রিজের চারপাশে আমরা অ্যামবুশ পেতে বসে থাকি। মুক্তিযোদ্ধাদের ছোট ছোট অনেকগুলো দল ছিল সেখানে। মুজাহিদ, ইপিআর, পুলিশসহ সব মিলিয়ে দুশ’র মতো।
আমার অবস্থান রাস্তার বাম দিকে, হাটের জন্য তৈরি করা উঁচু জায়গার পাশে। সামনে কোনো প্রটেকশন নেই। বেলা তখন ১ টা। ওরা ব্রিজে উঠতেই আমরা ফায়ার ওপেন করি। সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু পাকিস্তানি সেনা লুটিয়ে পড়ে। তা দেখে ওরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। একের পর এক হেভি মেশিনগান ও এলএমজির গুলি চালাতে থাকে। ঘণ্টাখানেক চলল গোলাগুলি। অতঃপর বেইস ক্যাম্প থেকে ওরা আর্টিলারি মারতে থাকে। আর্টিলারির আঘাতে আমাদের শরীরসহ মাটি কেঁপে ওঠে। নিচু জমির পথ দিয়ে গ্রামের দিকে সরে পড়ার চেষ্টা করি আমরা।
খানিক এগোতেই সহযোদ্ধা মজিদের আর্তচিৎকার। গুলি খেয়ে সে দূরে পড়ে আছে। তাকে তুলে আনতে হাবিলদার মনসুর ও আমি ক্রলিং করে এগিয়ে যাই। মজিদের কাছে আসতেই আমি গুলি খাই। প্রথম মনে হল শরীরটা যেন হালকা হয়ে গেছে। যেন আকাশে উড়ছি। তারপর হঠাৎ অনুভব করলাম, ডান হাতের কব্জির নিচে চিনচিন করছে। তাকিয়ে দেখি পিনপিনিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। রক্ত থামছে না। এভাবে রক্ত পড়লে মরতে হবে! ঘাস ডলে দিয়ে মনসুর তার গেঞ্জি খুলে হাতটা শক্ত করে বেঁধে দেয়। তখনও বুঝিনি মুখে গুলি লেগেছে।
পরে দেখি গুলিটি হাতে লেগে মুখের ভেতর হয়ে গাল রক্তাক্ত করে বেরিয়ে গেছে। সহযোদ্ধারা আমাকে নিয়ে যায় গোপালপুরে। সেখানে আমজাদ ডাক্তার প্রাথমিক চিকিৎসা করেন।
স্বাধীনতার পর চিকিৎসার জন্য সরকারিভাবে আমাকে পাঠানো হয় পোল্যান্ডে। হাতের ভেতরটা তখন গ্যাংগ্রিন হয়ে পচে গিয়েছিল। মোটা সিরিঞ্জ দিয়ে ওরা হাতের ভেতর থেকে পুঁজ বের করে আনে। এভাবে প্রতি সপ্তাহে একবার করে তিনমাস পুঁজ বের করে ওরা। কী যে কষ্ট হয়েছিল সে সময়টাতে! পরে ওরা হাতে অপারেশন করে একুশ বার। ফলে হাতটি রক্ষা পেলেও তিন ইঞ্চি ছোট হয়ে গেছে। ওই হাতে এখনও স্বাভাবিক কাজ করতে পারি না।’
যে দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন তা কি পেয়েছেন, সবিনয়ে জানতে চাই এই মুক্তিযোদ্ধার কাছে।
এমন প্রশ্নে মুচকি হেসে জুয়েল বলেন, ‘‘আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছি। ওই সময় এটাই ছিল স্বপ্ন। এটা পেয়েছি। কিন্তু আরও চেয়েছিলাম মানুষে মানুষে বৈষম্য কমবে, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি হবে না, গণতন্ত্রের চর্চা হবে এমন একটা দেশ। এটা পুরোপুরি হয়নি। তারপরও এ দেশ এগিয়েছে অনেক।’’
কথা ওঠে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রসঙ্গে। তিনি বলেন– ‘‘বাহাত্তর সালেই এ তালিকা চুড়ান্ত করা গেলে ফেক লোকেরা ঢোকার সুযোগ পেত না। তালিকা বাড়ার জন্য দায়ী অর্থলোভী কিছু মুক্তিযোদ্ধা। যাদের স্বাক্ষরে অমুক্তিযোদ্ধারাও আজ মুক্তিযোদ্ধা বনে গেছে।’’
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড নিয়ে এ মুক্তিযোদ্ধা অকপটে তুলে ধরেন নিজের মতামত। তাঁর ভাষায়–
‘‘পাকিস্তানিরা যা করতে পারেনি বাঙালিদের দিয়েই তারা তা করিয়েছে। জাতির জন্য এটি ছিল সবচেয়ে বড় ট্র্যাজিডি। নৌকার দাঁড় যদি ভেঙে দেন আর মাঝিকে যদি মেরে ফেলেন নৌকা চলবে ঠিকই কিন্তু নদীতে তা শুধুই ঘুরপাক খাবে, কোনো গন্তব্যে এগোবে না। আমাদের দেশের অবস্থাও পরবর্তীতে এমনটাই হয়েছিল।’’
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা জুয়েল বলেন–
‘‘বঙ্গবন্ধু বিচার শুরু করেছিলেন। ১১ হাজার রাজাকারকে বিচারের আওতায় আনা হয়েছিল। সে সময় ফাঁসির আদেশও দেওয়া হয়েছিল কুষ্টিয়ার রাজাকার চিকন আলীর। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সবকিছু পাল্টে যেতে থাকে। জিয়াউর রহমান এসে দালাল আইন উঠিয়ে দেন। রাজাকাররা পান স্বাধীন দেশে রাজনীতি করার বৈধতা। তার সরকারের প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান, যোগাযোগ মন্ত্রী আলিম, ধর্ম মন্ত্রী মওলানা মান্নান ছিল রাজাকার। আমি মনে করি মন্ত্রী বানানোর চেয়েও জিয়াউর রহমান দেশের সবচেয়ে ক্ষতি করেছেন ওদের রাজনীতি করার সুযোগ দিয়ে। এ ক্ষতি কখনও পূরণ হবার নয়।’’
সম্প্রতি আপিল বিভাগে দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর আমৃত্যু কারাবাসের রায় ঘোষিত হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আপনার অনুভূতি কী?
জুয়েল জানালেন, রায় শুনে তিনি কষ্ট পেয়েছেন, এমনটা আমরা প্রত্যাশা করেননি। রায় নিয়ে সরকারের সঙ্গে জামায়াতের আঁতাতের কথা বলছেন অনেকেই। কিন্তু জুয়েলের বক্তব্য–
‘‘বঙ্গবন্ধুর মেয়ে রাজাকারের সঙ্গে আঁতাত করতে পারে? আমি বিশ্বাস করি না। চল্লিশ বছর যে রাজাকারদের কেউ ছুঁতে পারেনি, তাদের বিচার করছে এ সরকার। আমি মনে করি বিচারের রায় দীর্ঘায়িত হওয়ায় এবং অভিযোগ উত্থাপনে ত্রুটি থাকার খবরে মানুষের মনে নানা প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে। তাই দ্রুত রায়গুলো ঘোষণা ও তা কার্যকর করা উচিত।’’
রাজনীতিতে আর্দশের অভাব রয়েছে উল্লেখ করে মুক্তিযোদ্ধা জুয়েল বলেন– ‘‘আর্দশ থেকে রাজনীতি অনেক দূরে সরে গেছে। ভবিষ্যতে যারা নেতৃত্বে আসবে তারাও এ বলয়ে ঢুকে যাচ্ছে। এখন এমপি হতে হবে, মন্ত্রী হতে হবে– এটাই বড় কথা। নির্বাচিত হয়ে এমপিরা আর এলাকায় থাকেন না। টাকা পয়সা কামানোতেই সবাই ব্যস্ত। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে রাজনীতি এক সময় মুখ থুবড়ে পড়বে।’’
স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁর ভালোলাগার বিষয়গুলোর কথা জানতে চাই আমরা। মুক্তিযোদ্ধা জুয়েল বলেন–
‘‘১৬ ডিসেম্বর (বিজয় দিবস) ও ১০ জানুয়ারি (বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন) আমার জীবনের সবচেয়ে খুশির দিন। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে একটি আকাঙ্ক্ষা আছে। মৃত্যুর আগেও যদি দেখে যেতে পারতাম, বাংলাদেশের সরকারি দলে এবং বিরোধী দলেও রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক!’’
খারাপ লাগার কারণও কি রয়েছে?
‘‘খুন, হত্যা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। মানুষের মাঝে মানবতাবোধ লোপ পাচ্ছে প্রবলভাবে। এসব দেখলে খুব কষ্ট পাই। নিজে ছাত্রলীগ করেছি। অথচ আজ বাংলাদেশের কোথাও আওয়ামী লীগকে খুঁজে পাই না। সরকারি দল আছে কিন্তু সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগ নেই।’’
নতুন প্রজন্মের মাঝে প্রবল দেশপ্রেম রয়েছে, এমনটাই ধারণা এ মুক্তিযোদ্ধার। তাদের ভোটেই নির্বাচিত হয়েছে এ সরকার। তাই তাদের প্রত্যাশার প্রতি দৃষ্টি দেওয়া সরকারের উচিত বলে মনে করেন তিনি।
পরবর্তী প্রজন্মের উদ্দেশে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ পারভেজ জুয়েল বলেন–
‘‘তোমরা মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জেনে নিও। একাত্তরে দেশটার ক্ষতি যারা করেছে তাদের সম্পর্কেও জেনে নাও। তারপর সিদ্ধান্ত নিবে। তাহলে দেখবে দেশটা অনেক এগিয়ে যাবে। কারও কাছে শুনে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জেনো না। মেধা দিয়ে সব পড়ে, জেনে বুঝে, যাচাই করে জেনে নিও কোনটা সত্য।’’
লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে বিডিনিউজ২৪.কমের মতামত-বিশ্লেষণ বিভাগে, অক্টোবর ১, ২০১৪
© 2014 – 2021, https:.