মানুষ মেরে কি ধর্মরক্ষা হয়
‘‘কয়েক জন মুক্তিযোদ্ধাকে ভর্তি হতে হবে শান্তি কমিটিতে। গুপ্তচরের মতো জেনে আসতে হবে পাকিস্তানি সেনাদের সব পরিকল্পনা। কাজটি যেমন কঠিন, তেমনই ঝুঁকিপূর্ণ। তবুও রাজি হই। সঙ্গী হন হাফিজ, তারেক ও হাবিব। আমাদের সাহায্য করেন কানু মিয়া । তিনি ছিলেন ছাগলনাইয়ায় পিস কমিটির চেয়ারম্যান। কিন্তু তাঁর যোগাযোগ ছিল মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে। প্রতি রাতেই পাকিস্তানিদের নানা পরিকল্পনার খবর দিতেন ক্যাপ্টেন শামসুল হুদাকে।
শান্তি কমিটিতে ভর্তি হই মাটিয়াগোদায়। ২ দিন চলে ট্রেনিং। শেষ দিনে আসে এক পাকিস্তানি ক্যাপ্টেন। একদিন সে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আমিও ভড়কে যাই। খানিক পরেই বলল– ‘তুমকো কমান্ডার বানায়েগা। বানেগা?’
কথা শুনে আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি। এগিয়ে আসেন কানু মিয়া। হাসতে হাসতে বললেন,‘হোয়েগা, হোয়েগা।’
ট্রেনিং শেষে আমাদের পাঠানো হয় শান্তি কমিটির ফেনী অফিসে। সেখানেই পরিকল্পনা চলে এক অপারেশনের।
ছাগলনাইয়ার পূর্ব পাশে শ্রীনগর এলাকা। সেখানে একটা বড় ব্রিজ ছিল ভারতীয় সীমানায়। ওই পথেই মুক্তিবাহিনী বাংলাদেশে ঢুকত। সেটিকে উড়িয়ে দিতে হবে। এক্সপোজার লাগানোর দায়িত্ব পড়ে আমাদের তিনজনের ওপর। ব্রিজ থেকে একটু দূরেই ছিল ছোট্ট পাহাড়। সেটিও ভারতীয় সীমানায়। সেই পাহাড়ে অবস্থান নিয়ে ব্রিজটি উড়িয়ে দিবে পাকিস্তানি সেনারা, এমনটাই ছিল পরিকল্পনা। এ খবর কানু মিয়ার মাধ্যমে চলে যায় ক্যাপ্টেন শামসুল হুদার কাছে।
ফলে ওই রাতে পাহাড়ের তিনদিকে অবস্থান নেয় ভারতীয় সেনা ও মুক্তিযোদ্ধারা। এক পাশ দিয়ে পাহাড়ে ঢোকে পাকিস্তানি সেনারা। আমরা এক্সপোজার ব্রিজে না লাগিয়ে পাশে কয়েকটি গাছে লাগিয়ে আসি। সেখান থেকে তার এনে পৌঁছে দিই পাহাড়ে অবস্থান নেওয়া পাকিস্তানি সেনাদের কাছে। তারা এর কিছুই টের পায় না। খানিক পরেই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটায়। কিন্তু ব্রিজ তখনও অক্ষত।
সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ের চারপাশ থেকে ভারতীয় সেনা ও মুক্তিবাহিনী সার্চলাইট জ্বালিয়ে তাদের পজিশন জানিয়ে দেয়। হতভম্ব হয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনারা। নিরুপায় হয়ে অস্ত্র ফেলে হাত উঁচিয়ে আত্মসমর্পণ করে।
‘মুক্তিবাহিনীর কেছকা মাইর’ শিরোনামে খবরটি ওই সময়ে বহুবার প্রচারিত হয়েছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে। ওই অপারেশনে পুরস্কার হিসেবে আমাদের তিনজনকে দেওয়া হয়েছিল এক মণ চাল, ১ কেজি রসুন, ২ কেজি ডাল ও ৫০০ টাকা করে। কিন্তু যে কানু মিয়ার জন্য আমরা জয় পেয়েছিলাম, তাঁকে বাঁচতে দেয়নি পাকিস্তানি সেনারা। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগাযোগের খবরটি পরে তারা জেনে যায়। ফলে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।’’
কথা হচ্ছিল যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আবুল বশির চৌধুরীর সঙ্গে। ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার সইত্যনগর গ্রামের আমির হোসেন চৌধুরী ও মাধু বিবির দ্বিতীয় সন্তান তিনি। লেখাপড়ায় হাতেখড়ি সইত্যনগর প্রাইমারি স্কুলে। পরে ভর্তি হন চাঁদগাজি হাই স্কুলে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন ওই স্কুলেরই ক্লাস টেনের ছাত্র। প্রশ্নের পিঠে আমরা প্রশ্ন করি। তিনি একে একে বলতে থাকেন যুদ্ধদিনের নানা ঘটনা।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ প্রসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা আবুল বশির বলেন:
‘‘তখন রেডিওতে মিলত সব খবর। বন্ধুরা মিলে একটি রেডিও কিনেছিলাম। ৫ জন দেয় এক মণ করে ধান। তা বিক্রি করে পাই ৩৯ টাকা। কিন্তু রেডিওর দাম ছিল ৬০ টাকা। বাকিটা চাঁদা তুলে কেনা হয়। আমরা বিবিসি ও ভয়েজ অব আমেরিকার সংবাদ শুনতাম। ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বললেন– ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দিব…’। এই কথা শোনার পর আমরা আর ঠিক থাকতে পারি নাই।’’
তখন কী করলেন?
‘‘লোকমুখে ঢাকায় আর্মি নামার খবর পেলাম ২৭ তারিখ। তখনই বুঝে যাই যুদ্ধ ছাড়া উপায় নেই। অস্ত্র হাতে নিতে হবে। আমরা ৩৩ জন একত্র হই। গ্রামেই বেঙ্গল রেজিমেন্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক থাকতেন। নাম ওবায়দুল। তিনি আমাদের ট্রেনিং করাতে এগিয়ে এলেন। আড়াই হাত লম্বা বাঁশের লাঠি বানালাম সবাই। কিন্তু ট্রেনিংয়ের জন্য লাগবে একটি বাঁশি। বাঁশি আনতে আমি চলে যাই ফেনী শহরে। পাকিস্তানিরা তখন সেখানে বোম্বিং করছে। জীবন বাজি রেখে ওইদিন কিনে এনেছিলাম বাঁশিটি। ঈদগাহ মঠে চলে আমাদের ৭ দিনের ট্রেনিং। কিন্তু মনোবল তৈরি ছাড়া সে ট্রেনিং আমাদের তেমন কাজে আসেনি।’’
এরপর কোথায় ট্রেনিং নিলেন?
‘‘ফেনী দখল করে পাকিস্তানি সেনারা গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছিল। বন্ধু কাশেম, লতিফ, নূর ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে আমরা তখন সুপ্তনগর বর্ডার পার হয়ে চলে আসি ভারতের কৃষ্ণনগরে। সেখান থেকে সোজা চোত্তাখোলা ক্যাম্পে। ট্রেনিং চলে ২১ দিন। আমি ছিলাম মুক্তিবাহিনীর প্রথম ব্যাচের যোদ্ধা। এফএফ নং ছিল ১১। পরে ১ নং সেক্টরে যুদ্ধকালীন সময়ে আমাকে আরও হায়ার ট্রেনিংয়ের জন্য পাঠানো হয় ভারতের হরিণায়। সেখানে চলে ১৪ দিনের কেমোফ্লাস ট্রেনিং। প্রশিক্ষক ছিলেন ওয়ারেন্ট অফিসার আবদুল মোমেন।’’
সেই সময়কার একটি অপারেশনের কথা শুনি মুক্তিযোদ্ধা আবুল বশির চৌধুরীর জবানিতে–
‘‘হায়ার ট্রেনিং শেষ করেছি মাত্র। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের এক হাবিলদার ছিলেন বেশ সাহসী। তাকে সবাই ডাকতাম ‘দসর ওস্তাদ’ বলে। তাঁর সঙ্গেই এক অপারেশনে যেতে হবে। তিন দিন ধরে চলে পরিকল্পনা। রেজুমিয়া এলাকায় মহুরির নদীর ওপর ছিল একটি ব্রিজ। ব্রিজের পাশেই পাকিস্তানি সেনাদের শক্তিশালী ক্যাম্প। ব্রিজ পেরিয়েই তারা আশপাশের গ্রামগুলোতে ঢুকত। আমরা ওই পথে তাদের আক্রমণের পরিকল্পনা নিই। আমাদের কাছে ছিল জি-থ্রি, এসএলআর, এলএমজি আর গ্রেনেড।
আহত হওয়ার রক্তাক্ত দিনটি এবং পরবতী প্রজন্মের প্রতি আশাবাদের কথা বলছেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আবুল বশির চৌধুরী:
পরিকল্পনামতো সতের গ্রাম হয়ে পৌঁছি মহুরি নদীর তীরে। ব্রিজ থেকে মাত্র ৭০০ গজ দূরে ছিল একটি বাড়ি। বাড়ির পুকুরপাড়ে পজিশন নিই। সকাল তখন ৮টার মতো। ক্যাম্প থেকে বেরোয় ১৭ পাকিস্তানি সৈন্য। ব্রিজের উপর আসতেই প্রথম ফায়ার করেন ‘দসর ওস্তাদ’। সঙ্গে আমরাও। নিমিষেই লুটিয়ে পড়ে সবগুলো দেহ। কিন্তু দৈবক্রমে নদীতে পড়ে বেঁচে যায় ৪ সেনা। তারা লুকিয়ে আমাদের পেছন দিয়ে আক্রমণের প্রস্তুতি নেয়।
আমি তখনও পুকুরপাড়ে। কাভারিংয়ের জন্য দুই সহযোদ্ধা চলে যায় পেছনে। কিন্তু অনেকক্ষণ কেটে গেলেও কাভারিং ফায়ারের কোনো শব্দ নেই। বিপদ বুঝে আমি পাশের গ্রামে আশ্রয় নিই। ওই গ্রামে ছিল আমার এক ভাগনি। বাড়িতে ঢুকতেই দূর থেকে দেখে ফেলে বেঁচে যাওয়া ওই পাকিস্তানি সেনারা। অস্ত্রসহ তারা অগ্রসর হয় বাড়ির দিকে। আমার ভাগনি তখন চিৎকার দিয়ে বলে, ‘ও আব্বা, আননেরে তো হেতারা মারি হালাইব। আই কী কইত্তাম? আননে ঢোলের ভিতরে ঢুকি শুই যান। আল্লা আননেরে বাঁচাইব।’
আমি ডোলের (বীজধান রাখার ঝুড়ি বিশেষ) ভেতর শুয়ে পড়ি। আমাকে আড়াল করতে আরেকটি ডোল বসিয়ে দেওয়া হয় তার ভেতর। পাকিস্তানি সেনারা বাড়ির ভেতর ঢুকেই হুংকার দিয়ে বলে, ‘বাইনচোদ কীদার হ্যায়? শুয়োর কী বাচ্চা মুক্তি, কীদার হ্যায়? শেখ কী বাচ্চা, কীদার হ্যায়?’
আমার মনে তখন অজানা ভয়। খুঁজে না পেয়ে তারা ডোলের আশপাশে গুলি চালায়।
অতঃপর আগুন ধরিয়ে দেয় ঘরটিতে। ডোলের ভেতর থেকে আমি আগুনের তাপ পাচ্ছিলাম। ভেবেছিলাম আগুনে পুড়েই মরতে হবে। ওরা চলে যেতেই আমাকে বের করে আনা হয়। মরতে মরতেও বেঁচে যাই সে যাত্রায়।’’
মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনবার আহত হন এই যোদ্ধা। প্রথমবার সেপ্টেম্বরের শেষে, চাঁদগাজিতে। পাকিস্তানি সেনাদের মর্টারের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্প্রিন্টার ঢুকে যায় তাঁর পিঠে ও বাম হাতে। ভারতের কৃষ্ণনগরে তিন দিন চিকিৎসার পর ফিরে আসেন ক্যাম্পে। পরে এক সম্মুখযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। গুলিটি তাঁর বাম পায়ের উরুর হাড় ভেঙে বেরিয়ে যায়।
কী ঘটেছিল রক্তাক্ত সে দিন, জানতে চাই আমরা। উত্তরে তিনি চোখের জল ফেলেন। খানিকটা নিরব থেকে বলেন চুয়াল্লিশ বছর আগের রক্তাক্ত ঘটনাটির কথা।
‘‘পরশুরাম, ছাগলনাইয়া, রেজু মিয়া, নুরজাহান তখন মুক্ত। ফেনী এসে মুক্তিবাহিনীরা সম্মিলিতভাবে ভাগ হয় দুভাগে। একভা গ চলে যায় চট্টগ্রামের দিকে। অন্য ভাগ কুমিল্লার দিকে। আমি কুমিল্লার দলটির সঙ্গে যাই।
লাকসাম রেলওয়ে স্টেশনের পশ্চিমের একটি গ্রামে এসে জড়ো হয় দু’দিকের পাকিস্তানি আর্মি। ৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১। ভোর তখন ৫টা। আমরা চারদিক থেকে ওই গ্রামে আক্রমণ করি। ওরা মাঝখানে। থেমে থেমে গুলি চলছিল। ফাস্ট লাইনে আমি। একটু পর পর বৃষ্টি হচ্ছে। দেড় দুইদিন খাওয়া নেই। ৮ ডিসেম্বর দুপুর। সবাই শোয়া। মাথা তোলার উপায় নেই। ক্রলিং করে একটু এগোই। ৩০০ গজ হলেই পাকিস্তানি বাঙ্কারে গ্রেনেড ছুঁড়ে দিতে পারব। কাদামাটির পিচ্ছিল পথ। উঁচু আইল পার হচ্ছি। হঠাৎ একটি গুলি এসে লাগে বাম পায়ে। তবুও কিছুই টের পাই না। দৃষ্টি তখন শত্রুর দিকে। সবার সঙ্গে আমিও এগোচ্ছি।
পাশেই ছিলেন সহযোদ্ধা আইজ্জা। তিনি বললেন, ‘ওই চৌধুরী, তোরে মনে হয় জোকে ধরছে।’
তাকিয়ে দেখি পেছনে লাল রক্তের লাইন। রক্ত দেখে মাথাটা চক্কর দেয়। বাম পায়ে কেমন যেন ব্যথা। গুলির জায়গায় আঙুল দিতেই বেরিয়ে এল হাড়ের গুড়ো। তখনই চোখ দুটি ঝাপসা হয়ে আসে।
যখন জ্ঞান ফিরে তখন আমি ভারতের বাংলাদেশ মেডিকেলে। বাম পায়ের হাড়ে লোহার পাত দেওয়া। ধর্মনগর, শিবচর, গৌহাটি, পুনা, তারপর আর্মি হাসাপাতাল হয়ে চিকিৎসা চলে কলকাতায়। ১৬ ডিসেম্বরে এক ভারতীয় এসে বললেন, ‘তুমহারা দেশ আজাদ হো গিয়া।’
গৌহাটি হাসপাতালে এসেছিলেন শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী। বললেন, ‘তোমরা বাঘের বাচ্চা। তোমরা বীর। জাতি তোমাদের ভুলবে না।’
এখনও কানে বাজে কথাগুলো।’’
আলাপ ওঠে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রসঙ্গে। ক্ষোভ প্রকাশ করে জানালেন মুক্তিযোদ্ধা আবুল বশির বলেন:
‘‘হাতিয়ার জমা নেওয়ার সময়টাই ছিল তালিকা করার উপযুক্ত সময়। মিরপুরে এক মুক্তিযোদ্ধার বয়স ৪৮। তাহলে যুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল ৪ বছর! তিনিও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা; ভাতাও পাচ্ছেন! এসব কি মেনে নেওয়া যায়? যারা এভাবে মুক্তিযোদ্ধা তৈরি করেছে তাদেরও বের করে বিচার করা দরকার। তবে বর্তমানে সরকার সঠিক তালিকা প্রণয়নের যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটি আরও আগেই করা প্রয়োজন ছিল।’’
দেশে নানা সমস্যা। তবুও কেউ যখন সততার সঙ্গে নিজের দায়িত্ব পালন করেন তখন তা দেখে বুক ভরে যায় আবুল বশিরের। মিথ্যাকে সত্য বানানো, একের দোষ অন্যের ওপর দিয়ে চাপিয়ে দেওয়া এবং বড় বড় কথার রাজনীতি যারা করেন, তাদের ঘৃণার চোখে দেখেন এ বীর মুক্তিযোদ্ধা। বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমা প্রসঙ্গে তিনি বলেন:
‘‘বঙ্গবন্ধুর কলিজা ছিল বড়। তাই উদারতা দেখিয়েছিলেন। আমি মনে করি সাধারণ ক্ষমা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ছিল।’’
স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁর ভালোলাগার অনুভূতি জানতে চাই আমরা…
‘‘এখন তো স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে গর্ব নিয়ে থাকছি। দেশের শিক্ষা, কৃষি ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে অনেক উন্নয়ন ঘটেছে। এসব দেখলে ভালো লাগে।’’
আর খারাপ লাগে…
‘‘মানুষে মানুষে হিংস্রতা দেখলে কষ্ট লাগে। বোমা মেরে সাধারণ মানুষকে মেরে ফেলা হচ্ছে। শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। ধর্মের নামে চলছে মানুষ-হত্যা। স্বাধীন দেশে এমন অরাজকতা হবে কখনও চিন্তা করিনি। এটা তো রাজনীতি না, বাবা, এটা সহিংসতা। যে দলই করুক, সাধারণ পাবলিককে মেরে কি রাজনীতি হয়? মানুষ মেরে কি ধর্মরক্ষা হয়!’’
সরকারের কী করা উচিত?
‘‘এক দল পুড়িয়ে মারছে। আরেক দল বড় বড় কথা বলছে। সাধারণ মানুষ পুড়িয়ে মারার অপরাধে কঠিন আইন হওয়া দরকার, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন কাজ করতে সাহস না পায়। আর ধর্ম নিয়ে যারা বাড়াবাড়ি করে, তাদের বিরুদ্ধে সরকারের যেমন কঠোর হওয়া দরকার; তেমনি সাধারণ মানুষেরও উচিত প্রতিবাদ করা; প্রতিরোধ গড়া।’’
দেশে জঙ্গি তৎপরতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন:
‘‘অসাম্প্রদায়িক এই দেশে যারা ধর্মের নামে রাজনীতি শুরু করেছে তাদের হাত ধরেই জঙ্গি গোষ্ঠীর উত্থান ঘটেছে। এদের সাজা না হওয়ার ফলেই এরা প্রকাশ্যে একের পর এক হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। তাই উচিত সবার আগে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা।’’
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে তাঁর মত:
‘‘পাপ যে করে, কখনও না কখনও তাকে সেটার সাজা পেতেই হবে। অনেক আগেই এদের বিচার করা উচিত ছিল। পঁচাত্তর-পরবর্তী সরকারগুলো তো ওদের লালন করেছে। বিচারের পরিবর্তে ওদের স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী ও এমপি বানিয়েছে। কেউ কেউ ধর্মের চাদর পরে হয়েছে নামকরা মওলানা। আপনারা তো দেখেন নাই একাত্তরে রাজাকারদের অত্যাচার আর নির্মমতা। একটা মানুষ মারলে তার সর্বোচ্চ শাস্তি হয় ফাঁসি। ওরা তো শত শত মানুষকে হত্যা করেছে। ওদের কয়েক বার ফাঁসি হওয়া উচিত।’’
সপরিবারে আবুল বশির চৌধুরী
পরবর্তী প্রজন্মের প্রতি পাহাড়সম আশা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আবুল বশির চৌধুরীর। তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন:
‘‘তোমাদের লেখাপড়া করে যোগ্য মানুষ হতে হবে। কাজের প্রতি সৎ থেকো। দেশপ্রেমের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাও দেশকে। ধর্মের নামে দেশ অন্ধ করে দিতে দিও না কাউকে।’’
লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে, প্রকাশকাল: মার্চ ১৮, ২০১৫
© 2015 – 2021, https:.