এই মাটিতে এহনও আমগো রক্তের গন্ধ আছে
‘‘পড়াশুনা মোটামুটি করলেও ছোটবেলায় খুব দুষ্ট আছিলাম। পাঁচ বোনের এক ভাই। সবার ছোডো আমি। আদরের আর শেষ নাই। বাড়িতে কয়ডা গাই ছিল। হাতের কব্জি ডুবাইয়া দুধভাত খাইতাম আর বন্ধুগো লগে পাড়া বেড়াইতাম। টাকা লাগলে মা কইত, ‘চাল নিয়া যা’। ৫ আনা ছিল চালের সের। মা দুই সেরের কথা কইলে আমি নিতাম পাঁচ সের।’’
‘‘বাসেদ, সোলায়মান, আউয়াল, হামিদ– এরা ছিল দোস্ত। এগো লগেই সব সময় থাকতাম। মাছ ধরছি প্রচুর। নদীতে তহন এবেল এবেল মাছ ছিল। ভিষম হাডুডু খেলাইতাম। দূরের গ্রাম থাইক্কাও ডাক পড়ত আমগো।’’
‘‘আমার এক বইনের নাম তাজ্জাতুন নেসা। ডাকতাম ‘তাজু’ কইয়া। ওর ছিল সাতটা মেয়ে। ছেলে নাই। হেয় আমারে লেহাপড়া করাইত। বই, খাতা, এইডা সেইডা কিইন্যা দিত। বোনগো আদর পাইছি সব সময়। যুদ্ধে গিয়া পঙ্গু হইছি। ওরা তহন ওগো সব জায়গা-সম্পত্তি আমার নামে লেইখা দিছে। মায়ের সম্পত্তির ভাগও আমারে দিছে। এহনকার সময়ে কি এমন বোন পাইবেন? পত্রিকায় দেহি, সম্পত্তি লইয়া ভাই-বোনরা কামড়াকামড়ি করতাছে। অথচ এহনও আমার বোনরাই আমার সব।’’
নিজের জীবনের গল্প এভাবেই বলছিলেন এ বি এম গোলাম মোস্তফা। একজন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা তিনি। যুদ্ধদিনের গদ্য আর তাঁর ভাবনার কথা জানতে এক সকালে আমরা পা রাখি চাঁদপুরের মতলব উত্তর থানার দক্ষিণ ইসলামাবাদ গ্রামে, তাঁর নিজ বাড়িতে।
গোলাম মোস্তফার বাবার নাম ছিল মমতাজ উদ্দিন প্রধানিয়া। মা আরোজা বেগম। মোস্তফা লেখাপড়া শুরু করেন মতলবের ইন্দুরিয়া হাই স্কুলে। এখান থেকেই তিনি মেট্রিক পরীক্ষা দেন ১৯৬৫ সালে। অতঃপর চলে যান নারায়ণগঞ্জে, বড় বোন রাবেয়ার কাছে। ওখানকার তোলারাম কলেজে ভর্তি হন। ১৯৬৯ সালে ওই কলেজ থেকেই তিনি ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন।
সেই সময়ের কথা শুনি গোলাম মোস্তফার মুখে। তাঁর ভাষায়:
‘‘তহন তো ৬ দফা আর ১০ দফার আন্দোলন চলতাছে। কলেজের প্রিন্সিপ্যাল ছিলেন হরলাল বাবু। আমরা তহন মিছিল-মিটিং করতাম। আন্দোলন হইলেই পুলিশ-আর্মি দৌড়াইত। জানের নিরাপত্তা ছিল না। বেশি সমস্যা হইলে আমিও গ্রামে চইলা যাইতাম।’’
ভিডিও : যুদ্ধদিনের কথা বলছেন মুক্তিযোদ্ধা এ বি এম গোলাম মোস্তফা
মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফার বয়স এখন পঁয়ষট্টি। বার্ধক্য আর শরীরিক অসুস্থতায় স্মৃতি থেকে অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে। কিন্তু ঐতিহাসিক ৭ মার্চের কথা এখনও তাঁর স্মৃতিপটে জীবন্ত হয়ে আছে:
‘‘ভাষণের খবর আগেই ছিল। আমি তহন নারায়ণগঞ্জ আসছি। নেতাগো লগে নারায়ণ, অনিল, হাবিবুরসহ বাসে কইরা ঢাকায় আসি। বেলা দেড়টার সময় ইঞ্জিনিয়ারিং ইনিস্টিটিউশনের দিক দিয়া রেসকোর্স ময়দানে ঢুকি। বিকালে ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু। তিনি কইলেন, ‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শক্রর মোকাবেলা করতে হবে… আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি তোমরা বন্ধ করে দেবে’– হাজার হাজার মানুষ তহন বাঁশের লাঠি তুইলা স্লোগান দিতে থাকে। এহনও মনে হইলে গায়ের লোম খাড়াইয়া যায়।’’
বঙ্গবন্ধুর ওই ভাষণই গোলাম মোস্তফার কাছে স্বাধীনতার স্পষ্ট ঘোষণা। তাঁর ভাষায়–
‘‘ওই ভাষণের পর পাগলেরও যুদ্ধে যাওয়ার ঘোষণা লাগে না।’’
ভাষণ শুনে ওই দিনই মোস্তফা ফিরে যান নারায়ণগঞ্জে। রাতে আইটি স্কুলের সামনের পার্কে মিটিং করেন আওয়ামী লীগ নেতা হাফেজ হাবিবুর রহমান। তাঁর নির্দেশেই মোস্তফা ফিরে যান মতলবে। গ্রামের যুবকদের একত্রিত করা এবং প্রয়োজন পড়লেই ভারতে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করতে থাকেন। ২৫ মার্চ ঢাকায় আর্মি নামার খবর তাঁরা পান রেডিওতে। গ্রামে তখনও আর্মি ঢুকেনি। তার আগেই মোস্তফা ঘর ছাড়েন দেশের টানে।
‘‘১৭ এপ্রিল, ১৯৭১। তারিখ ১৭, আমরা বাড়ি ছাড়ি যারা তাদের সংখ্যাও ১৭। শফিক পাটোয়ারি, নূর ইসলাম, তনু, মোয়াজ্জেম ছিল সঙ্গে। একটা কাপড়ের ব্যাগে দুইডা শার্ট নিয়া চইলা গেলাম। নৌকায় প্রথমে নন্দলালপুরে। সেখানে সবাই একত্র হইয়া দাউদকান্দি চইলা আসি। পরে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার আখাউড়ায় গেলে আওয়ামী লীগ নেতারা একটা কার্ড দিয়া দেয়। ভারতের রাধানগরে ওই কার্ড দেখাইতেই ওরা পাঠাইয়া দেয় কাঁঠালিয়ায়। পরে হাতিমারায় দুই সপ্তাহ চলে লেফট-রাইট। হেরপর মেলাঘরে চলে ২১ দিনের ট্রেনিং। আমার এফএফ নং ছিল– ২১৬। এক্সপ্লোসিভের ট্রেনিংয়ে হিসাব-কিতাব লাগত। একটা ব্রিজ ভাঙতে হইলে এক্সপোলেটর ও ডেটোনেটর কতটুক লাগব, কোন দিকে, কীভাবে লাগাইতে হইব, গাছ কীভাবে ফেলতে হইব, মাইন লাগানো এইগুলা শিখাইত। শিক্ষিত বইলা এই ট্রেনিংয়ের সুযোগ পাইছিলাম আমি।’’
ট্রেনিংয়ের পর কোথায় পাঠানো হল আপনাদের?
‘‘প্রথম ছিলাম রাধানগরে, ২ নং সেক্টরের টেইন-ইস্ট বেঙ্গলের সঙ্গে। কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন ইমামুজ্জামান। তিনি তখন সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট। এক্সপ্লোসিভের আমগো ৭ জনরে তিনি নিয়া যান সোনাইমুড়ি ক্যাম্পে।’’
কোথায় কোথায় অপারেশন করেছেন?
‘‘সোনাইমুড়ি থেইকা বাংলাদেশে ঢুইকা আক্রমণ কইরা আমরা আবার ফিরা যেতাম। মাইন লাগানোতে ছিলাম পটু। একটা মাইন ছিল, পাড়া দিলে মানুষ মারা যাইব। আরেকটা হইল পাড়া দিলে মানুষ মরবে না ক্ষতি হবে। আরেকটা অ্যান্টি-ট্যাংক। ওইটা দিয়া গাড়ি উড়াইতাম, ব্রিজ উড়াইতাম। কুমিল্লার দক্ষিণে মিয়ার বাজার, রাজারমার দীঘি, ফেনি, ছাগলনাইয়া এইসব জায়গায় অনেক অপারেশন করছি।’’
এক রক্তাক্ত অপারেশনে বাঁ পা উড়ে যায় মুক্তিযোদ্ধা এ বি এম গোলাম মোস্তফার। ঝলসে যায় তাঁর ডান পা। সারা শরীরে বিদ্ধ হয় স্প্লিন্টার। পঙ্গুত্ব আর নানা শরীরিক অসুস্থতা নিয়েই বেঁচে আছেন এই যোদ্ধা। কী ঘটেছিল সে দিন? এমন প্রশ্নে নাড়া পড়ে তাঁর স্মৃতিতে। বুকের ভেতরের কষ্টগুলোও জমতে থাকে তাঁর দুচোখে। সে গল্প বলতে বলতে চোখ ভেজান তিনি। আমরাও তখন আনমনা হই। অনুভব করার চেষ্টা করি এক মুক্তিযোদ্ধার অনুভূতি:
‘‘১১ নভেম্বর, ১৯৭১। আগের দিন পরশুরাম থানায় প্রচণ্ড যুদ্ধ হইছে। আর্মিসহ দেড়-দুই হাজার মুক্তিবাহিনী। পাকিস্তানি সেনারা লাকসাম থেইকা পরশুরাম ঢুকব। প্রচণ্ড গোলাগুলি চলতেছে। দুই-তিন জন মারা যাওয়ার পরপরই ডাক পড়ে এক্সপ্লোসিভের লোকদের। আমি, আহসান্নুল্লাহ আর একজন যাই। লাকসাম থেইকা পরশুরাম যাওয়ার রাস্তায় প্রায় ৮ কিলো জায়গায় মাইন পুঁততে হইব। উদ্দেশ্য, পাকিস্তানি সেনারা যাতে ট্যাংক নিয়া অ্যাডভান্স হইতে না পারে। মুহুরী নদীর পাড়ে দনুগণ্ডা গ্রামে ছিল ওই রাস্তাটা।’’
‘‘বৃষ্টির মতো গোলাগুলি চলতেছে। এর মইদ্যে আমরা তিন জন মাইন লাগানোর জায়গা ভাগ কইরা নিলাম। বেলা তখন তিনটা। শুরু হয় এম ফোট্রি মাইন লাগানো। আমাদের পাহারায় থাকে মুক্তিযোদ্ধাদের ৪-৫ জনের একটা দল। আমার সঙ্গে থাকত চাইরটা গ্রেনেড আর একটা বেনেট। বেনেট দিয়া মাটিতে গর্ত কইরা মাইন পুঁইতা আবার সেই মাটি দিয়া চাপা দিতে থাকলাম। এইভাবে চলল মাইন পুঁতা।’’
‘‘আছরের আজান তহন শেষ। হঠাৎ পাকিস্তানি সেনারা আর্টিলারি ফায়ার শুরু করে। আমার পিছনের দিকে তিনটা তালগাছ ছিল। একটা গাছের ওপর আইসা আর্টিলারি বোমা পড়ে। গাছ থেইকা সেলের একটা টুকরা আইসা পড়ে আমার বাম পায়ের ওপর। প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফোরণে আমি ছিটকা গিয়া পড়ি রাস্তার পাশের ধানখেতে। তহনও সেন্স আছে। দেখলাম ডাইন পাডা ঝলসাইয়া গেছে। আর বাম পায়ের রক্তে ধানখেতের পানি লাল হইয়া গেছে। সহযোদ্ধারা গামছা দিয়ে আমার পা পেঁচাইয়া দিল। বাম পা হাঁটুর নিচ থাইকা কখন উইড়া গেছে টের পাই নাই। ওরা কাঁন্ধে কইরা আমারে ক্যাম্পে লইয়া যায়। একটা ইনজেকশন দিতেই আমি জ্ঞান হারাইয়া ফেলি।’’
‘‘প্রথমে আগরতলা হাসপাতালে, পরে গৌহাটি ও লখনৌ খিরকী হাসপাতালে আমার চিকিৎসা চলে। ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীনের সময় আমি ছিলাম গৌহাটি হাসপাতালে। এক নার্স আইসা কইল, ‘তোমাহারা মুল্লুক আজাদ হো গিয়া।’ সে মিষ্টি খাওয়াইয়া দিল আমারে। অনেক আনন্দ লাগছে সেদিন। একটা পা নাই আমার, তবু তো দেশ স্বাধীন হইল।’’
পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল?
গোলাম মোস্তফার উত্তর:
‘‘মা জানত আমি মইরা গেছি। ‘শহীদ’ হিসেবে বঙ্গবন্ধু মাকে একটা চিঠিও দিছিল। সঙ্গে পাঁচশ টাকা। ওই টাকাটা মা ফেরত দিছে। পরে পুনা হাসপাতাল থেইকা বাড়ির ঠিকানায় চিঠি পাঠাইলে সবাই জানে আমি বাঁইচা রইছি। হয়তো এই কারণেই মা বঙ্গবন্ধুর দেওয়া টাকাটা লয় নাই।’’
কথা ওঠে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রসঙ্গে। তিনি বলের:
‘‘স্বাধীনের পর পরই রাজাকারের তালিকা করা ছিল প্রধান কাজ। যহন যে সরকার আইছে তারাই মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা বাড়াইছে। অমুক্তিযোদ্ধারাও তহন মুক্তিযোদ্ধা হইছে আর আসল মুক্তিযোদ্ধারা বাদ পইড়া গেছে। দোষ মুক্তিযোদ্ধাগোও আছে। থানা কমান্ডাররা এক সময় তার ভাইরে, বোনের জামাইরে মুক্তিযোদ্ধা বানাইছে। অনেক মুক্তিযোদ্ধা গ্রামে না খাইয়া মরতেছে আর সার্টিফিকেট নিয়া অমুক্তিযোদ্ধারা ডাটফাট আর বাহাদুরি কইরা চলতাছে।’’
স্বাধীনতার পর দেশের অবস্থা কেমন দেখেছেন?
‘‘দেশে তো কিছুই ছিল না। ব্যাংক নাই, রাস্তাঘাট ভাঙা, যোগাযোগ ব্যবস্থা নাই। পাকিস্তানি আর্মি আর রাজাকাররা মাটি ছাড়া এদেশে আর কিছুই রাইখা যায় নাই। সব দেশের সঙ্গে তখনও সুসম্পর্ক গইড়া উঠে নাই। বঙ্গবন্ধুর চেষ্টা ছিল। মনেপ্রাণে তিনি চাইতেন বাঙালি মাথা তুইলা দাঁড়াক।’’
বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে এই যোদ্ধা অকপটে তুলে ধরেন নিজের মতামত। তাঁর ভাষায়:
‘‘পাকিস্তানিরা তো বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে লাইগা ছিলই। অনেকেই বলেন, দলের নেতাদের বিরুদ্ধে তিনি কঠোর হইতে পারেন নাই। এইটা ঠিক না। তিনি কঠোর হইছিলেন বইলাই তাঁরে বাঁচতে দেয় নাই ওরা। তাঁর হত্যায় শুধু পাকিস্তানের মদদ ছিল তা না, আমি মনে করি আওয়ামী লীগের কিছু নেতাও জড়িত ছিল। অনেকেই তো তহন ভারতে গিয়া আশ্রয় নিছিল। একই অবস্থা দেখছি ওয়ান-ইলেভেনের সময়ও। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কত নেতাই তো কত কথা কইছে! মীর জাফরদের তো কুনু দল থাকে না।’’
বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমার বিষয়ে তিনি বলেন:
‘‘যারা লুট, ধর্ষণ, রাহাজানি আর হত্যা করছে তাদের তো ক্ষমা করেন নাই বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তানিদের পানি খাওয়াইছে, রাস্তা চিনায়া দিছে এমন ছোট অপরাধের ক্ষমা করাটা তো ঠিকই ছিল।’’
স্বাধীনতার পরে স্বাধীন দেশের পতাকা উড়েছে রাজাকারদের গাড়িতে, কেন?
এমন প্রশ্নে তাঁর মনে ঝড় ওঠে। তিনি বলেন:
‘‘যে পতাকার জন্য অঙ্গ দিলাম সে পতাকা রাজাকারদের গাড়িতে উড়ছে, এইটা কেমনে মাইনা লই? এর জন্য দায়ী জিয়াউর রহমান ও তার দল। ক্ষমতার লোভে তিনি অন্ধ ছিলেন। রাজাকার ছাড়া তো তিনি দেশ চালাইতে পারতেন না। রাজাকারগো ছিল চিহন বুদ্ধি। পরে তো খালেদা জিয়াও তাগো চিহন বুদ্ধিতে চলছে। তারাও তো রাজাকারই। আমরা দেশ স্বাধীন করছি, রক্ত দিছি, অঙ্গ দিছি। এই মাটিতে এহনও আমগো রক্তের গন্ধ আছে। আর তারা রাজাকারগো কোলে তুইল্লা বইসা আছে। তার দলরে তো রাজাকাররাই খাইয়া ফেলছে!’’
রাজনীতির নামে নিরীহ মানুষ পুড়িয়ে মারা প্রসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা হতাশা প্রকাশ করেন। দুঃখ করে তিনি বলেন:
‘‘এমন দেশ হইব আশাও করি নাই। সাধারণ মানুষ পুড়াইয়া কি রাজনীতি হয়! এই রাজনীতিকদের তো মানুষ ঘৃণা করে। এই যে ধরেন, এখন বিদেশিদের হত্যা করা হইতাছে। উদ্দেশ্য তো একটাই, এই দেশটারে ভালা না রাখা। পৃথিবীর কাছে দেশটারে হেয় করা। রাজনীতির নামে যারা এইটা করতাছে তারা কি এই দেশটারে ভালবাসে? দেশটার ভালা চায়?’’
র দেরিতে হলেও দেশে যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকারদের বিচার হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের বুকের ভেতরের কষ্টের বোঝা নেমে যাচ্ছে। গোলাম মোস্তফা মনে করেন, যত দ্রুত সম্ভব এদের বিচার ও রায় বাস্তবায়ন করা উচিত। রাজাকাররা যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন তারা বা তার দল এই দেশে অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি করার চেষ্টা করতে থাকবে।
যে দেশের জন্য রক্ত দিয়েছেন সেই দেশ কি পেয়েছেন?
খানিকটা নীরব থেকে মোস্তফার উত্তর:
‘‘‘পাই নাই বাবা। স্বপ্ন ছিল হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবারই দেশ হইব এইটা। স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করব সবাই। উন্নতি দেখতেছি, এইটা ভাল লাগে। কিন্তু দুর্নীতি দেইখা তো কষ্ট পাই। প্রতিদিন পেপার খুললেই খারাপ লাগে। আর ধর্মের নামে যে মানুষ হত্যা হচ্ছে এইটা তো মাইনা নিতে পারি না।’’
এখন দেশ কেমন চলছে?
‘‘‘উন্নয়ন অবশ্যই হইতেছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলায় দুর্বল দেশ। আয় বাড়তেছে। বেকারত্ব কমতেছে। দলের লোকদের লুটপাট কমাইতে হবে। মানুষকেও সচেতন হইতে হবে। শেখ হাসিনা একলা তো ষোল কোটি মানুষের দরজায় দরজায় যাইতে পারবেন না। ওইটা করবে দলের লোকেরা। সেইটা তো নাই। সবাই ব্যস্ত টাকা কামানোর কাজে।’’
১৬ ডিসেম্বর আর ২৬ মার্চের দিন দুটি মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফার আনন্দের ও গর্বের দিন। তিনি বলেন:
‘‘ইয়ুং জেনেরশন যদি মুক্তিযুদ্ধে না যাইত তাইলে তো দেশ স্বাধীন হইত না। তারা তো মরার চিন্তা করে নাই। তাই এখনও দেশের জন্য যুবকদেরই কাজ করতে হইব। দেশের স্বার্থে তাদের সজাক থাকা দরকার।’’
যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এ বি এম গোলাম মোস্তফা মনে করেন, পরবর্তী প্রজন্মের হাত ধরেই এই দেশ এগিয়ে যাবে। তারাই দেশে উন্নয়নের আলো ছড়িয়ে দিবে। বুকভরা আশা নিয়ে তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন:
‘‘তোমরা লেখাপড়া কইরা নিজেদের যোগ্য হিসাবে গইড়া তোল। দেশের ইতিহাস ও স্বাধীনতার প্রশ্নে আপোস কইর না। দেশরে ভালবাস। এই দেশটাই তো তোমাদের মাতৃভূমি।’’
লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে, প্রকাশকাল: অক্টোবর ১২,২০১৫
© 2015 – 2018, https:.