দেশটা হল মায়ের মতন
“২২ সেপ্টেম্বর ১৯৭১। আমাকে বদলি করা হয় ৩ নং সেক্টরের হেড কোয়ার্টার হেজামারায়। কামান্ডার ছিলেন কে এম শফিউল্লাহ। সাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সেখানে গড়ে তোলা হয় ‘সেক্টর ট্রুপস কোম্পানি’। কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন জেনারেল মতিন (সাবেক উপদেষ্টা)। তখন তিনি ক্যাপ্টেন। আমাকেও একটি কোম্পানির জন্য বেছে নিলেন তিনি। আমার কোম্পানির নাম ছিল ‘ইকো কোম্পানি’।
“আজমপুরে ছিল পাকিস্তানি সেনাদের শক্তিশালী ঘাঁটি। সেখান থেকে মাত্র ৫০০ গজ দূরে বাংকার বানানোর প্রস্তুতি নিই আমরা। সঙ্গে থাকা ছোট ছোট বেলচাই ছিল তখন ভরসা। কিন্তু মাটি এত শক্ত যে কোদাল দিয়ে গর্ত করা ছিল দুরূহ ব্যাপার। আমার দিনরাত খাটতে থাকি। তবু দুদিনে বাংকার করেছিলাম মাত্র কয়েকটা।
“৩ ডিসেম্বর ১৯৭১। প্রস্তুতি দেখতে আসেন কোম্পানি কমান্ডার মতিন স্যার। সে সময়ই পাকিস্তান সেনারা আমাদের লক্ষ্য করে শেল মারতে থাকে। বাংকারে আমরা দুজন। নিজেকে বাঁচাতে একজন সৈন্যসহ মতিন স্যার আশ্রয় নেন আমাদের ওখানে। ছোট্ট বাংকার, জায়গাও কম। শরীরটাকে বাহিরে রেখে আমি কোনোরকমে সামলে নিচ্ছিলাম। শো শো শব্দে গুলি আর শেল যাচ্ছিল শরীরের পাশ দিয়েই। মনে হচ্ছিল যে কোনো সময় লেগে যাবে। কমান্ডার স্যার তখন চিৎকার দিয়ে উঠেন। আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ওই সামসু মরবা তো। তোমার শরীরটা একটু নামাও।’ খানিক পরেই ইন্ডিয়ান আর্মিরা সার্পোটিং শেল ও ফায়ার শুরু করে। ফলে সে যাত্রায় আমরা বেঁচে যাই। কিন্তু তখনও জানি না একদিন পর আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে।
“ডিসেম্বরের ৪ তারিখ। একই জায়গায় চলছে তুমুল যুদ্ধ। পাকিস্তানি সেনারা শত শত আর্টিলারি ফেলছে। আমরাও গুলি ছুরে বাংকার থেকে পাল্টা জবাব দিই। কিন্তু আর্টিলারির বিপরীতে তো গুলি টেকে না। হঠাৎ ধুম করে একটা বিকট শব্দ হল। বাংকার থেকে মাত্র দেড় হাত সামনে এসে পড়ে একটি শেল। তখন ধুলায় ঝাপসা হয়ে আসে চোখ দুটো। কিছু বোঝার আগেই গোটা বাংকার ধসে পড়ে আমার শরীরের। আমিও চাপা পড়ি ঢালাই কবরে।
“সহযোদ্ধারা আমার পা ধরে টেনে তুলে আনেন। সারা শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছিল। তখনও বুঝিনি স্পাইনাল কর্ড ভেঙ্গে গেছে। ভাবিনি আমি আর কখনও দাঁড়াতে পারব না। আগরতলা জিবি হাসপাতালের ডাক্তাররা বললেন, ‘আর যুদ্ধ করতে পারব না’। শুনেই বুকের ভেতরটা ধপ করে ওঠে। স্বাধীনতার জন্য পঙ্গু হয়েছি। তবু আফসোস নেই। আমাদের রক্তের বিনিময়ে একটা দেশ হয়েছে। পেয়েছি একটি পতাকা। একজন যোদ্ধার জন্য এর চেয়ে আনন্দের আর কী আছে?”
মুক্তিযুদ্ধে আহত হওয়ার রক্তাক্ত স্মৃতি এভাবেই তুলে ধরছিলেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মো. সামসুদ্দিন।
বাড়ি বাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণপুর গ্রামে। একদিন সকালে আমরা পা রাখি তাঁর বাড়িতে। কথা চলে শৈশব ও কৈশোর নিয়ে। অতঃপর কথা এগিয়ে চলে মুক্তিযুদ্ধের নানা ঘটনাপ্রবাহে।
বাবা আজগর আলী ও মা লাতুনি বেগমের চার সন্তানের মধ্যে সামসুদ্দিন সবার ছোট। লেখাপড়ায় হাতেখড়ি বিষ্ণপুর প্রাইমারি স্কুলে। পরে তিনি ভর্তি হন মিশনারি হাই স্কুলে। ১৯৬৪ সালে তিনি ছিলেন ওখানকার এসএসসি পরীক্ষার্থী। কিন্তু নানা কারণে পরীক্ষা আর দেওয়া হয় না।
ছোটবেলার কথা বলতে গিয়ে সামসুদ্দিন বলেন–
“আমার বয়স তখন তিন মাস। একদিন কলেরায় মা মারা যায়। আমি তো দুধের শিশু। বাবা আমারে নিয়া কি করব? তহন আমার ফুপু বাদশা মা আমার দায়িত্ব নেয়। তাঁর কোনো সন্তান ছিল না। মায়ের আদর দিয়াই তিনি আমারে বড় করেন।
“ছোটবেলা থেকেই দুষ্ট ছিলাম। সারা দিন টইটই করে ঘুরে বেড়াতাম। বড়গো লগেও ওস্তাদি করতাম। তখন বয়স ১২। বিষ্ণপুর স্কুলের হেড মাস্টার ছিলেন আব্দুর রহমান। তিনি খোঁজ নিলেন গ্রামের কে কে স্কুলে যায় না। আমার নাম ছিল সবার প্রথমে।
“ফোরের ছেলেদের তিনি একদিন পাঠালেন আমাকে ধরে নিতে। আমি তো স্কুলে যামুই না। পূর্বদিক দিয়া দেই এক দৌড়। ওরাও আমার পিছু নেয়। তিন মাইল দূরে গিয়া ক্লান্ত হইয়া পড়ি। ওরা তহন ধরে নিয়ে যায় স্কুলে। ওইটাই ছিল জীবনে প্রথম স্কুলে যাওয়া। খালি গায়ে, লুঙ্গি খোলা অবস্থায়।”
৬ মার্চ ১৯৭১। সামসুদ্দিনের বয়স তখন ৩১। দেশটা তখনও পাকিস্তান। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করতেন শেখ মুজিব। বন্ধু দেলোয়ারসহ তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন ঢাকা যাওয়ার। রাত পোহালেই শেখের ভাষণ। শীতকাল তখন। রাত তিনটায় বাহ্মণবাড়িয়া থেকে চিটাগাং মেইল ট্রেনটিতে চড়ে বসেন দুই বন্ধু। অতঃপর কনকনে শীতের মধ্যে দাঁড়িয়েই চলে আসেন ঢাকাতে।
বাকি ইতিহাস শুনি সামসুদ্দিনের জবানিতে–
“ঢাকা পৌঁছাই ভোর ৭টায়। রেসকোর্স ময়দানে তখন বড় বড় বাঁশ দিয়া নৌকা বানানোর কাজ চলছে। দুপুরের পর শুরু হয় ভাষণ। সবার হাতে হাতে লাঠি। মনে হল যেন যুদ্ধ লাগবে। আমি ছিলাম মঞ্চ থেকে মাত্র ১০০ গজ দূরে। খুব কাছ থেকে দেখি বঙ্গবন্ধুকে। আহারে! কী সেই কণ্ঠ! এখনও কানে বাজে। ‘এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম’– মনে হলেই গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়। ওইদিনই ভেবেছি স্বাধীনতার জন্য পথে নামতে হবে। যুদ্ধ ছাড়া মুক্তি নেই।”
৯ এপ্রিল ১৯৭১। যুদ্ধ তখন চলছে। বিষ্ণপুর গ্রামের চেয়ারম্যান বজলুর রহমান ভূইয়ার উৎসাহে মুক্তিযুদ্ধে যান সামসুদ্দিন। গ্রামের ১৮ জন যুবকের সঙ্গে আখাউড়ার পূর্ব পাশের পার্বত্য ত্রিপুরার উসা বাজার শরণার্থী ক্যাম্পে প্রথমে নাম লেখান। পরে চলে আসেন ৩ নং সেক্টরের হেড কোয়ার্টার শিমলাতে। ক্যাম্পের দায়িত্বে তখন মেজর জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম। সেখানে সাত দিন চলে লেফট-রাইট।
সামসুদ্দিনের ভাষায়, “ইব্রাহিম স্যার তখন লেফটেনেন্ট। আমরা তাঁকে জমের মতো ভয় পাইতাম। সবাইরে লাইনে দাঁড় করিয়ে তিনি প্রশ্ন করতেন, ‘আমরা এখানে কেন এসেছি?’ একদিন আমি সাহস কইরা উত্তর দেই, ‘স্যার, আমরা মাতৃভূমিকে মুক্ত করতে এসেছি।’ উত্তর শুনে তিনি মুচকি হাসলেন।”
সামসুদ্দিন হায়ার ট্রেনিং নেন আসামের ইন্দ্রনগর থেকে। ট্রেনিং চলে এক মাস নয় দিন। তাঁর এফএফ নম্বর ছিল ৫৩৩৩। ট্রেনিং ক্যাম্পে বিগ্রেডিয়ার বাকসির কথা এখনও তাঁর মনে পড়ে।
ট্রেনিং তখন শেষ। এবার রণাঙ্গনে যাওয়ার পালা। ইন্দ্রনগর ট্রেনিং ক্যাম্প হতে সামসুদ্দিনকে প্রথম পাঠিয়ে দেওয়া হয় ৪ নং সেক্টরে। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন বীর উত্তম সি আর দত্ত। সেখানে ৩০ জনের দল করে তাঁরা অপারেশন করেন। দলের লিডার ছিলেন মাহাবুব নুর সাদী।
কানাইঘাট থানা অপারেশনের স্মৃতি মনে হলে এখনও তিনি আতকে ওঠেন। চোখের সামনে দেখেছেন সহযোদ্ধাদের মৃত্যু-যন্ত্রণা। কিন্তু তবু জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন স্বাধীনতার জন্য। ৪ নং সেক্টরে পাঁচ মাস যুদ্ধ করার পর তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ৩ নং সেক্টরে।
অনেকেই তো মুক্তিযুদ্ধে যাননি, আপনি কেন গেলেন?
এমন প্রশ্নের উত্তরে সামসুদ্দিন মুচকি হেসে বলেন, “ক্লাসের ক্যাপ্টেন, খেলার ক্যাপ্টেন আর যুদ্ধে যাওয়া সবার কাজ না। যারা প্রতিবাদী আর সাহসি তাদের পক্ষেই এটা করা সম্ভব। তাই সে সময় যারা সাহসী আর দুরন্ত ছিলেন তাঁরা নিজের জীবনের কথা ভাবেননি। বরং দেশকে মুক্ত করতে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে গিয়েছিলেন।”
রণাঙ্গনের নানা স্মৃতি আজও তাড়া করে মুক্তিযোদ্ধা সামসুদ্দিনকে। একটি ঘটনার কথা বললেন তিনি–
“তখন সেক্টর ট্রুপসে। একরাতে পজিশন নিয়ে বসে আছি। অপেক্ষায় থাকি কখন শক্রুর দেখা মিলবে। বৃষ্টির রাত। বিদুৎ চমকাচ্ছে অবিরত। আলোর ঝলকানিতে হঠাৎ চোখে পড়ে লোক মতো কেউ একজন দা হাতে কোপ দিতে আসছে। আলো সরে যেতেই তা আবার মিলিয়ে যায়। কয়েকবার দেখে খানিক ভড়কে যাই। সর্তক হই। অতঃপর যখনই দেখি তখনই তা লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ি। কিন্তু অবাক কাণ্ড! লোক তো মরে না! বিদ্যুৎ চমকালেই বার বার সে ফিরে আসে। দা দিয়ে কোপ দিতেও চায়। আমিও গুলি করি। মনের মধ্যে অজানা এক আতঙ্ক। এভাবেই কেটে যায় সারা রাত। ভোরের দিকে চারপাশ ফর্সা হতেই নিজের ভুল বুঝতে পারি। যেটাকে মানুষ মনে করে গুলি করছিলাম সেটা আসলে শত্রু নয়, বটগাছের নিচে হিন্দুদের একটি কালি মূর্তি।”
মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগে চোখ ভেজান বীর যোদ্ধা সামসুদ্দিন। চোখের সামনে সহযোদ্ধাদের মৃত্যু দেখেছেন। সেই স্মৃতি তাড়া করে ফিরত প্রতিনিয়ত। একজন অন্যজনকে চিনতেন না। অথচ যুদ্ধ করেছেন এক হয়ে। অপারেশনে যাওয়ার সময় একে অন্যের দিকে তাকিয়ে থেকে ভাবতেন, এটাই বুঝি শেষ দেখা! জানান সামসুদ্দিন।
যে দেশের জন্য পঙ্গু হলেন, স্বপ্নের সে দেশ কি পেয়েছেন?
“দেশ পাইছি, পতাকা পাইছি। কিন্তু কই আমগো অনেকের আচরণই তো পাকিস্তানিদের মতোই রয়ে গেছে। এহনও অনেকরে দেহি দেশ নিয়া হতাশ। দেশের ভাল কাজটা, উন্নতিটা চোখেই দেহে না। ওরা বলে দেশ নাকি পাকিস্তান থাকলেই ভাল হইত। উঠতে-বসতে যাদের ‘মাদারচোদ’ গালি খাইতে ভাল লাগে, তারাই কয় এইসব কথা। এগো দখলেই মেজাজটা খারাপ হইয়া যায়।”
মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রসঙ্গে এই সূর্যসন্তান অকপটে তুলে ধরেন নিজের মতামত। তাঁর ভাষায়–
“মুক্তিযোদ্ধাগো তালিকাটা স্বাধীনের পরে করতে পারলেই ভাল হত। এহন তো অনেক সময় চলে গেছে। মুক্তিযোদ্ধার গুয়ে যারা পাড়া দিছে তারাও মুক্তিযোদ্ধা বনে গেছে! স্বাধীনের পর সরকার বদল হইছে। সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাগো তালিকাও বদলাইছে। ফলে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা গেছে বেড়ে। এটা দুঃখজনক। আমার মতে একটা অপকৌশল। সুবিধা দিয়ে তালিকা বাড়িয়ে ভোট বাগানোর অপচেষ্টা। সেটি বিএনপিও করেছে, করেছে আওয়ামী লীগও।’
কষ্ট নিয়ে তিনি বলেন, “আমি যুদ্ধ করে পঙ্গু হয়েছি দেশের স্বাধীনতার জন্য। অনেকেই যুদ্ধ না করে কিংবা রাজাকার হয়েও মুক্তিযোদ্ধার সনদ পেয়েছে। সরকারি ভাতাও তুলছে। হাসতে হাসতে মাঝেমধ্যেই তারা বলে, ‘ওই সামসু, তুমিও মুক্তিযোদ্ধা, আমিও মুক্তিযোদ্ধা।’ তহন তো মরে যেতেই ইচ্ছা করে।”
যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মুক্তিযোদ্ধা সামসুদ্দিন। বাস্তবতা তুলে ধরে তিনি বলেন–
“সুবিধা লাভের জন্য তো মুক্তিযুদ্ধ করিনি। তবু এ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণের জন্য সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে। আগে আমগো সংসার চলত না। দোকানে বাকি থাকত। ভাতা তুলে বাকির খাতা কাটতাম। খরচও বেড়ে যাইত। কখনও ভাতা পাইতে দেরি হলে দোকানদারের কথাও শুনতে হত। এহন রেশন পাই। সরকার নানা সুবিধাও দিছে। মইরা গেলেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কোনো আফসোস নাই।”
দেশে ধর্ম নিয়ে রাজনীতিটা বন্ধ না করলে জঙ্গিবাদও বন্ধ হবে না বলে মনে করেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। পাশাপাশি তিনি দাবি তোলেন জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের। জঙ্গিবাদ ইস্যুতে সরকারকে শক্ত হাতে দমন করার পক্ষে তিনি। একইসঙ্গে এই যোদ্ধা চান সরকারি দলের দুর্নীতিবাজ নেতাকর্মীদের প্রতিও কঠোর থাকুক সরকার প্রধান। চোখে-মুখে আলো ছড়িয়ে মুক্তিযোদ্ধা সামসুদ্দিন বললেন–
“শেখ মুজিব না থাকলে যেমন বাংলাদেশ হত না। তেমনি শেখ হাসিনা না থাকলেও বাংলাদেশ এগোবে না।”
রাজনৈতিক সংস্কৃতি নিয়ে আক্ষেপের সুরে এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, “বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তারা শেখ মুজিবকে জাতির পিতা মানত না। মুজিবের নামও মুখে আনা যেত না তখন। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে জিয়াউর রহমানকে কোনো ব্যক্তিই মনে করে না। এই সংস্কৃতিটাও বন্ধ হওয়া দরকার।”
স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভালো লাগার কথা জানতে আমরা। উত্তরে সামসুদ্দিন বলেন, “স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পর পরই যখন আমরা স্মৃতিসৌধে ফুল দেই, লালসবুজের পতাকা যখন ওড়ে সারা দেশে, তখন প্রাণটা ভরে যায়।”
খারাপ লাগে কখন? খানিক নিরবতা। অতঃপর তিনি বলেন–
“যখন দেখি রাজাকার, আল বদর আর আল শামসদের ডাকা হচ্ছে যুদ্ধাপরাধী বলে। পত্রিকা তাদের নিয়ে বড় বড় খবর ছাপাচ্ছে। কেউ কেউ এইসব খুনিদের ফাঁসির পরে ‘হুজুর’ বলে আফসোস করছে। তখন খুব কষ্ট লাগে। এই স্বাধীন দেশে মাথা নিচু করে বাঁচবে মুক্তিযোদ্ধারা। আর বুক ফুলিয়ে রক্তচক্ষু দেখিয়ে টিকে থাকবে পাকিস্তানি দোসর রাজাকাররা। এটা তো হতে পারে না। ‘যুদ্ধাপরাধী’র মতো শব্দে নয় রাজাকারদের ডাকা উচিত– ‘খুনি’, ‘ধর্ষণকারী’ ও ‘লুটেরা’ বলে।”
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিবে পরবর্তী প্রজন্ম। এমনটাই বিশ্বাস ও আশা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মো. সামসুদ্দিনের। তাদের উদ্দেশ্যে তিনি শুধু বললেন–
“তোমরা নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তোল। দেশটাকে ভালবেসো। মনে রেখ দেশটা হল মায়ের মতন। মায়ের পাশে না থাকলে তোমার সব অর্জনই ম্লান হয়ে যাবে।”
লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে, প্রকাশকাল: ১২ নভেম্বর ২০১৬
© 2016 – 2021, https:.