আমরা বাঙালি, আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না
ইতিহাস বিকৃত প্রসঙ্গে জয় বলেন, ৭৫-এর পর থেকে পাঠ্যবইয়ে মিথ্যে ইতিহাস শেখানো হয়েছে। উদ্দেশ্যটা ছিল সত্য মানুষ ভুলে যাবে। মিথ্যা ইতিহাসকে বিশ্বাস করবে। এখনো তাই করা হচ্ছে। যারা স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করে, সত্যকে তুলে ধরতে চায়। এই মিথ্যার বিরুদ্ধে তাদের কথা বলতে হবে। স্বাধীনতার চেতনাকে আমরা যারা বিশ্বাস করি। সত্যটা আমাদেরই তুলে ধরতে হবে।
১৪ নভেম্বর ২০১৪। হোটেল র্যাডিসনের হলরুম। সময় তখন ৪টা। নানা প্রান্ত থেকে আসা চার শতাধিক যুবাদের সম্মিলন হলটিতে। নানা সুরে দেশের গান বাজছে। সুরে সুরে মন ছুঁয়ে যায়। বিশিষ্টজনের অপেক্ষায় রত। গণমাধ্যমের পরিচিতজনেরাও ক্যামেরাগুলোকে পরখ করে নিচ্ছেন।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সুশাসন-বিষয়ক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সুচিন্তা ফাউন্ডেশন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
প্রধান অতিথির আগমনের পরপরই আলোচক হিসেবে মঞ্চে আসেন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান, চিত্রশিল্পী হাশেম খান ও ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য ও সঞ্চালনা করেন সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মোহাম্মদ এ আরাফাত।
জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। সূচনা বক্তব্যে মোহাম্মদ এ আরাফাত বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেন আলোচনার বিষয়গুলোকে।
গণতন্ত্র মানে যা ইচ্ছে তাই করা নয়
গণতন্ত্রের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে মোহাম্মদ এ আরাফাত প্রশ্ন রেখে বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে আপনি চাইলেই কি রাস্তার উল্টো দিক দিয়ে গাড়ি চালাতে পারেন? পারেন কি অন্যজনের বাড়িতে আগুন দিতে? গণতন্ত্র কি আপনাকে এই শিক্ষা দেয়? গণতন্ত্র মানে তো যা ইচ্ছে তাই করা নয়। গণতন্ত্র মানে দেশকে ভালোবেসে আইনের মধ্যে থেকে নিজের অধিকারের কথা বলা। ‘
জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে নিরন্তর একটি লড়াই চলছে
নতুন প্রজন্মের বন্ধুদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কখনো কখনো ঝির ঝির বৃষ্টি দেখে আমরা হয়তো বিরক্ত হই। কিন্তু আমরা ভুলে যাই সামনে হয়তো ঝড় কিংবা মহাপ্রলয় অপেক্ষা করছে। বাংলাদেশে এখন স্বাধীনতার বিরোধী, শান্তির বিরোধী, সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে নিরন্তর একটি লড়াই চলছে। যদি আমরা পরাজিত হই, তাহলে আমাদের সবার ভবিষ্যৎ অন্ধকার হতে পারে। এই লড়াইয়ের মাঝখানে একটি শক্ত খুঁটির মতো ভারসাম্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন একজন মানুষ, তিনিইÑ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আলোচনার শুরুতেই বক্তব্য দেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং গণতন্ত্র ও সুশাসনের ক্ষেত্রে এর প্রভাব চমৎকারভাবে বিশ্লেষণ ধরেন।
আমরাই সেই বীর জাতি
তুরিন আফরোজ বলেন, আমরা এমন একটা জাতি, বীরের জাতি তো বটেই, সহনশীলও। এমন সহনশীল যে মুক্তিযুদ্ধের ৪৩ বছর পরও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি রাজনীতি করে, একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষরাও রাজনীতি করতে পারে। বিশ্বের আর কোথাও এমন উদাহরণ আছে বলে আমাদের জানা নেই। আমরাই সেই বীর জাতি। যারা আমাদের বিরোধিতা করল, তাদের কাছে আমাদের রাষ্ট্র, সংবিধান কিংবা আমাদের জনগণ- কেউ কিন্তু সুরক্ষিত নয়।
যুদ্ধাপরাধী শুধু একজন ব্যক্তি নয়
তিনি বলেন, দ্বিজাতিতত্ত্বের ওপর দাঁড়িয়ে যারা স্বপ্ন দেখেন ভবিষ্যতের, তারা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের মর্ম কী করে বুঝবে। তাই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের লড়াই, চেতনা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের জন্য আজ প্রয়োজন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের। যুদ্ধাপরাধী শুধু একজন ব্যক্তি নয়, কয়েকজন ব্যক্তির বিচারও নয়। যুদ্ধাপরাধী ভাবাদর্শ যারা ধারণ করে, তারও বিচার হওয়া জরুরি।
প্রমাণ করতে হয় একাত্তর একাত্তরই ছিল
যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে আন্তর্জাতিক চাপের কথা তুলে ধরে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ দুঃখ করে বলেন, দুঃখ লাগে তেতাল্লিশ বছর পরও বাংলাদেশকে প্রমাণ করতে হয় একাত্তর একাত্তরই ছিল। একাত্তরের অপরাধের যদি বিচার না হয়, বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি বাংলাদেশ টেনে চলেছে, তার খেসারত দিচ্ছে নতুন প্রজন্ম। একাত্তরের অপরাধের বিচার না হলে আজকের যে তরুণ কিশোরটি চলন্ত বাসে ককটেল ছুড়ে মারে, জ্বালিয়ে মারে জীবন্ত লোককেÑ সে কী করে বুঝবে অপরাধীর শাস্তি আছে। একাত্তরের অপরাধেরই যদি শাস্তি না হয়, আমরা সুশাসন, আইনের শাসন কীভাবে পাব।
আর কত স্বচ্ছতার পরীক্ষা দিতে হবে?
তিনি আরও বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারের স্বচ্ছতা নিয়ে কথা তোলা হয়েছে। প্রকাশ্য আদালতে বিচার চলছে, দেশে বা বিদেশে যেকোনো অবজারভার সে ট্রায়াল দেখতে পারে। তাহলে আর কত স্বচ্ছতার পরীক্ষা দিতে হবে। সাদ্দাম হোসেনের ট্রায়াল তো আমরা জানলামই না, কী হয়ে গেল আর ফাঁসি দেওয়া হলো।
সালিস মানি তালগাছ আমার
আসামিপক্ষের আইনজীবীদের সম্পর্কে তুরিন আফরোজ বলেন, আজকে মিডিয়ার কল্যাণে আমরা দেখি, অপরাধ প্রমাণের পরও তাদের আইনজীবীরা প্রকাশে চিৎকার করে বলছেন, ফরমায়েশি রায়, এ রায় মানি না। এত বড় আদালত অবমাননা। সালিস মানি তালগাছ আমার। বিচারে অপরাধ প্রমাণিত হলেই ফরমায়েশি রায় আর আঁতাতের গন্ধ খুঁজে পান তারা। অথচ তারা প্রতিটি ক্ষেত্রে আইনের সুযোগ নিয়েই বিচারিক প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করছেন।
উন্নত দেশেও মৃত্যুদন্ড বহাল তবিয়তে টিকে আছে
অনেকেই বলেন, মৃত্যুদন্ড উন্নত বিশ্বে নেই। আমাদেরও উন্নত হতে হবে। এ প্রসঙ্গে তুরিন বলেন, উন্নতির সর্বোচ্চ সিঁড়িতে আছে চীন, ইউএসএ, ভারত। এর কোনোটিতেই কিন্তু মৃত্যুদন্ড বন্ধ করা হয়নি। বিশ্বের মোস্ট পপুলেটেটে রাষ্ট্রগুলোতে মৃত্যুদন্ড বহাল তবিয়তে টিকে আছে। আমরাও একসময়, মৃত্যুদন্ড বন্ধ করব যখন আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করব। ডি জামাতাইজ করব পুরো সমাজকে।
খারাপ মুদ্রা সমাজ থেকে ভালো মুদ্রাকে বিতাড়িত করে
তিনি আরও বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার গণতন্ত্রের জন্য জরুরি, উন্নয়নের জন্য জরুরি, সুশাসনের জন্য জরুরি। আপনারা জানেন, ব্ল্যাক মানি ড্রাক সাইড দ্য গুড মানি। খারাপ মুদ্রা সমাজ থেকে ভালো মুদ্রাকে বিতারিত করে। তো আজকে যদি আমরা যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দিয়ে তাদের অভয়ারণ্য বানিয়ে রাখি, তাহলে আমাদের গণতন্ত্র তো তাদের হাতে গিয়ে পড়বে। ভালো যারা রাজনীতিবিদ, ভালো যারা দেশপ্রেমিক, তারা তো কোনো দিন আর টিকতে পারবে না। কারণ কালো টাকা যত রকম করাপশন তার ভেতরে ভালো রাজনীতিবিদদের হারিয়ে ফেলব।
তুরিন আফরোজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আপনি প্রমাণ করেছেন একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা কী করে রাখতে হয়। দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তুরিন আফরোজ বলেন, বাংলাদেশ হচ্ছে সেই রাষ্ট্র, যা যুগে যুগে প্রমাণ করেছে ন্যায় সব সময় প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ হলো সেই রাষ্ট্র যার যেকোনো জায়গার একমুঠো মাটি চিপলে শহীদের রক্ত আর বীরাঙ্গনার কান্না পাওয়া যায়। আমরা সেই স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের নাগরিক। আমরা একাত্তরে জয়ী হয়েছি। আমরা সামনের প্রতিটি দিনে জয়ীই হব।
শিল্পী হাশেম খান তার বক্তব্যে নিজের বিভিন্ন ঘটনার কথা তুলে ধরে বলেন, তরুণ সমাজই সবচেয়ে আগে অধিকারের কথা বলে। তারা যখন সুশাসনের কথা বলে তখন মনে আশা জাগে। প্রধানমন্ত্রী কথা দিয়েছিলেন, যুদ্ধাপরাধীর বিচার তিনি এ দেশের মাটিতে করবেন। তিনি শুরু করেছেন। তার সঙ্গে আমরা আছি। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো- এর চেয়ে ভালো মাপের যুদ্ধপ্রক্রিয়া আর কী হতে পারে। নিজের কাজটুকুই যদি আমার সঠিকভাবে করি, তাহলেই মুক্তিযেুদ্ধের চেতনা, গণতন্ত্র, সুশাসন সব ঠিক থাকবে।
প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, ৭ মার্চ ১৯৭১-এ উপস্থিত থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনেছি- এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। এটির পর স্বাধীনতার আর কোনো ঘোষণার প্রয়োজন ছিল না। স্বাধীনতার ঘোষণা ওই দিনই হয়ে গেছে। স্বাধীনতা তো আমরা পেয়েছি, পতাকা পেয়েছি, মানচিত্র পেয়েছি। কিন্তু মুক্তির সংগ্রাম সেটি এখনো চলছে।
নিন্দুকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কিছু লোক দেশের উন্নতি চোখে দেখেন না। কিন্তু যখন ইকোনমিস্ট লিখে, গার্ডিয়ান লিখে, তখন তারা নড়েচড়ে বসে। সার্টিফিকেটটা বাইরে থেকে এলেই সম্মানটা বাড়ে। আর যদি পশ্চিমা কেউ বলে, তবে তো কথাই নেই। নিজের সম্মান নিজে রাখতে তারা চায় না। মননে ও মানসিকতায় আমাদের পরিবর্তন আনতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ১৯৭৫-এ জাতির জনককে হত্যার পর কারা ক্ষমতায় এসেছে এবং ১৯৭০-এ ভোট দিয়েছিল পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলকে। তারা কারা? এরা এক শ্রেণি যারা তখন খুব ভালো ছিল, ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল পাকিস্তানির সাথে। তাই তারা চেয়েছে পাকিস্তান থাকুক। আরেক শ্রেণি ছিল ক্ষমতার জন্য তারা ষড়যন্ত্রে নামত। ৭৫-এর পর এসব শ্রেণির লোক ক্ষমতায় এসেছিল। এরা হচ্ছে সুবিধাবাদী। তারা শুধুমাত্র নিজের স্বার্থ দেখে। স্বার্থের জন্য তারা সবকিছু করতে প্রস্তুত। ৭৫-এর পর স্বৈরাচারের সৃষ্টি করা একটি রাজনৈতিক দল বিএনপি। সেই দলকেই তারা ভোট দেয় ক্ষমতার জন্য, অর্থ কামাই করার জন্য। নিজেদেরকে ভালো রাখার জন্য।
সত্যটা আমাদেরই তুলে ধরতে হবে
ইতিহাস বিকৃত প্রসঙ্গে জয় বলেন, ৭৫-এর পর থেকে পাঠ্যবইয়ে মিথ্যে ইতিহাস শেখানো হয়েছে। উদ্দেশ্যটা ছিল সত্য মানুষ ভুলে যাবে। মিথ্যা ইতিহাসকে বিশ্বাস করবে। হিটলারের সময় তার প্রচারমন্ত্রী ছিলেন গোয়েবলস। তার থিউরি ছিল, একটা মিথ্যা বারবার প্রচারের পর একটা সময় সেটি মানুষ বিশ্বাস করবে সত্য হিসেবে। ৭৫-এর পর থেকে এখনো তাই করা হচ্ছে। ইতিহাস নিয়ে এমন সব মিথ্যা কথা বলা হচ্ছে যে তা শুনে আমরা হাসি। বলি, এই লোকটা কি পাগল হয়ে গিয়েছে? তারা কিন্তু পাগল নয়। যারা স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করে, সত্যকে তুলে ধরতে চায়। এই মিথ্যার বিরুদ্ধে তাদের কথা বলতে হবে। স্বাধীনতার চেতনাকে আমরা যারা বিশ্বাস করি। সত্যটা আমাদেরই তুলে ধরতে হবে।
আদালত তো স্বাধীন
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে জামায়াতের সঙ্গে সরকারের আঁতাতের সন্দেহ প্রকাশ করে অনেকেই। এ বিষয়ে তিনি বলেন, জামায়াতকে যদি আওয়ামী লীগ বাঁচাতেই চাইতো, তবে কি বানকি মুন আর জন কেরি ফোন করার পরও নির্বাচনের কয়েক দিন আগে আমরা কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দিতাম। আদালত তো স্বাধীন। তারা আইনগতভাবে স্বাধীনভাবে কাজ করছে। সেখানে সরকার কী করবে। দুঃখ লাগে, এসব কথা বলছে স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী এক শ্রেণি। এটা বলে এরা নিজেরা নিজেদের পায়েই কুড়াল মারছে।
আমরা তো জাদুকর নই
কিছু ব্যক্তি টক শোতে সরকারের বিরুদ্ধেই নানা কথা বলেন। ভুল ধরে সেটি নিয়ে বড় বড় সম্পাদকীয় লিখেন। তাদের উদ্দেশে জয় বলেন, উন্নয়ন হয়েছে অনেক। আমরা আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়ে আসছি। তারা ভালো কিছু দেখেন না। কিছু ভুল তো হবেই। কারণ আমরা মানুষ। সবারই ভুল হয়। ১৬ কোটি মানুষের দেশে কিছু সমস্যা থাকবে না, এটা কি সম্ভব? তার পরও তারা সফলতা তুলে ধরতে লজ্জা পান। কথা হলে বলে, আমরা আওয়ামী লীগের ভালো চাই। আমাদের শিক্ষায় উন্নয়ন হয়েছে, কৃষিতে হয়েছে, দারিদ্র্যসীমা অর্ধেকে নেমে এসেছে, জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়েছে। তবু তারা বলে, কিছুই হয়নি। আমরা তো জাদুকর নই। আমরা মানুষ।
সত্য ও মিথ্যার মাঝে কি নিরপেক্ষ থাকা যায়
এক শ্রেণির নিরপেক্ষতার কথা বলতে গিয়ে তিনি দুঃখ করে বলেন, নিরপেক্ষতার মানে কী? সত্য ও মিথ্যার মাঝে কি নিরপেক্ষ থাকা যায়? স্বাধীন বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের মধ্যে কি নিরপেক্ষ থাকা যায়? যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও আইনের মাঝে কি নিরপেক্ষতার কোনো পথ আছে?’
বিএনপি হচ্ছে রাজাকাদের দল
বিএনপিকে রাজাকারের দল আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, যে ব্যক্তি যুদ্ধাপরাধীদের দেশে ফেরত এনেছে, সে কি মুক্তিযোদ্ধা হতে পারে? যারা রাজাকারদের সঙ্গে রাজনীতি করে তারা কি রাজাকার নয়? অবশ্যই তারা রাজাকার। বিএনপি হচ্ছে রাজাকারদের দল। তারা যদি প্রমাণ করতে পারে, তারা রাজাকারের দল নয়, তাহলে তারা রাজাকারদের সঙ্গ ছেড়ে আসতো। জোট না ভাঙা পর্যন্ত বিশ্বাস করা যাবে না, তারা রাজাকার নয়। রাজাকারদের ফিরিয়ে এনেছে জিয়াউর রহমান।
আমরা বাঙালি, আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না
সবশেষে জয় বলেন, আওয়ামী লীগ যত দিন থাকবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হবে এবং একই সাথে বিচারের রায়ও সম্পন্ন হবে। দেশের মানুষ আমাদের সুযোগ দিয়েছে। আমরা অর্থনীতির দিক দিয়ে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও মেধার দিক দিয়ে বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকে কিন্তু পিছিয়ে নেই। আমাদের কারও সার্টিফিকেট লাগে না। নিজেদের সফলতা আমরা নিজেরাই বিশ্বাস করি। ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আমরা স্বাধীনতা এনেছি। অস্ত্র আর বোমা মেরে আমাদের দাবাতে পারেনি। এখন তো ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। আমরা নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়েছি। আমরা বাঙালি, আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবা না।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে সজীব ওয়াজেদ জয় উপস্থিত যুব সংগঠক ও প্রতিনিধিদের বিভিন্ন প্রশ্নের খোলামেলা উত্তর দেন।
ছবি: তানভীর খান
লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে সাপ্তাহিক কাগজে, প্রকাশকাল: ২৩ নভেম্বর ২০১৪
© 2017 – 2018, https:.