মুক্তিযুদ্ধ

মানুষের মন আলোকিত করতে না পারলে সোনার বাংলা হবে না

“ট্রেনিং তখন শেষ। আমাদের পাঠানো হয় তরঙ্গপুরে। সেখান থেকে বরাহার ক্যাম্পে। ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন এসএস বার্ট। তাঁর নির্দেশেই অপারেশন শুরু। আমরা যুদ্ধ করি ৭ নং সেক্টরে। বাড়ি আমার ফুলবাড়ি-পার্বতীপুর এলাকায়। তাই প্রথম ডিউটি পড়ে ওই এলাকাতে। ফুলবাড়ির চিন্তামনে ছিল পাকিস্তানি আর্মিদের ছোট্ট একটি ক্যাম্প। কী পরিমাণ অস্ত্র ও কতজন পাকিস্তানি আছে সেখানে– এ বিষয়ে রেকি করতে হবে। আমিসহ পাঁচজন। সন্ধ্যায় বেরিয়ে সব তথ্য নিয়ে রাতের মধ্যে আবার ক্যাম্পে ফিরে আসি। ভয় ছিল। তবু প্রথম কাজটা করে তৃপ্ত হয়েছিলাম সেদিন।

“১৯৭১ সাল। আগষ্ট মাসের ৭ কিংবা ৮ তারিখ। মোহনপুর ব্রিজে হ্যারেজম্যান্ট ফায়ারের নির্দেশ আসে। কমান্ডের দায়িত্ব দিয়ে আমার সঙ্গে দেওয়া হয় ১০ জনকে। প্রথমে সনদিয়া ক্যাম্পে এবং পরে আসি আমবাড়ির হাজীবাড়িতে। ওখান থেকে ব্রিজের দিকে গুলি করার প্রস্ততি নিই আমরা। ব্রিজের ওপর টহল দিচ্ছিল পাকিস্তানি আর্মিদের বেশ কয়েকটি গাড়ি। তাদের লক্ষ করে গুলি চালাই। প্রতুত্ত্যরে শুরু হয় বোমবিং। ওইদিনই মারা পরতে হত। কোনোরকমে বেঁচে যাই সে যাত্রায়। জীবনের মায়া একাত্তরে ছিল না ভাই।

“আমরা ছিলাম গেরিল। আক্রমণ করেই সরে পড়তাম। আনন্দ বাজারে বেলালের বাড়িতে একবার ঠাঁই হয় আমাদের। মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সাহায্য করতেন তিনি। একদিন তাঁর মেয়ে আসে শ্বশুরবাড়ি থেকে। পরনে তার সাদা কাপড়। স্বামী ছিল রাজাকার। নানা অত্যাচার করায় মুক্তিযোদ্ধারা তাকে মেরে ফেলেছিল। বাড়িতে ফিরে সে দেখে তার বাবাই নানাভাবে সাহায্য করছে মুক্তিযোদ্ধাদের। নিজের মেয়েকে শান্ত করে বেলাল বলেছিলেন: ‘তোর স্বামী মা রাজাকার আছিল। দেশের শক্রু ওরা। ওকে মেরে মুক্তিবাহিনীরা ঠিক কাজটিই করেছে মা।’

“এসব ঘটনাই ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তি। সাধারণ মানুষের অনুপ্রেরণা আমাদের সাহসী করে তুলেছিল।

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা সুধীর চন্দ্র রায়ের থাইয়ে স্প্লিন্টারের ক্ষতচিহ্ন

“১৬ আগস্ট ১৯৭১। নির্দেশ আসে পার্বতীপুর আক্রমণের। আমরা ১১ জন। আমজাদ হোসেন ছিলেন কমান্ডে। সন্ধ্যায় আমবাড়ি উচিতপুর হয়ে ঢুকে পড়ি বাংলাদেশে। রাত একটার মধ্যেই পৌঁছে যাই ফরিদপুর হাটে। সেখানকার একটি পানের বরজের ভেতর আমরা রেস্ট নিই। অতঃপর ভবানীপুরের পূর্বদিক হয়ে পৌঁছে যাই খয়পুকুর হাটে। মুক্তিযোদ্ধাদের আরেকটি দল ছিল ওখানে। তখন আমরা ৬৪ জন হয়ে যাই। পরিকল্পনা হয় খোলাহাটি ব্রিজ উড়িয়ে দেওয়ার। কমান্ডে ছিলেন পার্বতীপুরের আলাউদ্দিন। রাতের আঁধারে মাইন দিয়ে ব্রিজটিকে উড়িয়ে দিই আমরা। অপারেশনে সফল। তাই আমাদের মনোবলও যায় বেড়ে।

  “দিনের বেলায় আমরা আত্মগোপন করে থাকতাম। একবার আনন্দ বাজার থেকে যেতে হবে রংপুর শটিবাড়িতে। রাতে রওনা দিয়েও মালুয়াছড়ায় পৌঁছাতেই ভোর হয়ে গেল। ওই এলাকাটিতে অধিকাংশই ছিল বিহারি ও রাজাকার। সুতরাং ধরা পড়ার ভয় ছিল প্রবল। আমরা কৌশলী হলাম। যারা উর্দু ও হিন্দি জানে শুধু তারাই কথা বলবে। তাই ঘটল। ওদের সাথে আমার এমনভাবে কথা বললাম যে আমাদের রাজাকার ভেবে এক বিহারি এসে জানাল কোথায় কোথায় মুক্তি আছে। রাতে অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত আমরা ওই এলাকা ছাড়ি। নানা বিপদ অতিক্রম করে গেরিলার বেসে এভাবেই আমরা যুদ্ধ করছিলাম।”

মুক্তিযুদ্ধের সময়কার নানা ঘটনাপ্রবাহের কথা বলছিলেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা সুধীর চন্দ্র রায়। তাঁর গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের পার্বতীপুরের চন্ডিপুরে। বাবার নাম ধরণী ধর রায় ও মা রাজেশ্বরী রায়। বাবা ছিলেন হাবরা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সুধীর ভাইদের মধ্যে বড়। লেখাপড়ায় হাতেখড়ি শমসের নগর প্রাইমারি স্কুলে। পরবর্তীতে পড়াশোনা করেন রাজারামপুর হাই স্কুল, জয়পুরহাট কলেজ, পার্বতীপুর কলেজ ও নিলফামারী সরকারি কলেজে। ১৯৭১ সালে তিনি ছিলেন নিলফামারী সরকারি কলেজের বিএসসি পরীক্ষার্থী।

ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সুধীর বলেন:

“মাছ মারাতেই ঝোঁক ছিল বেশি। একরাতে বন্ধু শ্রীকান্ত নাথ মন্ডলের সঙ্গে বেরুই। মশাল হাতে ভোররাত পর্যন্ত চলে মাছধরা। আলো দেখে থমকে দাঁড়াত শিং আর সাটি (টাকি) মাছ। সে সুযোগে দায়ের কোপে ধরা পড়ত মাছগুলো। বাবা পছন্দ করতেন না এসব। ওইদিন সকালে বাড়ি ফিরতেই দেন পিটুনি। তবে বাবার ভয়েও বন্ধ হয়নি মাছ ধরার নেশা।”

কলেজেই সুধীর যুক্ত হন ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে। পূর্ব পাকিস্তানিদের বৈষম্যের নানা খবরাখবর পেতেন সেখান থেকেই। তখন শেখ মুজিব ছিলেন সবার কাছে আলোচিত নেতা। মার্চের ৩ তারিখ ঢাকায় শেখ মুজিব ভাষণ দেবেন। আগেরদিন কলেজে গিয়েই এমন খবর পান সুধীর। খবরটি যাচাই না করেই বঙ্গবন্ধুর টানে বন্ধু বিনয়, বীরেন ও সুশীলসহ সুধীর ট্রেনে করে চলে যান ঢাকায়। খবরটি ঠিক না হওয়ায় পরদিন আবার হতাশ মনে ফিরে আসেন পার্বতীপুরে। পরবর্তীতে তিনি বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণটি শোনেন রেডিওতে।

স্প্লিন্টারের আঘাতের চিহ্ন সুধীরের পেটে

২৫ মার্চ ১৯৭১। ঢাকায় আর্মি নামে। পাকিস্তানি আর্মিরা পার্বতীপুর আক্রমণ করে ৯ এপ্রিল। স্থানীয় রাজাকার ও বিহারীদের সহায়তায় তারা পুড়িয়ে দিতে থাকে আশপাশের গ্রামগুলো। ভবাণীপুরসহ হিন্দু এলাকায় চলে হত্যা ও লুটতরাজ। ফলে পরিবারসহ সুধীররা তখন চলে যান ভারতের জলপাইতলীতে। থলসামা বাজারের পাশে মেলে আশ্রয়।

 সুধীরের ভাষায়:

“মে মাসের দিকে ছোট ভাইকে নিয়ে আমরা চলে আসি কুমারগঞ্জ শরণার্থী ক্যাম্পে। কিন্তু মানুষের চাপ ও কলেরায় সেখানে প্রতিদিনই মারা যাচ্ছিল দু-একজন। ফলে ছোট ভাইকে নিয়েই যাই কুমারগঞ্জ হাসপাতালে। সেখানকার এক কম্পাউন্ডার আমাকে দেখে বিরক্ত হয়ে বলেন: ‘দেশ লুটে নিচ্ছে ভিনদেশীরা। অথচ তোমরা যুবক ছেলেরা এ দেশে বসে বসে খাচ্ছ।’

“কথাটা শুনেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। মনটাও খুব খারাপ হল। কিন্তু কথাটা তো সত্য ছিল। এভাবে আর কতদিন? কয়েকদিন পরেই সিদ্ধান্ত নিই যুদ্ধে যাওয়ার।’

ট্রেনিং নিলেন কোথায়?

“প্রথমে যাই রায়গঞ্জ ও গঙ্গারামপুরে। সেখানে পাই জর্জ আর এন দাশকে। তিনি উদ্যোগী হয়ে একটি ইয়ুথ ক্যাম্প গড়ে তুলছিলেন। সেখানে প্রথম ব্যাচে ছিলাম আমরা একশ জন। তিন-চারদিন চলল লেফট-রাইট। অতঃপর আমাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় শিলিগুড়ির পানিঘাটায়। ২৮ দিন চলে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ। আমার এফএফ (ফ্রিডম ফাইটার) নং ২৬১৮। এরপর তো রণাঙ্গনে চলে গেলাম।”

১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। দেশ তখন স্বাধীন। কিন্তু স্বাধীনতার জন্য আত্মত্যাগ তখনও থেমে থাকেনি। দিনাজপুরে মিলিশিয়া ক্যাম্পে ঘটে এক মর্মস্পর্শী ঘটনা। কী ঘটেছিল ওইদিন? এমন প্রশ্নে আনমনা হয়ে যান মুক্তিযোদ্ধা সুধীর চন্দ্র। খানিক নীরব থেকে তিনি বলেন:

“দেশ তখন স্বাধীন। অস্ত্র জমা দিয়ে বাড়ি ফিরলাম। আপনজনদের সঙ্গে কাটালাম কয়েকটা দিন। নির্দেশনা ছিল দিনাজপুরে রির্পোট করার। ৬ জানুয়ারি ১৯৭২। সকালে রির্পোট করি দিনাজপুর মহারাজা গিরিজানাথা হাই স্কুলে খোলা মিলিশিয়া ক্যাম্পে। ক্যাপ্টেন শাহরিয়ার ছিলেন সেটির দায়িত্বে। স্বাধীনের পরেও দিনাজপুরের পথে-ঘাটে মাটির নিচে পুঁতে রাখা ছিল মাইন। মুক্তিযোদ্ধারা তল্লাশি চালিয়ে তা এনে জড়ো করে রাখে মহারাজা স্কুলে। বিশেষ ব্যবস্থায় রাখা হয়েছিল অ্যান্টি-ট্যাংক, অ্যান্টি-পারসোনাল মাইন, টু-ইঞ্চ মর্টার, থ্রি-ইঞ্চ মর্টার প্রভৃতি। শুধু অ্যান্টি-ট্যাংক মাইনই ছিল সাড়ে বারোশর মতো।

“স্কুল ভবনে মুক্তিযোদ্ধা ছিল অনেক। দুপুরের খাওয়া সেরে আমরা বিশ্রাম নিই। সন্ধ্যার ঠিক আগে হুইসেলের শব্দ। দোতলা থেকে দেখলাম মাঠের মধ্যে প্রবেশ করেছে একটি ট্রাক। ট্রাকটি মাইন ও অস্ত্র-বিস্ফোরকে ভর্তি। অতঃপর সেটিকে আনলোড করতে হবে।

“সবার সামনে দাঁড়াই আমি। ট্রাক থেকে মাল নামাব, হঠাৎ বিস্ফোরিত হয় ট্রাকটি। সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণ ঘটে ট্রাকের ভেতরের বিস্ফোরক এবং আন্ডারগ্রাইন্ডে রাখা মাইনগুলোতে। বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে আশপাশ।

“আমি তখন ছিটকে পড়ি। খানিক পরে দেখি গোটা স্কুল ভবনটিই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। চারপাশে ছোপ ছোপ রক্ত। পাশেই দেখলাম বন্ধু সোহরাবকে। তার শরীরে মাংস নেই। তোজাম্মেলের পা গেছে উড়ে। হাত ঝলসে গেছে অনেকেরই। চারদিকে আর্তচিৎকার। নিজের দিকে তাকিয়ে আতকে উঠি। স্প্লিনটারের আঘাতে পেট, থাই, বাম পা ও কোমরের মাংসটা ছিড়ে নেমে পড়েছে। গলগলিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে সেদিক দিয়ে। আমি পেট চেপে ধরছিলাম যেন ভুঁড়িটি বেরিয়ে না যায়। প্রায় দেড়মাস আমার চিকিৎসা চলে রংপুর মেডিকেলে।’

মাহারাজা স্কুলের মিলিশিয়া ক্যাম্পে কীভাবে ওই বিস্ফোরণ ঘটেছিল তা আজও অজানা। এ প্রসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা সুধীর চন্দ্র আক্ষেপ করে বলেন:

“মহারাজা গিরিজানাথ হাই স্কুলের শহীদদের তালিকা আজও সরকারিভাবে পূর্ণাঙ্গ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ২৪০ জনের নাম লিপিবদ্ধ থাকলেও বাকিরা রয়েছেন অজ্ঞাত। এর চেয়ে দুঃখের আর কী আছে!’

স্বাধীনের পরে সুধীর চন্দ্র রায় যোগ দেন শিক্ষকতা পেশায়। রাজাপুর হাই স্কুল, হাবরা হাই স্কুল, বুড়ি পুকুরহাট হাই স্কুলে চলে তাঁর শিক্ষকতা। পরে তিনি চাকুরি করেন মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টেও।

 স্বাধীনতার ঘোষণা প্রসঙ্গে এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন:

“আমার কাছে ৭ মার্চের ভাষণটিই স্বাধীনতার ঘোষণা। তবে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে জিয়ার কণ্ঠে রেডিওতে স্বাধীনতার ঘোষণাটি নিজেই ওই সময় শুনেছি। কিন্তু তখনও জানি না মেজর জিয়াউর রহমান কে? কিন্তু ওই ঘোষণাটিও কাজ করেছিল। আমরা নিশ্চিত হয়েছিলাম, সেনাবাহিনীর বাঙালি সৈনিকরাও আমাদের সঙ্গে আছেন।”

পরবর্তীতে স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে নানা বির্তকের কথা উল্লেখ করে মুচকি হেসে তিনি বলেন:

“ঘোষণা শুনেই বাঙালিরা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এই কথাটি কিন্তু ঠিক নয়।”

তিনি পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন, মুক্তিযুদ্ধ কি কোনো রেস ছিল যে জিয়ার ঘোষণার পর পরই সবাই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল!

পায়ে স্প্লিন্টারে বিদ্ধ হওয়ার ক্ষতচিহ্ন

মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নিয়ে কথা উঠতেই মুক্তিযোদ্ধা সুধীর বলেন:

“স্বাধীনতার পরেই এটি করা উচিত ছিল। তখন সরকারের কাছে সবরকম রেকর্ড ছিল। ক্যাম্পে ক্যাম্পে ছিল তালিকা।”

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে তিনি বলেন:

“এর পেছনে মুক্তিযোদ্ধারাই দায়ী। একজন মুক্তিযোদ্ধার সনাক্তকরণ ছাড়া কেউ মুক্তিযোদ্ধা হতে পারে না। তাছাড়া সুবিধা দেওয়ার পূর্বেই সরকারের উচিত ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চূড়ান্ত করে নেওয়া।’

আলবদর ও রাজাকারদের পাশাপাশি ১৯৭১-এ বিহারিদের একটি বড় অংশ গণহত্যায় অংশ নিয়েছিল। সুধীর তাদেরও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। পাশাপাশি তিনি মনে করেন বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমার ঘোষণাটিও সঠিক ছিল না। তাঁর ভাষায়:

“ছোট হোক, বড় হোক তারা কিন্তু অপরাধী ছিল। ফলে মাফ না করে তাদের কিছুটা হলেও শাস্তি দেওয়া উচিত ছিল।”

শক্ত কথার বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আমরা আসি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁর ভালোলাগা প্রসঙ্গে। মুক্তিযোদ্ধা সুধীর বলেন:

“স্বাধীনতা কিংবা বিজয় দিবসে যখন মানুষের আনন্দ দেখি, বাতাসে ওড়ে লাল-সবুজ পতাকা, তখন সত্যি অন্যরকম লাগে!”

খারাপ লাগে কখন?

“রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যখন সহনশীলতা না দেখি, চারপাশে যখন হানাহানি-কাটাকাটি চলে, রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রভাব খাটিয়ে যখন সীমাহীন দুর্নীতি চলে, তখন খুব কষ্ট পাই।”

কী করলে দেশটা আরও এগিয়ে যাবে?

“আমাদের মতো লোকের কথা কে শুনবে, বলেন। তবে দেশের সত্যিকারের উন্নতি করতে হলে শিক্ষাখাতে ব্যয় বাড়াতে হবে। শিক্ষার আলো ছাড়া কি মানুষের মন আলোকিত হবে? মানুষের মন আলোকিত করতে না পারলে কিন্তু ‘সোনার বাংলা’ হবে না। তা না হলে, শত চেষ্টা করেও আপনি উন্নত বাংলাদেশ গড়তে পারবেন না!”

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা সুধীর চন্দ্র রায় মনে করেন, দেশে যা সম্পদ আছে তার সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেওয়া যায়। আর এ জন্য প্রয়োজন দেশপ্রেমিক ও সৎ হওয়া। দেশকে ভালোবাসলে যে কোনো কাজে উন্নতি আসবেই। সুধীরের বিশ্বাস একদিন সেই স্বপ্নের বাংলাদেশ হবেই। আর এ স্বপ্নের কান্ডারি হবে পরবর্তী প্রজম্ম। নতুন প্রজন্মের প্রতি এমনটাই আশা তাঁর।

লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে, প্রকাশকাল: ২৮ জুন ২০১৭

© 2017 – 2018, https:.

এই ওয়েবসাইটটি কপিরাইট আইনে নিবন্ধিত। নিবন্ধন নং: 14864-copr । সাইটটিতে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো তথ্য, সংবাদ, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Show More

Salek Khokon

সালেক খোকনের জন্ম ঢাকায়। পৈতৃক ভিটে ঢাকার বাড্ডা থানাধীন বড় বেরাইদে। কিন্তু তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঢাকার কাফরুলে। ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর। ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক সংস্কৃতির প্রতি। নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। যুক্ত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও থিয়েটারের সঙ্গেও। তাঁর রচিত ‘যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য’ গ্রন্থটি ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ হিসেবে ‘কালি ও কলম’পুরস্কার লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী ও ভ্রমণবিষয়ক লেখায় আগ্রহ বেশি। নিয়মিত লিখছেন দেশের প্রথম সারির দৈনিক, সাপ্তাহিক, ব্লগ এবং অনলাইন পত্রিকায়। লেখার পাশাপাশি আলোকচিত্রে নানা ঘটনা তুলে আনতে ‘পাঠশালা’ ও ‘কাউন্টার ফটো’ থেকে সমাপ্ত করেছেন ফটোগ্রাফির বিশেষ কোর্স। স্বপ্ন দেখেন মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী এবং দেশের কৃষ্টি নিয়ে ভিন্ন ধরনের তথ্য ও গবেষণামূলক কাজ করার। সহধর্মিণী তানিয়া আক্তার মিমি এবং দুই মেয়ে পৃথা প্রণোদনা ও আদিবা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back to top button