ক্যাটাগরিহীন

মুশহর বিয়ে : বর-কনের লগ্ন মিলন হয় মাড়োয়ায়

মধ্য দুপুর। গোটা রাস্তায় সুনসান নীরবতা। ধোঁয়ার মতো ঘন কুয়াশা চারপাশে। সূর্যটাও মুখ লুকিয়েছে কুয়াশার চাদরে। এ রকম দিনে ঘর থেকে বেরোনোর সাধ্যি কার! তাও আবার কোনো শহরে নয়। দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার ধুকুরঝারির প্রত্যন্ত পথে।

আমাদের গন্তব্য নেহাল গ্রামের আদিবাসীপাড়ায়। সেখানে মুশহরদের ৬৫টি পারিবারের বাস। নিজ জাতিসত্তা আর ধর্মবিশ্বাস নিয়ে টিকে আছে তারা। নেহাল গ্রাম ছাড়াও দেরাপাটিয়া, গোবিন্দপুর আর দারুইলে মুশহরদের বসবাস রয়েছে।

মুশহরদের পূর্বপুরুষরা এসেছে ভারতের মুংগাইর জেলা থেকে। ব্রিটিশ আমলে রেললাইনের কাজের হয়েছে সবখানে। কাজের টানে সে সময় এদের পূর্বপুরুষরাও চলে আসে এ অঞ্চলে। নৃ-তাত্ত্বিকবিদদের মতে, মুশহররা দ্রাবিড়ীয় গোষ্ঠীর। মুশহর সমাজে প্রচলিত আছে এদের জাতির উৎপত্তি নিয়ে একটি কাহিনী।

কাহিনীটি রকম : একবার সৃষ্টিকর্তা সম্পদ বণ্টন করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। তিনি সবাইকে একদিন ডেকে পাঠালেন। বললেন, সকাল সকাল আসতে। সৃষ্টিকর্তার কথামতো অন্য সবাই সকাল সকাল এসে সম্পদ বুঝে নিল। কিন্তু এলো না শুধু মুশহররা। গাঁজা খেয়ে তারা ঘুমিয়ে পড়েছিল। ওরা ভাবল, তাদের সম্পদ তো থাকবেই। পরে গিয়ে ধন-সম্পদ নিয়ে আসবে। এদিকে সৃষ্টিকর্তার সম্পদ ভাগ করা শেষ হয়ে যায়। সম্পদের আর কিছুই তখন বাকি রইল না। ঘুম থেকে উঠে মুশহররা যখন এলো, তখন পড়েছিল একটি ডালি ও ঝাঁটা। তাদের দেখে সৃষ্টিকর্তা বিরক্ত হয়ে বললেন, এই ঝাড়ুটা দিয়ে ‘ঝাড়ু’ দিয়ে যা পড়ে আছে, তাই-ই নিয়ে যা। তাদের অলসতার কারণে তিনি রেগে গিয়ে তাদের উদ্দেশে বললেন, ‘সারাটা জীবন তোমরা ঝাড়ু দিয়েই জীবন কাটাবে।’ সে থেকেই মুশহররা ধান কাটার পর ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান বের করে ঝাড়ু দিয়ে যা পায়, তা নিয়েই জীবনযাপন করে। এটি সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক নির্ধারিত বলে তারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে।

অন্যদিকে নৃ-তাত্ত্বিকবিদদের মতে, আদিকালে জনৈক ঋষির দুই পুত্র ছিল। তাদের মধ্যে বড় পুত্রের উত্তরসূরিরা যোদ্ধা হিসেবে ভূমিকা রাখেন। ফলে সম্মানার্থে তাদের নামকরণ করা হয় ‘রাজোয়াড়’। ছোট পুত্রের উত্তরসূরিরা মুশিক খাবার বেশি খেত। ফলে তারা পরিচিতি পায় মুশহর নামে।

আম্রপালি বাগানের ভেতর দিয়ে খানিকটা পথ এগোতেই আমরা পৌঁছে যাই মুশহর আদিবাসী পাড়াটিতে। ছনে ঢাকা ছোট্ট ছোট্ট ঘর। খানিকটা ভিন্ন ঢঙের। ব্র্যাক স্কুলের পাশেই জটলা বেঁধেছে পাড়ার সবাই। তারা কথা বলছে ভিন্ন কোনো ভাষায়। আমরা তার কিছুই বুঝে উঠতে পারি না। এ সময় এগিয়ে আসে কেশো ঋষি। গোত্রের মণ্ডল সে। আলাপ হয় পলিন ঋষি, গোবিন্দ ঋষি ও সমারু ঋষির সঙ্গে। তাদের মুখে শুনি মুশহরদের বিয়ে ও নানা আচারের গল্প।

মুশহর আদিবাসীরা তাদের নামের শেষে ঋষি শব্দটিকে টাইটেল হিসেবে ব্যবহার করে। নিজেদের মধ্যে এরা কথা বলে পশ্চিমা ভাষায়। এদের সমাজ ঋষিমনি, মোঙ্গাইয়া, ত্রিহুতিয়া, বগুচিয়া ও ছাপড়াইলা—এই পাঁচটি গোত্রে বিভক্ত। গোত্র পরিচালিত হয় একটি গ্রাম পরিষদের মাধ্যমে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে মুশহরদের গ্রাম পরিষদ। এ গোত্রে এখন মণ্ডল, ছড়িদার আর পারমানি ছাড়া আর কোনো পরিষদ নেই। তবে মুশহরদের বিয়েসহ নানা উৎসবে গোত্রের মণ্ডল ও অন্যদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হয়।

বংশকে মুশহর আদিবাসীরা বলে কুরিয়া। এদের একই বংশে বিয়ে নিষিদ্ধ থাকে। একসময় এদের বিয়েতে পণ দেওয়ার বিধান ছিল। কিন্তু এখন ছেলেদের খুশিমতো যৌতুক দিতে হয়। এদের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হয় তিন দিনব্যাপী। প্রথম ছেলের গায়ে হলুদ ছোঁয়ানোই নিয়ম। ছেলেকে হলুদ মাখানো হয় মায়ের আঁচলে বসিয়ে। অতঃপর অবশিষ্ট হলুদ ও বরের গোসলের পানির কিছু অংশ বোতলে ভরে কাপড় ও তেল সাবানের সঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয় মেয়ের বাড়িতে। বরের বাড়ির হলুদ ও পানি না আসা পর্যন্ত মেয়ের হলুদ ও গোসল করানো হয় না। ওই দিন মেয়ে ও মেয়ের বাবা, মাকে উপোস থাকতে হয়। পরে সন্ধ্যায় ছেলের বাড়ি থেকে আসা পানি দিয়ে গোসল করানো হয় মেয়েকে।

এ সময় মুশহররা গান গায়—

হারা দিত কিয়ে গিছে

হ্যাগমারা হারা দিছাগা

কুলে মাইয়া রইয়ো না।

হ্যারা দিও হারা দিও, কিয়ে গাছে লা।

হ্যারা দিছে হ্যাবে গেলে, হ্যারায়ও না।

হ্যারা দিও হ্যারা দিও গছেলা

হ্যাগমায় হারা আবে গেলে ভজিয়া রইয়ো না।

মুশহররাও বিয়ে বাড়িতে কলাগাছ দিয়ে মাড়োয়া সাজায়। বিয়ের আগে বর ও কনে স্ব-স্ব বাড়িতে জোয়াল পূজা করে। তাদের ভাষায় জোঙ্গাল বা আনকে পূজাইয়ে। এদের বিয়ের নিয়ম অনুযায়ী বরকে প্রথমেই বরণ করতে হয় শাশুড়ি, খালাশাশুড়ি, চাচিশাশুড়িকে। বরণ করাকে এরা বলে চুমা যায়ে। বরকে বরণ করা হয় ধানা (ধান), দুবরিয়া ঘাসা (দুর্বা ঘাস), পানা (পান), গোবরা (গোবর) দিয়ে। বিয়েতে মেয়ের বাবা তার জামাইকে দেয় ডোনারিয়া (কাইতন), ধোতিয়া (ধুতি), গামছাবা (গামছা), পাঞ্জাবি প্রভৃতি। একইভাবে ছেলের বাবা তার পুত্রবধূকে দেয় নুউওয়া (বিয়ের শাড়ি), কুর্তা (ব্লাউজ) প্রভৃতি। একসময় এরাও সাদা কাপড় কাঁচা হলুদে ডুবিয়ে বিয়ের শাড়ি তৈরি করত। সাধ্যের মধ্যে শাড়ি কিনতে পারায় মুশহররা এখন ওই ধরনের বিয়ের শাড়ি তৈরি করে না।

মুশহরদের বিয়েতে বর-কনেকে মাড়োয়ায় বসিয়ে লগ্ন মিলন করতে হয়। লগ্ন মিলন কাজটি হয় একটি কাঁসার বাটিতে রাখা পানির মধ্যে। বরের ভাগির মা (ভাগিনা) বাটির পানিতে আমপাতা ডুবিয়ে তাতে সিন্দুর (সিঁদুর) লাগানো চারটি (চাউল) ছেড়ে দেয়। দুটি চাল ভাসতে ভাসতে একসাথে লেগে গেলেই তা ধরে ফেলা হয়। ধরে নেওয়া হয় এটিই বিয়ের উপযুক্ত সময়। মুশহরদের ভাষায় বলে, কাংনা বানেল লাগা। ঠিক ওইসময়েই বর কানি আঙুলে সিঁদুর লাগিয়ে কনেকে পড়িয়ে দেয়। বিয়েতে মুশহররা আদিবাসী গান গায়—

০১। লাল গামছা পাঘাড়ি

তানা ইসেন টিকলি

দিদিগে কাহির দিহী

বোহনায়কের ঝুমার খেলতে না

হেসুনার সাকিয়া

দশ বাটমাংগে জোড় খাসিয়া

হেসুনারে শাকিয়া সাসকের পতুমোরে

চার লাগিয়া।

ভাবার্থ

লাল গামছা পাগড়ি

সুন্দর লাল টিপ

দুলাভাইকে বলে দাও

ঝুমার খেলবে কিনা।

দশভাই বিয়েতে বড় বড় থামি থালা চেয়েছে

দুই বান্ধবী খেলছে

চারটি চাটি মেরে।

০২। আহিনা ছড়ব টিসান মে পর ছড়ব

মাহেই করব ঝিকা ঝারি

আচারবা ছড়কে না

দিনাজপুরকে হাটিয়া

বেচাবে খাটিয়া

বিনা মত্তগিনকোর সারদা

ডেংগাবে ছাতিয়া

তার উপর পায়সারে

উপর পায়সা

গেটরী খুঁজে নি জানে

মারাত কায়সা।

ভাবার্থ

এখানে ছাড়ব ওখানে ছাড়ব

ওখানে ধরব তোমার আঁচল

তোমার আঁচল ছাড়ব না

দিনাজপুর হাট

বেচবে খাট

আমার বউ নাই তাই মন উড়ছে

আঁচলের পয়সা বাঁধা

খুলতে পারছো না

কেমন তুমি পুরুষ।

মুশহরদের বিয়ের পরে চলে দান্না কারবি পর্ব। এ পর্বে একে একে সবাই আশীর্বাদ করে বর-কনের হাতে উপহার তুলে দেয়। পাশাপাশি চলে নাচ, গান আর হাঁড়িয়া খাওয়া। অন্য আদিবাসীদের মতো মুশহর বিয়েতে কনেপক্ষকে বরের বাড়িতে দাওয়াত করা হয় না। বরং আট দিন পর বরই আবার কনেকে তার বাবার বাড়িতে নিয়ে আসে। মুসহরদের ভাষায়, বেটিয়া দামদা আঠারোয়া এতে, অর্থাৎ বেটি আট দিন পরে জামাইসহ বাবার বাড়িতে আসে।

মুশহররা বিয়েতে ছেলেকে পাঞ্জাবি, ধুতি এবং মেয়েকে শাড়ি, ব্লাউজ, পেটিকোট, নাকফুল, শাঁখা, চন্দন, সিঁদুরসহ যাবতীয় সাজের জিনিসপত্র দিয়ে থাকে। অতীতে  মেয়েকে অলংকার হিসেবে চান্দির কাঠি ঝুমকা, বালা, গলার হাঁসুলি, বাজু পায়ে গোড়হারা, নাকফুল, চান্দির (রুপা) গহনা প্রভৃতি দেওয়া হতো। অন্য আদিবাসীদের  মতো এদেরও প্রিয় পানীয় হাঁড়িয়া। হাঁড়িয়াকে এরা তাদের সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করে। বিয়েতে এর ব্যবহার আবশ্যক। এ ছাড়া মুশহর বিয়েতে সাধ্য মতো খাওয়ানো হয় সুবরা (শুকুর), মুসুরা (ইঁদুর), কোকরা (কাকড়া), কুচিয়া (কুইচ্চা), দুরউয়া (মাটি ভেতর গর্ত করে থাকে এমন এক ধরনের প্রাণী), ঘংমা (শামুক), বিজাইয়া (বিজু), সেরকিয়া (শালু) প্রভৃতি।

মুশহর সমাজে পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রচলিত। এদের পরিবারে মেয়েরা বাবার কোনো সম্পত্তি পায় না। তবে মেয়ের বিয়ে ও পরবর্তী দায়িত্ব পালন করতে হয় বাবা বা ভাইকে। বৃদ্ধ বাবা-মার দায়িত্ব থাকে বড় ছেলের ওপর। এ আদিবাসী সমাজে একাধিক বিয়ের প্রচলন নেই।  তবে যদি কারো স্ত্রী মারা যায়, তবে স্বামী পুনরায় বিয়ে করতে পারে। একইভাবে যদি অল্প বয়সে স্বামী মারা যায়, তবে মেয়েও দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সমাজকে ভোজ দিতে হয়। একে ফুল বিয়ে বা কাইন বিয়ে বলা হয়।

মুশহর সমাজে তালাকপ্রথা একেবারেই নেই। তবে কোনো মেয়ে যদি স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে না চায়, তবে সে স্বেচ্ছায় বাবার বাড়িতে চলে যাওয়ার অধিকার রাখে। এ ক্ষেত্রে গোত্রপ্রধান ও গণ্যমান্যরা সালিশের মাধ্যমে মীমাংসা বা বিয়েবিচ্ছেদ করিয়ে থাকে।

মুশহরদের কাছে ধর্মান্তরের প্রস্তাব এসেছে বহুবার। বারবারই তারা তা নাকচ করেছে। এদের পরিবারগুলো চলছে সীমাহীন দারিদ্র্যের মাঝে। কিন্তু তবুও পূর্বপুরুষদের বিয়ে সংস্কৃতির আদি আচারগুলো আজও আগলে রেখেছে মুশহররা।

লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে এনটিভিবিডি ডটকমে, প্রকাশকাল: ২৫ জানুয়ারি ২০১৮

বই সংবাদ:

mushor bia
প্রচ্ছদ: সব্যসাচী হাজরা
প্রকাশক: কথাপ্রকাশ
বইমেলায় প্যাভিলিয়ন-০৫

‘আদিবাসী বিয়েকথা’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে কথাপ্রকাশ থেকে। বইমেলায় গ্রন্থটি পাওয়া যাবে কথাপ্রকাশ-এর প্যাভিলিয়নে (প্যাভিলিয়ন-০৫)। এছাড়াও ঘরে বসে পেতে অর্ডfর করতে পারেন রকমারিতেও

© 2018, https:.

এই ওয়েবসাইটটি কপিরাইট আইনে নিবন্ধিত। নিবন্ধন নং: 14864-copr । সাইটটিতে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো তথ্য, সংবাদ, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Show More

Salek Khokon

সালেক খোকনের জন্ম ঢাকায়। পৈতৃক ভিটে ঢাকার বাড্ডা থানাধীন বড় বেরাইদে। কিন্তু তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঢাকার কাফরুলে। ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর। ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক সংস্কৃতির প্রতি। নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। যুক্ত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও থিয়েটারের সঙ্গেও। তাঁর রচিত ‘যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য’ গ্রন্থটি ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ হিসেবে ‘কালি ও কলম’পুরস্কার লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী ও ভ্রমণবিষয়ক লেখায় আগ্রহ বেশি। নিয়মিত লিখছেন দেশের প্রথম সারির দৈনিক, সাপ্তাহিক, ব্লগ এবং অনলাইন পত্রিকায়। লেখার পাশাপাশি আলোকচিত্রে নানা ঘটনা তুলে আনতে ‘পাঠশালা’ ও ‘কাউন্টার ফটো’ থেকে সমাপ্ত করেছেন ফটোগ্রাফির বিশেষ কোর্স। স্বপ্ন দেখেন মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী এবং দেশের কৃষ্টি নিয়ে ভিন্ন ধরনের তথ্য ও গবেষণামূলক কাজ করার। সহধর্মিণী তানিয়া আক্তার মিমি এবং দুই মেয়ে পৃথা প্রণোদনা ও আদিবা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back to top button