মুক্তিযুদ্ধ

অপমানে তখন মরে যেতে ইচ্ছে করতো

পাকিস্তান আর্মিদের ক্যাম্প বসেছে বড়লেখা উপজেলাতে। তারিখটা ৩ এপ্রিল ১৯৭১। একটি কাজে বড় ভাইয়ের সঙ্গে যাই উপজেলা সদরে। বাজারের পাশেই মসজিদ। সেখানে তখন ধরে আনা হয় দুই যুবককে। তাদের হাত ও চোখ বাঁধা। পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে আছে রাজাকারেরা। দূরে দাঁড়িয়ে দেখি কী ঘটে? প্রথমে তাদের বেয়নেট দিয়ে খোঁচানো হয়। ‘মাগো’, ‘বাবাগো’- আর্ত চিৎকারে ভারী হয়ে ওঠে সেখানকার বাতাস।

রক্তে ভরে যায় তাদের বুক। পরে তাদের প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। আমাদের বুকের ভেতরটা তখন ধুপ করে ওঠে। চোখের সামনে দুটি তাজা প্রাণের মৃত্যু- এ দৃশ্য দেখার পর আমাদের শরীর কাঁপছিল। ভয় পেয়ে যাই। মৃত্যু ভয় আমাদেরও তাড়া করে। দৌড়ে তখনই ফিরে আসি গ্রামে।

গ্রামে থাকতে হলে রাজাকার বাহিনীতে নাম লিখাতে হবে। তা না হলে ওরা বাঁচতে দিবে না। ওই যুবকদের মতোই আমাদের নির্মমভাবে মরতে হবে। মরতেই যদি হয় লড়াই করেই মরব। গ্রামের কয়েকজন মুরব্বিও উপদেশ দিলেন মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার। আমরা তখন খোঁজখবর নিতে থাকি। অতঃপর একদিন ঘর ছাড়ি অজানার পথে।

আকাশটা সেদিন গোমড়ামুখো। টিপ টিপ বৃষ্টিও পড়ছিল। পঁচিশ হাত লম্বা একটা নৌকা ছিল আমাদের। সে নৌকা ভাসাই বিলের পথে। কলাগাছের ডাট কেটে নৌকায় তুলি। বৃষ্টি থেকে মাথা বাঁচাতে ওটাই ছিল আমাদের একমাত্র ভরসা। আমরা চৌদ্দজন। সান্ডা গ্রাম থেকে তুলে নিই বড় ভাই শাহাবুদ্দিনকেও। সুনাই নদী পাড়ি দিতেই আশ্রয় মিলে নদীর ধারের একটি বাড়িতে।

বাড়ির উত্তরে একটি রাস্তা। ওই রাস্তা পেরিয়েই যেতে হবে ভারতে। রাস্তায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কড়া পাহারা। আমাদের বুকের ভেতর তখন কষ্টের আগুন। তাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে কুলাউড়া গ্রাম হয়ে মুলিয়ার হাওড় পেরিয়ে চলে আসি ভারতের লাতুরবাজারে। দিনটি ছিল ২৭ এপ্রিল ১৯৭১। ফরিদগাজীর হাতে লাতুরবাজারেই মুক্তিবাহিনীতে নাম লেখাই আমরা।

যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত আমরা। কিন্তু নিতে হবে ট্রেনিং। তাই লাতুরবাজার থেকে আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় করিমগঞ্জ টাউন হলে, সোনাকিরা ইয়ুথ ক্যাম্পে। সেখানে সাতদিন চলে লেফট-রাইট। অতঃপর বরাক নদীর পাড় হয়ে বদরপুর ত্রিপুরার দুর্গম পাহাড়ি পথে পেরিয়ে আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় আসাম নোয়ারবন্দ ট্রেনিং ক্যাম্পে। সেখানে প্রায় পনের’শজনের একত্রে ট্রেনিং হয়। ট্রেনিং চলে ১ মাস ১০ দিন। থ্রি নট থ্রি রাইফেল, এলএমজি, এসএলআর আর গ্রেনেড থ্রো শিখি। খুব যত্ন সহকারে আমাদের ট্রেনিং করিয়েছিলেন ভারতীয় সেনারা। ট্রেনিং ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন কর্নেল বাকসী। আমার প্লাটুনের ট্রেইনার লালা ওস্তাদের কথা এখনও খুব মনে পড়ে। আমার এফএফ (ফ্রিডম ফাইটার) নম্বর ছিল- ৬৮৬৭।”

ডিসচার্জ সনদ

মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেওয়ার কারণ ও ট্রেনিংয়ের নানা স্মৃতিচারণ করছিলেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মো. আপ্তার আলী। এক সকালে তাঁর বাড়িতে বসেই চলে আলাপচারিতা।
আপ্তার আলীর পিতার নাম আব্দুল জব্বার ও মাতা মাজেদা বেগম। বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার মাইজ গ্রামে। এক বোন ও চার ভাইয়ের মধ্যে আপ্তার আলী তৃতীয়। লেখাপড়ায় হাতেখড়ি মাউজগ্রাম প্রাইমারি স্কুলে। কিন্তু লেখাপড়ায় খুব বেশি আগ্রহি ছিলেন না আপ্তার। তাছাড়া পারিবারিক নানা কারণে ক্লাস ফোর অতিক্রম করা হয়নি তাঁর। ছোটবেলা থেকেই ছিলেন দুরন্ত আর ডানপিটে। বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলা আর দলবেঁধে মাছ ধরাতেই ছিল তাঁর আনন্দ।

দেশের অবস্থা তখন উত্তপ্ত। রেডিওতে প্রচারিত হচ্ছে নানা খবর। মাইজ গ্রামের আনোয়ারুল হক চৌধুরির বাড়িতে ছিল একটি রেডিও। খবর শুনতে গ্রামের মানুষ জড়ো হতো ওই বাড়িতেই। এভাবে নানা বৈষম্যের খবর পৌঁছে যেত গ্রাম পর্যায়ে।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ মুক্তিযোদ্ধা আপ্তার আলী শোনেন রেডিওতে। রক্ত গরম করা সে ভাষণই তাঁর কাছে স্বাধীনতার স্পষ্ট ঘোষণা। তাঁর ভাষায়- “বঙ্গবন্ধু বললেন- ‘আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না। আমরা এ দেশের মানুষের অধিকার চাই…আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়- তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো’, বঙ্গবন্ধুর ওই নির্দেশ শোনার পর কোনো যুবক কি আর বসে থাকতে পারে? তখনই বুঝেছিলাম কিছু একটা ঘটবে।”

কথার ফাঁকে চা আসে। চায়ে চুমুক দিয়েই স্মৃতি হাতড়ে তিনি তুলে ধরেন ট্রেনিংয়ের সময়কার আরও কয়েকটি ঘটনা। বলেন- “ট্রেনিং তখনও চলছে। আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন কর্নেল আতাউল গনি ওসমানী। ক্যাম্পে তখন খেতে দেওয়া হতো লাল ডাল। আমাদের কাছে তা বিষাদের মতো লাগতো। কালো ডালের জন্য সবাই মিলে আমরা ওসমানীকে ঘিরে ধরলাম। তিনিও নির্দেশ দিলেন। একদিন পরেই তা কার্যকর হয়। কালো ডাল খেতে পেয়ে আমাদের সেকি আনন্দ!”

ট্রেনিং শেষে আপ্তার আলীদের পাঠিয়ে দেয়া হয় রাগদা ক্যাম্পে। একটি গ্রুপে তারা ছিলেন ৩০ জন যোদ্ধা। এছাড়াও ক্যাম্পে আট জন বাঙালি পুলিশ ও সাত জন ইপিআর সদস্য থাকতেন। লোকের তুলনায় তাঁদের অস্ত্র ছিল কম। তাই পালাক্রমে অপারেশন করতে হতো। এভাবে তাঁরা গেরিলা অপারেশন করেন চার নম্বর সেক্টরের কুলাউড়া থানার সুন্দরবাড়ি বাজার, ফুলতোলা বাজার, রাণীবাড়ি, আমবাড়ি প্রভৃতি এলাকায়। গেরিলাদের কাজ ছিল আক্রমণ করেই সরে পড়া। পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের মনে আতঙ্ক তৈরি করা।
জীবনের মায়া মুক্তিযোদ্ধাদের ছিল না। মৃত্যুর সাথেই চলতো তাঁদের যুদ্ধটা। বড় একটি অপারেশনের অভিজ্ঞতার কথা শুনি মুক্তিযোদ্ধা আপ্তার আলীর জবানিতে।

তাঁর ভাষায়- “একবার কদমবালি হয়ে আমরা তাঁবু গাড়ি আমবাড়ি টিলায়। রাজারাম নামের এক কুলি ছিল আমাদের গাইডার। কমান্ডে সাব সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মো. খায়রুল এনাম। ফুলতলা বাজারে ছিল পাকিস্তানিদের ক্যাম্প। একদিন দক্ষিণ দিক থেকে আমরা আক্রমণ করি ওই ক্যাম্পে। সকাল তখন ৮টার মতো। দু’পক্ষের মধ্যে তুমুল গোলাগুলি শুরু হয়। দুপুরের দিকে তারা পিঁছু হটতে বাধ্য হয়। আমরা তখন ‘জয়বাংলা’ স্লোগান তুলে সামনে এগোই। ওদের ক্যাম্পটি আমাদের দখলে চলে আসে। ওই অপারেশনে ১৩ জন পাকিস্তানি সেনা আমাদের গুলিতে নিহত হয়। কিন্তু বিকেলের দিকেই কুলাউড়া ক্যাম্প থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আর্টিলারি ছুড়তে থাকে। আমরা আর টিকতে পারি না। ক্যাম্পের দখল ছেড়ে দিয়ে পিছু হটি। ফিরে আসি নিরপদ জায়গায়। জীবনকে বাজি রেখে এভাবেই আমরা খ- খ- যুদ্ধ করি তুসার বাগান, ফুলতলা বাজার, জামাইয়ের বাগান প্রভৃতি এলাকায়।”

এক অপারেশনে মারাত্মকভাবে রক্তাক্ত হন মুক্তিযোদ্ধা আপ্তার আলী। পাকিস্তানি সেনাদের মর্টারের স্পিন্টারে বিদ্ধ হয় তাঁর বাঁ পায়ে, পেটে ও মাথায়। সেই ক্ষত চিহ্নের দিকে চোখ পড়লে আজও সবকিছু জীবন্ত হয়ে ওঠে এই যোদ্ধার।

আপ্তার আলীর পায়ে আঘাতের চিহ্ন

কী ঘটেছিল রক্তাক্ত ওই দিনটিতে? প্রশ্ন শুনে খানিক নিরবতা নামে। অতঃপর অশ্রুসিক্ত নয়নে মুক্তিযোদ্ধা আপ্তার আলী বলতে থাকেন। তাঁর ভাষায়- “পহেলা নভেম্বর ১৯৭১। ভোর তখন ৩টা। ফুলতলা বাজার থেকে এসে আমরা ইরমিন টিলার চারপাশে ওত পেতে বসে আছি। এই টিলাতেই ছিল পাকিস্তানি সেনাদের শক্তিশালী একটি ঘাঁটি। ওই ঘাঁটিতে আক্রমণ চালাতে হবে। অপেক্ষায় থাকি। কিন্তু ফায়ারের কোনো নির্দেশই পাই না। হঠাৎ খলিল ওস্তাদ বললেন ‘অপারেশন উইড্রো।’ তখন  আমরা পেছনে সরে আসি।”

“ভোর তখন ৪টা। ক্যাম্পের দিকে হেঁটে এগোচ্ছি। খানিকটা পেছনে পড়ে যাই আমি। ভাবছিলাম নানা কিছু। কেন ব্যাক করলাম? পাশে ছিল সহযোদ্ধা বন্ধু ফজলু। ওর সঙ্গে কথা বলছি। হঠাৎ নীরবতা ভেঙে ধুম করে একটা বিকট শব্দ হয়। একটি মর্টার এসে পরে আমার বাঁ পাশে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঝিলিক দিয়ে ওঠে সেটি। চিৎকার দিয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ে ফজলু। কিন্তু আমি উঠে যাই কয়েক ফুট ওপরে। ছিটকে পড়ি দূরে। এরপর আর কিছুই মনে নেই। দুদিন পরে জ্ঞান ফিরে দেখি আমি ধর্মনগর হাসপাতালের চৌদ্দ নম্বর কেবিনে। মর্টারের স্পিন্টারে বিদ্ধ হয় আমার বাঁ পায়ে, পেটে ও মাথায়। এ খবর পৌঁছে যায় বাড়িতে। মা জানত আমি মরে গেছি।”

মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকারদের কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা হয় এই যোদ্ধার সঙ্গে। তিনি বলেন, “মুক্তিযোদ্ধা আর হিন্দুদের বাড়িগুলো পাকিস্তানি আর্মিদের চিনিয়ে দিতেন ওরা। আমাদের গ্রামের গফফার ছিল রাজাকারদের নেতা। তার মাধ্যমে আমাদের বাড়িতেও হানা দেয় পাকিস্তানি সেনারা। আমার কথা তাদের মা বলতেন না। বলতেন তার ৩ ছেলে। সবাইকে তিনি পরিচয়ও করিয়ে দিতেন। তা না হলে এক ভাইয়ের মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার অপরাধে হত্যা করা হতো অন্য ভাইদেরও। একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদেরও প্রতিনিয়ত মানসিক যুদ্ধটা করতে হয়েছে।”

একাত্তরে স্বাধীনতা লাভের পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি ‘দালাল (বিশেষ ট্রাইব্যুনালস) আদেশ’ জারি করা হয়। দালাল আইনের অধীনে ৩৭ হাজারেরও বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে বিভিন্ন আদালতে তাদের বিচার শুরু হয়। এরপর পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের সহযোগীদের বিচারের জন্য ১৯৭১ সালের ২০ জুলাই ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালন) আইন’ পাস করা হয়।

অতঃপর ১৯৭৩ সালের ১৭ মে ‘দালাল (বিশেষ ট্রাইব্যুনালস) আদেশ ১৯৭১’এর অধীনে আটক যেসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই তাদের জন্য সরকার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে। সাধারণ ক্ষমার সিদ্ধান্তটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ছিল বলে মত দেন মুক্তিযোদ্ধা আপ্তার আলী।

তিনি বলেন, “যারা রাষ্ট্রদ্রোহিতা, ধর্ষণ, খুন, খুনের চেষ্টা, অগ্নিসংযোগ, অপহরণ প্রভৃতি আঠার ধরণের অপরাধ করেছিল তাদের তো বঙ্গবন্ধু ক্ষমা করেন নি। সাধারণ ক্ষমার পর এগারো হাজারেরও বেশি ব্যক্তি ছিল বিচারের অপেক্ষায়। পরবর্তীতে দালাল আইন বাতিলের ফলে জিয়াউর রহমানের হাত ধরেই যুদ্ধাপরাধীরা প্রকাশ্যে পুনর্বাসিত হতে থাকে।”

পরিবারের সাথে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মো. আপ্তার আলী

স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কষ্টের অনুভূতি অকপটে প্রকাশ করেন মুক্তিযোদ্ধা আপ্তার আলী।

তাঁর ভাষায়- “স্বাধীনের পর এদেশে মুক্তিযোদ্ধারা হয়েছে অপমানিত, লজ্জিত। রাজাকার ও আলবদরের নেতারা হয়েছে দেশের মন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি। ক্ষমতার জন্য তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। এর চেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে! অপমানে তখন আমাদের মরে যেতে ইচ্ছে করতো।”

দেরিতে হলেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য শেখ হাসিনা সরকারকে ধন্যবাদ ও দোয়া করেন এই যোদ্ধা। রাজাকার আর আলবদরদের বিচার না হলে স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে যেত বলে মনে করেন তিনি। বলেন- “ইতিহাস তো কাউকে ক্ষমা করবে না। এদের বিচার না হলে আমরা মরেও শান্তি পেতাম না।”

কথা ওঠে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নিয়ে। আপ্তার আলী বলেন- “মুক্তিযুদ্ধের পরেই তালিকা চূড়ান্ত করা দরকার ছিল। তখন মুক্তিযোদ্ধাদের সব রেকর্ড ছিল সরকারের হাতে। এরপর তো সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গেই মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা বেড়েছে। তালিকা বাড়ার দায় যেমন মুক্তিযোদ্ধাদের তেমনি সরকারেরও।”

দেশের কোনো উন্নতির খবর শুনলে গর্বে বুক ভরে যায় এ মুক্তিযোদ্ধার। আবার দেশে নানা কাজে দুর্নীতি ও অনিয়ম দেখলে ব্যথিত হন তিনি। এ বিষয়ে আপ্তার আলীর অভিমত- “আমার কিছু বলার নাইরে বাবা। দেশটা তো লুটপাটের দেশ হয়ে গেছে। দেশ প্রেম নেই, আছে আত্মপ্রেম। একজনের ভালো দেখলে অন্যজন তার পা টেনে ধরছে। এমন দেশের প্রত্যাশা তো আমরা করিনি। এক শেখ হাসিনা ভাল হলেই তো হবে না। আপনার, আমারও ভাল হতে হবে।”

দেশপ্রেম আর পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকলেই দেশটা বদলে যাবে। এ জন্য গড়ে তুলতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রজম্ম। একাত্তরের ত্যাগ আর বীরত্বের ইতিহাসকে ছড়িয়ে দিতে হবে প্রজম্ম থেকে প্রজম্মে- এমনটাই মনে করে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মো. আপ্তার আলী। পরবর্তী প্রজম্মকে ঘিরেই তাঁর সকল আশা-ভরসা। চোখমুখে আলো ছড়িয়ে তাদের উদ্দেশে তিনি শুধু বললেন- “এই দেশটা অনেক কষ্টে স্বাধীন হয়েছে। রক্ত দিয়ে আমরা পেয়েছি একটি পতাকা আর মানচিত্র। তোমরা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসটি ছড়িয়ে দিও। স্বাধীন দেশের পতাকাটা পৃথিবীর বুকে তুলে ধরার দায়িত্বটাও তোমাদের হাতেই দিয়ে গেলাম।”

(ইন্টারভিউটি গ্রহণের কিছুদিন পরেই হঠাৎ মৃত্যু বরণ করেন মুক্তিযোদ্ধা আপ্তার আলী। দেশ ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাঁর বলা কথাগুলোই আমাদের কাছে ইতিহাস হয়ে থাকলো।)

সংক্ষিপ্ত তথ্য
নাম : যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মো. আপ্তার আলী।

ট্রেনিং: একমাস দশ দিন ট্রেনিং নেন ভারতের আসাম নোয়ারবন্দ ট্রেনিং ক্যাম্পে। এফএফ (ফ্রিডম ফাইটার) নম্বর ছিল ৬৮৬৭।

যুদ্ধ করেন : চার নম্বর সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করেন কুলাউড়া থানার সুন্দরবাড়ি বাজার, ফুলতলা বাজার, রাণীবাড়ি, আমবাড়ি, তুসার বাগান, জামাইয়ের বাগান প্রভৃতি এলাকায়।

যুদ্ধাহত : ১ নভেম্বর ১৯৭১। ভোর চারটার দিকে। ইরমিন টিলার পাশে পাকিস্তানি সেনাদের ছোড়া মর্টারের স্পিন্টারের আঘাতে রক্তাক্ত ক্ষত হয় তাঁর বাম পায়ে, পেটে ও মাথায়।

লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে, প্রকাশকাল: ২৫ জানুয়ারি ২০১৮

© 2018, https:.

এই ওয়েবসাইটটি কপিরাইট আইনে নিবন্ধিত। নিবন্ধন নং: 14864-copr । সাইটটিতে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো তথ্য, সংবাদ, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Show More

Salek Khokon

সালেক খোকনের জন্ম ঢাকায়। পৈতৃক ভিটে ঢাকার বাড্ডা থানাধীন বড় বেরাইদে। কিন্তু তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঢাকার কাফরুলে। ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর। ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক সংস্কৃতির প্রতি। নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। যুক্ত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও থিয়েটারের সঙ্গেও। তাঁর রচিত ‘যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য’ গ্রন্থটি ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ হিসেবে ‘কালি ও কলম’পুরস্কার লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী ও ভ্রমণবিষয়ক লেখায় আগ্রহ বেশি। নিয়মিত লিখছেন দেশের প্রথম সারির দৈনিক, সাপ্তাহিক, ব্লগ এবং অনলাইন পত্রিকায়। লেখার পাশাপাশি আলোকচিত্রে নানা ঘটনা তুলে আনতে ‘পাঠশালা’ ও ‘কাউন্টার ফটো’ থেকে সমাপ্ত করেছেন ফটোগ্রাফির বিশেষ কোর্স। স্বপ্ন দেখেন মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী এবং দেশের কৃষ্টি নিয়ে ভিন্ন ধরনের তথ্য ও গবেষণামূলক কাজ করার। সহধর্মিণী তানিয়া আক্তার মিমি এবং দুই মেয়ে পৃথা প্রণোদনা ও আদিবা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back to top button