একাত্তরে প্রতিবাদ: লন্ডনে
১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাদের গণহত্যার বিরুদ্ধে সারাবিশ্বে নানাভাবে প্রতিবাদ করেছিলেন কিছু মানুষ। ছোট ছোট উদ্যোগ নিয়েই বিশ্বকে তারা আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়ানোর। ইতিহাসের পাতা থেকে নেওয়া তেমন কিছু প্রতিবাদ।
লন্ডনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে সক্রিয় ছিলেন কিছু মানুষ। অক্সফোর্ড পড়ূয়া ব্রিটিশ তরুণী ম্যারিয়েটা প্রকোপে। ১৯৭১-এ গণমাধ্যমে প্রচারিত বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের ছবি তাকে প্রবলভাবে আন্দোলিত করে। ২০ এপ্রিল ব্রিটেনে তার নিজ বাড়িতে অনুষ্ঠিত এক সভায় তাকে সাধারণ সম্পাদক করে গড়ে তোলা হয় একটি নতুন সংগঠন ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’। প্রেস ইউনিয়ন, ইন্টারন্যাশনাল কনসেন্স ইন অ্যাকশন, পিস নিউজ, ইয়ং লিবারেলস, থার্ড ওয়ার্ল্ড রিভিউ, বাংলাদেশ নিউজ লেটার ফ্রেন্ডস পিস কমিটি ও বাংলাদেশ স্টুডেন্টস অ্যাকশন কমিটির প্রতিনিধিরা ওই সভায় অংশ নেয়। ‘অ্যাকশন বাংলাদেশের’ প্রধান কাজ ছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যার নৃশংসতা সম্পর্কে বিশ্ব বিবেককে জাগ্রত করে তোলা। লন্ডনের ক্যামডেনে ম্যারিয়েটার নিজ বাড়িতে ছিল ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’-এর কার্যালয়। এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর দীর্ঘ ৯ মাস অক্লান্তভাবে এদেশের মানুষের জন্য তহবিল সংগ্রহ আর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সমর্থন আদায় করার জন্য কাজ করেন ম্যারিয়েটা। বিশ্বখ্যাত টাইমস ও গার্ডিয়ান পত্রিকার মাধ্যমে সারা বিশ্বকে তারা জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের গণহত্যার নানান চিত্র।
ম্যারিয়েটার সঙ্গে একাত্তরে যুক্ত ছিলেন আরও দু’জন উদ্যোগী মানুষ। তাদের একজন স্কুলশিক্ষক পল কনেট। ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’ সংগঠনটির সভাপতি ছিলেন তিনি। তাকে ভালোবেসে বিয়ে করেন নিউ জার্সির মেয়ে এলেন। দু’জনেই লন্ডনভিত্তিক ওয়ার রেজিস্টার্স ইন্টারন্যাশনালের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। একাত্তরে বাংলাদেশে নিরীহ নিরপরাধ জনমানুষের ওপর নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও জনমত গড়ে তোলার গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করেছিলেন এই দম্পতি। পাকিস্তানি সেনারা পূর্ব পাকিস্তানের নিরীহ মানুষের রক্ত ঝরাচ্ছে- এমন খবরে বসে থাকতে পরেননি তারা। মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন ও অসহায় বাঙালিদের সাহায্য করতে ‘অপারেশন ওমেগা’ নামে একটি সংস্থা গড়ে তোলেন। ১ আগস্ট ১৯৭১ তারিখে লন্ডনের ট্রাফালগার স্কয়ারে তারা বিশাল এক জনসভার আয়োজন করে। যেখানে মূল দাবি উত্থাপিত হয়- বাংলাদেশে গণহত্যায় পাকিস্তানি সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান। জনসভা শেষে বেশকিছু ত্রাণ সামগ্রীসহ একটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে পলের স্ত্রী এলেন কনেট চলে আসেন ভারতে। অতঃপর অক্টোবরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যশোরের উপকণ্ঠ শিমুলিয়া দিয়ে ঢোকেন বাংলাদেশে। কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাকে গ্রেফতার করে এবং দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়।
ছবি: সংগৃহীত
লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক সমকালে, প্রকাশকাল: ২৬ মার্চ ২০১৮
© 2018, https:.