একাত্তরে প্রতিবাদ: ফ্রান্সে
১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাদের গণহত্যার বিরুদ্ধে সারাবিশ্বে নানাভাবে প্রতিবাদ করেছিলেন কিছু মানুষ। ছোট ছোট উদ্যোগ নিয়েই বিশ্বকে তারা আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়ানোর। ইতিহাসের পাতা থেকে নেওয়া তেমন কিছু প্রতিবাদ।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের গণহত্যার খবর জেনে উৎকণ্ঠিত হয়েছিলেন ফ্রান্সের বুদ্ধিজীবী আঁদ্রে মালরো। মুক্তিযুদ্ধের সময় ফরেন লিজিয়ন গঠন করে বাঙালির প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নিতে চেয়েছিলেন তিনি, উদ্বুদ্ধ করেছিলেন বিশ্বজনমতকে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে তিনি সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলেন। সরকারের কাছে তিনি আকুতি জানিয়েছিলেন- ‘আমাকে একটা যুদ্ধবিমান দাও, আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য জীবনের শেষ লড়াইটা করতে চাই।’ ফ্রান্স সরকারের উদ্দেশে তার এ আকুতি আজও ইতিহাস হয়ে আছে। তার এই আকুতি ফ্রান্সের জনগণের মনকে স্পর্শ করে। সে সময় তিনি প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। তার আহ্বানে পশ্চিমা লেখক ও বুদ্ধিজীবী সমাজে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ফলে অনেকেই পাকিস্তানি বর্বরতার প্রতিবাদ করেন।
আঁদ্রে মালরোর রচনা পড়ে উদ্বুদ্ধ হন পল ক্যুয়ের। মালরোর বাংলাদেশের পক্ষে লড়বার সংকল্প বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করে তাকে। ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১। পল ক্যুয়ের একটি ঘটনা ঘটিয়ে বসলেন। প্যারিসের অরলি বিমানবন্দরে এসে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িংয়ের নিয়ন্ত্রণ নেন তিনি। একটি ব্যাগের ভেতর থেকে বৈদ্যুতিক তার বের করে দেখিয়ে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, ব্যাগে বোমা আছে। এরপর তিনি দাবি করেন, পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার জন্য লড়তে থাকা মানুষের জন্য অবিলম্বে ২০ টন মেডিকেল সামগ্রী ও রিলিফ প্লেনটিতে তোলা না হলে তিনি বোমার বিস্টেম্ফারণ ঘটিয়ে প্লেনটিকে উড়িয়ে দেবেন। তার দাবি অনুযায়ী বিমানে রিলিফ সামগ্রী তোলাও হয়। পরে রেড ক্রস ও বিমানবন্দর কর্মীদের ছদ্মবেশে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। ব্যাগ খুলে দেখা যায়, সেখানে রয়েছে কতকগুলো বই, এক কপি বাইবেল ও একটি ইলেক্ট্রিক শেভার। এভাবে পাঁচ ঘণ্টায় শেষ হয় বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনাটি। তবে অভিনব এ ঘটনার পর ওষুধ ও রিলিফ সামগ্রী পূর্ব পাকিস্তানে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় ফ্রান্স সরকার।
ছবি: সংগৃহীত
লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক সমকালে, প্রকাশকাল: ২৬ মার্চ ২০১৮
© 2018, https:.