আমরা সন্ত্রাসী দল না, আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার দল-সজীব ওয়াজেদ জয়
‘এখন দেশ এগিয়ে এসেছে। দেশের মানুষ সুখে আছে, শান্তিতে আছে। সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আমরা এখানে এসেছি। বাংলাদেশের মানুষ এখন আওয়ামী লীগকে ভোট দেবেই। বিএনপি, সুশীল, জামায়াত এক হয়েও, বাংলাদেশে কোনো শক্তি নাই আওয়ামী লীগকে ভোটে হারাতে পারবে। তাই আমাদের আর কোনো ভয় নাই। আওয়ামী লীগের কখনই কোনো ভয় থাকে না।’ এমনই আশাবাদের কথা উচ্চারিত হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের মুখে।
২৭ অক্টোবর শনিবার বিকেলে রাজধানীর রেডিসন হোটেলে সুচিন্তা ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘২১ শে আগস্ট: বাংলাদেশের রাজনীতির বর্তমান-ভবিষ্যত’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটির শুভসূচনা হয়। অতঃপর সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পেছনের সূত্রটি তুলে ধরে ভবিষৎ বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমীকরণটি সকলের কাছে স্পষ্ট করেন। তিনি বলেন-‘একাত্তরে দেশের রাজনীতিতে যে সমাধান হয়েছিল, পঁচাত্তরে জাতির জনককে হত্যার মাধ্যমে এদেশে আবার মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চেতনা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। জয়বাংলার পরিবর্তে স্টাবলিস্ট হয়েছিল জিন্দাবাদ।অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে পরিণত করা হয় একটি প্রতিক্রিয়াশীল বাংলাদেশে।এই প্রক্রিয়াতেই যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াত-শিবির রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা পায়।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় কারা যুক্ত ছিল- হারিজ চৌধুরী, পিন্টু, তারেক জিয়া ও বাবর।এরা সবাই বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত।এদের সাথে ছিল মুফতি হান্নানের নেতৃত্বে অন্যান্য জঙ্গিরা।তাদেরও পেছনে ছিল বঙ্গবন্ধুর ঘাতক নূর চৌধুরী।যুক্ত ছিলেন যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতা বিরোধী ও রাজাকার আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদও।এই লোকগুলো এক হয়েছে অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশকে ধ্বংস করতেই।এরা কিন্তু কোন ব্যক্তি নয়।বরং দেশবিরোধী অপশক্তি। এটা আমাদের বুঝতে হবে।এটা বোঝার মধ্যেই লুকিয়ে আছে বাংলাদেশের ভবিষ্যত।’
আরাফাত রাজনীতির সমীকরণটি তুলে ধরেন ঠিক এভাবে- ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছিল কারা? সেই নুর চৌধুরী গংরা।চারনেতাকেও পরবর্তীতে এরাই হত্যা করে।তারও আগে ১৯৭১ সালে ইয়াহিয়ার পক্ষে এদেশে গণহত্যা ও বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল কারা? গোলাম আজম, মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুজাহিদ গংরা। এই শক্তিই ঘুরে ফিরে রঙ বদলিয়ে বারবার আক্রমণ করছে।খুব চিন্তা করলে দেখা যাবে, বিএনপির সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ঘাতক, যুদ্ধাপরাধী জামায়াত-শিবির চক্র ও জঙ্গীরা এক হয়েই দেশের রাজনীতিতে ইয়াহিয়ার মতো ভয়ন্কর ঘটনা রচনার চেষ্ট চালিয়ে যাচ্ছে।এটাই হচ্ছে সেই সমীকরণ।সত্যিকারভাবে নষ্ট রাজনীতির একটি শুদ্ধরূপ হচ্ছে বিএনপি।এরাই একসময় ইয়াহিয়া হবে।বডির ভেতর ক্যান্সার রাখলে তা বাইরে ছড়াবেই।রাজনীতির এই নেকসাসকে বাঁচিয়ে রাখলে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভাল কিছু ঘটবে না।’
তরুণ প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন-এই সমীকরণটাই সারা দেশে ঘরে ঘরে গিয়ে বোঝাতে হবে।এর বিরুদ্ধেই আজ দাঁড়াতে হবে।এই নেকসাসের বিরুদ্ধেই জাতীয় ঐক্য হওয়া উচিত।যার নেতৃত্বে দিতে পারেন একমাত্র জননেত্রী শেখ হাসিনা।এই নেকসাসের বিরুদ্ধে যদি আজ আমরা জয়লাভ করতে না পারি, তাহলে আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়তে পারব না।
বিএনপিকে নিয়ে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত সরকারবিরোধী জোট জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের দিকে ইঙ্গিত করে অনুষ্ঠানে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে তারা আমাদেরকে ভয় দেখাতে চায়। আসুক, যারা ভোট পায় না তাদেরকে আমরা ভয় পাই না। আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক দল, শুধুমাত্র মানুষের ভোটে ক্ষমতায় এসেছে। বন্দুকের নল দিয়ে আওয়ামী লীগ কোনোদিন ক্ষমতায় আসেনি। এই সুশীলবাবুদের হুমকিতে আওয়ামী লীগের কিছু যায় আসে না। আমরা পরোয়া করি না।জিয়াউর রহমান যেভাবে স্বাধীনতাবিরোধীদের দেশে ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসন করেছিলেন, জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট গঠন করে কামাল হোসেনরা একইভাবে একুশে অগাস্ট হত্যাকাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমানকে ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসন করতে চাচ্ছেন।’
ঐক্য ফ্রন্টের নেতাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘তখন থেকেই তারা তারেক রহমানের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে বসে আছে। এই ঐক্য ফ্রন্ট; এই কামাল হোসেন, মান্না, মইনুল হোসেন- সেই এক-এগারো থেকেই তারেক রহমানের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে জড়িত।তারা এখন নালিশ করছে তাদের গ্রেপ্তার করছে, মইনুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমি বলব ওদের একটু শোকর করা উচিৎ যে, আওয়ামী লীগ বিএনপি না। বিএনপি মাত্র পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগের কতজন নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে? বিএনপি যদি আমাদের মত এরকম ১০ বছর ক্ষমতায় থাকত তাহলে আওয়ামী লীগের কেউ বেঁচে থাকত?’
সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘হ্যাঁ, যারা মানুষ হত্যা করে, যারা জঙ্গিদের পালে, শত শত মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে যে দল, সে দলের কর্মী- আমরা অবশ্যই তাদেরকে গ্রেপ্তার করব। এখানে কোনো ছাড় হবে না। যারা একুশে অগাস্টের হত্যাকারীদের সাথে হাত মেলাবে, সেই ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত, অবশ্যই আমরা তাদেরকে গ্রেপ্তার করব।’
সুশীলদের উদ্দেশে জয় বলেন- ‘এই যে সুশীলরা যারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বড় বড় কথা বলে, তারা কি মনে করে আওয়ামী লীগ যদি বিএনপির মত হত তাহলে আমরা আদালতে যেতাম? আজকে যদি আমার চরিত্র তারেক রহমানের মত হতো তাহলে বেগম জিয়া কি শুধুমাত্র জেলে থাকতেন? আওয়ামী লীগ বিএনপি না। আমাদের চরিত্র তাদের মত না। আমরা খুনি না। আমরা সন্ত্রাসী দল না। আওয়ামী লীগ হচ্ছে স্বাধীনতার দল।’
সুশীল সমাজের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘আমাদের সুশীলরা, এই যে ঐক্য ফ্রন্ট নিরপেক্ষতার কথা বলে। সন্ত্রাস, হত্যাকাণ্ড এই নিয়ে কি কোনো নিরপেক্ষতা হতে পারে? তাহলে তারা এই কথা কিভাবে বলে? যারা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বলতে লজ্জা পায় তারা সন্ত্রাসকে আশ্রয় দিচ্ছে। যারা খুনিদের বিরুদ্ধে কথা বলতে লজ্জা পায় তারা খুনিদের বাঁচিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।’
‘আজ আমাদের এই সুশীলবাবুরা বলে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে। কিসের থেকে রক্ষা করতে হবে? বাংলাদেশের মানুষ এখন শান্তিতে আছে। এরকম ২১ অগাস্টের মত হত্যাকাণ্ড আর ঘটছে না। এটা থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে? বাংলাদেশ এখন উন্নয়শীল হয়ে মধ্যম আয়ের দেশ হয়েছে। এটা থেকে রক্ষা করতে হবে? একটা দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হচ্ছে, সেখান থেকে রক্ষা করতে হবে? ‘না, বাংলাদেশকে আসলে যেটা থেকে রক্ষা করা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে, এই যে জঙ্গি দল বিএনপি, তাদের হাত থেকে রক্ষা করায় বাঁধা দিচ্ছে এই ঐক্য ফ্রন্ট। ঐক্য ফ্রন্টের চেষ্টা হচ্ছে বিএনপিকে বাঁচিয়ে দেওয়া, বিএনপিকে পুনর্বাসন করা। ঠিক জিয়াউর রহমান যেভাবে যুদ্ধাপরাধীদের দেশে ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসন করেছিল, এই সুশীলরা এখন নেমেছে তারেক রহমানকে দেশে ফেরত আনতে। আমরা কি সেটা দেখতে চাই?’
ঐক্য ফ্রন্ট তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায় বলে মন্তব্য করেন জয়।
‘বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কি হবে? ২১ অগাস্টের হত্যাকারী তারেক রহমান, তাকে কি আমরা ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রী দেখতে চাই? এটাই কি চায়? আমাদের সুশীলরা তো মনে হচ্ছে সেটাই চায়। না, সেটা আমরা হতে দেব না।’
জয় বলেন, ‘২১ অগাস্টের বিচার হয়েছে এবং তাদের বিচার বাস্তবায়ন হবে। তারেক রহমানকেও আমরা দেশে ফিরিয়ে এনে সাজা দেব। এটা আমাদের ওয়াদা।’
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, মুক্তিযোদ্ধা ও নারী অধিকারকর্মী রোকেয়া কবীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু। তারা সকলেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ভবিষৎ বাংলাদেশ গড়তে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
ছবি: আজ সারাবাংলা ডটকম
লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে আজ সারাবেলা ডটকমে, প্রকাশকাল: ২৮ অক্টোবর ২০১৮
© 2018, https:.