মুক্তিযুদ্ধ

তারাও কি যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসনের কাজে নেমেছেন?

নাম তার মির্জা জামাল পাশা। ‘পাশা’ বললে সবাই একনামে চেনে। ছোটবেলা থেকেই ছিলেন দুরন্ত। লেখাপড়ায় তার মন বসতো না। অংকের প্রতি ছিল দারুণ ভয়। স্কুল পালিয়ে আড্ডা আর বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলেই সময় কাটত তার।

তখন সিলেট ঈদগাহ মাঠ, টিলাঘর মাঠ ও মাদ্রাসা মাঠে ফুটবল খেলা হতো। পাশা খেলতেন ব্যাকে। খেলা নিয়ে মারামারিও হতো প্রায়ই। তাদের ছিল ৪-৫ জনের একটা দল। সবাই দুর্ধর্ষ। কিছু বলে কেউ অক্ষত অবস্থায় ফিরে আসতে পারত না। বাড়িতে বিচার আসা ছিল নিয়মিত ঘটনা। সব মিলিয়ে তিনি ছিলেন বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তার প্রধান কারণ।

পাশা তখন ক্লাস টেইনের ছাত্র। নানা কারণে বিচার যায় প্রধান শিক্ষকের কাছে। এক সময় তাকে এইডইড হাই স্কুল থেকে টিসি দেওয়া হয়। ছেলের এমন ঘটনায় অপমানিত হন বাবা মির্জা ফজলুর রহমান। ফলে কিছুদিন থাকেন গৃহবন্দি। পরে তাকে ভর্তি করে দেওয়া হয় সিলেটের গোলাপগঞ্জে, ঢাকা দক্ষিণ হাই স্কুলে।

রাজনীতির প্রতি বিশেষ খায়েস ছিল তার। নাইনে থাকতেই তিনি ছাত্রলীগের কাজের সঙ্গে যুক্ত হন। ছয় দফার আন্দোলন তখন চলছে। বাবার থেকে প্রতিদিন হাত খরচ পেতেন এক টাকা। মায়ের কাছ থেকে নিতেন আরও এক টাকা। দুই টাকা নিয়ে টইটই করে ঘুরে বেড়াতেন। সিলেটে তখন আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন চঞ্চল, মোদাব্বির হোসেন মানিক, দেওয়ান ফরিদ গাজী, হাবিবুর রহমান উকিল (তোতা উকিল) প্রমুখ। নেতাদের সঙ্গে মিটিংয়ে যাওয়া, পোস্টার লাগানো আর কন্ঠ আকাশে তুলে মিছিলে তিনি স্লোগান তুলতেন জিন্দা বাজার ও বন্দর বাজারের রাস্তায়। এভাবেই পাশার বাঁধনহারা দুরন্ত মন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে থাকে।

১৯৭১ এ যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা নাজির আহমেদ চৌধুরীর জীবন রক্ষা করেছিলেন মির্জা জামাল পাশা। তিনিই তার ঠিকানা ও মুঠোফোন নম্বরটি দিয়ে সাহায্য করেন। নানা বিষয়ে প্রথম বারকয়েক মুঠোফোনে চলে আলাপচারিতা। অত:পর এক সকালে পা রাখি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মির্জা জামাল পাশার সিলেটের গোয়াবাড়ির বাড়িতে। প্রায় চার ঘণ্টার আলাপে এই বীর তুলে ধরেন একাত্তরের নানা ঘটনাপ্রবাহ ও বাংলাদেশ নিয়ে তার স্বপ্নের কথাগুলো।

একাত্তরে বুকে গুলিবিদ্ধ হন জামাল পাশা 

মির্জা ফজলুর রহমান ও কুশমান বিবির মেজ ছেলে মির্জা জামাল পাশা। বাবা ছিলেন সিলেট সিআর কোর্টের স্ট্যাম্প ব্যবসায়ী। বাড়ি সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার ডেকাপুর গ্রামে। কিন্তু ক্লাস টু এর পর পাশারা চলে আসেন সিলেট শহরে, আম্বরখানায়। লেখাপড়ায় তার হাতেখড়ি ডেকাপুর প্রাইমারি স্কুলে। পরে তিনি পড়েন বালাগঞ্জ ডিএম প্রাইমারি ও আম্বরখানা প্রাইমারিতে। ক্লাস টেইন পর্যন্ত ছিলেন এইডইড হাই স্কুলে। অতঃপর ঢাকা দক্ষিণ হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করে ভর্তি হন সিলেট এমসি কলেজে। ১৯৭১ সালে তিনি ছিলেন ইন্টারমিডিয়েট ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্র।

পাশার মনে ‘স্বাধীনতা’ শব্দটির নানা ভাবনা তৈরি করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। কীভাবে?

সে ইতিহাস শুনি তার জবানিতে। তার ভাষায়, “৭ মার্চ ১৯৭১। বঙ্গবন্ধু ভাষণ দিবেন। নেতাদের সঙ্গে আমিও চলে যাই ঢাকাতে। ওইদিন খুব কাছ থেকে প্রথম দেখি বঙ্গবন্ধুকে। উনি মঞ্চে উঠলেন। মূর্তির মতো দেখেছি তাকে। যেন আমার অনেক আপন! ভাষণ শুনে মাথার ভেতর বিজলির মতো ঝিলিক দিচ্ছিল। উনি বললেন- ‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে…।’ মনের মধ্যে প্রশ্ন শক্রু কে? উনি আর্মিদের উদ্দেশ্যে বললেন- ‘তোমরা ব্যারাকে থাকো…..গুলি চালালে আর ভাল হবে না…।’ পরিষ্কার হয়ে গেলাম শক্রু আসলে কারা। শেষে বললেন ‘এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ মাথায় তখনই ‘স্বাধীনতা’ শব্দটি গেঁথে গেছে।”

ভিডিও : ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ শোনার অনুভূতি জানাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা জামাল পাশা

ফিরে গিয়ে বাবারে বলি, ‘বাবা, স্বাধীনতা কিতা? উনি বললেন, ‘পচ্চিম ফাকিস্তানি ইতায় আমরারে বউত লাখান চুইয়া খাইছে। অখন আমরা মুক্ত অওয়া উ লাগব অকটাউ স্বাধীনতা।’ ওই যে বঙ্গবন্ধু বলছেন ‘মুক্তির সংগ্রাম’। আমার ভেতর তখন ‘মুক্তি’ আর ‘স্বাধীনতা’ শব্দ দুটি খেলা করতে থাকে।’

মার্চের ২৩ তারিখ থেকে সিলেটে নেতাদের সঙ্গে গোপন মিটিংয়ে অংশ নিতে থাকেন পাশা। আর্মিরা আসছে। এ খবর শুনে বাড়ির পাশের রাস্তায় গাছ কেটে ব্যারিকেট দেওয়ার দায়িত্বও পড়ে তার ওপর। মার্চের শেষে চলে যান মানিক পীরের মাজারের দিকে। সেখানে উঁচু পাহাড়ে অস্ত্রসহ অবস্থান নিয়েছিল ইপিআরের ৮-১০জন বাঙালি সদস্য। পাশা তাদের ইনফর্মারের কাজ করতেন। এক সময় গোলাগুলি শুরু হলে তারা সরে যায় টিলাঘরে। সেখানেও পাকিস্তানি সেনারা হেলিকপ্টারে বোম্বিং করে। ফলে সবাই চলে আসে শওকত চেয়ারম্যানের বাড়িতে, খাদিম পাড়ায়।

আপনি তখন কী করলেন?

জামাল পাশার উত্তর- ‘এপ্রিলের শেষ দিকে বড় ভাইসহ বাবা আমাকে পাঠিয়ে দেয় নানা বাড়িতে, ফেঞ্চুগঞ্জের মানিককোণা গ্রামে। মামাতো ভাই ডা. মিনহাজ। উনি আওয়ামী লীগ করতেন। কয়েকদিন যেতেই উনি বললেন, ‘তোমরা ইন্ডিয়াতে যাইগি। হিনো আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতা অকল আছইন তারা কইয়া দিবা কিতা করতায়।’

রাজি হতেই উনি খরচের জন্য কিছু টাকা দেন। তখন আমরা দুই ভাই, এক মামাতো ভাই ও পরিচিত আরেকজন মৌলভীবাজারের বড়লেখা হয়ে ইন্ডিয়ার রাণীবাড়ি চলে যাই। সেখানকার চা বাগান পেরিয়ে আসি করিমগঞ্জ টাউন হলে। ওটা ছিল রিক্রুটিং ক্যাম্প। সুবেদার আব্দুল হক, আ. রহিম ও এমএলএ দেওয়ান ফরিদ গাজী সাহেবের দেখা পাই সেখানেই।

মে মাসে আমাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় কলকলি ঘাট, বেসিক ট্রেনিং ক্যাম্পে। কিছুদিন চলে লেফট-রাইট। ওখানেই একদিন বাবা আসেন ফিরিয়ে নিতে। শুনেই আমি রেগে যাই। বলি- ‘যুদ্ধ করাত আইছি। শেষ না খরি যাইতাম না।’ বাবা আমারে জোর করলেন না। শুধু বড় ভাইকে নিয়েই ফিরে গেলেন।

ট্রেনিং কি ওখানেই নিলেন ?

গুলিটি বুক বিদ্ধ করে হাতের জয়েন্টের পেছন দিয়ে বেরিয়ে যায়

‘না, দুই-তিনদিন পরই আমাদের নেওয়া হয় আসামের ইন্দ্রনগর। সেখানে ট্রেনিং হয় ২৮দিন। এফএফ (ফ্রিডম ফাইটার) নম্বর ছিল ১৭৩। আমরা ছিলাম ফার্স্ট ব্যাচ। ভারতীয় রাজারাম, কর্নেল বাকসী, মেজর চৌহানের কথা এখনও মনে পড়ে। পরে জুনিয়র লিডারশিপ ট্রেনিংয়ের জন্য পাঠানো হয় লোহারবনে। ট্রেনিং চলবে ৬০দিন। সহযোদ্ধারা তখন রণাঙ্গনে। আর আমি তখনও ট্রেনিংয়ে! মেনে নিতে পারছিলাম না। লিডারশিপ ট্রেনিং শেষ না করেই যুদ্ধের জন্য চলে যাই জালালপুর সাব সেক্টরে। চার নম্বর সেক্টরের চার নম্বর সাব সেক্টর ছিল এটি। সাব সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মাহবুবুর রব সাদী, টোয়াইসি খাজা নিজাম আর সেক্টর কমান্ডার সিআর দত্ত।’

মুক্তিযোদ্ধা পাশা বেশিরভাগ যুদ্ধ করেন জকিগঞ্জের আটগ্রামে। ওখানে ছিল পূর্বপাকিস্তানের তিন নম্বর ডিফেন্স। অগাস্ট পর্যন্ত অপারেশন ছিল ‘হিট অ্যান্ড রান’। তারা ক্যাম্প থেকে গ্রুপ করে সন্ধ্যার পর ভেতরে ঢুকতো। পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্প ছিল ষোলঘর বাজার, রাজাটিলা, আটগ্রাম ও জকিগঞ্জ বাজার এলাকায়। ক্যাম্পের পাশে আক্রমণ চালিয়েই সরে পড়ত সবাই। দলটির প্লাটুন কমান্ডে ছিলেন কুমিল্লার নবীনগরের বাইট্টা জাহাঙ্গীর আর সেকশন কমান্ডার ব্রাহ্মণবাড়িয়া কসবার আদিল।

অগাস্টের শেষে পরিকল্পনা যায় পাল্টে। জালালপুর সাব সেক্টরের অধীনে কানাইঘাট ও জকিগঞ্জে ক্যাম্প করা হয় পাঁচটি। একটা ক্যাম্প লুবা বাগানে, মাহবুবুর রব সাদী ভাই দায়িত্বে। একটা মন্তাজ গঞ্জের রাজাটিল্লায়, দায়িত্বে খাজা নিজাম। একটা কারাবাল্লায়, দায়িত্বে কুমিল্লার আশরাফ। আরেকটি লঘুচরে, দায়িত্বে হবিগঞ্জের আশরাফ বাবু। শেষের ক্যাম্পটি বাঙিতে, দায়িত্বে ঢাকার কলাবাগানের মনির। পাশা ছিলেন আশরাফ বাবুর ক্যাম্পে। তাদের ৩৭জনের দলের টোয়াইসি আব্দুর শুকুর আর গার্ড কমান্ডার ছিলেন তিনি নিজেই। পাকিস্তানিরা ছিল তাদের ৬শ গজ সামনে। ফলে তুমুল গোলাগুলি চলতে থাকে।

১১-১৫ অক্টোবরের ঘটনা। আটগ্রামে পারমানেন্ট অ্যাটাকের পরিকল্পনা হয়। কী সেই পরিকল্পনা?

মুক্তিযোদ্ধা পাশা বলেন- “দুইদিক থেকে কাভারিংয়ে থাকবেন সাদী ও মনিরের কোম্পানি। অ্যাটাক করবে রব আর আশরাফ বাবুর কোম্পানি। আশরাফের টোয়াইসি বাইট্টা জাহাঙ্গীর। আমি একটা সেকশনের দায়িত্বে।”

ভিডিও :একাত্তরের রণাঙ্গনের কথা বলছেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মির্জা জামাল পাশা

“রাত তখন আড়াইটা-তিনটা। হঠাৎ ফায়ার শুরু হয়। খেতি জমি পেরিয়ে ওদের পঞ্চাশ গজের ভেতরে আমরা চলে আসি। বেরি লাইট পিস্তলের ফায়ার দিতেই শুরু হয় গোলাগুলি। এ সময় তাদের গুলিতে আশরাফের মাজার পেছনের মাংস উড়ে যায়। উনি ক্রলিং করে উঁচু একটা জায়গা পেরুতেই গুলির মুখে পড়েন। রবের টোয়াইসি হুঁশিয়ারের দুই ভাইও মারা পড়ে। সব ঘটছে চোখের সামনে। জীবনের পরোয়া তখন নেই। কিন্তু সহযোদ্ধাদের মৃত্যু দেখে বুকের ভেতরটা খামচে ধরছিল। আমি পাকিস্তানিদের বাঙ্কার খুব কাছাকাছি চলে আসি। ভেতরে ওদের কথাও শুনছি। ‘জয় বাংলা’ বলেই গ্রেনেড চার্জ করে ওদের চারটি বাঙ্কারই ধ্বংস করে দেই।”

“ফজরের সময় আমরা ব্যাক করি। পাকিস্তানিদের মর্টার শেল শুরু হয়েছে তখন। ফিরছি সহযোদ্ধাদের চারটি লাশ নিয়ে। ওখানেই চোখে গুলি খেয়ে পড়েছিল নাজির আহমেদ। ও ছিল আশরাফের গ্রুপে। শরীরে তখন শক্তি অনেক। তাকে কাঁধে নিয়ে এসএলআরটাও তুলে নিলাম। অত:পর কুশিয়ারা নদীতে ভেসে ভেসে বহুকষ্টে তাকে নিয়ে আসি ক্যাম্পে। একাত্তরে সহযোদ্ধারাই ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের সবচেয়ে আপন।”

ওই অপারেশনের পরেই পাকিস্তানি আর্মি চার্জ শুরু করে। ফলে অন্য ক্যাম্পগুলো উইড্রো হয়ে যায়। কিন্তু পাশারা লঘুচর ক্যাম্পেই থাকেন। কমান্ডার আশরাফ বাবু তখন নেই। শুকুরও অসুস্থ। ফলে ক্যাম্পের দায়িত্বে পাশা। যোদ্ধা মাত্র ১১জন। তবুও অসীম সাহস নিয়ে তারা লড়ে যান। সবাই ছিলেন খুব সাহসী। আব্দুল হক ছিলেন কুমিল্লা জেলের জল্লাদ আর ঢাকা জেলার জল্লাদ ছিলেন জমির চৌধুরী।

একটি অপারেশনের কথা জানান এই সূর্যসন্তান- “পাকিস্তানি সেনারা একবার রাত দুইটার দিকে আক্রমণ করে। আমাদের ছিল ৫টি বাঙ্কার। ওরা সবগুলোকেই ওরা টার্গেট করে। আমরাও এর জবাব দিই। এক ঘণ্টা পরেই পাকিস্তানিরা পিছু হটে। সাহসী যোদ্ধাদের কারণেই ওইদিন আমরা জয়ী হয়েছিলাম। মৃত্যুভয় ছিল না। পাঞ্জাবিদের মারতে হবে এটাই ছিল চিন্তা।

এরপরেই লোহারবন থেকে ষাটজনকে পাঠানো হয় ক্যাম্পে। তাদের মধ্যে দুর্ধর্ষ ছিলেন মাহতাবুর রহমান মাহতাব ও পুলিশের মঈনুদ্দিন। এ সময় ডেপুটেশনে আমি অংশ নিই দোলাই বাগান ও সাবাজপুরসহ পাঁচটি অপারেশনে।”

এক অপারেশনে পাকিস্তানি সেনাদের ছোঁড়া একটি গুলিতে বিদ্ধ হয় মুক্তিযোদ্ধা জামাল পাশার বুকের বাম পাশ। ফলে ওই জায়গাসহ গোটা বাম হাত প্রায় অবশ হয়ে গেছে। বাম হাতে ভারি কিছু তুলতে পারেন না তিনি। বুক ও বাম হাতে ব্যাথা হয় ক্রমাগত। শীতে ব্যথা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। শক্রুর সঙ্গে যুদ্ধ শেষ হলেও শরীরের সঙ্গে যুদ্ধ করেই বেঁচে আছেন এই বীর যোদ্ধা। তবুও আফসোস নেই কোনও। দেশ পেয়েছেন, পতাকা পেয়েছেন- এটা ভেবেই শরীরের কষ্ট সহ্য করছেন মুক্তিযোদ্ধা জামাল পাশা।

কী ঘটেছিল রক্তাক্ত ওই দিনটিতে?

প্রশ্ন শুনে পাশা খানিক নিরব হয়ে যান। এরপর ধীরে ধীরে তিনি বলতে থাকেন।
তার ভাষায়- “একাত্তরের অক্টোবর মাসের দশ কিংবা বারো তারিখের ঘটনা। আমরা তখন লঘুচর ক্যাম্পে। বিকেলের দিকে হঠাৎ ষোলঘর বাজার থেকে পাকিস্তানি সেনারা শেলিং শুরু করে। প্রথম শেলটি এসে পড়ে ক্যাম্পের বামে। সবাই অস্ত্র নিয়ে তখন পজিশনে চলে যায়। কারণ শেলিং করার অর্থই ছিল অ্যাটাক হবে।”

ক্যাম্পটি ছিল একটা বাড়িতে। শেলিং তখন বন্ধ। যেদিকে শেল পড়েছে আমি ওইদিকে একটু এগিয়ে যাই। বাইনোকুলার দিয়ে ওদের অবস্থান দেখার চেষ্টা করি। দেখলাম দূরে দুজন পাঞ্জাবি। দুই হাতে বাইনোকুলার ধরে ওদের গতিবিধি বোঝার চেষ্টা করছি। হঠাৎ গুলির শব্দ। চু করে একটা গুলি এসে লাগে আমার বুকের বাম পাশের উপরে। মনে হলো বাম দিকে একটা ধাক্কা লাগছে। আমি ধুপ করে পড়ে যাই। প্রথম কিছু বুঝতে পারিনি। দেখলাম বুক দিয়ে পিনপিন করে রক্ত পড়ছে। গুলিটি বুক বিদ্ধ করে হাতের জয়েন্টের পেছন দিয়ে বেরিয়ে যায়। উঠতে যাব। কিন্তু দাঁড়িয়েই আবার পড়ে গেলাম। সহযোদ্ধারা তখন এগিয়ে আসে। আমাকে তুলে নিয়ে প্রথম নাদানপুর বিএসএফ ক্যাম্পে এবং পরে গাড়িতে করে নিয়ে যায় মাসিমপুর আর্মি হেডকোয়াটারে। সেখানেই চিকিৎসা হয় চার-পাঁচদিন। কিন্তু রণাঙ্গণের নেশায় আর থাকতে পারি নাই।”

ভিডিও : ১৯৭১-এ কীভাবে গুলিবিদ্ধ হলেন, জানাচ্ছেন মির্জা জামাল পাশা

তখন কোথায় যুদ্ধ করলেন ?

“নভেম্বরের শেষে সিদ্ধান্ত হয় চার নম্বর সেক্টরের মুক্তিবাহিনীরা সিলেট শহরে গিয়ে ভাত খাবে। আমার কোম্পানিও যৌথবাহিনীর সঙ্গে অ্যাডভান্স হয়। সিলেট শহরে যখন আসি তখন সামনে ছিল ভারতের গুরখা পেছনে পাঞ্জাব রেজিমেন্ট। অন্যপাশে মুক্তিবাহিনী আর মুক্তিযোদ্ধা। আমরা হলাম মুক্তিযোদ্ধা। আর আনসার, পুলিশ আর সেনা সদস্যরা হলো মুক্তিবাহিনী। সম্মিলিতভাবে পাকিস্তানি সেনাদের সব ক্যাম্পগুলো আমরা ম্যাসাকার করে দিই। আমার কোম্পানি ছিল চার্জে। সিলেট শহরে আমরা আসি ১৫ ডিসেম্বর সকালে, শহরতলীতে। ১৬ তারিখ দখল করি মিরাবাজার। ১৭ ডিসেম্বর সকালে সিলেটে পাঞ্জাবিরা সারেন্ডার করে।”

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আজও সংরক্ষণ করা হয়নি বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন এই যোদ্ধা। তিনি বলেন- “সিলেট শহরের দিকে তখন অ্যাডভান্স হচ্ছি। কানাইঘাটের সামনে হরিপুরের পিছনে জায়গাটা। অস্থায়ী একটা বাজার। পাশেই একটা খাল। একটু উঁচু জায়গায় ছিলাম আমরা। পাকিস্তানি সেনাদের মর্টারের আঘাতে ওখানে শহীদ হন চারজন মুক্তিযোদ্ধা। তাদের ক্ষত-বিক্ষত লাশ গাছে ঝুলছিল। টপটপ করে রক্ত পড়ে ডাল বেয়ে। মনে হলেই এখনও গা হিম হয়ে যায়। ওই জায়গায়টায় এখনও কোনও স্মৃতিস্মম্ভ হয় নাই। কোনও চিহ্নও নাই। ইতিহাসও হারিয়ে গেছে। এমনকি যারা মারা গেছেন তারা যে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, সেটাও নাই কোনও তালিকায়। একই অবস্থা ফেঞ্জুগঞ্জের কাইয়ার গুদামেরও। গণহত্যার জায়গায় সেখানে আজও ময়লা ফেলা হচ্ছে। দেশের জন্য শহীদদের আত্মত্যাগকে আমরা কেন এভাবে অবজ্ঞা করছি?”

এই মুক্তিযোদ্ধা আরও বলেন- “আমি মারা যাব কিন্তু ইতিহাস তো কথা বলবে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের কথা যদি সংরক্ষণের উদ্যোগই না নেওয়া হয় তবে এক সময় একাত্তরের ইতিহাস আর থাকবে না। এই যে আপনি দ্বারে দ্বারে ঘুরে মুক্তিযোদ্ধাদের কথা সংগ্রহ করছেন। আপনার সময়, শ্রম ও অর্থ খরচ তো হচ্ছেই। এর বিমিনয়ে আপনি কী পাবেন, আমি জানি না। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের দোয়া আপনি অবশ্যই পাবেন। তাই যে যেখানে যুদ্ধ করছে তার সে ইতিহাস সংগ্রহ করা গেলে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস উঠে আসবে। তা না হলে ভবিষৎ প্রজন্ম সংকটের মধ্যে পড়বে।”

মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রসঙ্গে এই বীরের ভাষ্য- “মুক্তিযোদ্ধা নয়, সবচেয়ে বড় দরকার ছিল স্বাধীনতা বিরোধীদের তালিকাটি চূড়ান্ত করা। এটা এখন আমরা হারে হারে টের পাচ্ছি। এখনও সম্ভব সেই তালিকা তৈরি। কিন্তু স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষের নেতারা যেভাবে আত্মীয়তার সম্পর্ক তৈরি করছে তা ভবিষ্যতে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।”

কিন্তু সরকার তো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছে, জামায়াতে ইসলামী দলের নিবন্ধনও বাতিল করা হয়েছে?

এর উত্তরে মুচকি হেসে মুক্তিযোদ্ধা জামাল পাশা বলেন, “বোতল বাতিল হয়েছে। কিন্তু ভেতরের পানীয় তো এখন অন্য বোতলে। এ বিষয়েও সিদ্ধান্ত দেওয়া দরকার ছিল। তাছাড়া সরকার কেন জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করলো না? মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ ও বিপক্ষের মাঝে আসলে কোনও নিরপেক্ষ অবস্থান নেই। তাহলে কামাল হোসেনরা কোন নিরপেক্ষতার কথা বলছেন?”

ভিডিও : ১৯৭১-এ ফেঞ্চুগঞ্জের কাইয়ার গুদাম নিয়ে বলছেন মুক্তিযোদ্ধা মির্জা জামাল পাশা

রাজনীতিতে জামায়াত ও স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের গুরুত্ব কমেনি বলে মনে করেন এই বীর। তিনি বলেন- “কামাল হোসেন আর কাদের সিদ্দিকের মতো মুক্তিযোদ্ধারাও নির্বাচনে জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে ঐক্য গড়েছেন। জামায়াতের কথা জিজ্ঞেস করলেই কামাল হোসেন সাংবাদিকদের দিকে ‘খামোশ’ বলে তেড়ে আসেন। কেন? জিয়াউর রহমান যেমন যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার ও আলশামস নেতাদের পূনর্বাসিত করেছিলেন, ঠিক একইভাবে তারাও কি যুদ্ধাপরাধীদের পূনর্বাসনের কাজে নেমেছেন?”

বঙ্গবন্ধুর শাসনামল নিয়ে তিনি অকপটে বলেন- “বঙ্গবন্ধু তো বড় নেতা ছিলেন। দেশ গড়ার জন্য তার চিন্তারও কমতি ছিল না। তার মন্ত্রী পরিষদে চার নেতাই ছিলেন ট্যালেন্ট। কিন্তু একটি পক্ষ চার নেতার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর দূরত্ব তৈরি করে ফেলে। এছাড়া পাকিস্তানি সেনাদের ফিরিয়ে আনা, তাদের মূল ফোর্সে দেওয়া ও সাধারণ ক্ষমার সিদ্ধান্তও সঠিক ছিল না। আমি মনে করি আমলারাও বঙ্গবন্ধুর উদারতার সুযোগ নিয়েছিল। ফলে প্রশাসনিক ক্ষেত্রেও দুর্বলতা দেখা দেয়। একাত্তরে ছিলাম কমান্ডার। স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু বললেন আগের কাজে ফিরে যেতে। ফিরে গেলাম রাস্তায় রাস্তায় ঘুরলাম। আর যারা মুক্তিযুদ্ধে যায়নি, তারা লেখাপড়া শিখে বড় বড় জায়গায় প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। সমাজে তখন আমার জায়গা কোথায়? যারা দেশ স্বাধীন করেছে তাদেরই দেশের কাজে লাগানো উচিত ছিল।”

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর প্রতিবাদ করায় বায়াত্তরটি মামলা করা হয় এই মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে। দুইবার গুলির অর্ডারও দেওয়া হয়েছিল তখন।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যারা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছে তারা মানুষ নয়, নরপশু। চিফ অব আর্মি স্টাফ সফিউল্লাহ তো জীবিত ছিলেন। উনি তো মুখও খুলেন নি! জিয়ার সময় মুক্তিযুদ্ধের কথা বললে মৃত্যু অবধারিত ছিল। তবুও কিন্তু কথা বলে গেছি। বাঙালি যে গাদ্দার জাতি এটা প্রমাণ হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে।”

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা মির্জা জামাল পাশা

জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা হয়েও ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছেন। এ প্রসঙ্গে এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন- “উনি রাজাকারদের মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। মেনে নিতে পারিনি। মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিতেও লজ্জা লাগত। কিছু পাওয়ার জন্য তো যুদ্ধ করি নাই। একটা পায়খানার গর্তে দুই ঘণ্টা ডুবে ছিলাম একাত্তরে। মরা কি জিনিস, তখন বুঝতাম না। পাঞ্জাবি থাকলেই ওগো মারতে হবে- এটাই ছিল চিন্তা। জিয়া দেশটাকে আরেক পাকিস্তান বানিয়েছিলেন। তখন ভাবতাম যুদ্ধাপরাধীদের মেরে ইতিহাসটাকে আবার কলঙ্কমুক্ত করি!”

মুক্তিযোদ্ধা মির্জা জামাল পাশার ছেলে মির্জা শহিদ সিপু। তার কাছে প্রশ্ন ছিল মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে কেমন বাংলাদেশ চান?
তিনি বলেন- “স্বাধীনতার চেতনায় সুন্দর বাংলাদেশ চাই। যেখানে জাতিভেদ, বর্ণভেদ থাকবে না।”

কেমন রাজনীতি চান?

সিপুর উত্তর- “প্রতিহিংসাপরায়ন রাজনীতি চাই না। সঠিক সমালোচনা সরকারও নেয় না, বিরোধীরাও গ্রহণ করে না। প্রজন্ম কিন্তু এমনটা দেখতে চায় না। এখন টোটাল ওয়ার্ল্ড হচ্ছে একটি ভিলেজ। তাই উন্নত দেশের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মানসিকতা ও রাজনৈতিক চিন্তাও পরির্বতন করতে হবে।”

শুধু রাজনীতিবিদরাই নয় প্রতিটি মানুষ ঘুষ, দুর্নীতি আর অন্যের সম্পদ লুটের চিন্তা বাদ দিলে দেশটা পাল্টে যাবে বলে মনে করেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মির্জা জামাল পাশা। তার ভাষায়, “আমরা সত্যকে সত্য বলব। মিথ্যাকে বলব মিথ্যা। ক্ষমতার জন্য আমরা যেন বেঈমান না হই। একুশ বছর বাংলাদেশ চলেছে উল্টো পথে। তাই দেশ পরিচালনায় প্রকৃত নেতাকে নির্বাচন করতেও আমরা যেন ভুল না করি।”

পরবর্তী প্রজন্মই দেশের কান্ডারী। তারাই দেশকে তুলে ধরবে বিশ্ব দরবারে। তাই তাদের উদ্দেশে তিনি শুধু বললেন- “তোমরা মিথ্যাকে পরিহার করো। স্বাধীনতা বিরোধীদের সম্পর্কে সজাগ থেকো। দেশকে ভালবেসো। সবসময় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থেকো। মনে রেখ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে থাকা মানেই দেশের পক্ষে থাকা।”

সংক্ষিপ্ত তথ্য
নাম : যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মির্জা জামাল পাশা।
ট্রেনিং: আসামের ইন্দ্রনগরে ট্রেনিং হয় ২৮দিন। এফএফ (ফ্রিডম ফাইটার) নম্বর ছিল ১৭৩।
যুদ্ধ করেছেন : চার নম্বর সেক্টরের জালালপুর সাব সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করেন আটগ্রাম, লঘুচর, দোলাই বাগান ও সাবাজপুরসহ সিলেটের বিভিন্ন এলাকায়।
যুদ্ধাহত : একাত্তরের অক্টোবর মাসের দশ কিংবা বার তারিখ। বিকেল বেলা। লঘুচর ক্যাম্পে পাকিস্তানি সেনাদের ছোড়া একটি গুলিতে বিদ্ধ হয় তার বুকের বাম পাশ। গুলিটি হাতের জয়েন্টের পেছন দিয়ে বেরিয়ে যায়। ফলে ওই জায়গাসহ গোটা বাম হাত প্রায় অবশ হয়ে গেছে। বাম হাতে ভারি কিছু তুলতে পারেন না তিনি। বুক ও বাম হাতে ব্যাথা হয় ক্রমাগত।

ছবি ভিডিও : সালেক খোকন

লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে, প্রকাশকাল: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮

© 2019, https:.

এই ওয়েবসাইটটি কপিরাইট আইনে নিবন্ধিত। নিবন্ধন নং: 14864-copr । সাইটটিতে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো তথ্য, সংবাদ, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Show More

Salek Khokon

সালেক খোকনের জন্ম ঢাকায়। পৈতৃক ভিটে ঢাকার বাড্ডা থানাধীন বড় বেরাইদে। কিন্তু তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঢাকার কাফরুলে। ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর। ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক সংস্কৃতির প্রতি। নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। যুক্ত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও থিয়েটারের সঙ্গেও। তাঁর রচিত ‘যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য’ গ্রন্থটি ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ হিসেবে ‘কালি ও কলম’পুরস্কার লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী ও ভ্রমণবিষয়ক লেখায় আগ্রহ বেশি। নিয়মিত লিখছেন দেশের প্রথম সারির দৈনিক, সাপ্তাহিক, ব্লগ এবং অনলাইন পত্রিকায়। লেখার পাশাপাশি আলোকচিত্রে নানা ঘটনা তুলে আনতে ‘পাঠশালা’ ও ‘কাউন্টার ফটো’ থেকে সমাপ্ত করেছেন ফটোগ্রাফির বিশেষ কোর্স। স্বপ্ন দেখেন মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী এবং দেশের কৃষ্টি নিয়ে ভিন্ন ধরনের তথ্য ও গবেষণামূলক কাজ করার। সহধর্মিণী তানিয়া আক্তার মিমি এবং দুই মেয়ে পৃথা প্রণোদনা ও আদিবা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back to top button