যে দেশে বঙ্গবন্ধু নাই সেই দেশ আমরা চাই নাই
যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল্লাহ (বীরপ্রতীক)
“ছোডোবেলায় দুষ্ট ছিলাম খুব। মাইনসের গাছের ডাব চুরি, আত্মীয়র বাড়ির চাল আর মুরগি চুরি কইরা পিকনিক করতাম। ননী, কালু আর তোতা থাকত লগে। ওরা লেহাপড়া করত। কিন্তু আমি পড়তে পারি নাই।” কেন? “মা যহন মারা যায় তহন আমার বয়স আট বছর। কয়দিন যাইতেই বাবা আরেকটা বিয়া করে। ঘরে সৎ মা। অশান্তিতে রাখত সবসময়। স্কুলে যাওয়াও বন্ধ কইরা দেয় তহন। একদিন রাগ কইরা চইলা যাই টাঙ্গাইলে, এক চাচার বাসায়।”
“চাচার ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাইত। ভাবছি আমিও স্কুলে যামু। লেহাপড়া কইরা বড় মানুষ হমু। কিন্তু হইল না। চাচায়ও চাইত না আমি লেহাপড়া করি। আমারে হাল বাইতে পাঠাইতো। গরুবাছুর রাখার কাজও দিতো। মনে খুব কষ্ট পাইলাম। একবার তারে কইলাম, কাজই যদি করতে হয়, তহন অন্যের বাড়িতেই কাজ করমু।”
“চাচার বাড়ি ছাইড়া দিলাম। কিন্তু কী করমু, কই যামু? বিকালের দিকে খুব খিদা লাগে। খাবার কেনার টাকাও নাই। টাঙ্গাইলে মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংকের একাউন্টেটের বাসা ছিল বড় পুকুর পাড়ে, তুলামুক্তারের বাড়িতে। বারিন্দার কাছে বইসা খিদায় কান্তাছি। দেইখা উনার খুব খারাপ লাগছে। কাছে আইসা সব কথা শুনে। পরে তিনি আমারে নিয়া যায় ওই ব্যাংকের ম্যানেজার মোসলেউদ্দিনের বাসায়। তার বাড়িতেই ঠাঁই হয়। ঘরের কিছু কাজ, বাজার-ঘাট করা আর তার ছেলেমেয়েরে স্কুলে নিয়া যাইতাম। আমারে অনেক আদর করতো তারা।”
“টাঙ্গাইলে তহন মিছিল হইত, আমিও মিছিলে যাইতাম। নিরালার মোড়ে বক্তৃতা দিতো লতিফ সিদ্দিকী। বদিউজ্জামানের বক্তব্যও ভাল লাগত। নেতারা বৈষম্যের কথা কইত। তহন ভাবতাম, কিছু একটা হইব দেশে।”
“৭ মার্চ ১৯৭১। নেতাগো লগে ঢাকায় যাই, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনতে। ওইখানেই বঙ্গবন্ধুরে প্রথম দেহি। আঙুল উঁচাইয়া নেতা কইলেন, ‘তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সব কিছু, আমি যদি হুকুম দেবার না পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে….। এই কথাডা মাথায় গাইথা গেছে। এরপর টাঙ্গাইলে বিন্দুবাসিনী স্কুলের কাছে ডামি রাইফেল দিয়া ট্রেনিং হইছে। কিন্তু যুদ্ধ লাগবো তহনও বুঝি নাই!”
“একদিন টাঙ্গাইলে মিলিটারি ঢুইকা গেল। বড় পুকুরপাড়ের কয়েকটা বাড়ি ওরা পুড়ায়া দেয়। খোকন নামে একজনরে মাইরাও ফালায়। আমারেও আটকাইছিল। ভয়ে তহন কাঁপছি। মুসলমান কিনা ওরা লুঙ্গি খুইলা দেখছে। কালিমা জিগাইছে। কইলাম। এরপর বলে, ঠিক হায়, ভাগো।”
“এর কয়েকদিন পর মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংকের ম্যানেজার স্যার গ্রামে চইলা যায়। আমিও তহন ফিরা যাই বাড়িতে, ময়মনসিংহের ভালুকাতে।”
“ওইখানেও মিলিটারিরা অত্যাচার করতেছিল। মানুষ মারছে পাখির মতো। আমগো ওইখানে ক্যাম্প করে মনির কমান্ডার। উনি কাদেরীয়া বাহিনীর চার নম্বর কোম্পানির কমান্ডার ছিলেন। তহন বাপে আমারে নিয়া ভর্তি করায়া দিসে তার কাছে। একমাসের অস্ত্র ট্রেনিং হয় বহেরাতলীতে। এরপর যুদ্ধের মধ্যেই জীবন কাটাইছি ভাই।”
একাত্তরে যুদ্ধে যাওয়ার প্রেক্ষাপট এভাবেই তুলে ধরেন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল্লাহ (বীরপ্রতীক)। এক বিকেলে তার বাড়িতে বসেই আলাপ চলে যুদ্ধদিনের নানা প্রসঙ্গে।
তার বাবা কাদের মিয়া ব্রিটিশ আমলে ছিলেন মিলিটারিতে। পরে তিনি পোস্টমাস্টার হিসেবেও কাজ করেন কিশোরগঞ্জে। মা হামিদা খাতুন ছিলেন গৃহিনী। সাত ভাইবোনের মধ্যে আব্দুল্লাহ দ্বিতীয়। বাড়ি ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার তামাইট গ্রামে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল উনিশ বছর।
আলাপচারিতায় ফিরে আসি একাত্তরে। ট্রেনিং ও রণাঙ্গনের প্রসঙ্গ উঠতেই আব্দুল্লাহ অকপটে বলেন, “হালকা-পাতলা ছিলাম। কাদের সিদ্দিকী আমারে দেখে বলে এই ছেলে মুক্তিযুদ্ধ করতে পারব না। শুইনা খুব রাগ হইল। তারে বলি, দেখেন আইছি মুক্তিযুদ্ধ করতে। অহন যদি বাদ দিয়া দেন তাইলে টাঙ্গাইলে গিয়া রাজাকারে ভর্তি হমু। কথা শুইনা উনি তাকায়া থাকেন। পরে নিয়া নেয়। আমগো ট্রেনিং করায় বিগ্রেডিয়ার ফজলু। প্রথম তারে ক্যাপ্টেন কইতাম। পরে কাদের সিদ্দিকীও তারে ডাকতো ‘বিগ্রেডিয়ার’ বলে। ট্রেনিংয়ে শেখায় থ্রি নট থি রাইফেল চালানো আর গ্রেনেড থ্রো।”
“প্রথম যুদ্ধ করি কালিহাতির বল্লায়। তহন ত্রিশ-চল্লিশজন থাকতাম রতনগঞ্জ ক্যাম্পে। পাকিস্তানিরা ছিল বল্লায়, একটা মসজিদের পাশে। রাতের বেলায় গেছি। আমার তহন বন্দুক নাই। যার সাথে ছিলাম অপারেশনের সময় দেহি সে ভয়ে গুলি করে না। তারে বলি তুমি সরো। বন্দুক আমারে দেও। রাইফেলডা নিয়াই গুলি করছি। কোনদিকে খেয়াল নাই। অনেকক্ষণ পরে কমান্ডার ফজলু পেছন থিকা পা ধরে টানতাছে। বলে, ‘সবাই তো উইঠা গেছে। তুই এহনও কি করোস।’ পরে ফিরা যাই রতনগঞ্জে।”
“একবার মিস ফায়ারও হয় আমার ভুলের কারণে। একদিনের কঠিন শাস্তি দিছে তহন। পা তুইলা নদীর দিকে খাড়া কইরা রাখছে সারাদিন। এরপর গুলি করাতে ওস্তাদ হই। অপারেশন করি টাঙ্গাইলের বাসাইল নথখোলা, ঘাটাইল, নাগরপুর, কালিহাতিতে। সম্মুখ যুদ্ধ, হিট অ্যান্ড রান, শেষে ডিফেন্সেও যুদ্ধ করছি। কমান্ডার ছিল প্রথমে মনির, পরে ফজলু, শেষে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী।”
সময়টা রোজার ঈদের আগের। আব্দুল্লাহরা ছিলেন লাউহাটিতে, কেদারপুর গ্রামে। ওখান থেকেই নাগরপুর থানা অপারেশনে যান। নেতৃত্ব দেন কাদের সিদ্দিকী নিজেই। কাদেরীয়া বাহিনীর অনেকগুলো গ্রুপ এতে অংশ নেয়। নদীর পাড়ে ডিফেন্সের দায়িত্ব দেওয়া হয় রবিউলকে। যেন টাঙ্গাইল থেকে পাকিস্তানি সেনাদের ফোর্স আসতে না পারে। রবিউল ডিফেন্সটা রাখতে পারে না। ফলে নাগপুর থানা অ্যাটাকে সকাল থেকে পরদিন বিকেল পর্যন্ত যুদ্ধ হয়েছে। তবুও মুক্তিযোদ্ধারা জয়ী হতে পারেনি। ওই অপারেশনে সামসুল, সামাদ, সানোয়ার, নূর ইসলাম, আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী ও হুমায়ুন বাঙ্গালের গুলি লাগে। এলাসিন ঘাটে তাদের দুই সহযোদ্ধাও শহীদ হন। তাদের কথা বলতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হন বীরপ্রতীক আব্দুল্লাহ। তার অশ্রুসিক্ত চোখ রক্তাক্ত ইতিহাসটিকেই মনে করিয়ে দেয়। ভাবি, কত ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা!
এক অপারেশনে রক্তাক্ত হন এ বীর যোদ্ধা। কী ঘটেছিল ওইদিন? তার ভাষায়, “তহন হিট অ্যান্ড রান করতাম। গোলাগুলি করে থাকতাম দশ-বিশ মাইল ফাঁকে গিয়া। কালিহাতির পশ্চিমে নলুয়া ও পোটলের দিকে আত্মগোপন করে থাকি তহন। তারিখটা ১১ ডিসেম্বর। ওইদিন সকালে। ইন্ডিয়ান আর্মিদের প্যারাটুপারস গ্রুপ এলেঙ্গা আর পুংলি দিয়া নামতেছে। ওরা ভুয়াপুর নামার কথা ছিল। আমরা ডিফেন্স নিছি ইছাপুরার দিকে। ব্রিটিশ এলএমজি চালাইতাম তহন। অন্যান্য গ্রুপও মর্টার মারতেছে। সকালের দিকের ঘটনা। পাক আর্মিরাও শেলিং শুরু করে। আমরা গুলি করতেছি পুংলির দিকে। ওরা শেলিং করে রাজাফুর থেকে আমাদের দিকে। তহন একটা শেল আইসা পড়ে খুব সামনে। বিস্ফোরণে একটা স্প্লিন্টার ঢুইকা যায় বাঁ পায়ের হাঁটুর নিচে। মাংস কাইট্টা বের হয় ওইটা। দেখলাম পা দিয়া রক্ত পরতেছে। গামছা ছিল। ওইটা দিয়া বাইন্ধা দেই। সখিপুরে বগা নামক জায়গায় একটা স্কুলে হসপিটাল খুলছিল কাদের সিদ্দিকী। সহযোদ্ধারা লোক দিয়া আমারে ওইখানে পাঠায়া দেয়। পরে টাঙ্গাইল ম্ক্তু হলে সেখানে চিকিৎসা হয়। দেড় মাস ছিলাম হাসাপাতালে। পায়ের পেছনের রগটা কাটা পড়ছে। মাঝে মাঝে ব্যাথা হয় এহনও। কষ্ট পাই। কিন্তু স্বাধীনতার আনন্দের থাইকা ওই কষ্টটা সামান্যই। দেশটা তো স্বাধীন হইছে ভাই!”
যে দেশের জন্য রক্ত দিলেন। সে দেশ কী পেয়েছেন?
খানিক নীরব থেকে এই বীরের অকপট উত্তর- “না। স্বপ্ন ছিল দেশটা সবারই হবে। তা হয় নাই। স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধুকে আমরা বাঁচাইতে পারি নাই। যে দেশে বঙ্গবন্ধু নাই সেই দেশ আমরা চাই নাই। দেশ যারা আনাছে তারা ফল ভোগ করতে পারে নাই। ধনী-গরীবের ব্যবধান এখনও অনেক। এটা তো আমগো স্বপ্ন ছিল না।”
১৫ অগাস্ট ১৯৭৫। সপরিবারে হত্যা করা হয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে। ঘৃণ্য এ হত্যাকাণ্ডকে মেনে নিতে পারেনি বীরপ্রতীক আব্দুল্লাহসহ কাদেরীয়া বাহিনীর যোদ্ধারা। তারা প্রতিবাদ ও প্রতিশোধের প্রস্তুতি নেয়। সেটি চলে কয়েক বছর। সেই ইতিহাস শুনি এই বীরপ্রতীকের মুখে।
তার ভাষায়, :আমার এক মামা চাকরি করত ময়মনসিংহে। উনি মুসলিম লীগরে সার্পোট করত। তার বাসায় গেছি ওইদিন। উনি বললেন, ‘তোর বঙ্গবন্ধুরে তো মাইরা ফালাইছে।’ শুইনাই মাথাটা চক্কর দিলো। বুকের ভেতরটা কাইপা ওঠে। কারফিউ কয়েক ঘণ্টার জন্য তুললে চলে যাই এলাকায়, ভালুকায়। কী করমু বুঝতে পারি না। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘাটাইলে এক মামার বাড়িতে আইসা থাকি। ১৫-২০দিন পরে কাদের সিদ্দিকী লোক পাঠায়। তহন হালুয়াঘাট দিয়ে বর্ডার পার হয়ে ভারতে চইলা যাই। পরিকল্পনা হয় বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ ও প্রতিশোধ নেওয়ার। কয়েকদিন পর দেশে ঢুকি। ঢাকায় ও টাঙ্গাইলে এসে যোগাযোগ করলাম নেতাদের সাথে। মুক্তিযোদ্ধাদের লগেও কথা কইলাম। অনেক মুক্তিযোদ্ধাই আগাইতে চাইল না। কারণ দেশ স্বাধীনের পর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপরও অস্ত্র উদ্ধারের নামে অত্যাচার হইছে। তাই ওরা রাজি হয় না। আমগো পিছেও গোয়েন্দা লাইগা যায়। দেশে আসার সময় গ্রেনেড নিয়া আসছি, কিছু অস্ত্রও ছিল। ওইগুলা গোপালপুর কলেজের ভিপির কাছে রাইখা দিলাম। এ খবরও জানাজানি হয়। পরে তার বাড়িতে মিলিটারি যায়। ওরা কাদের সিদ্দিকীকে খুঁজছিল। দশ-বারো জন ছিলাম আমরা। যে যার মতো পালায়া থাকি। কয়েকদিন পরেই কাদের সিদ্দিকীর সাথে দেখা হয়।”
“উনিসহ যমুনায় গুনটানা নৌকায় থাকি। আর্মস অ্যামুনেশন ছিল একটা নৌকায়। আরেকটাতে তিনিসহ আমরা ১০-১২জন। সিরাজগঞ্জের নিশ্চিন্তপুর যাওয়ার পথে মিলিটারির সাথে আমগো গোলাগুলি হয়। বগুড়া যুবলীগের খসরু তহন মারা যায়, আমার কোলেই। ওর বুকে গুলি লাগছিল। মিলিটারিদেরও কয়েকজন মারা পড়ে। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে এরকম গোলাগুলি করছি দেড় বছর। তহন তো আমার দেশদ্রোহী। বর্ডার এলাকায় লুকাইয়া সিলেট, হালুয়াঘাট, নালিতাবাড়ি, রংপুর, মহেশখোলা পর্যন্ত যুদ্ধ করছি। বারোবাড়ি ও নকলা বিডিআর ক্যাম্পও দখল করছিলাম। কমলাপুর থানা দখল কইরা ওসিরে নিয়ে গেছি পরিবারসহ। হালুয়াঘাটের ওসিকেও গুলি করছি। ওইসময় দুলাল, আমি, মান্নান একত্রে থাকতাম। ১০৪ জন বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়া মারা গেছে। আমার সাথের চারজনও ছিল- কুমিল্লার ছেলে রতন, বগুড়ায় খসরু, দুলাল, মান্নান। পরে তো আর পারলাম না! আফসোস এই ইতিহাসের স্বীকৃতি দেওয়া হয় নাই। জাতির পিতার নামে দেশ চলছে অথচ তার হত্যার প্রতিবাদ যারা করলো, প্রতিশোধ নিতে গিয়া যারা মারা গেল, তাদের কোনো স্বীকৃতি নাই।”
এই সশস্ত্র প্রতিরোধ থেমে যাওয়ার কারণ কী বলে মনে করেন?
“কিছু পরিকল্পনায় ভুল ছিল আমাদের। আওয়ামী লীগ নেতাদের পূর্ণাঙ্গ সমর্থনও তখন আমরা পাইনি। আবার ভারতে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণেও এগোতে পারি নাই। তবে এই প্রতিবাদ বা প্রতিরোধের স্বীকৃতি না দিলেও আমরা গর্বিত। জাতির জনকের হত্যার প্রতিবাদটুকু অন্তত করতে পেরেছি।”
স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই শেষ করা দরকার বলে মনে করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল্লাহ বীরপ্রতীক। তালিকা প্রসঙ্গে দুঃখ নিয়ে তিনি বলেন, “এহন তো টাকা হইলেই মুক্তিযোদ্ধা হওয়া যায়। যুদ্ধই যারা করে নাই। সাহায্য করছে মুক্তিযোদ্ধাগো। তারাই এহন বিরাট মুক্তিযোদ্ধা বনে গেছেন। পঞ্চাশ বছরে একটা বির্তকহীন মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করা গেল না! এটা কষ্টের ভাই। রাজাকারগো তালিকাটা করতে পারত। তারা তো সরকারি ভাতা বা বেতন পাইত!”
মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানানোর উদ্যোগ নিতে হবে ঘরে ঘরে। একটা এলাকার মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী ওই এলাকার ছেলেমেয়েদেরকে জানাতে হবে। প্রজন্মকে তো আমরাই দেশের কথা, মুক্তিযুদ্ধের কথা বলি না। দেশটা কীভাবে এলো? এটা জানানোর দায়িত্ব প্রত্যেক বাবা-মায়ের- এমন মত দেন এই বীরপ্রতীক।
করোনার যুদ্ধেও আমরা বিজয় আনতে পারব- এমনটাই মনে করেন তিনি। তবে মাস্ক পরানোর বিষয়ে সরকারকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন এই যোদ্ধা। বলেন, “এ দেশে যে ধুলাবালি তাতে তো এমনিতেই মাস্ক পরা উচিত। মাস্ক না পরলে ব্যক্তির নিজের করোনা হবে, সে আবার এটা ছড়াবে। এটা তো সে করতে পারে না। অনেকের মাস্ক পকেটে আর গলায় ঝুলে। সরকারকে কঠোর হতে হবে। আইন না মানলে জরিমানা আর দুইডা লাঠির বাড়িও দিতে হবে। কেউ মাস্ক না পরলে সকলে মিলে তারে ধরা উচিত।”
দেশ ভাল চলুক, সুন্দর চলুক, ভবিষ্যত প্রজন্ম যেন সুন্দরভাবে থাকতে পারে, দেশের জন্য ভাল কিছু করতে পারে- এমন স্বপ্ন দেখেন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল্লাহ (বীরপ্রতীক)। প্রজন্মের উদ্দেশে তিনি শুধু বললেন, “তোমরা একাত্তরের বীরত্বের ইতিহাসটা জেনে নিও। দেশের জন্মইতিহাস না জানলে তোমরা সামনে এগোতে পারবে না। লাখো শহীদের রক্তের ঋণ তোমাদেরকেই শোধ করতে হবে। তোমাদের হাত ধরেই রচিত হোক জাতির জনকের সোনার বাংলা।”
সংক্ষিপ্ত তথ্য
নাম: যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল্লাহ (বীরপ্রতীক)।
ট্রেনিং: একমাসের অস্ত্র ট্রেনিং নেন টাঙ্গাইলের বহেরাতলীতে।
মুক্তিযুদ্ধ করেছেন: কাদেরীয়া বাহিনীর অধীনে যুদ্ধ করেছেন টাঙ্গাইলের বাসাইল নথখোলা, ঘাটাইল, নাগরপুর ও কালিহাতিতের বিভিন্ন স্থানে।
যুদ্ধাহত : ১১ ডিসেম্বর ১৯৭১। সকালবেলা। কালিহাতির ইছাপুরায় পাকিস্তানি সেনাদের শেলের স্প্লিন্টার ঢুকে যায় তার বাঁ পায়ের হাঁটুর নিচে। ফলে শরীরের ওই অংশের মাংস ও রগ কাটা পড়ে।
ছবি: সালেক খোকন
লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে, প্রকাশকাল: ২ জুলাই ২০২১
© 2021, https:.