আমাদের বাড়ি ছিল সমুদ্রের পাড়ে। একটু দৌড় দিয়ে এগোলেই পা ভেজানো যেত। জ্যোৎস্না রাতে সমুদ্রের পাড়েই চলত ডুডু (হা-ডু-ডু) খেলা। তখন খুব মজা হতো। তবে ভয় আর কষ্টও কম ছিল না। সমুদ্রের সঙ্গে সংগ্রাম করেই টিকে থাকতে হতো আমাদের। বন্যা, সাইক্লোন আর জলোচ্ছ্বাস লেগেই থাকত। আজ যে বেঁচে আছে সামনের দুর্যোগে সে বাঁচবে কি না, তারই ঠিক ছিল না। চোখের সামনে দুই শ লোককেও মরতে দেখেছি। একবার জলোচ্ছ্বাসে গাছের ওপর থেকে অনেকের লাশ নামিয়েছিলাম আমরা। শোকে চোখের পানিও তখন শুকিয়ে গিয়েছিল। পূর্বপুরুষদের জমিজমার অধিকাংশ এখন সমুদ্রের পেটে। একটুও ডেভেলপ করেনি পাকিস্তান সরকার। যদি তখন বাঁধ দিত, তাহলে আজ আমরা কোটিপতি থাকতাম। ওরা তো চাইত আমরা সমুদ্রের জলে ভেসে যাই। আমাদের এখানে উন্নয়ন যা হয়েছে, তার সবই স্বাধীন বাংলাদেশে।
স্বাধীনতা লাভের আগে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি বৈষম্যের বিষয়টি এভাবেই তুলে ধরেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রুস্তম আলী (বীরপ্রতীক)। এক সকালে তাঁর বাড়িতে বসেই আলাপ চলে আমাদের।
চার ভাইবোনের মধ্যে রুস্তম আলী দ্বিতীয়। বাবার নাম মোখলেসুর রহমান আর মা সাঈদা খাতুন। বাড়ি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার উত্তর ঘোড়ামারা গ্রামে। লেখাপড়ায় হাতেখড়ি ঘোড়ামারা প্রাইমারি স্কুলে। পরে তিনি ভর্তি হন রাজাপুর প্রাইমারি স্কুলে। পঞ্চম শ্রেণি পাসের পর চলে যান কুমিরা হাইস্কুলে। তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন ১৯৬৮ সালে। ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হন চিটাগাং কলেজে।
ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির প্রতি ঝোঁক ছিল রুস্তমের। বড় ভাই মোহাম্মদ আলী তখন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি। ফলে মুসলিম লীগাররা তাদের ভালো চোখে দেখত না। নানা বিষয়ে প্রতিবাদ হলেই ওরা ওত পেতে থাকত। তখন এলাকায় চেয়ারম্যান, মেম্বার, মাতব্বরসহ এলিটরা ছিলেন মুসলিম লীগার। তাদের মধ্যে সিরাজুদ্দৌলা চৌধুরী ছিলেন নামকরা।
রুস্তম আলী তখন ক্লাস এইটের ছাত্র। গ্রামে একটা মারামারির ঘটনা ঘটে। সেখানে উপস্থিত না থাকলেও সুযোগ বুঝে মুসলিম লীগের নেতারা তার নাম ঢুকিয়ে দেয়। ফলে ছাত্রাবস্থাতেই কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয় রুস্তমকে। ওই মামলাটি চলেছিল তিন বছর। এ কারণে নির্ধারিত বছরে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিতে পারেননি রুস্তম আলী।
ম্যাট্রিকের পরেই তিনি চাকরি নেন পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে। লোক নেওয়ার খবরটি পান বন্ধু আবু সাঈদের কাছে। অতঃপর কী ঘটল, সে ইতিহাস শুনি রুস্তমের জবানিতে।
তাঁর ভাষায়—‘তখন ইন্টারমিডিয়েট ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্র, চট্টগ্রাম কলেজে। থাকি চট্টগ্রাম বহদ্দারহাটে। এয়ারফোর্সের রিক্রুটিং সেন্টার ছিল মেহেদিবাগে। লিখিত পরীক্ষায় টিকতেই ভাইভা হয়। সেটাতেও পাস করলাম। অতঃপর বেসিক ট্রেনিংয়ের জন্য আমাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তানে, কোয়েটা ট্রেনিং সেন্টারে। বিমানবাহিনীতে যোগ দিই ১৯৬৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারিতে। বেসিক ট্রেনিংয়ের পরই ট্রেড বাছাই চলে। ট্রেডভিত্তিক ট্রেনিংয়ে ওরা আমাকে পাঠিয়ে দেয় করাচি করংগিক্রিকে। অতঃপর পোস্টিং হয় সারগোদায়। সবচেয়ে বড় বিমানঘাঁটি ছিল ওটা। ছিলাম এলএসসিতে। ফ্লাইট লাইনে কাজ করতাম। কাজ করেছি সবচেয়ে বড় যুদ্ধবিমানেও। বিমানে রকেট, বোম, মিশাইল, মেশিনগান প্রভৃতি ফিট করাই ছিল কাজ। পদ ছিল এলএসিএম। সার্ভিস নম্বর ছিল ৮৩১৮৯।’
পাকিস্তান বিমানবাহিনীর ভেতরে কর্মরত বাঙালিদের তখন কাজ করতে হতো নানা প্রতিকূলতায়।
রুস্তম বলেন, “যুদ্ধ তো আমরা পশ্চিম পাকিস্তান থেকেই শুরু করেছিলাম। ট্রেনিং নিয়ে তখন করাচিতে আছি। বরিশালের একটা ছেলে ছিল। নাম জাহাঙ্গীর। ওর সাথে কথা-কাটাকাটি হয় শাহজাহান নামের এক পাঞ্জাবির। দেশ নিয়ে কথা উঠতেই উত্তেজিত হয় জাহাঙ্গীর। ওরা দুজন তুমুল মারপিট করে।
পাঞ্জাবিদের আচরণ তখন ভালো ছিল না। দশ-বারোজন আমরা একসাথে থাকতাম। বাঙালিদের ওরা টিটকারি করে বলত, ‘বাঙ্গাল কা বাচ্চা। মুজিব কা বাচ্চা।’ আমরাও রেগে বাংলা ভাষায় খাস গালি দিতাম। ওরা কিছুই বুঝত না। শুধু মুখের দিকে তাকিয়ে হা করে থাকত। প্রত্যেক জায়গায় চলত এমন গালাগালি। একসময় নিয়ম করা হয়। মাদার ল্যাঙ্গুয়েজে কেউ কথা বলতে পারবে না। আমরা তখন ইংরেজি উচ্চারণে বাংলা গালি দেওয়া শুরু করি।”
এরপর দেশে ফিরলেন কবে?
“১৯৭০ সালে একবার বড় বন্যা হয়েছিল। আমি তখন সারগোদায়। ঘোষণা করা হলো চাইলে ছুটিতে যেতে পারব। দরখাস্ত দিতেই দুই মাসের ছুটি মিলল। ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে ফিরি। ঢাকায় নেমে সোজা চলে যাই গ্রামে।”
দেশ তখন উত্তাল। অসহযোগ আন্দোলন চলছে। মিছিল আর মিটিং সবখানে। কুমিরা স্কুলে পাকিস্তানি পতাকা পোড়ায় ছাত্ররা। কী হবে সামনে! পাকিস্তানিরা কি ক্ষমতা দেবে বঙ্গবন্ধুকে? নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খায় রুস্তমের মনে। পরিবার থেকে বিদায় নিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে চলে আসেন ঢাকার তেজগাঁও এয়ারপোর্টে।
পশ্চিম পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন?
রুস্তম আলী উত্তর, “না। এয়ারপোর্টে রিপোর্ট করি। অতঃপর বাইরে আসতেই লোকমুখে শুনি একদিন পরেই রেসকোর্সে ভাষণ দেবেন বঙ্গবন্ধু। পরদিন সিভিল ড্রেসেই চলে যাই সেখানে। দেখি সবার হাতে হাতে লাঠি। দুপুরের পর শেখ সাহেব উঠলেন মঞ্চে। সবার মুখে মুখে এক দফা। বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম…।’ এরপর আর কোনো ঘোষণার প্রয়োজন হয়নি। বঙ্গবন্ধু তখন একমাত্র নেতা। পৃথিবীর ইতিহাসে নেতা না থাকলে কোনো জাতির পক্ষে যুদ্ধ জয় করা সম্ভব নয়। মুক্তিযুদ্ধে প্রতিটি অপারেশনে ওই ভাষণই ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রেরণা। তার ওই ভাষণই জীবনের গতি পাল্টে দেয়।
কী করলেন তখন?
“যারা আমাদের শত্রু তাদের ওখানে ফিরে যাব না। তাই কাউকে কিছু না জানিয়েই ব্যাগ গুছিয়ে চলে আসি কমালপুরে। অতঃপর ট্রেন ধরে সোজা গ্রামের বাড়িতে। রিপোর্ট হলে থানা থেকে পুলিশ আমার খোঁজ নিতে আসে। সবাই জানায় চলে গেছি। কিন্তু আমি তখন ছিলাম আত্মগোপনে, গ্রামের ভেতরই।”
২৫ মার্চ, ১৯৭১। ঢাকায় তখন গণহত্যা শুরু করে পাকিস্তানি সেনারা। চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট থেকে ক্যাপ্টেন সুবেদ আলী ভূঁইয়া কিছু অফিসার ও অস্ত্রসহ সৈন্য নিয়ে পাহাড়ের পথ পেরিয়ে অবস্থান নেয় কুমিরায়। তাদের সঙ্গে ছিল মেশিনগান, এলএমজি, রাইফেল প্রভৃতি। সে সময় পাকিস্তান থেকে বাঙালিদের মারার জন্য এক শিপ অস্ত্র আসে, এমভি সোয়াত জাহাজে। ওটা আনলোড করে নিয়ে আসা হবে চট্টগ্রাম ক্যান্টমেন্টে। ইপিআরদের একটা গ্রুপ সোয়াতের দুই ট্রাক অস্ত্র দখল করে নিয়ে আসে কুমিরায়। কুমিরা স্কুলের পেছনের খালেই সেগুলো আনলোড করা হয়। স্থানীয় জনগণসহ এদের সঙ্গেই প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন রুস্তম আলী।
ভারতে গেলেন কখন?
তিনি বলেন, “কালু নামের এক ছেলে ঘুরে এসেছে ইন্ডিয়ায়। তার থেকে পাই নানা খোঁজখবর। অতঃপর একদিন তাকে সঙ্গে নিয়ে মিরসরাইয়ের গোরলগঞ্জ হয়ে চলে যাই ভারতের হরিণা ক্যাম্পে। ডিফেন্সের লোক শুনতেই দুই দিন পর আমাকে পাঠিযে দেওয়া হয় আগরতলায়। দেশ থেকে তখন শত শত ছাত্র-যুবক আসছে ট্রেনিং নিতে। তাদের ট্রেনিং দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ক্যাম্পে। আমরাও একটি গ্রুপকে ট্রেনিং করাই ও বর্ডারে অপারেশন করি।”
বাংলাদেশ বিমানবাহিনী গঠন করা হবে। সে কারণে চলছে বিভিন্ন ট্রেডের লোক সংগ্রহ। রুস্তম তখন আগরতলায়, হোল্ডিং ক্যাম্পে। সঙ্গে খন্দকার আর সার্জেন্ট মনির। ক্যাম্প থেকেই বাছাই করে নেওয়া হয় রুস্তমদের।
ট্রেনিং হলো কোথায়?
“আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় ডিমাপুরে, আসামের নাগাল্যান্ডে। চারিদিকে পাহাড়। মাঝখানে একটা ব্রিটিশ আমলের রানওয়ে। সেখানেই কয়েক মাস চলে ট্রেনিং। একটা এলইউট আর ছিল একটা অর্টার। এলইউট হলো হেলিকপ্টার। আর অর্টার হচ্ছে বিমান। একটি বিমানে রকেট, বোমবিং, গানারিং—এই তিনটা সেট করা থাকত। আমি ছিলাম এয়ার গানার। বিমানবাহিনীর তৎকালীন ফ্লাইট লেফটেনেন্ট শামসুল আলম (পরে বীর উত্তম উপাধি পান) ছিলেন পাইলট। কো-পাইলট ক্যাপ্টেন আক্রাম। আমি এয়ার গানার আর সার্জেন্ট হক ছিলেন বোম ড্রপিংয়ের দায়িত্বে। ট্রেনিংয়ের সময় পাহাড়ের মধ্যে আমাদের টার্গেট দেওয়া হতো। সেটি ধ্বংস করতাম। এলইউট বা হেলিকপ্টারের দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন স্কোয়াড্রন লিডার সুলতান মাহমুদ আর ফ্লাইট লেফটেনেন্ট বদরুল আলম। আরেকটা বিমান ছিল ডাকোটা। সেটার পাইলট ছিলেন ক্যাপ্টেন খালেক। সঙ্গে ক্যাপ্টেন সাহাবুদ্দিন ও আব্দুল মুহিতও। সবাই ছিলাম সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য। মেইন অপারেশন ছিল আমাদের। আমি এলইউট ও অর্টার দুটিতেই কাজ করেছি। একটি শেষ করেই উঠতাম আরেকটিতে। আমাদের গ্রুপটির নাম ছিল কিলোফ্লাইট। গ্রুপের কমান্ডার ছিলেন সুলতান মাহমুদ।”
প্রথম এয়ার ফাইটের কথা শুনি বীরপ্রতীক রুস্তম আলীর জবানিতে। তাঁর ভাষায়, “ইন্ডিয়ান বর্ডারে ছিল কৈলাশহর এয়ারপোর্ট। আমাদের নিয়ে আসা হয় সেখানে। এক রাতের পরই বলা হলো অপারেশনের কথা। গোপনীয়তা রক্ষায় কোথায় অপারেশন করতে হবে জানানো হলো না। ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১। রাত তখন ১২টা। সবাই প্রস্তুত। বিমানযুদ্ধ ওটাই ছিল প্রথম। বিমান বা অর্টারে ফ্লাই করার আগে জানানো হয় চট্টগ্রাম অ্যাটাক করতে হবে। আমরা চারজন। ফ্লাইট লেফটেনেন্ট শামসুল আলম পাইলট, কো-পাইলট ক্যাপ্টেন আক্রাম, এয়ার গানার আমি আর সার্জেন্ট হক বোম ড্রপিংয়ে। রাত তখন দশটা। কৈলাশহর থেকে ইন্ডিয়ান বর্ডার দিয়ে বিমানটি উড়ে যায়। যাতে পাকিস্তানি রাডারে তা ক্যাচ না করে। চিটাগাং দিয়ে ঢুকতেই সীতাকুণ্ড, পরে পাহাড়। যখন পাহাড় ক্রস করছিলাম, তখন সামসুল আলম সাহেব বলেন, ‘রুস্তম, নাউ উই আর ক্রসিং সীতাকুণ্ড হিল।‘ আমি বলি, ‘ইয়েস স্যার। দিস ইজ মাই নেটিভ থানা। অতঃপর আমরা বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করি, একেবারে নিচে নেমে।”
“অনেক নিচ দিয়ে ফ্লাই করছি আমরা। চাঁদের আলো ছিল। নিচে সব দেখা যাচ্ছে। আকাশে এক-দুইটা চক্কর দিয়েই আসি চিটাগাং, ইস্ট পাকিস্তান ওয়েল রিফাইনারিতে। ওটা ধ্বংস করাই ছিল টার্গেট। ওটা উড়িয়ে দিতে হবে।”
“প্রথমবারেই রকেট, মেশিনগান, বোম একসাথে শুরু করলাম। আমি মেশিনগানের গুলি আর বোম ড্রপ করে সার্জেন্ট হক। প্রথম অ্যাটাকেই দাউ দাউ করে আগুন লেগে গেল। বিকট আওয়াজ হচ্ছিল। শামসুল আলম সাহেব বলেন, ‘সুড আই টেক অ্যানাদার অ্যাটেম্ট। আমি বলি, ‘নো স্যার, উই আর সাকসেসফুল।’ পাকিস্তানিরা প্রথম মনে করেছে এগুলো তাদের বিমান। তাই ওরা প্রথমে কিছু করেনি। ধ্বংস আর আগুন দেখে ওরা পাগল হয়ে যায়। চট্টগ্রাম তখন ওদের নেভালের দুর্গ। নেভি আর আর্মিরা অ্যান্টি এয়ারক্রাফট গান দিয়ে গুলি করতে থাকে। একটা লাগলেই আমরা শেষ হয়ে যেতাম। মইরতু আই বাছি গেই আণ্ডা।”
ফেরার সময় রুস্তম আলীরা বঙ্গোপসাগর হয়ে ভারতের কুম্বিরগ্রামে ল্যান্ড করে। তাদের সফলতা দেখে ভারতীয়রা বিশ্বাসই করতে পারেনি। কারণ, বিমানটি আসলে সত্যিকারের যুদ্ধবিমান ছিল না। ওরা অবাক হয়ে বলত, ‘এগুলো দিয়া তোরা কেমনে যুদ্ধ করলি।’
রুস্তমদের মতো যোদ্ধারা তখন দেশের জন্য পাগল। তাই অসম্ভবও সম্ভব হয়েছিল। এরপর রুস্তমদের ফুল ব্যাচকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় আগরতলায়। পরবর্তী সময়ে সেখান থেকে এয়ার অ্যাটক করা হয় সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও ঢাকায়। দেশ যখন স্বাধীন হয় রুস্তম তখন আগরতলায়। খুব ক্লান্ত ছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতার খবরে বুকটা ভরে গিয়েছিল।
অনেকে বলে দেশ স্বাধীন হয়ে কী পেয়েছি। মুক্তিযোদ্ধাদের অমর্যাদাও করেন কেউ কেউ। তখন কষ্ট পান বীর মুক্তিযোদ্ধা রুস্তম আলী । বললেন, “একটা পতাকা আর দেশ পেয়েছি। নিজের দেশেরও পাসপোর্ট পাই। অথচ স্বাধীনতার মূল্যায়ন যখন কেউ করে না। তখন খারাপ লাগে। স্বাধীনতা তো অনেকে হাতের মোয়া হিসেবেই পেয়ে গেছে। কষ্টটা চোখে দেখেনি। ভিয়েতনামে যুদ্ধ হয়েছে বাইশ বছর। আমরা আরও দশ-বারো বছর যুদ্ধ করে দেশটা পেলে, সবাই স্বাধীনতার অর্থটা বুঝতে পারত।”
শত বাধা পেরিয়ে দেশটা একদিন উন্নত বাংলাদেশ হবে, এমনটাই বিশ্বাস বীরপ্রতীক রুস্তম আলীর। মনেপ্রাণে তাঁর বিশ্বাস, লাখো শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধার রক্তে যে দেশ স্বাধীন হয়েছে, সে দেশ কখনো পথ হারাবে না। এই যোদ্ধা তাই স্বপ্নের বীজ বোনেন পরবর্তী প্রজন্মকে নিয়ে।
তাদের উদ্দেশে তিনি শুধু বলেন, “দেশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু ইতিহাসে এই তিন বিষয়ে তোমরা আপস করো না। দেশের বীরত্বের ইতিহাসটি জেনে নিও। দেশটাকে ভালোবেসো। মনে রেখো, নিজের কাজটা সততার মাধ্যমে সম্পন্ন করাই বড় দেশপ্রেম।”
লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে সংবাদ প্রকাশে, প্রকাশকাল: ১৯ নভেম্বর ২০২১
© 2021, https:.