কলাম

পদ্মা সেতু: নতুন পথে সাহসী যাত্রা

পদ্মা সেতু। বাঙালির সাহসের প্রতীক। দুর্নীতির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জের প্রতীক। বিশ্বব্যাংকসহ গোটা পৃথিবীকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন বাঙালিকে চাইলেই কেউ দাবায়া রাখতে পারবে না। তাই শত বাধা আর ষড়যন্ত্রকে দাবিয়ে দিয়ে আজ শুভ উদ্বোধন হচ্ছে পদ্মা সেতুর। এটি বলতেই হবে শেখ হাসিনার সাহসিকতা, বলিষ্ঠ পদক্ষেপ এবং যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলেই সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এ  সেতু নির্মাণ সম্ভব হয়েছে।

পদ্মা সেতু কি বাঙালির আবেগের নাম? হয়তো তাই। নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু করার কল্পনাও কেউ করেনি। অবাস্তব ও আবেগী সিদ্ধান্ত বলেও সমালোচনা করেছেন কেউ কেউ। কিন্তু আজ সেটি বাস্তব। বাঙালি শুধু আবেগী নয়, যোগ্য নেতৃত্ব থাকলে বাঙালি অসম্ভবকেও সম্ভব করতে জানে ও পারে। যার উদাহরণ এই পদ্মা সেতু। সেই সেতু মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। তাই আমরাও গর্বিত আজ।

খরস্রোতা পদ্মার দুই তীরের লাখো মানুষ আজ আবেগ আপ্লুত। তাদের চোখে অশ্রুজল। তবে সেটি বেদনার নয়, আনন্দের। সেই আনন্দের যে অনুভূতি তা দুই পারের জেলাগুলোর মানুষরাই শুধু অনুভব করতে পারবেন। এখন আর তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে হবে না, ফেরি না পেয়ে কোনো মুমূর্ষু রোগীর মৃত্যু ঘটবে না অ্যাম্বুলেন্সে, কোনো চাকরির প্রার্থী তার ইন্টারভিউ মিস করবে না ফেরিতে দেরির কারণে, ঈদে প্রচণ্ড ভিড়ে ফেরি বা লঞ্চ ডুবে যাওয়ার চিত্রও আর থাকবে না। তারা সেতু দিয়ে পদ্মা পার হবেন মাত্র ৫ থেকে ১০ মিনিটে। দুই পারের জেলাগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নও ঘটবে প্রবলভাবে। গোটা দেশের অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলবে এটি। ফলে উন্নয়নশীল দেশের পথে আমাদের পথচলা সুদৃঢ় হবে।

পদ্মা সেতুর নির্মাণ সাফল্যকে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক যোগাযোগের উন্নয়নে বাংলাদেশের নেতৃত্বের ‘উদাহরণ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশের দক্ষিণ জনপদের স্বপ্নের এই সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়ে এ কথা বলেছে তারা। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের নাগরিকদের অভিনন্দন জানিয়েছে ভারত ও পাকিস্তানও। বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় পদ্মা সেতুর উদ্বোধন একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত বলে অভিহিত করেছেন দুই দেশের সরকারপ্রধান। তবে বলে রাখা ভালো, পাকিস্তানের বিশিষ্টজন বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকার কীভাবে এমন অগ্রগতির পথে এগোচ্ছে, সেটি অনুসরণের পরামর্শও দিয়েছেন সে দেশের সরকারকে। যা উঠে এসেছে গণমাধ্যমগুলোতে।

পদ্মা সেতু নিয়ে বাইরে থেকে যখন শুভেচ্ছা পাচ্ছে সরকার, তখন ঘাপটি মেরে থাকা এক শ্রেণি এই সেতু নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক নানা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এটি চলছে কয়েক বছর ধরেই।পদ্মার বুকে ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু  রাজধানীর সঙ্গে যুক্ত করেছে দক্ষিণাঞ্চলকে। দেশের দীর্ঘতম এই সেতুতে গাড়ি ও রেল দুটোই চলবে। নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতুর কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালের ২৬  নভেম্বর। ইদানীং এটিকে তারা চিনের ‘রোড অ্যান্ড বেল্ট’ প্রকল্পের অংশ হিসেবে অগ্রগতি বলেও অপপ্রচার চালাচ্ছে । যা মিথ্যা ও বানোয়াট বলে অভিহিত করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা গ্রহণসহ জনসাধারণেরও সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন।

পদ্মা সেতুর ব্যয় কমবেশি নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা থাকতেই পারে। কিন্তু ভুল তথ্য ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর অর্জনকে যারা ম্লান করতে চান তারা কি এদেশের নাগরিক? তারা কি ওই সেতু দিয়ে ভ্রমণ করবেন না? তারা কি সত্যিকারভাবে পদ্মাপারের মানুষদের মঙ্গল চান না? আজ যখন স্বপ্নের সেতু মানুষের জন্য বাস্তব হয়ে উঠেছে, তখন কেন অবাস্তব ও কাল্পনিক গল্প ছড়াচ্ছে একটি চক্র? তাদের উদ্দেশ্য কি সত্যিকারভাবে জনমুখী?

একসময় বাংলাদেশের স্বাধীনতায় খুশি হয়নি অনেকেই। বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে এ দেশের ঈর্ষান্বিত উন্নয়ন দেখে অনেকেরই বুকে রক্তক্ষরণ ঘটে। আমরা নিশ্চিত পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পরপর তারাও পদ্মা সেতু ভ্রমণে বের হবেন। সেতু দিয়ে চলতে চলতে পরিবার-পরিজন নিয়ে সেলফি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবিও পোস্ট করবেন। কেউ বলুক বা না বলুক, সেটিই হবে শেখ হাসিনা সরকারের সবচেয়ে বড় অর্জন। কেননা, দেশের উন্নয়নের নতুন পথে সাহসী যাত্রার শুরুটা বঙ্গবন্ধুর কন্যার হাত ধরেই হয়েছে।

লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে সংবাদপ্রকাশে, প্রকাশকাল; ২৫ জুন ২০২২

© 2022, https:.

এই ওয়েবসাইটটি কপিরাইট আইনে নিবন্ধিত। নিবন্ধন নং: 14864-copr । সাইটটিতে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো তথ্য, সংবাদ, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Show More

Salek Khokon

সালেক খোকনের জন্ম ঢাকায়। পৈতৃক ভিটে ঢাকার বাড্ডা থানাধীন বড় বেরাইদে। কিন্তু তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঢাকার কাফরুলে। ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। ম্যানেজমেন্টে স্নাতকোত্তর। ছোটবেলা থেকেই ঝোঁক সংস্কৃতির প্রতি। নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। যুক্ত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও থিয়েটারের সঙ্গেও। তাঁর রচিত ‘যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য’ গ্রন্থটি ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ হিসেবে ‘কালি ও কলম’পুরস্কার লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী ও ভ্রমণবিষয়ক লেখায় আগ্রহ বেশি। নিয়মিত লিখছেন দেশের প্রথম সারির দৈনিক, সাপ্তাহিক, ব্লগ এবং অনলাইন পত্রিকায়। লেখার পাশাপাশি আলোকচিত্রে নানা ঘটনা তুলে আনতে ‘পাঠশালা’ ও ‘কাউন্টার ফটো’ থেকে সমাপ্ত করেছেন ফটোগ্রাফির বিশেষ কোর্স। স্বপ্ন দেখেন মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী এবং দেশের কৃষ্টি নিয়ে ভিন্ন ধরনের তথ্য ও গবেষণামূলক কাজ করার। সহধর্মিণী তানিয়া আক্তার মিমি এবং দুই মেয়ে পৃথা প্রণোদনা ও আদিবা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back to top button