শালবনে আজব গাছ
কিছুদিন আগে বেরিয়েছিলাম উত্তরবঙ্গের প্রাকৃতিক একটি শালবন দেখতে। দিনাজপুরের বিরল উপজেলার সীমান্তবর্তী কালিয়াগঞ্জের ওই শালবনটি উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় বন। জেলা শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার ভেতরে এটি।
দিনাজপুর শহর থেকে বিরল উপজেলা পরিষদ পেরিয়ে কালিয়াগঞ্জ বাজার থেকে বাঁয়ের একটি রাস্তা ধরে এগোই। খানিকটা যেতেই দূরে শালবন। বিকালের আলোয় মনে হচ্ছিল জলরঙে আঁকা কোনো ক্যানভাস যেন। দৌড়ে ঢুকে পড়ি বনের ভেতর। শুকনো পাতায় পা রাখতেই মর মর শব্দে শালবনের নীরবতা ভাঙে। গাছগুলোয় অনেক পাখির কলকাকলি। কোকিল, টিয়া, ঘুঘু, ময়না আরও কত কী! তাদের আনন্দ-আড্ডায় মুখরিত চারপাশ।
বনের মধ্যে একটি গাছ দেখে থমকে দাঁড়াই। অজগর সাপ আকৃতির একটি গাছ জড়িয়ে রেখেছে বেশকিছু শালগাছকে। আজব এ গাছটিকে আদিবাসী ও স্থানীয়রা বলে ‘বাদেনা’। কেন এমন নাম? তার উত্তরও জানা নেই কারও। সীমান্তবর্তী গহিন শালবনে এমন গাছ আছে আরও কয়েকটি। হঠাৎ চারপাশ থেকে অদ্ভুত ধরনের শব্দ। মনে হচ্ছিল কিছু একটা ধেয়ে আসছে। আমরা ভড়কে যাই। এটি আসলে বাতাসে শালপাতা নড়ার শব্দ। যেন পাতার মিছিল।
প্রাকৃতিক নিয়মে শালবীজ পড়ে বন তৈরি হওয়ার কারণেই নাকি বনটিকে প্রাকৃতিক শালবন বলা হয়। বন বিভাগের বিট অফিসার তেমনটিই জানান। শালবনটি প্রায় ২৮৬৭ একর এলাকাজুড়ে। বনের মধ্যে শালগাছ ছাড়াও রয়েছে আমলকী, সর্পগন্ধা, বহেড়া, হরীতকী, চিরতাসহ নানা ধরনের ঔষধি গাছ।
একটি ছোট্ট রেস্ট হাউসও রয়েছে এখানে। রেস্ট হাউস ছাড়িয়ে আমরা প্রবেশ করি পাশের শালবনে। এর নাম মিরা বন। বনের মধ্য দিয়ে খাল আকৃতির নদী চলে গেছে ভারতে। বনটিতে এক সময় দেখা মিলত বাঘসহ হিংস্র সব জানোয়ারের। এখন মেলে শেয়াল, খরগোশ, বনমোরগ ইত্যাদির।
মিরা বনে ঢুকেই হারিয়ে যাই অন্য রকম দৃশ্যের মধ্যে। জমিনে বিছিয়ে থাকা শালপাতা কুড়াচ্ছিল আদিবাসী নারীরা। এ পাতা দিয়েই ওঁরাও আদিবাসীরা তৈরি করবে হাড়িয়া খাওয়ার চোঙ। মিরা বন থেকে আমরা চলে আসি ভটিয়া বনে। এ বনের একটি গাছকে পূজা করে আদিবাসীরা। গাছটির নাম খিলকদম। মনোযোগ দিয়ে গাছটি দেখতে থাকি। খানিক এগিয়ে কয়েকজন আদিবাসী শিকারির দেখা পাই। তাদের পেছন পেছন আমরাও পা বাড়াই। ততক্ষণে সূর্য ঘরে ফেরার আয়োজন করছে। আমরা আর বনে থাকি কেন? তবে শুনেছি রাতের বনও ভারি সুন্দর। অন্যবারের জন্য তা তোলা রইল।
লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে প্রতিদিনের বাংলাদেশে, প্রকাশকাল: ১৫ জুলাই ২০২৩
© 2023, https:.