বইটির মোড়ক উন্মোচন করে তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, “এই ইতিহাস যখন পরবর্তী প্রজন্মের কাছে বা তারও পরের প্রজন্মের কাছে বলা হবে সবাই তাকে (লেখককে) মনে রাখবে, ইতিহাসের লিপিকার হিসেবে।”
সাংবাদিকের কাজ ইতিহাসের প্রথম খসড়াটি তৈরি করা; আর লেখক ও গবেষক সালেক খোকন যে একই রকম নিষ্ঠার সঙ্গে একাত্তরের গৌরব আর বেদনার ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে যাচ্ছেন, সে কথাই বললেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী।
মঙ্গলবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম কার্যালয়ে তিনি সালেক খোকনের ‘গৌরব ও বেদনার একাত্তর’ বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন। এ বইয়ে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতা নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান, যা লেখক সঙ্কলিত করেছেন তৃণমূল থেকে।
ভিডিও: গৌরব ও বেদনার একাত্তর: সালেক খোকনের নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন
বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামের দিনগুলোর এসব মর্মস্পর্শী ঘটনা লিপিবদ্ধ করার এ উদ্যোগের জন্য সালেক খোকনের প্রশংসা করেন তৌফিক খালিদী।
তিনি বলেন, “প্রাতিষ্ঠানিক সাহায্য ছাড়া, সমর্থন ছাড়া কাজ করেন সালেক খোকন। এই কাজটা নিজেই একটা ঐতিহাসিক কাজ। ইতিহাসকে লিপিবদ্ধ করতে গিয়ে নিজে ইতিহাস তৈরি করেন।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকের প্রধান সম্পাদক বলেন, সালেক খোকন ইতিহাসকে ধারণ করার চেষ্টা করেন, ইতিহাসকে সংরক্ষণ করার চেষ্টা করেন।
“তিনি ধারণ করেন, লিপিবদ্ধ করেন নিজের তাগিদে। আমরা যারা সাংবাদিকতা করি তাদের কাজ হচ্ছে ইতিহাসের প্রথম খসড়াটা লেখা বা তৈরি করা; কাজেই প্রায় একরকম কাজ, কাজটি অনেক কঠিন।”
কথাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত ‘গৌরব ও বেদনার একাত্তর’ বইটিতে উঠে আসা ঘটনাগুলোর বেশ কয়েকটি আগেই ধারাবাহিকভাবে পাঠকদের কাছে তুলে ধরেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
লেখককে অভিনন্দন ও শুভকামনা জানিয়ে প্রধান সম্পাদক বলেন, “তাকে আমরা সহযোগিতা করতে চাই যেটুকু পারি। তিনি যেন উৎসাহিত বোধ করেন, উৎসাহ যেন কোনোভাবেই দমে না যায়। কারণ উৎসাহ চলে যাওয়ার মত ঘটনা এই দেশে প্রতিনিয়তই ঘটে।
“গত কয়েক মাস আগে ঘটেছে, আরও ঘটবে। গত কয়েকদিনে ঘটেছে; গত ১৫ বছরে ঘটেছে। গত ৫৩ বছরে ঘটেছে বহুবার।”
মোড়ক উন্মোচনের অনুষ্ঠানে লেখক সালেক খোকনসহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সাংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বইটিতে লেখক তুলে ধরেছেন একাত্তরের মর্মস্পর্শী আটটি গণহত্যার চিত্র। যুদ্ধক্ষেত্রে অন্য শহীদের রক্তে শরীর ভিজলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে ফেরা প্রত্যক্ষদর্শী আর শহীদ স্বজনদের বয়ান উঠে এসেছে এ বইয়ে।
এর সঙ্গে বিমানবাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার বীরউত্তম লিয়াকত আলী খানের মুক্তিযুদ্ধ, মুজিবনগর সরকারে খন্দকার মোশতাকের ভূমিকা, শরণার্থী ক্যাম্পগুলোর অবস্থা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও রাজনীতিবিদ ‘কাজী আরেফদের একাত্তর’ ও একজন বীর নারীসহ ১০ জন মুক্তিযোদ্ধার একাত্তরের গৌরবের দিনগুলো তুলে এনেছেন সালেক খোকন।
তিনি বলেন, “সারদা পুলিশ একাডেমিতে ১৩০০ লোককে মেরে ফেলা হয়েছে এবং পেট্রোল ঢেলে লাশও পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। সেখানে আমি প্রায় ছয় মাস কাজ করেছি প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান তুলে আনার জন্য।”
তার এই প্রচেষ্টার প্রশংসা করে তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, “এই ইতিহাস যখন পরবর্তী প্রজন্মের কাছে বা তারও পরের প্রজন্মের কাছে বলা হবে সবাই তাকে মনে রাখবে, ইতিহাসের লিপিকার হিসেবে।”
বইটি সালেক খোকন উৎসর্গ করেছেন তৌফিক ইমরোজ খালিদীকে, সেজন্য ‘সম্মানিত’ বোধ করার কথা বলেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক।
এসময় লেখক বলেন, “আমি মানুষের ভাষ্য তুলে আনার কাজ করি। যার কারণে নিজেকে আসলে প্রান্তিক জায়গায় সবসময় ভাবি। আমার বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের আনুষ্ঠানিকতা কখনোই হয় না। প্রথমদিকে করেছি সেটাও বাংলা একাডেমির বটতলার মধ্যেই।
“আমার এই বইয়ের বিষয়টা ভিন্ন ব্যপার। গণহত্যার জায়গায় কাজ করেছি, তারপর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কাজ করেছি। ১১ বছর আমি বিডিনিউজ টেয়েন্টিফোরে ধারাবাহিকভাবে লিখি। আমি যে প্রান্তিক পর্যায়ে কাজ করছি, এই কাজটা যদি মুক্তিযুদ্ধ তুলে আনার ক্ষেত্রে বড় গবেষণা হয়, তাহলে আমি মনে করি সেই গবেষণাটাকে চারদিকে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটি করেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।”
লেখকের আশা, তার কাজ আগামীতেও মানুষের কাছে তুলে ধরার ক্ষেত্রে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম তার পাশে থাকবে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ও প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “বিভিন্ন গণমাধ্যমে যদি জানতে চায়, আমি বলি, একাত্তরের জায়গায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম কিন্তু কখনোই আপস করেনি।
“তৌফিক ভাইয়ের সাথে খুব বেশি যোগাযোগ হয় না, কিন্তু তৌফিক ভাই সবসময় আমার পাশে থাকেন। এই বোধটা সবসময় আমার মধ্যে কাজ করে। এ বছর এই বইটায় আমার কেন যেন মনে হল তৌফিক ভাইয়ের হাত ধরে যদি মোড়ক উন্মোচনটা হয়। তৌফিক ভাই বইটা প্রথম খুলবে এটা ছিল আমার চাওয়া, ব্যক্তিগত চাওয়াটা খুব বেশি না। কিন্তু এসে দেখলাম যে, মোড়ক উন্মোচনের একটা ঢংও চলে আসছে।”
তিনি বলেন, “লেখকদের একটা দুর্বল জায়গা আছে। লেখকরা কিছু দিতে পারে না। কিন্তু উৎসর্গের জায়গাটা আসলে লেখকের খুবই স্পর্শকাতর জায়গা। এই বইটি আমি তৌফিক ভাইকে উৎসর্গ করেছি।”
লেখা ও গবেষণার পাশাপাশি আলোকচিত্র নিয়েও কাজ করেন সালেক খোকন। মুক্তিযুদ্ধ, আদিবাসী এবং এ দেশের কৃষ্টি নিয়ে ভিন্ন ধরনের তথ্য ও গবেষণামূলক কাজ তার আগ্রহের জায়গা। এখন পর্যন্ত তার ৩৫টি বই প্রকাশ হয়েছে।
তার প্রকাশিত ‘যুদ্ধদিনের গদ্য ও প্রামাণ্য’ গ্রন্থটি ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক মৌলিক গবেষণাগ্রন্থ হিসেবে ‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক’ পুরস্কার এবং ’৭১-এর আকরগ্রন্থ’ ২০২১ সালে ব্র্যাক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার পায়।
তার লেখা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- খেতাবপ্রাপ্ত ত্রিশ বীর; বীরত্বে একাত্তর; একাত্তরের গল্পগাথা; ১৯৭১: বিজয়ের গৌরবগাথা; অপারেজয় একাত্তর; ১৯৭১: রক্ত, মাটি ও বীরের গদ্য; ১৯৭১: যাঁদের ত্যাগে এলো স্বাধীনতা; ১৯৭১: রক্তমাখা যুদ্ধকথা; ১৯৭১: যাঁদের রক্তে সিক্ত এই মাটি; যুদ্ধাহতের ভাষ্য; রক্তে রাঙা একাত্তর।
সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে বিডি্নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে, প্রকাশকাল: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
© 2024, https:.