ইতিহাস কথা কয়
এবার এমন একটি সময়ে জাতি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করছে যখন একাত্তরকে মুছে ফেলার বা বিভ্রান্ত করার নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে। এমনটা মনে করেন অনেকেই।
১০ ডিসেম্বর ১৯৭১। রাত তখন দেড়টা। বাইরের ঘরের অর্থাৎ বৈঠকখানার দরজায় মৃদু মৃদু কড়াঘাত হচ্ছে। সেই ঘরে শুয়ে আছি আমরা চারজন– মেজো ভাই শাহীন রেজা নূর, আমি, বাড়িওয়ালা ডা. হুদার ছোট শ্যালক আমাদের লুলু ভাই ও গ্রাম থেকে সদ্য আসা আমাদের আত্মীয় মান্নান। সকলেরই ঘুম ভেঙ্গে গেল। অন্ধকারে আমরা প্রত্যেকে অন্যদের দিকে তাকিয়ে ঘটনা বুঝবার চেষ্টা করলাম। শুকনো গলায় আমার মেজো ভাই জিজ্ঞেস করল, ‘কে, কে’?
কিন্তু সব নিরুত্তর। কিছুক্ষণ পর আবার সেই কড়াঘাত তবে এবার আরেকটু জোরে। ততক্ষণে বাড়ির সকলেরই ঘুম ভেঙ্গে গেছে। সকলেই নিজ নিজ ঘর থেকে জানতে চাইছে বাইরের ঘরে কী হচ্ছে। ভেতরের শোবার ঘর থেকে আব্বা চিৎকার করে মেজো ভাইকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘শাহীন, কে রে দরজা ধাক্কায়?’
প্রত্যুত্তরে মেজদা আব্বাকে জানাল, ‘কেউ–ই তো কথা বলে না, আব্বা’। ভেতরের ঘর থেকে মা এবং সদ্য আমাদের বাসায় আসা ফুফুকে এবং অন্যান্যদের নিয়ে বাইরের ঘরে এলেন আব্বা। এর পরের কড়াঘাতে নিজেই ‘কে, কে’ জিজ্ঞেস করলেন?”
একাত্তরের শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার রাতটিকে এভাবেই বর্ণনা করছিলেন তার ছেলে সেলিম রেজা নূর। তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। তার সঙ্গে আলাপচারিতার বেশির ভাগটাই হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখিত প্রশ্নোত্তরে।
তিনি বলছিলেন, তার বাবা জিজ্ঞেস করার পরও কোনো উত্তর পাওয়া গেল না বাইরে থেকে। এর পরের অংশটুকুও সেলিম রেজা নূরের ভাষ্যেই শোনা যাক–
“এবার জানালার পর্দার পাশে দাঁড়িয়ে পর্দা ফাঁক করে বাইরে দেখবার চেষ্টা করলেন আব্বা। কিছুই দেখা গেল না। ঘরে লাইট জ্বালিয়ে মিনিট কয়েক সকলের সাথে আলাপ করলেন।
তখন সেই কড়াঘাত থেমে গেলেও মৃদু ধাক্কাটি অব্যাহত আছে। এ শব্দের কারণ না জেনে কারও পক্ষেই ঘুমাতে যাওয়া সম্ভব নয়। আব্বা সিদ্ধান্ত দিলেন যে, নিশ্চয়ই কোনো অসহায় মানুষ সাহায্যের জন্য আমাদের শরণাপন্ন হয়েছেন। কারণ এই বাড়ির চৌহদ্দিতেই থাকেন একজন ডাক্তার ও একজন সাংবাদিক এবং সমগ্র মহল্লায় মাত্র দুটি টেলিফোন আছে যাদের, তাদের একটি আমাদের বাসায়। টেলিফোনটি পাড়া–প্রতিবেশী সকলেরই অবাধে ব্যবহারের সুযোগ আব্বা প্রতিষ্ঠা করে রেখেছিলেন।
আব্বার বিবেচনায় কোনো সাহায্যপ্রার্থী নিশ্চয়ই ডাক্তার বা টেলিফোনের সুযোগ নিতে এই কড়াঘাত করে চলেছেন! অতএব, দরজা খুলেই চক্ষুকর্ণের বিবাদভঞ্জন করাটাই উত্তম! মা ও ফুফু মানা করলেও আব্বাসহ আমরা সব ভাইয়েরা দরজা খুলে বাইরে যেতে উৎসাহী হয়ে উঠি। আব্বা দরজার ছিটকিনি ও হুড়কো খুলে বারান্দায় এলেন– পিছে পিছে আমরা সবাই। বিস্ময়ভরা চোখে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলেন।
বারান্দার এক কোণে বৈঠকখানার আরেকটি বন্ধ দরজার গায়ে হেলান দিয়ে সাদা একটি কুকুর পিঠ ঘষছে। এত রাতে একটি কুকুরের এত তেলেসমাতি কাণ্ড ঘটানোয় আমরা সকলে কুকুরের দিকে নানা মন্তব্য ছুঁড়ে দেই। সামনে বিস্তৃত লনের চারিদিকে টর্চের আলো ফেলে আব্বা সবকিছু দেখে নিলেন। ঘুরে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘দেখো, চারিদিকের অবস্থা আমাদেরকে কি রকম ভীত–সন্ত্রস্ত করে রেখেছে; একটি কুকুরের পিঠ চুলকানোর শব্দে ভয়ে প্রাণটা হাতে করে সবাই বসেছিলাম! কালকে সকালে প্রতিবেশীরা যখন শুনবে তখন দেখো কি রকম হাসি ঠাট্টা করে আমাদের নিয়ে!’
রাত তখন সাড়ে তিনটা! দরজায় আবার কড়াঘাত। এবার ভীষণ জোরে। মনে হলো দরজা ভেঙ্গে ফেলবে। বাইরের ঘরের আমরা সকলে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লাম। মেজদা শাহীন রেজা নূর, ‘কে, কে’ বলতে বলতে ঘরের বাতি জ্বালিয়ে দিলো।
এবার বাইরে থেকে উত্তর এলো, ‘শাহীন, দরজা খোলো, আমি তোমার দুলাভাই’। সকলেই চিনতে পারলাম সেটি আমাদের বাড়িওয়ালা ডাক্তার সাহেবের কণ্ঠস্বর। এত রাতে কোনো বিপদ ঘটেছে, হয়ত টেলিফোন দরকার মনে করে মেজদা দরজা অর্ধেক খুলতে না খুলতেই বিদ্যুৎগতিতে দু’টি বন্দুকের নল ঢুকে পড়ল; সঙ্গে সঙ্গেই, ‘হ্যান্ডসআপ’ বলতে বলতেই কয়েকজন ঘরে ঢুকেই বন্দুকের নল তাক করে একে একে আমাদের সকলের নাম জিজ্ঞেস করে চলল।
‘তোমহারা নাম কিয়া?’ আমরা বলে গেলাম আপন আপন নাম ‘শাহীন’ ‘লুলু’, ‘সেলিম’ আর পরিচয় দেওয়া শেষ হওয়ামাত্রই আমাদের বারান্দায় এনে দাঁড় করানো হলো। বারান্দায় দেখতে পেলাম বন্দুকের নলের মুখে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো বাড়িওয়ালার দুই ছেলে খোকা মামা, ভুলু মামা, বাড়িওয়ালা ডাক্তার হুদা স্বয়ং, ও তার বড় শ্যালক মাহমুদ ভাই। যমদূতদের প্রায় সকলেরই ছিল কান ঢাকা দেওয়া শীতের টুপি— কারও কারও ছিল মাফলার দিয়ে মুখ ঢাকা দেওয়া।
অন্ধকারে পিশাচের মত এদের চোখ জ্বলছে; প্রত্যেকের হাতে উদ্যত রাইফেল। আমাদের সাথে শুয়ে থাকা সদ্য আগত আত্মীয় মান্নান প্রথম চোটেই মৃত্যুদূতদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে কী করে জানি মাঝখানের দরজা খুলে পিছনের বারান্দা গলে পিছনের বিরাট দরজাটি খুলে বাইরের পাচিল টপকিয়ে পাশের বাড়ির সীমানায় গিয়ে পাচিলের নিচে বসে থাকে!
মান্নানের খুলে যাওয়া দরজাকে অনুসরণ করেই ঘাতকের দল উদ্যত রাইফেল হাতে খাবার ঘরে প্রবেশ করে যেখানে ছিলেন আমার সদ্য আসা ফুফু তার মেয়েদের নিয়ে।
এদিকে বাইরের ঘরে আর্মি–পুলিশ কিছু এসেছে অনুমান করে সেজো ভাই ফাহীম দৌড়ে ভেতরের যে ঘরে আব্বা–আম্মা ও ছোট ভাইরা শুয়ে আছে সেই দরজায় কড়াঘাত করছে যাতে আব্বা এসে তার পরিচিতি জানিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেন সেই ভরসায়!
ঘাতকেরা মুহূর্তেই পথ খুঁজে পেল এবং ফাহীমের কড়াঘাতে মা দরজা খুলে দিতেই পিছন পিছন উদ্যত রাইফেল হাতে কয়েকজন ঘাতক সেই ঘরে ঢুকে পড়ল।
ইতিমধ্যে বিছানা ছেড়ে হাতে টর্চ লাইট নিয়ে আব্বা আলনার কাছে চলে গেলেন পাঞ্জাবিটা পরবার জন্য। পাঞ্জাবির উপর হাত রাখতে না রাখতেই উদ্যত রাইফেল নিয়ে এক ঘাতক ‘হ্যান্ডস্আপ’ বলেই, জিজ্ঞেস করল ‘কিয়া নাম হ্যায় তোমহারা?’, আব্বা উত্তর দেন, ‘সিরাজুদ্দীন হো…’ নামের শেষাংশ না শুনেই জল্লাদের ত্বড়িৎ প্রশ্ন, ‘কিয়া কাম করতা হ্যায়’– এক্সিকিউটিভ এডিটর, ডেইলি ইত্তেফাক। আব্বার কথা শেষ হতেই ওরা ব’লে উঠলো ‘আও হামারা সাথ্’। বলেই বন্দুকের নলের মুখে রেখে বারান্দায় নিয়ে এলো। পিছে পিছে শাড়ির আঁচলে মুখ চেপে কাঁদতে কাঁদতে আসেন আমার মা। বারান্দায় এনে আবার আব্বার পরিচয় জিজ্ঞেস করা হয়। ডিসেম্বরের তীব্র সেই শীতের রাতে পরনে হাতাকাটা স্যান্ডো গঞ্জি, লুঙ্গি ও খালি পায়ে জল্লাদদের সঙ্গে আব্বাকে যাবার জন্য বলা হয়। বারান্দায় দাঁড়ানো সকলকে ঘরের ভেতরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেবার নির্দেশ দেওয়া হয়, হুমকি দেয় দরজা খুলে দেখবার চেষ্ঠা করলেই গুলি করে হত্যা করা হবে।
বারান্দা থেকে আমরা সকলে যখন ঘরে ঢুকছি জল্লাদরা তখন বন্দুকের মুখে আমাদের বাবা সিরাজুদ্দীন হোসেনকে বারান্দা থেকে নেমে তাদের অনুসরণ করবার নির্দেশ দিচ্ছে। পিছন ফিরে চকিতে দেখলাম তিনি বারান্দার দুটি সিড়ি না ভেঙ্গেই একবারেই সামনের লনে লাফ দিয়ে নেমে গেলেন। নামবার সময় ধীর স্থির কন্ঠে বলতে থাকেন, ‘টর্চ, আমার টর্চটা ধরো, আমার টর্চটা ধরো একজন’। মা হাত বাড়িয়ে আব্বার হাত থেকে টর্চটা নিতে নিতেই জল্লাদ একটি কাপড় জাতীয় কিছু চেয়ে বসে! মা ঘরের দিকে চেয়ে আমাদের উদ্দেশ্য করে একটি টাওয়েল জাতীয় কিছু আনার জন্য বলেন। আমরা সব ছিলাম পিঠাপিঠী ভাই তাই খাবার থালা–গ্লাস–গামছা ইত্যাদি নিয়ে প্রায়ই যুদ্ধে লিপ্ত হতাম। মায়ের অভিযোগে আব্বা তাই সকলের জন্য ভিন্ন ভিন্ন থালা–গ্লাস–গামছা ইত্যাদি কিনে দিতেন। এক দৌড়ে ভেতর থেকে ফাহীম একটি গামছা নিয়ে আরেক ভাইয়ের হাতে দেয়। সকলের মধ্যেই তখন এই ধারণা কাজ করছে যে জল্লাদদের কথার অবাধ্য হলে আব্বার ক্ষতি হতে পারে।
মুহূর্তের মধ্যেই আমাদের ভেতরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিতে হলো। ডিসেম্বরের তীব্র শীত। শুধুমাত্র গেঞ্জি, লুঙ্গি আর খালি পায়ে বন্দুকের নলের মুখে মানুষরূপী পাকিস্তানকে রক্ষার উন্মাদ নেশায় মাতাল স্ত্রী–পুত্র পরিজন সকলের মাঝ থেকে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে গেল আমাদের সকলের একান্ত ভরসারস্থল অজাতশত্রু সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে।
চারিদিকের নিস্তব্ধতাকে ভঙ্গ করে একদল কুকুরের ক্রন্দনধ্বণী সে রাত্রে আর্তনাদ করে চলেছিল অবিরত। কুকুরের অমন কান্নার রোল এত বেশি করে জীবনে আর কখনোই আমি শুনিনি।”
একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশার প্রথম শিকার হন দৈনিক ইত্তেফাকের কার্যনির্বাহী সম্পাদক সিরাজুদ্দীন হোসেন। স্বাধীনতার প্রাক্কালে ঘৃণ্য পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর আলবদর ও রাজাকার বাহিনী সিরাজুদ্দীন হোসেনকে তার চামেলীবাগের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
একাত্তরে তালিকা করে এদেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। পাকিস্তানের পরাজয় তখন অবশ্যম্ভাবী ছিল। এটা বুঝতে পেরেই তিনি ঠান্ডা মাথায় এ পরিকল্পনা করেন। অতঃপর আলবদর নেতাদের দায়িত্ব দেন ডিসেম্বরের ১৪ তারিখের মধ্যে তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের ধরে এনে হত্যা করার। এদের মধ্যে ছিলেন ডক্টর রাব্বি, ডক্টর আলীম, মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, সন্তোষ ভট্টাচার্য প্রমুখ। দেশ স্বাধীনের পর গভর্নর হাউজ থেকে রাও ফরমান আলীর একটি ডায়েরি পাওয়া যায়। সেখানে অনেক নিহত ও নিখোঁজ বুদ্ধিজীবীরও নাম লেখা ছিল। (তথ্যসূত্র: ৭১–গণহত্যার দলিল, একাত্তরের ঘাতক দালাল কে কোথায়?, ফখরুল আবেদীনের তথ্যচিত্র–আলবদর, মুক্তিযুদ্ধ তারপর–গোলাম মুরশিদ)
স্বাধীনতার এত বছরেও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা হয়নি। বরাবরই যার দাবি তুলেছে শহীদ পরিবারগুলো। পাশাপাশি এখনও নিশ্চিত হয়নি বুদ্ধিজীবী হত্যার বিচার।
একাত্তরের বিভিন্ন প্রামাণ্য ও দলিল বলছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর হয়ে নিরীহ বাঙালি ও মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগে অংশ নেয় এদেশেরই কিছু মানুষ। রাজাকার, আল–বদর, আল–শামস নামে সংগঠন গড়ে তোলে তারা। ‘ধর্মরক্ষার’ ধোয়া তুলে এরাই লিপ্ত থাকে মানবতাবিরোধী অপরাধে। তখন তারা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিবেকবান মেধাবী মানুষগুলোকেই আখ্যায়িত করে ‘ইসলামের শত্রু’।
যুদ্ধচলাকালে পাকিস্তানের এদেশীয় দোসররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, সংস্কৃতি কর্মীসহ বিভিন্ন পেশার বরেণ্য ব্যক্তিদের অপহরণ করে। পরে নিদারুণ যন্ত্রণা দিয়ে রায়েরবাজার ও মিরপুরে তাদের হত্যা করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের শেষ লগ্নে ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে আল–বদর বাহিনী আরও অনেক বুদ্ধিজীবীকে ধরে নিয়ে মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে স্থাপিত আল–বদর ঘাঁটিতে নির্যাতনের পর রায়েরবাজার বধ্যভূমি ও মিরপুর কবরস্থানে নিয়ে হত্যা করে।
এছাড়া ২৫ মার্চের কালরাত থেকেই সারাদেশের বুদ্ধিজীবীরা হত্যার শিকার হতে থাকে। এভাবে মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস ধরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরেরা এ দেশের মানুষের ওপর যে গণহত্যা ও নৃশংসতা চালিয়েছে, তার নজির ইতিহাসে খুব বেশি নেই।
বিজয়ের প্রাক্কালে ওরা হত্যা করে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। পরাজিত শক্তির দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশও ছিল এই হত্যাযজ্ঞে। পাশাপাশি বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে বুদ্ধিজীবী নিধনের এই পরিকল্পনা চলে।
১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আমরা সেই মহান সন্তানদের স্মরণ করি। শ্রদ্ধাও জানাই। কিন্তু যারা নিজেদের জ্ঞান–মনীষা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে জাতিকে পথ দেখিয়েছেন, আলোকিত করেছেন, তাদের শুধু বছরের একটি দিনে স্মরণ করলেই সব দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। বরং তাদের শিক্ষাকে অন্তরে ধারণ করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ত্যাগের ইতিহাসটিও।
এবার এমন একটি সময়ে জাতি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করছে যখন একাত্তরকে মুছে ফেলার বা বিভ্রান্ত করার নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে। এমনটা মনে করেন অনেকেই। ইতিহাস কখনও চাপা দিয়ে রাখা যায় না। বদলেও ফেলা যাবে না একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যার ইতিহাসটিকে। কেননা সত্য তার আপন আলোয় বহমান থাকে, আর ইতিহাসও কথা কয়।
লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে, প্রকাশকাল: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪
© 2024, https:.