শহীদ পরিবারগুলো কি বঙ্গবন্ধুকন্যার একটি চিঠি পাবে
বড় ভাই মুক্তিযুদ্ধে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাড়ির বড় ছেলে তিনি। যুদ্ধে গেলে সংসারের পরিণতি কী হবে। এমন নানা সীমাবদ্ধতায় মুক্তিযুদ্ধে যাওয়া সম্ভব হয়নি মহিউদ্দিন ভাইয়ের। কিন্তু গোপনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন তিনি।
স্বাধীনতা লাভের তিনদিন আগের ঘটনা। পাকিস্তানি সেনারা তাকে তুলে নিয়ে যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ ইপিআর ক্যাম্পে। নিদারুণ টর্চার শেষে তাকে গুলি করে হত্যা করে ওরা। দেশের জন্য মহিউদ্দিন ভাইয়ের আত্মত্যাগের করুণ ও বেদনাবহ ইতিহাসটি আজও আমাদের হৃদয়কে রক্তাক্ত করে।
একাত্তর নিয়ে এভাবেই আলাপচারিতা শুরু করেন শহীদ মহিউদ্দিনের (গাজী মহিউদ্দিন) ছোট ভাই ড. আবুল কাশেম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সিনিয়র অধ্যাপক তিনি।
বাবার নাম আলতাফ হোসেন আর মা আমেনা খাতুন। তাদের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের উপকন্ঠে, নয়াগোলা গ্রামে।
মহিউদ্দিন ছিলেন কাশেমের চেয়ে পাঁচ বছরের বড়। আরেক ভাইয়ের নাম মোখলেসুর রহমান। তিনজনই পড়তেন একই স্কুলে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। একাত্তরে তাদের বড় ভাই (মহিউদ্দিন) ছিলেন এসএসসি পরীক্ষার্থী। আর কাশেম পড়তেন ক্লাস সিক্সে।
কীভাবে শহীদ হলেন মহিউদ্দিন ভাই?
ড. আবুল কাশেম বললেন, ‘‘১৩ ডিসেম্বর ১৯৭১। সকাল তখন নয়টা হবে। গ্রামের উত্তর দিক রহনপুর ও গোমস্তাপুর এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি গ্রুপ অ্যাডভান্স হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ইপিআর ক্যাম্প থেকে মাইল পাঁচেক দূরে অবস্থান নেওয়ার কথা তাদের। তারা অ্যাডভান্স হলে কোনও বাঁধা পায় না। ফলে খুব সহজেই স্বাধীন হয় আমাদের গ্রামটা। মুক্তিযোদ্ধারা জয় বাংলা বলে গ্রামের ভেতর ঢুকে পড়ে। ওইসময় জয় বাংলা স্লোগান দিতে দিতে গ্রামের অনেকের সঙ্গে মহিউদ্দিন ভাইও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অ্যাডভান্স হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ইপিআর ক্যাম্পের উত্তর গেট পর্যন্ত যায় তারা। সেখানে পাকিস্তানি আর্মি তাদের ওপর ফায়ার শুরু করে। তখন মুক্তিযোদ্ধারা বুঝে যায় এতদূর এগোনো ঠিক হয়নি। ফলে তারা ছত্রভঙ্গ হন। কিন্তু মহিউদ্দিন ভাইসহ গ্রাম থেকে আসা অন্যরা বিপদে পড়ে। মিলিটারি রিট্রিট করছে, মুক্তিযোদ্ধারা সরে যাচ্ছে— এটা তারা বুঝতেও পারেনি। ফলে খুব সহজেই মিলিটারিদের হাতে ধরা পড়ে।’’
কীভাবে?
“ওখানে রাস্তার ধারেই প্রাইমারি স্কুলের এক শিক্ষক থাকতেন। আমাদের শিক্ষক ছিলেন তিনি। নাম আবুল বাসার ওদুজ্জামান, ডাক নাম বাদল। বাদল মাস্টার নামেই অধিক পরিচিত। তার বাড়িতেই ওঠেন মহিউদ্দিন ভাই। তার বাবা আইস উদ্দিন মিয়াও ছিলেন বাড়িতে। ওইসময় নামকরা একটি আলকাপ গানের দলের প্রধান বা ম্যানেজার ছিলেন আয়েশ উদ্দীন মিয়া। মূলত বাঙালি সংস্কৃতি চর্চার দারুণ জায়গা ছিল তাদের বাড়িটি।
বাদল স্যার ভাইকে বললেন, আমরাও এখান থেকে সরে পড়ব, একসাথেই যাই। বাড়ি থেকে বেড়িয়ে মহিউদ্দিন ভাইসহ তারা যখন রাস্তা পার হচ্ছিল ঠিক তখনই আর্মির একটা গাড়ি আসে। কৌশলে পাকিস্তানি সেনারা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেয়। তখন মহিউদ্দিন ভাই ভাবে, ওরাও মুক্তিযোদ্ধা। তিনিও কণ্ঠ আকাশে তুলে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে থাকেন। তখনই আর্মিরা তাদের তুলে নেয়।
ভাইয়ের সঙ্গে তুলে নেওয়া হয় বাদল মাস্টার ও তার বাবা আয়েশ উদ্দীনকেও। রবিউল নামে এক ব্যক্তি (এখন প্রয়াত) পাশ্ববর্তী বাঁশ ঝাড়ের ভেতর থেকে এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছিলেন। পরে তার কাছ থেকেই আমরা ঘটনাটি জানি।
এ ঘটনা আমাদের জানা ছিল না। ওইদিন পার্শ্ববর্তী হারান হাজীর বাথান বাড়িতে আমরা চলে যাই। বড় ভাই কোথায় গেছে জানি না। তাকে নিয়ে নানা দুঃচিন্তা করছি সবাই। আমি, আমার ইমিডিয়েট বড় ভাই আর আব্বা— তিনজন একটা বাঁধের ওপর দিয়ে যাচ্ছি। তখন হঠাৎ এক জায়গা থেকে আর্মিরা ব্রাশ ফায়ার করে। অল্পের জন্য বেঁচে যাই আমরা। ফলে আরও দূরে আরেক বাথান বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিই। ওইদিন বিকেলের দিকে লোকমুখে জানতে পারি মহিউদ্দিন ভাইকে ধরে নিয়ে যাওয়ার খবরটি। নানা চিন্তায় আমাদের মন তখন উদগ্রীব হয়ে ওঠে।”
মহিউদ্দিনসহ তুলে নেওয়া তিনজনকেই টর্চারের পর গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানি আর্মি। তিন দিনে ডেডবডি ফুলে গিয়েছিল। বাদল মাস্টারকে পাকিস্তানি আর্মি এমনভাবে টর্চার করে যে চেনার উপায় ছিল না। পরে তার পোশাক দেখে লাশ শনাক্ত করা হয়। মহিউদ্দিনের ডেডবডি পাওয়া যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ ইপিআর ক্যাম্পের পাশেই, মহানন্দা নদীর তীরে। অর্ধেক পানিতে ও অর্ধেক ডাঙায় পড়ে ছিল লাশটা। স্বাধীনতা লাভের আনন্দের দিনে নিজের বাড়িতে ফিরেই আবুল কাশেমরা দেখেন তার বড় ভাইয়ের লাশ বাড়ির উঠানে।
সেদিনের ঘটনার কথা ড. কাশেম বললেন, “১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। স্বাধীনতা লাভের খবর পেয়ে আমরাও বাড়ির দিকে রওনা হই। তখনও ভাবিনি মহিউদ্দিন ভাই নেই। সকাল তখন এগারটা হবে। আমাদের আগেই চলে এসেছিলেন তিনি। তবে জীবিত নয়, লাশ হয়ে। বাড়ির উঠানে খাটিয়াতে রাখা ছিল তাঁর লাশটা। আমাদের আর্তনাদে তখন ভারী হয়ে ওঠে সেখানকার বাতাস। একটা হাহাকার অবস্থার সৃষ্টি হয় সেখানে। দাদাও পাগলের মতো হয়ে যান।
দাদীর আপন ভাই রইস উদ্দিন মণ্ডল ছিলেন গ্রামের মাতব্বর। মূলত তার উদ্যোগেই মহিউদ্দিন ভাইয়ের ডেডবডি নিয়ে আসা হয়েছিল।
কোথায় কবর দেওয়া হবে ভাইকে? বাবা বলেছিলেন— বাড়ির পাশেই। আরও বলেন, তারা মারা গেলেও যেন শহীদ সন্তানের পাশেই কবর দেওয়া হয়। তাই হয়েছিল। স্বাধীনতা লাভের পর ৮৬ বছর বয়সে বাবা মারা যান। মা মারা গেছেন ৯৬ বছর বয়সে। তবে তাদের স্মৃতিতে সবসময় জ্বলজ্বলে ছিল শহীদ সন্তানের স্মৃতি। অসুস্থ হলে মা আমাদের দুই ভাইকে ডেকে বলতেন— ‘তোমরা তিন ভাই একত্রে থাকবে।’ তার আরেকটা ছেলে যে একাত্তরে মারা গেছে এটা তিনি মনেও করতেন না’।”
শহীদ মহিউদ্দিনকে ১৬ ডিসেম্বর দুপুরের পর দাফন করা হয়। খাটিয়াতে ছিল লাশটি। তখন তার মাথার খুলি থেকে মগজ বেরিয়ে পড়ে মাটিতে। ভাইয়ের সেই মগজ নিজ হাতে কাফনের কাপড়ে তুলে দিয়েছিলেন আবুল কাশেম। সে স্মৃতি বলতে গিয়ে আপ্লুত হন তিনি। নিজেকে সামলে নিয়ে তিনি বললেন বেদনাবহ সেই ঘটনাটির কথা।
তার ভাষায়, ‘‘পাকিস্তানি সেনাদের গুলি মহিউদ্দিন ভাইয়ের বাঁ চোখ দিয়ে ঢুকে মাথার খুলি ভেদ করে বেরিয়ে যায়। ফলে মাথার পেছনে খুলিতে বড় একটা ফুটো হয়ে যায়। বলা হয়েছিল শহীদের ডেডবডি ধুতে হয় না। তাই পরে শুধু কাফনের কাপড়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
ভাইয়ের লাশের খাটিয়ার সামনে বসে ছিলাম। হঠাৎ লক্ষ্য করলাম খাটিয়া থেকে বড় ভাইয়ের মাথার মগজ বের হয়ে মাটিতে পড়েছে। বুকের ভেতরটা তখনই খামচে ধরে। ছটফট করতে থাকি কষ্টে। চোখ দুটোও ভিজে যায়। তখন একটা নিড়ানী এনে ভাইয়ের মাথার মগজ মাটি থেকে তুলে কাফনের ভেতর দিয়ে দিই। এই স্মৃতিটা মনে হলে চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। ট্রমাটাইজ ফিল করি এখনও।
১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস। এ উপলক্ষে অনেক অনুষ্ঠান ও আনন্দ হয়। কিন্তু এই দিবসটা তো আমাদের জন্য পেইনফুল। ভাইয়ের লাশ পেয়েছিলাম এ দিনে। স্বাধীনতার জন্য আমার বড় ভাই জীবন দিয়েছেন— এটা গর্বের। মাথা উঁচু করে বাঁচার স্বপ্নও দেখি। কিন্তু এই স্বাধীন দেশ তো মনে রাখেনি আমার ভাইকে!’’
শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি প্রসঙ্গে কষ্ট নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষর করা একটা চিঠিসহ দুই হাজার টাকা আব্বার কাছে এসেছিল। এরপর আর কেউ কোনও খোঁজও নেয়নি।
এ নিয়ে ক্ষোভ নেই, তবে কষ্ট তো আছেই। বলা হয়ে থাকে মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ লোক শহীদ হয়েছেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদ শুধু মুখের কথাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে কেন?
মুক্তিযুদ্ধের বিষয় আসলেই লক্ষাধিক মুক্তিযোদ্ধার কথাই প্রায়োরিটি পায়। কিন্তু মেইন প্ল্যাটফরমে যে ত্রিশ লক্ষ মানুষ লিবারেশন ওয়ার সৃষ্টি করল, যারা মুক্তিযোদ্ধা নয় কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ বলেই পাকিস্তানি সেনাদের হাতে শহীদ হলেন। তাদের আত্মত্যাগের ইতিহাস এখনও তুলে ধরা হয়নি, পরিবারগুলোর খোঁজও নেয়না কেউ। স্বাধীনতার জন্য আমরা প্রিয়জন হারিয়েছি। কিন্তু স্বাধীন দেশে শহীদ পরিবারগুলোর কি কোনওই মূল্য নেই? এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না।’’
ড. কাশেমকে বললাম, আপনি নিজেও মুক্তিযুদ্ধের নানা গবেষণা কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। স্বাধীনতা লাভের এত বছরেও কেন শহীদদের তালিকা ও শহীদ পরিবারগুলোকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করা গেল না? কীভাবে দেখছেন বিষয়টি?
আবুল কাশেম অকপটে বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন, যাদের চরম ত্যাগের বিনিময়ে মুক্তিযুদ্ধ সফল হয়েছে, তাদের প্রতি কমিটমেন্টের অভাব আছে বলে মনে করি। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের একজন হিসেবে আমি সরকারের কাছে কোনও ধরনের হেল্প চাই না। স্বীকৃতি না পারুক, একটু সম্মান তো দেখানো যায় পরিবারগুলোকে। তাহলেও অনেক কষ্ট লাঘব হতো।
আর যাদের নাম পাওয়া যাচ্ছে তাদের নিয়েই অন্তত একাত্তরের শহীদের তালিকাটা শুরু করা দরকার। এটি তো রাষ্ট্রেরই দায়। আমার ভাই দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে তিনি আমাদের রক্তের সম্পর্ক নির্ধারণ করে গেছেন। তাই ১৯৯২ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করা পিএইচডি ডিগ্রিটি আমি শহীদ মহিউদ্দিন (গাজী মহিউদ্দিন) ভাইকে উৎসর্গ করেছি। কিন্তু এই স্বাধীন দেশ তো ভুলে গেছে আমার ভাইয়ের মতো শহীদদের।’’
রাজধানী বা শহরকেন্দ্রিক কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ডাক্তাররাই কেবল একাত্তরের বুদ্ধিজীবী— এমনটা মানতে নারাজ ড. আবুল কাশেম। তার মতটি এমন—‘‘একটি গণ্ড গ্রামে একজন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকও ছিলেন বুদ্ধিজীবী। কারণ সময়ে সময়ে তার বুদ্ধি নিয়েই ওইসময় মানুষ নানা সমস্যার উত্তরণ ঘটাতে পেরেছিল। সে হিসেবে আমাদের শিক্ষক বাদল মাস্টার ও তার বাবা আলকাপ গানের দলের ম্যানেজার আয়েশ উদ্দীন মিয়াও বুদ্ধিজীবী। কিন্তু তাঁদের নাম তো এখনও অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি!’’
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি এখন রাষ্ট্র ক্ষমতায়। ফলে মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক বিষয়গুলোতে এ সরকারের প্রতি আমাদের প্রত্যাশাও বেশি। ড. কাশেমকে বললাম আপনি নিজেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক একটি সাব কমিটির মেম্বার। একাত্তরের শহীদদের তালিকা তৈরির কাজটি এ সরকারের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন?
উত্তরে আবুল কাশেম বললেন, ‘‘এই কাজটি শুরু করলে বর্তমান সরকারের জন্য এটা একটি বড় ক্রেডিট হতে পারে। আওয়ামী লীগের তৃণমূলে যে সাংগঠনিক কাঠামো আছে সেটি ব্যবহার করে চাইলেই তারা শহীদদের তালিকা তৈরির কাজটা সহজেই শুরু করতে পারে। এছাড়া অনেক বই ও গবেষণাতেও অনেক শহীদের নাম চলে এসেছে। সেগুলোকে এক করে একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করে শহীদ পরিবারগুলোকে যদি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী একটি চিঠি পাঠান সেটিও শহীদ পরিবারগুলোর কষ্ট লাঘবে অনেক বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি। কিন্তু এর জন্য শুধু আন্তরিক উদ্যোগের প্রয়োজন।’’
১৯৭১ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নয়াগোলা গ্রামেই শহীদ হন মহিউদ্দিনসহ আয়েশ উদ্দীন মিয়া, এ বি এম ওদুজ্জামান (বাদল মাস্টার), মোবারক আলী বিশ্বাস, আফসারুজ্জামান, আবেদ আলী, শামসুদ্দিন, কান্দনী, খোদেজা খাতুন, আবু বক্কর, আত্তাব উদ্দীন ও মাইনুল ইসলাম প্রমুখ। কিন্তু তাদের কথা ইতিহাসে উঠে আসেনি এখনও। স্বাধীনতা লাভের পর শহীদ-পরিবারগুলোর টিকে থাকার লড়াইয়ের কথাও জানেনা এ প্রজন্ম। কেউ খোঁজও রাখেনি পরিবারগুলোর। যা স্বাধীন দেশে প্রত্যাশিত ছিল না।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ পরিবারগুলোর কষ্ট ও আত্মত্যাগের দিকটি উপলদ্ধি করতে পেরেছিলেন। এ কারণেই স্বাধীনতা লাভের পর তিনি তাদের অনুকূলে নগদ টাকাসহ একটি কৃতজ্ঞতাসূচক চিঠি পাঠান। এরপর আর কোনও সরকারই তাদের খোঁজ নেয়নি।
বঙ্গবন্ধুকন্যা এখন রাষ্ট্রক্ষমতায়। বঙ্গবন্ধুর মতো তার কন্যা শেখ হাসিনাও শহীদ পরিবারগুলোর বুকে পুষে রাখা চাপা কষ্টগুলোকে অনুভব করবেন এমনটাই প্রত্যাশা শহীদ স্বজনদের। বঙ্গবন্ধুকন্যার একটি চিঠি শহীদ পরিবারগুলোকে সম্মানিত করবে, একাত্তরে প্রিয়জন হারানোর কষ্টের আকাশে এতটুকু হলেও বৃষ্টি ঝরাবে। শহীদ পরিবারগুলোও তখন গর্বিত হবে এই ভেবে যে, এই স্বাধীন দেশ, এই স্বাধীন রাষ্ট্র তাদের প্রিয়জনের আত্মত্যাগকে ভুলে যায়নি। এই কাজটি করা কি সত্যি অনেক কঠিন?
লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে সকাল-সন্ধ্যায়, প্রকাশকাল: ২২ জুন ২০২৪
© 2024, https:.