বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন সরদার ফজলুল করিম
সরদার ফজলুল করিম। বাংলাদেশের বিশিষ্ট্য দার্শনিক, শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, প্রবন্ধকার। জ্ঞানপিপাসু বিপ্লবী এই শিক্ষাবিদের জীবনের প্রতিটি অধ্যায় বৈচিত্র্যে ভরপুর৷ মনের লালিত আদর্শকে কখনো বিসর্জন দেননি তিনি৷ বরং প্রতিনিয়ত আরও দৃঢ় করেছেন৷ বৈপ্লবিক আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে চাকরি ছেড়েছেন, দীর্ঘ ৪ দফায় মোট ১১ বছর জেল খেটেছেন৷
সরদার ফজলুল করিমের জন্ম ১৯২৫ সালের ১ মে তারিখে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার আটিপাড়া গ্রামে৷ বাবা খবিরউদ্দিন সরদার কৃষিকাজ করতেন৷ মা সফুরা বেগম ছিলেন গৃহিণী৷ তাঁরা দুই ভাই তিন বোন৷ সরদার ফজলুল করিমের শৈশবকাল কেটেছে গ্রামে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার হাতেখড়ি গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে৷ মাধ্যমিক পাস করে ঢাকায় এসে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে৷ উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনশাস্ত্রে বিএ অনার্স ও এমএতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন৷
১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনশাস্ত্রে শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। পরবর্তীতে তার সাম্যবাদী বামপন্থী সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনে যুক্ত থাকার পর্যায়ে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নিগৃহীত হন। রাজবন্দি হিসেবে দীর্ঘ ১১ বৎসর বিভিন্ন পর্যায়ে কারাজীবন যাপন করেন। জেলে থাকা অবস্থাতেই ১৯৫৪ সনে তিনি পাকিস্তান সংবিধান সভার সদস্য হিসেবে কাজ করেন। পরে ১৯৬৩ থেকে ‘৭১ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমির সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি পাকিস্তান হানাদারবাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হন। পরবর্তিতে তিনি আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭২ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত শিক্ষক হিসেবে শিক্ষাদান শুরু করেন।
সরদার ফজলুল করিম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করিয়াছেন ভাষা আন্দোলন হইতে মুক্তিযুদ্ধ অবধি স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়ে। দার্শনিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী—উভয় ক্ষেত্রেই সাদামাটা ও নিরহঙ্কার এই মানুষটির অনন্য মেধা ও নিষ্ঠার উজ্জ্বল নিদর্শন হইয়া আছে তাঁহার রচিত ও অনূদিত গ্রন্থাবলি।যার মধ্যে রয়েছে প্লেটোর সংলাপ, প্লেটোর রিপাবলিক, অ্যারিস্টটলের পলিটিক্স, রুশোর সোশ্যাল কনট্রাকট, পাঠপ্রসঙ্গ, চল্লিশের দশকের ঢাকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পূর্ববঙ্গীয় সমাজ, সেই সে কাল: কিছু স্মৃতি কিছু কথা, নানা কথা, নানা কথার পরের কথা এবং নূহের কিসমত ইত্যাদি৷ এ ছাড়া ‘দর্শনকোষ’ নামে দর্শনের একটি অভিধান লিখেছেন তিনি৷সরদার ফজলুল করিম বাংলা একাডেমির পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন৷
১৫ জুন ২০১৪ তারিখ, রোববার রাত পৌনে ১টায় শমরিতা হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) মৃত্যু হয় সরদার ফজলুল করিমের। তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। ব্যক্তি সরদার ফজলুল করিম চলে গেলেও রেখে গেছেন তাঁর অসামান্য কর্ম এবং অনন্য জীবনাদর্শ। কর্মের মধ্যেই তিনি বেঁচে থাকবেন—এই কথা যেমন সত্য, তেমনি মানুষ হিসাবেও তিনি বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন।
তথ্য ও ছবি : সংগৃহীত
© 2014 – 2018, https:.