রাষ্ট্র কি একাত্তরের শহীদদের তালিকা করেছে?
নৌ কমান্ডো মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহজাহান কবির (বীরপ্রতীক)
১৯৭১ সালের মে মাসের প্রথম সপ্তাহ। হাতিমারা ক্যাম্পে আমরা পাঁচশ জনের মতো। এক রাতে হঠাৎ হুইসেল। ফলিং করানো হয় সবাইকে। কী ঘটনা? আটজন বাঙালি সাবমেরিনার ফ্রান্স থেকে পালিয়ে চলে আসেন দিল্লিতে। প্রবাসী সরকার তাদের কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করে। বাংলাদেশ যেহেতু নদীমাতৃক দেশ। তাই নেভাল ইউনিট প্রয়োজন। এ কারণে নৌ-কমান্ডো বাহিনী গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে উদ্দেশ্যেই ইন্ডিয়ান নেভির তিনজন অফিসারসহ ওইদিন হাতিমারা ক্যাম্পে আসেন বাঙালি সাবমেরিনারদের একজন, রহমত উল্লাহ (বীর প্রতীক)।
‘নৌ কমান্ডো হিসেবে কারা যোগ দিতে প্রস্তুত?’ প্রশ্ন করতেই অনেকে হাত তুলল। কিন্তু তারা বেছে নিলো পোর্ট এরিয়ায় ছেলেদের। বিশেষ করে যাদের বাড়ি চট্টগ্রাম, মংলা, খুলনা, চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জের মতো এলাকায়।
যোগ্যতা কি?
সাঁতার জানতে হবে। বিদেশিরা ট্রেনিং দেবে। তাই ইংরেজি জানা শিক্ষিত বা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া হতে হবে।
প্রাথমিকভাবে ৭০-৮০ জনকে বাছাই করা হয়। এরপরই জানানো হলো–‘এটা হবে সুইসাইডাল স্কোয়াড।’
স্বাধীনতার জন্য জীবন দিতে রাজি কারা?’
অনেকেই তখন হাত নামিয়ে নেয়। অতঃপর ফিটনেস দেখে সিলেকশন করা হয় ৩০-৩২ জনকে। চাঁদপুরের ১৪ জনের ভেতর ১৩ জনই টিকে যায়। ফিজিক্যালি ফিট না থাকায় শুধু কাশেম বাদ পড়েছিল।
ধর্মনগর হয়ে ট্রেনে আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় ভারতের মুর্শিদাবাদে। ট্রেনিং ক্যাম্পটি ছিল পলাশীতে, ভাগিরথী নদীর তীরে। ১৪ মে তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেনিং শুরু হয়। সুইসাইডাল স্কোয়াড। তাই আগেই বন্ডে সাইন দিতে হয়। সেখানে লেখা ছিল এমন– ‘আমি স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য নিজের জীবন বিসর্জন দিতে প্রস্তুত হইয়া এই ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণ করছি। যুদ্ধে আমার যদি মৃত্যু হয় কেউ দায়ী থাকবে না।’
ট্রেনিং খুব সহজ ছিল না। উল্টো বা চিত হয়ে সাঁতার কাটা, পায়ে ফিনস পড়ে শুধু চোখ-নাক ভাসিয়ে পানিতে মাছ বা সাপের মতো নিঃশব্দে চলা, অপারেশনে পাহারাদারদের মারতে জুডো-কেরাতে ট্রেনিং, দিক চেনার জন্য ম্যাপ রিডিং, মাইন বিস্ফোরণ প্রভৃতি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত মাইনগুলো ল্যান্ডে ব্যবহার করা হতো। যুগোস্লোভাকিয়া থেকে সে মাইন দেওয়া হয় ভারতকে। কিন্তু এগুলো তো ব্যবহৃত হবে জলে। তাই ওই মাইনে ওয়াটার টাইট করে চুম্বক ফিট করা হয়। একেকটা মাইনের ওজন ছিল ৫ থেকে ৬ কেজি। অপারেশনে সেগুলোই জাহাজে ফিট করে উড়াতে হবে। বুকে দুই-তিনটা ইট বেঁধে আমাদের সে কৌশলই শেখানো হয় ভাগিরথী নদীর জলে।
বিশজন করে একেকটি গ্রুপ ছিল। এইচ গ্রুপে আমি, ওই গ্রুপের কমান্ডাও করতাম। ট্রেনিং চলে ৩১ জুলাই পর্যন্ত। ভারতীয় নৌ-বাহিনীর কমান্ডার এমএন সামন্ত, লে. কমান্ডার জিএম মার্টিস, লে. কপিল, কে সিং ও ক্যাপ্টেন সমীর কুমার দাশের তত্ত্বাবধানে ট্রেনিং হয় নৌ-কমান্ডোদের। ট্রেনিং করান কে এম দাস, ভট্টাচার্য, কফিল, সিসিং, নানাবুজ প্রমুখ।
একাত্তরে নৌ ও এয়ার কমান্ডো ট্রেনিংয়ের বিষয়টি নিয়ে খুবই গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। ধরেই নেওয়া হয়েছিল অপারেশনে আমরা ম্যাক্সিমাম মারা যাব। মাইন ছাড়া আমাদের কাছে অস্ত্র ছিল শুধু একটি কমান্ডো নাইফ। কিন্তু বুকে ছিল দেশপ্রেম আর মাতৃভূমিকে মুক্ত করার তীব্র বাসনা। তাই মরতে গিয়েও জীবন নিয়ে ফিরে এসেছিলাম। আমরা তো ইতিহাস বলার সুযোগ পাচ্ছি। কিন্তু দেশের জন্য যারা জীবন দিল, রক্ত দিলো স্বাধীনতার জন্য–তাদের না বলা কথাগুলো লিখবে কে?
যুদ্ধদিনের কথা এভাবেই তুলে ধরেন নৌ কমান্ডো মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহজাহান কবির (বীর প্রতীক)। তাঁর বাবা মো. ইব্রাহীম বিএবিটি (বিটি সাহেব নামে পরিচিত) ছিলেন চাঁদপুরের সফরমালি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। মা আসিয়া বেগম গৃহিণী। বাড়ি চাঁদপুর সদর উপজেলার দাশাদি গ্রামে। শাহজাহান কবিরের লেখাপড়ায় হাতেখড়ি সফরমালি প্রাইমারি স্কুলে। ১৯৬৭ সালে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করেন সফরমালি হাই স্কুল থেকে। এরপর চলে যান ঢাকায়, ওয়ারিতে বড় ভাইয়ের ১৪ নম্বর লালমনি স্ট্রিটের ভাড়া বাড়িতে। তিনি ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন ১৯৬৯ সালে। এরপর ভর্তি হন জগন্নাথ কলেজে, বি.কম.-এ। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র।
শেখ কামালের সহপাঠী ছিলেন শাহজাহান কবির। ফলে যাতায়াত ছিল শেখ মুজিবের বাড়িতে। নেতাকে প্রথম দেখার অনুভূতি কেমন ছিল? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাঙালি জাতিকে মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন শেখ মুজিব। ওইসময় সকলের মুখে মুখে তার কথা। ঢাকা কলেজে ভর্তি হওয়ার পরই শেখ কামালের সঙ্গে পরিচয়। আমি কমার্সে ও ছিল আর্টসে। তখন কলেজের প্রিন্সিপাল জালাল উদ্দীন। উনি ভীষণ কড়া, ক্লাস বাদ দিয়ে ছাত্রদের মিছিল-মিটিংয়ে যেতে দিতেন না। আমরা তা উপেক্ষা করে কলেজ থেকে বেরিয়ে মিছিল-মিটিং করতাম। কামালও সঙ্গে থাকতো। ক্রমেই ওর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। বন্ধু রুহুল আমিন ও ইউনুসসহ শেখ কামালই একদিন তার বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানেই সরাসরি দেখি বঙ্গবন্ধুকে। ওটাই প্রথম দেখা। তার মুখের দিকে বারবার তাকাচ্ছিলাম। উনি কাছে এসে হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলেন– ‘তোমার নাম কি? ভালোভাবে লেখাপড়া করো। শুধু আন্দোলন করলেই চলবে না। লেখাপড়াও করতে হবে, আন্দোলনও চালাতে হবে।’ এখনও কানে বাজে বঙ্গবন্ধুর কথাগুলো।
ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে সকল আন্দোলনেই যুক্ত ছিলেন শাহজাহান। ঐতিহাসিক সাত মার্চের ভাষণের দিন বন্ধু সেলিম, মনিরুজ্জামানসহ উপস্থিতও হন রেসকোর্স ময়দানে।
তার ভাষায়–‘ওইদিন সকালেই জগন্নাথ কলেজ থেকে সকালে রওনা দিয়ে মঞ্চের খুব সামনে অবস্থান নিই। ক্রমেই মাঠে মানুষ জড়ো হতে থাকে। সবার হাতে হাতে লাঠি, মুখে মুখে স্বাধীনতার কথা। দুপুরের পর মঞ্চে উঠলেন বঙ্গবন্ধু। উনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন ইনডাইরেক্টলি। বললেন– ‘তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শক্রর মোকাবেলা করতে হবে……..আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি, তোমরা বন্ধ করে দিবে..।’ কথাগুলো মনে গেথে যায়। আকাশে তখন সামরিক হেলিকপ্টার ঘুরছিল। বঙ্গবন্ধু যদি সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দিতেন তাহলে লাখো লোককে ওরা মেরে ফেলত। সে প্রস্তুতিও তাদের ছিল। নেতা হয়তো এটা বুঝতে পেরেছিলেন। তাই তিনি শুধু প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার নির্দেশ দিলেন। পরদিনই আমরা জগন্নাথ কলেজ মাঠে ডামি রাইফেল দিয়ে ট্রেনিং শুরু করি। ইউটিসির কিছু সদস্য ট্রেনিং করায়।’
২৫ মার্চ ১৯৭১। পাকিস্তানি সেনারা ঢাকায় শুরু করে গণহত্যা। রাস্তাঘাটে পড়ে থাকে বাঙালির রক্তাক্ত লাশ। সে বিভীষিকাময় দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন শাহজাহান কবিররা।
কী ঘটেছিল ওই রাতে?
একজন প্রত্যদর্শী হিসেবে তিনি বলেন– ‘সামনে পরীক্ষা। রাত জেগে পড়ছি। হঠাৎ ধুম ধুম আওয়াজ। পাশে ইত্তেফাক অফিস। সেটাতে পাকিস্তানি সেনারা আক্রমণ করেছে। বাড়ির সামনে ছিল অনেকগুলো আম গাছ। গাছের পাতা ভেদ করে গুলি বেরিয়ে যাচ্ছে। গাছে থাকা পাখিগুলো ভয়ে এদিক ওদিক উড়তে থাকে। রাস্তার কুকুরগুলোও চেচাচ্ছে। বড় ভাই এসে বলেন– ‘ফ্লোরে শুয়ে পড়’। তাই করি। সারারাত খই ফোটার মতো গুলির শব্দ হচ্ছিল।
বড় ভাইয়ের শ্যালক হারুন থাকতো সঙ্গে। ফজরের দিকে তাকে নিয়ে বের হই। নবাবপুরের পুলিশ ফাঁড়ির কাছে দেখি লাশের স্তুপ। রক্তে ভেসে গেছে রাজপথ। মরা মানুষের স্তুপের ভেতর থেকে হঠাৎ একটা লোক পানি পানি বলে গোঙ্গাচ্ছে। আমরা লাশগুলোকে সরিয়ে লোকটাকে বের করি। তার পরনে পুলিশের পোশাক। গুলিতে বুকটা ঝাঝরা হয়ে গেছে। পিনপিন করে রক্ত তখনও পড়ছে। আমরা একটা রিকশাকে অনুরোধ করে লোকটিতে ঢাকা মেডিকেলে পাঠিয়ে দিই। আজও জানি না সে বেঁচে আছে কিনা? এরপর আর্মির গাড়ি আসলে গলির পথ দিয়ে আমরা বাড়িতে চলে যাই।
বড় ভাই হুমায়ুন কবির তখন পাটুয়াটুলি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি বললেন–‘ঢাকায় থাকা নিরাপদ না।’ বাড়িওয়ালা আতিকুল্লাহ খান ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম বিভাগের হেড। তিনিও ভাইকে বললেন–‘দেশের অবস্থা ভালো না। তুমি যেহেতু রাজনীতি করো তল্লাশি শুরু হলে তোমাকে সেভ করতে পারব না। তোমাদের গ্রামে চলে যাওয়াই ভালো।’ দুদিন পরেই আমরা রওনা হই গ্রামের উদ্দেশে।
মিডফোর্ডের কাছে এসে দেখি নৌকায় নদী পার হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। সদরঘাট থেকে পাকিস্তানি সেনারা মাঝে মধ্যে কামানের গোলা ফেলছে। বহুকষ্টে নদী পার হয়ে আমরা কেরানিগঞ্জ দিয়ে পায়ে হেঁটে মুন্সিগঞ্জের পথ ধরি। পথে পথে মানুষ পানি ও খাদ্য নিয়ে এগিয়ে আসে। সন্ধ্যা হতেই আশ্রয় নিই একটি হিন্দু বাড়িতে। ওরা খুব গরীব, দিন আনে দিন খায়। আমাদের জন্য ঘরটা ছেড়ে দিল। খিচুড়ি রান্না করে খাওয়াল। রাতভর তারা পাহারা দেয় বাইরে বসে। এই সাধারণ মানুষগুলোও দেশের জন্য যা করেছে। তার কোনো প্রতিদান হয় না! সকালে কাঠপট্টি এসে নৌকা নিয়ে আমরা চাঁদপুরের সফরমালি লঞ্চঘাটে পৌঁছি। সেখান থেকেই নিরাপদে গ্রামে ফিরি।’
৮এপ্রিল ১৯৭১। পাকিস্তানি সেনারা চাঁদপুর শহর দখলে নেয়। এরপরই তারা আশপাশের গ্রামে হানা দিতে থাকে। তাদের সহযোগিতায় দলবলসহ এগিয়ে আসে মুসলিম লীগের সালাম মোক্তার। শাহজাহানের মতো যুবকেরা তখন পালিয়ে বেড়ায়। এক সময় নুরুল্লাহ পাটওয়ারি, সালাউদ্দিন, জহিরুল হক, আবুল হোসেন, রাজ্জাকসহ ১৪ জন একত্রিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন।
যুদ্ধে যাওয়ার কথা শুনে মা রাজি হন না, বাঁধা দেন। কিন্তু সাহস দিতে এগিয়ে আসেন বাবা। বলেন– ‘ওরা না গেলে দেশ স্বাধীন করবে কারা? দুলুকেও (শামসুল কবির দুলু) সঙ্গে নিয়া যা।’ পাশের গ্রামের মোখলেস ছিলেন ইপিআরে। তার মাধ্যমেই শাহজাহানরা চান্দিনা দিয়ে ভারতের বক্সনগর রিক্রুটিং ক্যাম্পে চলে আসেন। রশিদ ইঞ্চিনিয়ার ছিলেন ওই ক্যাম্পের ইনচার্জ। ওখান থেকে তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় হাতিমারা ট্রেনিং ক্যাম্পে। ছোট ভাই শামসুল কবিরসহ নৌকমান্ডো ট্রেনিংয়ের জন্য শাহজাহান করিবকে বাছাই করা হয় ওখানেই।
ট্রেনিং শেষে পরিকল্পনা হয় অপারেশন জ্যাকপটের। কেমন ছিল সেই অপারেশন? শুনি এই নৌ কমান্ডোর জবানিতে।
তার ভাষায়–‘চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর, চাঁদপুর ও নারায়গঞ্জ (দাউদকান্দি ফেরিঘাটসহ) নদীবন্দরে একই ডেট ও টাইমে অপারেশন চালাতে হবে। ৩০০ জনের মধ্য থেকে সিলেকশন করা হয় ১৬০ জনকে। চট্টগ্রামের জন্য ৬০ জন, মংলার জন্য ৬০ জন, চাঁদপুরে ২০ জন ও নারায়ণগঞ্জের জন্য ২০ জন করে নৌ কমান্ডো গ্রুপ তৈরি করা হয়। ফ্রান্স ফেরত সাবমেরিনার এ ডাব্লিউ আব্দুল ওহেদ চৌধুরীকে (বীরউত্তম ও বীরবিক্রম) চট্টগ্রাম, আহসান উল্লাহকে (বীরবিক্রম) মংলায়, বদিউল আলমকে (বীরউত্তম) চাঁদপুর এবং নারায়ণগঞ্জ অপারেশনের দায়িত্ব দেওয়া হয় আবেদুর রহমানকে। ছোট ভাই শামসুলসহ আমাকে রাখা হয় চাঁদপুরের গ্রুপে।
৯ অগাস্ট ১৯৭১। চট্টগ্রাম, চাঁদপুর ও নারায়ণগঞ্জ–এই তিনটি গ্রুপকে সামরিক বিমানে আনা হয় আগরতলায়, শালবনের ভেতর নিউ ট্র্যানজিট ক্যাম্পে। ওখান থেকে বাংলাদেশে ঢুকে অপারেশন সেরে ওখানেই ফিরতে হবে। একদিন পরেই দেওয়া হয় আর্মস অ্যামুনেশন–প্রত্যেকের জন্য একটা লিমপেড মাইন, একটা কমান্ডো নাইফ, একজোড়া ফিনস, থ্রি নট থ্রিসহ কিছু অস্ত্র এবং প্রত্যেক গ্রুপের জন্য একটা টু ব্যান্ডের রেডিও।
রেডিও কেন? বলা হলো ওই রেডিওর মাধ্যমেই সিগন্যাল পাঠানো হবে।
কুমিল্লার ময়নামতি হয়ে আমরা চাঁদপুর আসি ১১ অগাস্টে। প্রথমে উঠি নিজ বাড়ি দাশাদিতে, মেঘনা নদীর পাড়ে। কিন্তু যেতে হবে চাঁদপুরের দক্ষিণে, ডাকাতিয়া নদীর কাছাকাছি। ওই দিকটাতেই থাকে অধিকাংশ লঞ্চ ও স্টিমারগুলো।
ভিডিও: চাঁদপুরের নৌ-কমান্ডো অপারেশন:
করিম খাঁ নামে এক মামার বাড়ি ছিল রঘুনাথপুরে। বাবার পরামর্শে পরদিন ইলিশ ধরার তিনটি নৌকায় ওখানে গিয়ে উঠি। অতঃপর রেডিওতে নির্দেশনার অপেক্ষায় থাকি।
বলা ছিল– ‘প্রত্যেকদিন তোমরা আকাশবাণী বেতার কেন্দ্র ধইরা রাখবা। ওটার মাধ্যমে সিগন্যাল পাবা। কেমন সিগন্যাল? আকাশবাণীতে সকাল ৭ বা সাড়ে ৭ বাজবে একটি গান– ‘আমি তোমায় শুনিয়েছিলাম যত গান।’ এ গান হলেই অপারেশনের যাবতীয় প্রস্তুতি নিতে হবে। ২৪ ঘন্টা পর আরেকটা গান বাজবে– ‘আমার পুতুল আজকে যাবে শ্বশুর বাড়ি।’ এই গানটি হলেই বুঝতে হবে চূড়ান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং ওই দিন শেষে রাত বারোটার পর অবশ্যই অ্যাটাক করতে হবে।
১৩ অগাস্ট সকালে বাজলো প্রথম গানটি। আমি, নুরুল্লাহ পাটওয়ারি, বদিউল আলম সঙ্গে সঙ্গে পাটের ব্যাপারী সেজে রেইকি করতে বের হই। ২৪ ঘন্টা পর অর্থাৎ ১৪ অগাস্ট চূড়ান্ত নির্দেশনার গানটি বাজার কথা ছিল। কিন্তু ওইদিন সেটি না বেজে বাজলো ১৫ আগস্ট সকালে। ফলে রাত বারোটার পরই আমরা অ্যাটাকের প্রস্তুতি নিই। লঞ্চ টার্মিনাল ও স্টিমার ঘাটসহ ছয়টা টার্গেট প্লেস ঠিক করে ফেলি।
তিনটা মাইন লাগালে একটা জাহাজ হানড্রেট পারসেন্ট ডুবে যায়। সেটি করতে লাগবে তিনজন নৌ কমান্ডো। তাই তিনজন করে ৬টা গ্রুগে টার্গেট ভাগ করে নিই। বাকী ২জন থাকবে রেসকিউ টিমে। আমার সঙ্গে থাকে খুলনার আফসার আর সাতক্ষীরার গফুর মাস্টার। টার্গেট প্লেস ছিল লন্ডনঘাট জেটি। ওখানে পাকিস্তানি সেনারা আর্মস অ্যামুনেশন আর মালামাল নামতো। তাই জেটিটি ডুবাতে হবে।
রাত সাড়ে এগারটার দিকে ডাকাতিয়া নদী দিয়ে নামি। পায়ে ফিনস, পরনে শুধু জাইংগা। বুকে গামছা দিয়ে মাইন পেচিয়ে চিত সাঁতারে এগোই। কিছুক্ষণ পরপরই দেখে নিই দিকটা। এভাবে লন্ডনঘাটে এসেই জেটিতে মাইন সেট করে দিই। ৪৫ মিনিট পরই বিস্ফোরণ ঘটবে। তাই ওই সময়ের মধ্যেই সরে পড়তে হবে।
পুরো বর্ষা ছিল তখন। মুখার্জী ঘাটে পাহারারত পাকিস্তানি সেনারা। নদী দিয়ে কি যায়? এটা বলেই ওরা পানিতে দুইটা ফায়ার করে। আমরা তখন ডুব দিয়ে দূরে গিয়ে উঠি। এর কিছুক্ষণ পরেই লন্ডনঘাটসহ জাহাজে লাগনো অন্যান্য গ্রুপের মাইনগুলো বিস্ফোরিত হতে থাকে।
ওই সময়ই খুলনা থেকে পাকবাহিনী নিয়ে গাজী ইস্টিমার চাঁদপুর ঢুকছিল। বিস্ফোরণের আগুন দেখেই ওরা ঘাবড়ে যায়। ভয়ে জেটি থেকে দূরেই নোঙর করে। এরপর চারপাশে সার্চ লাইট ফেলে পাগলের মতো এলোপাথারি গুলি করতে থাকে। আমরা তখন কচুড়িপানায় নিজেদের লুকিয়ে রাখি।
বহরিয়া গ্রামের মাঝামাঝিতে মাছ ধরার অনেক নৌকা থাকে। কথা ছিল দুটি নৌকা নিয়ে সেখানেই থাকবে রেসকিউ টিমের দুজন। নৌকা চেনার জন্য কোডওয়ার্ড ঠিক করা ছিল– ‘সখিনার বাপ’। এটা বললে ওরা বলবে– ‘সখিনার বাপ আমি এখানে’। কিন্তু বিস্ফোরণের পর পাকিস্তানি সেনারা দিশেহারা হয়ে গানবোট নিয়ে চারপাশে টহল দিতে থাকে। ওদের ভয়ে রেসকিউ টিমের দুজন নৌকা ছেড়ে গ্রামের ভেতর আত্মগোপন করে। ফলে ফিরে এসে নৌকা না পেয়ে বিপদে পড়ি। ধরা পড়ার চান্স ছিল। কিন্তু মৃত্যু ভয় ছিল না। আমরা তখন যে যার মতো সরে পড়ি। একটা নৌকা নিয়ে আমি চলে যাই নিজ বাড়ি দাশাদিতে।’
পাকিস্তানি সেনারা কি আপনার খোঁজ পেয়ে গিয়েছিল?
‘হ্যাঁ। যেহেতু জ্যাকপট অপারেশনের আগে আমরা প্রথম উঠেছিলাম বাড়িতে। এ খবর রাজাকারদের মাধ্যমে পেয়ে যায় পাকিস্তানি সেনারা। ওরা জানতো বাবা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের। একাত্তরে স্কুল খোলা রাখার সরকারি নির্দেশ অমান্য করে তিনি সফরমালি স্কুল বন্ধ রেখেছিলেন। তাই ওরা নৌ কমান্ডোদের খুঁজতে বাড়ি অ্যাটাক করে।
ভিডিও: মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের জীবন বাঁচাতে শহীদ হন আমার বাবা ইব্রাহীম বিএবিটি
১৭ অগাস্ট ১৯৭১, সকালবেলা। গোপনে চার পাঁচটা নৌকায় বাড়ির চারপাশ ঘেরাও দেয়। অতঃপর ব্রাশ ফায়ার করতে থাকে। সেনাদের সঙ্গে ছিল রাজাকাররা। ওরা আমার সঙ্গে বাবাকেও বেঁধে পিটাতে থাকে। বুটের লাথিতে যন্ত্রণায় তিনি বাঁকা হয়ে যান। তা দেখে ছটফট করি। বাবাকে ওরা জিজ্ঞেস করে– ‘নৌ কমান্ডোরা কোথায়?’
মার খেয়েও তিনি মুখ খোলেন না। বলেন–‘এখানে কেউ আসে নাই।’
বাড়ি সার্চ করে ওরা কোনো অস্ত্র পায় না। ফলে আমাদের বেঁধে নৌকায় তুলে পিটাতে থাকে।
৪-৫শ গজ দূরে ছিল কামেলি লজ সাহেবের বাড়ি। ওই বাড়ি লুট করতে নামে ওরা। আমার হাত ও পা বাঁধা। নৌকায় বাবাকে পাশেই ফেলে রাখছে। ব্যাথায় উনি গোঙ্গাচ্ছেন। জুটমিলের লেবার সর্দার ছিল বাচ্চু রাজাকার। সেও নৌকায়। বুড়ো মানুষ দেখে আরেক রাজাকারের দয়া হয়। সে বাবার হাত ও পায়ের বাঁধন খুলে দেয়। পাকিস্তানিদের বুটের আঘাতে তারা সারা শরীর ফুলে গিয়েছিল। আমি তখন আল্লাহকে ডাকছি আর সুযোগ খুঁজছি।
কামেলি লজের বাড়িতে কেউ নেই। বাড়ির পাশের পাটখেতে লুকিয়ে ছিল তার মেয়ে ঝর্ণা। সঙ্গে সোনা ও টাকার আট নয়টা ট্রাংক। কীভাবে যেন ওরা টের পেয়ে যায়। পাটখেত থেকে ধরে এনে তারা তাকে নৌকায় তোলে। তখন পাকসেনাদের কুদৃষ্টি পড়ে মেয়েটির দিকে। রাজাকাররাও ব্যস্ত থাকে ট্রাংকের টাকা ও সোনা-রুপা আনলোড করায়।
এ সুযোগে বাবা কানে কানে বলে– ‘তুই এখান থেকে পালা।’ কৌশলে আমার হাত ও পায়ের বাঁধনও খুলে দেন। অস্ত্র হাতে নৌকার দুই পাশে দুজন দাঁড়ানো। এক সাইডে একটারে পা ধরে পানিতে ফেলে দিই। এরপরই আমি ঝাপ দিই। আমার দিকে ওরা ব্রাশ ফায়ার করে। কিন্তু তার আগেই ডুব দিয়ে অনেক দূরে সরে যাই।
বাবার জন্য খুব চিন্তা হচ্ছিল। কী করব ভাবছি। এমন সময় কানে আসে কয়েকটি গুলির শব্দ। বুকের ভেতরটা তখন খামচে ধরে। বেদনায় চোখ ভিজে যায়। চিৎকার করে কাঁদতেও পারি না। ছেলেকে বাঁচানোর অপরাধে শহীদ হয়েছেন আমার বাবা। পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারেরা তাকে গুলি করে মারে। বাবার দেওয়া জীবন নিয়েই বেঁচে আছি ভাই। একাত্তরে এমন হাজারো পিতা শহীদ হয়েছেন। স্বাধীনতার এত বছর পর আমরা কি মনে রেখেছি তাদের? রাষ্ট্র কি একাত্তরের শহীদদের তালিকা করেছে? তুলে ধরেছে কি শহীদদের আত্মত্যাগের ইতিহাসগুলো?’
প্রশ্নগুলো তুলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এই বীর যোদ্ধা। আমরা তখন নিরব হয়ে যাই। নিজেকে সামলে নিয়ে তিনি আবার আলাপে ফেরেন।
অনেকেই তো মুক্তিযুদ্ধে যায়নি, আপনি কেন গেলেন?
মুচকি হেসে এই বীরপ্রতীক বলেন–‘ দেখুন, বৈষম্যগুলো আমরা বাস্তবে দেখেছি। আমাদের ওরা মাদারচোদ বলে গালি দিতো। সহ্য হতো না তখন। ব্যবসা-বাণিজ্য সব ছিল ওদের হাতে। বঙ্গবন্ধু সাত মার্চ যে ভাষণ দিয়েছিলেন সেটাতেই উদ্দীপ্ত হই। ভাষণ শুনেছেন এমন অনেকেই আবার মুক্তিযুদ্ধে যায় নাই। দেশের জন্য ঝুঁকি নেওয়ার সাহস সমাজের সব শ্রেণির থাকে না। দুঃখজনক হলেও সত্য সমাজের মধ্যম ও নিম্নবিত্ত লোকেরাই মুক্তিযুদ্ধে গেছে বেশি। অথচ দেখেন, স্বাধীন দেশে অধিক সুবিধা ভোগ করছে ওই উচ্চবিত্তরাই।’
যে দেশের স্বপ্ন দেখে যুদ্ধে গেলেন, স্বপ্নের সেই দেশ কি পেয়েছেন?
‘সেই দেশ পুরোপুরি পাই নাই। তবে আমি আশাবাদী। বঙ্গবন্ধু যদি বেঁচে থাকতেন তবে আমরা উন্নত দেশের সারিতেই থাকতাম। তার দক্ষ নেতৃত্ব ছিল বলেই উনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটাকে পূনর্গঠন করতে পেরেছিলেন। মৌলিক কাজের শুরুটা তার আমলেই হয়েছে। এখন তার কন্যা সেটা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।’
স্বাধীনতা লাভের পরবর্তী সরকার নিয়ে এই বীর অকপটে তুলেন ধরেন নিজের মতটি, ঠিক এভাবে–‘বঙ্গবন্ধু তার চিন্তার জায়গায় ঠিক ছিলেন। মানুষকে বিশ্বাস করা যদি অপরাধ হয় তবে সেটা তিনি বেশি করেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের ছোট ছোট অপরাধের ক্ষমা করা, ১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কাজ করেছিল যে আমলারা, ১৬ ডিসেম্বর তারিখ ভোল পাল্টে তারাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকে। এদেরকে প্রশাসন থেকে টোটালি বের করে দেওয়া উচিত ছিল। আবার পশ্চিম পাকিস্তান থেকে রিপেট্রিয়ট হয়ে যে বাঙালি সেনারা আসে, তাদের চাকুরিতে রাখাও ঠিক ছিল না। ওরাই ষড়যন্ত্র করেছে বেশি। এছাড়া স্বাধীনতাবিরোধীরা জাসদের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যার ক্ষেত্র তৈরি করে নিয়েছিল। এখানেও যুক্ত ছিল তার কাছের মানুষরাই। যারা বঙ্গবন্ধুর উদারতা ও বিশ্বাসকে পুঁজি করেছিল। অথচ দেখেন এদেশের স্বাধীনতা ও মানুষের মুক্তির জন্য তেরো বছর জেলে ছিলেন বঙ্গবন্ধু। স্বার্থের কারণে তিনি কোনোদিন আপস করেননি। বঙ্গবন্ধু আপস করলে বাংলাদেশ হতো না।’
এই যোদ্ধা আরও বলেন–‘জিয়াউর রহমান মন্ত্রী বানিয়ে স্বাধীন দেশের পতাকা তুলে দিয়েছিলেন স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে। আমাদের বুকে তখন রক্তক্ষরণ হতো। এটা কল্পনাও করি নাই। একাত্তরে এরশাদ পাকিস্তান সামরিক আদালতের চেয়ারম্যান ছিলেন। ওই সময় পাকিস্তান থেকে যেসব বাঙালি সেনা স্বাধীনতার জন্য দেশে যেতে চেয়েছিলেন তাদের বিচার করছিলেন তিনি। জিয়া ও এরশাদের হাত ধরেই এদেশে পুনর্বাসিত হয় রাজাকারেরা। ফলে দেশটা উল্টো পথে চলে। বঙ্গবন্ধুর নাম ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তারা মুছে ফেলতে চেয়েছিল। ইতিহাসকে কলঙ্কিত করার এ দায় তারা এড়াতে পারবে না।
দেশ কেমন চলেছে?
এই সূর্যসন্তানের উত্তর–‘বঙ্গবন্ধুর মতো তার কন্যাও মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি সততার সঙ্গেই সেটা করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু ক্যাসিনো আর পাপিয়াদের মতো ঘটনা আমাদের কষ্ট দেয়। বীরপ্রতীক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছি। একবার মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রীকে বলেছিলাম– মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়াচক্র কেন লাগবে? এটার তো দরকার নাই। মুক্তিযোদ্ধারা জিততে পারে কিন্তু হারতে পারে না। টিম যখন হেরে যাবে তখন সবাই বলবে মুক্তিযোদ্ধারা হারছে। আমরা কি হারইন্না জাতি? অসৎ রাজনীতিবিদদের কোনো দল থাকে না। রাজনীতিটাকে তারা একটা ব্যবসার রাজনীতি বানিয়ে ফেলেছে। স্বার্থের জন্য তারা দলের চেতনা বিক্রি করে খায়। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সরকারের প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এটা অব্যাহত রাখতে হবে।’
নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করা গেলে দেশটা অনেক এগোবে– এমনটাই মনে করেন নৌ কমান্ডো মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহজাহান কবির (বীরপ্রতীক)। বুকভরা আশা নিয়ে প্রজন্মের উদ্দেশে তিনি শুধু বললেন–‘আমাদের দেশপ্রেম ছিল। তাই একাত্তরে সুইসাইড স্কোয়াডে গিয়েছিলাম। আমরা একটা দেশ আর পতাকা এনে দিয়েছি। সেই পতাকা তোমরা রক্ষা করো। কি পেলাম, কি পেলাম না–এটা নিয়ে ব্যস্ত থেকো না। নিজের কাজটা সততার সঙ্গে করো। তবেই দেখবে একদিন দেশটা সোনার বাংলা হবেই।’
সংক্ষিপ্ত তথ্য
নাম: নৌ কমান্ডো মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহজাহান কবির (বীরপ্রতীক)।
ট্রেনিং: ভারতের মুর্শিদাবাদের পলাশীতে ভাগিরথী নদীর তীরে আড়াই মাসের নৌ কমান্ডো ট্রেনিং নেন।
মুক্তিযুদ্ধ করেছেন: দশ নম্বর সেক্টরের অধীন অপারেশন জ্যাকপটসহ চাঁদপুরে বিভিন্ন নৌ অপারেশনে অংশ নেন।
ছবি ও ভিডিও: সালেক খোকন
লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে, প্রকাশকাল: ১ মার্চ ২০২০
© 2020, https:.