৩ নভেম্বর কেন ব্যর্থ হল? বৈমানিক ইকবাল রশীদের বয়ানে পঁচাত্তরের সেই অভ্যুত্থান
সামরিক বাহিনীতে সেদিন আসলে কী ঘটেছিল? সেই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা ইকবাল রশীদ আলো ফেলেছেন সাতচল্লিশ বছর আগের সেই ইতিহাসে।
ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট ইকবাল রশীদ মুক্তিযুদ্ধের ছয় নম্বর সেক্টরে চিলাহাটি সাবসেক্টরের কমান্ডার ছিলেন।
যার নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে, সেই বঙ্গবন্ধুকেই যখন ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট সপরিবারে হত্যা করা হল, ঢাকা তখন এক অস্থির নগরী।
খন্দকার মোশতাক আহমেদ প্রেসিডেন্ট পদে থাকলেও দেশ চলছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত একদল সেনা কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণে।
সেনাবাহিনীর ভেতরে তখন বিশৃঙ্খলা, পাল্টাপাল্টি কয়েকটি স্রোত বইছে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে অভ্যুত্থান আর পাল্টা অভ্যুত্থান বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয় সামরিক শাসনের অন্ধকার এক সময়ের দিকে।
আওয়ামী লীগ নেতাদের একটি অংশ তখন খন্দকার মোশতাক আহমেদের মন্ত্রিসভায়; বাকিরা কারাগারে কিংবা প্রাণভয়ে আত্মগোপনে। সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে যারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেওয়ার কথা ভাবছিলেন, তাদেরই একটি অংশ ৩ নভেম্বর ভোরে ঘটনাপ্রবাহের গতিপথ পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা করেন অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে।
ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে ওই অভ্যুত্থানে বন্দি হন সেই সময়ের সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর খুনিরা নিরাপদে দেশের বাইরে চলে যায়। তিন দিনের মাথায় পাল্টা অভ্যুত্থানে নিহত হন খালেদ মোশাররফ। সেই ঘটনাপ্রবাহ জিয়াকে নিয়ে যায় ক্ষমতার কেন্দ্রে।
৩ নভেম্বরের অভ্যুত্থানে বিমান বাহিনীর অফিসারদের একটি অংশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এয়ারফোর্স থেকে সেদিন হেলিকপ্টার সার্পোট গ্রুপের দায়িত্বে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট ইকবাল রশীদ।
পাকিস্তান এয়ারফোর্সের এই পাইলট অফিসার একাত্তরে পশ্চিম থেকে পালিয়ে এসে যোগ দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। ছয় নম্বর সেক্টরের চিলাহাটি সাবসেক্টরের কমান্ডার ছিলেন তিনি।
৩ নভেম্বরের অভ্যুত্থানের অন্যতম এই অফিসারকে ৭ নভেম্বরের পর কোর্ট মার্শালের মুখোমুখি হতে হয়, ‘ক্যাঙ্গারু কোর্টে’ তাকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন। পরে কারাগার থেকে মুক্তি মিললেও চাকরি ফেরত পাননি।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ইকবাল রশীদ চলতি বছর দেশে এলে দুই দফায় তার মুখোমুখি হন লেখক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক সালেক খোকন।
ঠিক ৪৭ বছর আগে সেই ৩ নভেম্বর সামরিকবাহিনীতে আসলে কী ঘটেছিল? কেন সেই অভ্যুত্থান ব্যর্থ হল? বঙ্গবন্ধুর খুনিরা কীভাবে দেশ ছাড়তে পারল? তখনকার বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা ইকবাল রশীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় উঠে আসে এরকম নানা প্রসঙ্গ, যা অন্ধকার সেই সময়ের ইতিহাসে নতুন আলো ফেলতে পারে।
ইকবাল রশীদ মনে করেন, সেই অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছিল খালেদ মোশাররফের কারণে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সেদিন ধ্বংস না করে তিনি সমঝোতার পথে যান, তার মাশুল তাকে দিতে হয় নিজের এবং আরও অনেক মুক্তিযোদ্ধা অফিসারের প্রাণের বিনিময়ে। দেশ চলে যায় জিয়ার কব্জায়।
প্রায় অর্ধশতক পেরিয়ে আজও ইকবাল রশীদের কণ্ঠে ঝরে আক্ষেপ: “আমাদের চোখের সামনে, মুখে জুতা মেরে খুনিরা চলে গেল বিদেশে। এর দায় কাকে দেবেন বলেন?”
সালেক খোকন: স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে আপনি কোন পদে যুক্ত হন?
ইকবাল রশীদ: প্রথমে এপিএম (অ্যাসিস্টেন্ট প্রভোস্ট মার্শাল) হিসেবে যোগ দিই। এটা ছিল এয়ারফোর্স সিকিউরিটি, এয়ারফোর্স পুলিশও বলতে পারেন। আমার বস ছিলেন হামিদুল্লাহ সাহেব [এম হামিদুল্লাহ খান বীরপ্রতীক, একাত্তরের সাবসেক্টর কমান্ডার, যুদ্ধের শেষ দিকে ১১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডারের দায়িত্ব পান। জিয়াউর রহমান প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক থাকাকালে ১৯৭৭ সালে হামিদুল্লাহ উপ সামরিক আইন প্ৰশাসক হন। ১৯৭৯ সালে বিমানবাহিনী থেকে অবসর নিয়ে যোগ দেন বিএনপিতে। তিনবার বিএনপির টিকেটে সংসদেও যান।]
ইংল্যান্ডের রানি সে সময় বঙ্গবন্ধুর সরকারকে দুটো হেলিকপ্টার উপহার দেন। ওই দুটোর ওপর প্রশিক্ষণ নিতে ১৯৭৩ সালে আমি, এবিএম বাশার, উইং কমান্ডার মঞ্জুর, এয়ার কমোডর শমসের আলী চলে যাই ইংল্যান্ডে। ফিরে এসে এপিএম পদে আর থাকিনি, ফ্লাইং করা শুরু করি। মূলত ছিলাম হেলিকপ্টার পাইলট। আর্মি ও ভিআইপি সাপোর্টের জন্য ফ্লাই করতে হত।
সালেক খোকন: একটি নতুন দেশের বিমানবাহিনী কেমন ছিল?
ইকবাল রশীদ: শুরুতে এয়ারফোর্সে আমাদের কিছু দুঃখ ছিল। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাদের সাথে সারেন্ডার করেছে, কিন্তু পরে এসে সিনিয়র হয়ে বসেছে– এমন বাঙালি অফিসার ছিল বাহিনীতে। যেমন, একাত্তরে বাঙালি অফিসারদের মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়র ছিলেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন এমজি তাওয়াব (মুহাম্মদ গোলাম তাওয়াব)। উনি পাকিস্তানের কোয়েটা বেইজে কমান্ডার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি। একাত্তরের অগাস্টে পাকিস্তান এয়ারফোর্স থেকে সকল সুবিধাসহ রিজাইন দিয়ে চলে যান জার্মানিতে। স্বাধীনতার পর দেশে ফিরলে বঙ্গবন্ধু তাকে বিমানের এমডি বানান। পরে আবারও জার্মানি চলে যান। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খন্দকার মোশতাক ফিরিয়ে আনেন তাওয়াব সাহেবকে, গ্রুপ ক্যাপ্টেন থেকে পদোন্নতি দিয়ে এয়ার ভাইস মার্শাল করেন। পরে তাকে এয়ার চিফও বানান মোশতাক। [বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায় বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন মোশতাক। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট তখনকার রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন। রাষ্ট্রক্ষমতায় টিকেছিলেন মাত্র ৮৩ দিন।]
সেরকম গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাহের কুদ্দুস একাত্তরের পুরো নয় মাস দিল্লিতে পাকিস্তান দূতাবাসে কাজ করেছেন আমাদেরই বিরুদ্ধে। পাকিস্তান সরকার তার কর্মের জন্য অ্যাওয়ার্ডও দিয়েছে। অথচ স্বাধীনতার পর তাকেই ডাইরেক্টর এয়ার ইন্টেলিজেন্স বানানো হয়।
সালেক খোকন: এমন সমস্যাগুলো আপনারাও মেনে নিয়েছিলেন?
ইকবাল রশীদ: হ্যাঁ। বিমান বাহিনীতে কোনো কলাবরেটর অফিসারকে ডিসমিস করা হয়নি। কারণ তখন লোক ছিল না। ফলে নতুন যারা ফ্লাইং শেখাচ্ছে, তাদের ভেতর অনেকেই একাত্তরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। তাদেরও চাকরিতে রাখা হয়। এছাড়া পশ্চিম পাকিস্তানে থাকা অবস্থায় যারা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করত, যারা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী এবং ওপেনলি পাকিস্তানকে সার্পোট করেছে, স্বাধীনতার পর তারাও ফিরে এসে বড় অফিসার হয়েছে। এগুলো নিয়ে আমাদের মনে ক্ষোভ ও কষ্ট ছিল। তবুও ভাবতাম, এক সময় সব ঠিক হয়ে যাবে।
সালেক খোকন: ১৫ অগাস্ট ১৯৭৫। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আপনারা তো ডিফেন্সের ভেতরেই ছিলেন। আগে থেকে কি কিছু অনুমান করতে পেরেছিলেন?
ইকবাল রশীদ: একেবারেই না। বঙ্গবন্ধুকে টাচ করবে কে? এটা আমরা স্বপ্নেও ভাবিনি। তবে আমরা আলোচনা করতাম যে তার সিকিউরিটি প্রোপার ছিল না।
১৫ অগাস্ট ১৯৭৫: বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে গিয়ে যা দেখলেন ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট ইকবাল রশীদ।
সালেক খোকন: কীভাবে এমন নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটানো সম্ভব হয়েছিল বলে মনে করেন?
ইকবাল রশীদ: দেখুন, একটা আর্মি ফর্ম করতে একটু ম্যাচিউরিটি লাগে। আমাদের সেটা ছিল না। তখন সিনিয়র মোস্ট অফিসার অধিকাংশই ছিলেন মেজর। নিজেদের ভেতর কোন্দল আর অন্তর্দ্বন্দ্ব ছিল প্রবল। রিপ্যাট্রিয়েটেড হয়ে পাকিস্তানফেরত অফিসাররা আসার পর এটা আরও বেড়ে যায়। এছাড়া প্রত্যাবর্তনকারী অফিসারদের মধ্যে পাকিস্তান সরকার কিছু কিছু অফিসারকে রিক্রুটও করে থাকতে পারে। এটা নেচারাল। এসব কারণেই দেখেন ১৫ অগাস্টে আর্মি চুপ ছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যাটা যারা করেছে, তারা এত পরিকল্পিতভাবে করেছে যে, এটা ইসরায়েল বা সিআইএর হেল্প ছাড়া করতে পারার কথা নয়। পৃথিবীতে এমন রুথলেস কিলিং খুব কমই হয়েছে। তাই আমি বলব বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে আরও গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। এই হত্যা ছিল দেশের জন্য কলঙ্ক ও অপমানজনক অধ্যায়।
সালেক খোকন: ওইদিন আপনি কোথায় ছিলেন?
ইকবাল রশীদ: কোয়ার্টারে ছিলাম, ২১ নম্বর ক্যান্টনমেন্ট। পোস্টঅফিসের উল্টো দিকের বাড়ি। ১৫ অগাস্ট সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আমাদের সবাইকে তেজগাঁওয়ে এয়ারফোর্সের অফিসার্স মেসে যেতে বলা হয়। সবাই গেলাম। তখনও জানি না কী ঘটেছে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে। এয়ার চিফ তখন এ কে খন্দকার; তিনিও নিশ্চিত নন কী ঘটেছে। [মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রথম প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের আমলে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। পরে এইচ এম এরশাদের সামরিক শাসনামলে পরিকল্পনামন্ত্রী হন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের টিকিটে পাবনা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর পাঁচ বছর পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন]
এয়ার চিফ আমাকে বললেন, “ইকবাল, তুমি গিয়ে দেখে এসো ৩২ নম্বরে সত্যি সত্যি কী ঘটেছে।”
আমি, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ফরিদুজ্জামান আর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট কাইয়ুম একটা গাড়িতে করে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে যাই।
সালেক খোকন: আপনাদের ঢুকতে দিল?
ইকবাল রশীদ: প্রথম আটকালো। এক অফিসার বলল, “স্যার আপনারা যেতে পারবেন না। উই হ্যাভ ফিনিশড দ্য জব।”
বললাম, “হোয়াট জব! আই ওয়ান্ট টু গো ইনসাইড।”
সে বলে, “নো নো, ইউ কান্ট গো।”
ভেতরে দেখলাম ক্যাপ্টেন শাহরিয়ারকে (সুলতান শাহরিয়ার রশিদ)। সে একাত্তরে আমাদের সেক্টরেই যুদ্ধ করেছিল। সে কারণে পূর্ব পরিচিত। দূর থেকে তাকে হাত দিয়ে ইশারা করতেই বললো, “আসতে দাও।”
সালেক খোকন: কী দেখলেন বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে?
ইকবাল রশীদ: বাড়িতে ঢুকে সিঁড়িতেই দেখলাম বঙ্গবন্ধু পড়ে আছেন। গোটা সিঁড়ি রক্তে ভেজা। আমার বুকের ভেতরটা তখন খামচে ধরে। অবাক হই তখন। ওরা সত্যিই বঙ্গবন্ধুকে মেরে ফেললো! উপর তলায় বেগম মুজিবের রুমটা গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে ছিল। লাশও পড়ে ছিল কয়েকটা। এত সাধারণ একজন প্রাইম মিনিস্টারের (বঙ্গবন্ধু তখন রাষ্ট্রপতি) রুম! ফার্নিচার এত সিম্পল, ভাবাই যায় না।
তখনই তারা (খুনিরা) সব ফটোগ্রাফ করে ফেলছে। এক দেড় ঘণ্টার ভেতর ছবি তুলে প্রিন্ট করে রেখে দিয়েছে। শাহরিয়ারকে বললাম, এগুলো কী করবা? বলে, “রেকর্ড রাখব।”
আমরা বেশিক্ষণ থাকলাম না। তাড়াতাড়ি মেসে ফিরে খন্দকার সাহেবকে (এ কে খন্দকার) বললাম, স্যার সব শেষ।
সালেক খোকন: আপনাদের পক্ষে কি কোনো প্রতিবাদ করা তখন সম্ভব ছিল?
ইকবাল রশীদ: একেবারেই না। কিছু করার মত পরিস্থিতিও ছিল না। ওরা মিগ আর হেলিকপ্টারের দিকে ট্যাংক ফিট করে গোলাবারুদ আটকে রেখেছিল।
সালেক খোকন: এরপরই কি এয়ারফোর্স মোশতাক সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে?
ইকবাল রশীদ: হ্যাঁ। আমরা ফিরে এলে এয়ার চিফ বঙ্গভবনে যান এবং মোশতাককে সম্মতি জানান। ইতিহাস ঘাটলে দেখবেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বিডিআর ও এয়ারফোর্স সবার শেষে মোশতাক সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছিল।
সালেক খোকন: এরপর কী ঘটল?
ইকবাল রশীদ: জাতির পিতার হত্যা এবং খন্দকার মোশতাক সরকারকে মেনে নেওয়া কঠিন ছিল আমাদের পক্ষে। যার ডাকে মুক্তিযুদ্ধ করলাম, তাকেই স্বাধীন দেশে হত্যা করা হল। মনে মনে প্রতিশোধের কথাও ভাবতে থাকি। কিন্তু এরপরই অবাক হয়ে দেখি বেঈমান নেতাদের কীর্তি। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতাই মোশতাককে স্বীকৃতি দেয়।
সবকিছু দেখেও নরমাল থাকি। কিন্তু মনটা খুবই খারাপ থাকত। এদিকে অনেক পাকিস্তানফেরত অফিসার খুব খুশি হয়। মস্কোতে এয়ারফোর্সের একটা গ্রুপ ছিল ট্রেইনিংয়ে। শুনেছি বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তারা সেলিব্রেটও করেছিল।
৩ নভেম্বর ১৯৭৫: সামরিকবাহিনীতে কী ঘটেছিল? কীভাবে এবং কারা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিদেশে পাঠিয়েছিল?
সালেক খোকন: সমমনাদের নিয়ে প্রতিশোধের কোনো পরিকল্পনা করেছিলেন?
ইকবাল রশীদ: সে পরিস্থিতি প্রথম দিকে ছিল না। আমি নিজের মত করে থাকি। নীলফামারীতে আওয়ামী লীগ নেতা বন্ধু সোলেমান, ইয়াকুব প্রমুখের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতাম। টাকা-পয়সা দেওয়াসহ নানাভাবে তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। ওই সময়টায় আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর অত্যাচারের খড়্গ নেমে এসেছিল। এছাড়া এয়ারফোর্সে নিজেদের ভেতর গোপনে নানা আলোচনা করতাম। আর ভেতরে ভেতরে প্রতিশোধের প্ল্যাটফর্ম খুঁজতে থাকতাম। সেই প্রতিশোধের প্রস্তাব আসে পঁচাত্তরের সেপ্টেম্বর মাসে।
সালেক খোকন: কীভাবে?
ইকবাল রশীদ: স্কোয়াড্রন লিডার লিয়াকত আলী খান ছিলেন এয়ারফোর্সের মিগ টোয়েন্টি ওয়ানে, আমার সিনিয়র। বীর মুক্তিযোদ্ধা, বীরউত্তম খেতাবও পেয়েছেন [১৯৭৫ সালে অভ্যুত্থান, পাল্টা অভ্যুত্থানের মধ্যে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়। কিছুদিন বিদেশে কাটিয়ে পরে দেশে ফিরে বৈমানিক হিসেবে চাকরি করেন বাংলাদেশ বিমানে।] তিনি একদিন অফিসে এসে বললেন, “উই হ্যাভ টু ডু সামথিং।” আমি বলি, “ডু হোয়াট?” তিনি উত্তরে বলেন, “এরা দেশটাকে পুরা ইসলামিক স্টেটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সব জায়গা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের আস্তে আস্তে সরিয়ে দিচ্ছে। এটা তো চলতে পারে না।“
প্রস্তাব রেখে তিনি বললেন, “তুমি কি হেলিকপ্টার সার্পোট দিতে পারবে?” সবকিছু বুঝে গেলাম। বুকের ভেতর তখন বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধের আগুন। আমি শুধু ৪৮ ঘণ্টা সময় চেয়ে নিলাম। জানতে চাইলাম, এটার লিড করবে কে? অবাক হবেন শুনে। তিনি বললেন, “জিয়াউর রহমান।” এটুকুই কথা হল।
[বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর নানা ঘটনা আর চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে ক্ষমতার কেন্দ্রে আসেন জিয়া। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, জাতির পিতাকে হত্যার পেছনে জিয়ার হাত ছিল]
সালেক খোকন: সিদ্ধান্ত জানালেন কবে?
ইকবাল রশীদ: এরপর আমি গেলাম বাশার সাহেবের কাছে [এয়ার ভাইস মার্শাল মোহাম্মদ খাদেমুল বাশার বীরউত্তম। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ৬ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক ছিলেন, ১৯৭৬ সালে বিমানবাহিনী প্রধানের দায়িত্ব পান। বিমানবাহিনীর ঢাকা ঘাঁটির নামকরণ ‘ঘাঁটি বাশার’ তার নামেই]। একাত্তরে তার সেক্টরে আমি সাবসেক্টর কমান্ডার ছিলাম। তিনি তখন বাংলাদেশ এয়ারফোর্সের ডেপুটি চিফ। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন বলেই আমরা খুব ঘনিষ্ঠ ছিলাম।
তাকে বললাম, “স্যার কিছু তো করা উচিত।” তিনি বললেন, “কী করবে।” বললাম, “আপনি হুকুম দিলে, আমরা তো রেডি।”
তিনি বললেন, “নেতৃত্ব দেবে কে?”
বলি, জিয়াউর রহমান। জিয়া তার আত্মীয় ছিলেন।
শুনে তিনি শুধু বললেন, “ঠিক আছে। আই অ্যাম উইথ ইউ। গো অ্যাহেড।”
তার সিগন্যাল পেয়ে আমিও লিয়াকতের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলাম।
সালেক খোকন: অভ্যুত্থানের জন্য আপনাদের প্রস্তুতিটা কী ছিল?
ইকবাল রশীদ: তখন প্রত্যেক প্রফেশনে একজন করে লোক সিলেকশন করতে থাকি। লোকটা মুক্তিযুদ্ধের বা আমাদের পক্ষে কাজ করবে কিনা– এটা নিবিড়ভাবে আগেই যাচাই করি। শেষে হেলিকপ্টারের জন্য চারজন পাইলট ঠিক করে নিই। এরা হলেন– এয়ার কমোডর দিদার, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট কাইয়ুম, পাইলট অফিসার রশিদ আর পাইলট অফিসার লিয়াকত।
সালেক খোকন: এয়ারফোর্সে আপনাদের পুরো টিমের নেতৃত্বে কে ছিলেন?
ইকবাল রশীদ: হেলিকপ্টার গ্রুপটির নেতৃত্ব ছিল আমার ওপর। এছাড়া ফাইটারের পুরো দায়িত্বে ছিলেন স্কোয়াড্রন লিডার লিয়াকত আলী খান। তিনি ওই পরিকল্পনায় আমাদের এয়ারের গ্রুপটির কমান্ডারও ছিলেন।
সালেক খোকন: আপনাদের মূল পরিকল্পনা কী ছিল?
ইকবাল রশীদ: আর্মি তো ট্যাংককে ভয় পায়। একমাত্র মিগ টোয়েন্টি ওয়ান আর হেলিকপ্টার ট্যাংককে মারতে পারে। আকাশ থেকে আমরা প্রেসিডেন্ট ভবনের (বঙ্গভবন) আশপাশে থাকা ট্যাংকগুলোকে ধ্বংস করব। তখন আর্মিরা গিয়ে প্রেসিডেন্ট হাউজ টেকওভার করবে। খন্দকার মোশতাক ও বঙ্গবন্ধুর খুনিরা শেষ হয়ে যাবে। আমি মনে করেছি তখন চেইন অব কমান্ড রিস্টোর হবে। আর বঙ্গবন্ধু সরকার ক্ষমতা ফিরে পাবে এবং যোগ্য নেতৃত্বের হাতেই দেশ থাকবে।
সালেক খোকন: তারিখ কি তখনই ঠিক হয়?
ইকবাল রশীদ: না। আমাদের সকল প্ল্যান ঠিক। কিন্তু এরপর আর সাড়া নেই। আজ হবে, কাল হবে– এমন কথা হচ্ছে। এর মধ্যে সব মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের আর্মি হেডকোয়ার্টার থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা চলে। আমরা তখনও অপেক্ষায় থাকি।
সালেক খোকন: আপনি বললেন, পরিকল্পনায় আর্মি থেকে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা। তাহলে খালেদ মোশাররফ কীভাবে যুক্ত হলেন?
ইকবাল রশীদ: একবার আর্মি হেডকোয়ার্টারের নির্দেশে টাঙ্গাইলে হেলিকপ্টার নিয়ে যাই কাদের সিদ্দিকীকে ধরতে [কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম তখন বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ও অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধের ডাক দিয়েছেন]। অক্টোবরের প্রথম দিকের ঘটনা সেটা। আনআর্মড হেলিকপ্টারে মেজর মোশায়েদসহ আর্মি অর্ডিন্যান্সের লোকেরা ছিলেন। ননপ্রফেশনাল ওয়েতে মুভ করি। ফলে কাদের সিদ্দিকীর লোকেরা জঙ্গলে লুকিয়ে থেকে খুব কাছ থেকে গুলি চালায়। এতে ক্যাপ্টেন খালেদসহ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়।
ওই ঘটনার তিন-চারদিন পর ওই জায়গায় হেলিকপ্টার নিয়ে রেকি করতে যাই। সঙ্গে যান ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ [খালেদ মোশাররফ বীর উত্তম মুক্তিযুদ্ধে ২ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন। পরে তিনি নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর কে ফোর্সের অধিনায়ক হন। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর সংঘটিত সামরিক অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেন। তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দি করেন এবং নিজেকে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত করে সেনাপ্রধান হন। তিন দিন পর ৭ নভেম্বর আরেকটি পাল্টা অভ্যুত্থানে তিনি নিহত হন।]
হঠাৎ তিনি (খালেদ মোশাররফ) একটি জায়গার নাম বলে ওই জায়গায় নিয়ে যেতে বলেন। তখন খুব অবাক হলাম। কারণ ওই জায়গাটার কথা তার জানার কথা নয়। ওটা ছিল বর্ডারের খুব কাছাকাছি এলাকা। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ফারুক (সৈয়দ ফারুক রহমান) ও রশীদের (খন্দকার আব্দুর রশীদ) গ্রুপ যদি আমাদের চেজ করে, তখন ওখানে গিয়ে আমরা একত্রিত হব– এটা ছিল লিয়াকতসহ আমাদের প্ল্যানের সিদ্ধান্ত।
সালেক খোকন: কিন্তু এটা কীভাবে খালেদ মোশাররফ জানলেন?
ইকবাল রশীদ: ফিরে এসে লিয়াকতকে বললাম, “খালেদ মোশাররফ কোথা থেকে এল?” উনি যদিও খুব ভালো একজন কমান্ডার ছিলেন, কিন্তু উনার কিছু কিছু কাজ অনেকেই লাইক করতেন না। ফলে আমরা তার সঙ্গে কমফোর্টেবল ছিলাম না। কিন্তু লিয়াকত বললেন, “কাউকে তো পাচ্ছি না। জিয়া পিছিয়ে গেছে। কোনো সিনিয়র না বললে ৪৬ ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেড কমান্ডার কর্নেল শাফায়েত জামিলও [শাফায়াত জামিল ৩ নভেম্বরের অভ্যুত্থানে সম্পৃক্ত ছিলেন। ৭ নভেম্বর আরেকটি পাল্টা অভ্যুত্থানে তিনি বন্দি হন।] মুভ করবেন না। তখন ব্রিগেডিয়ার খালেদকে বলার সঙ্গে সঙ্গে সে বললো, ‘আই উইল ডু ইট’।”
সালেক খোকন: পরিকল্পনা কি তখনও গোপন ছিল?
ইকবাল রশীদ: একেবারেই না। জানাজানি হয়ে যায় যে একটা মুভ হচ্ছে ক্যান্টনমেন্টে। বঙ্গবন্ধুর খুনি মেজর ডালিম (শরিফুল হক ডালিম) একবার আমাকে, লিয়াকত, মেজর হাফিজ এবং মেজর ইকবালকে এক রুমে ধরেছে। নিজেদের ভেতর কথা বলে আমরা প্ল্যান করছিলাম তখন। ডালিম আসতেই সাবজেক্টটা চেইঞ্জ করে ফেলি। কী আলোচনা হচ্ছে জানতে চাইলে বলি, “কিছুই না, আমরা ইকবালের বাসায় খেতে আসছি।” কিন্তু এরপর থেকে ডালিম আমাদের সন্দেহের চোখেই দেখত।
সালেক খোকন: পরে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফকে আপনারা মেনে নিয়েছিলেন?
ইকবাল রশীদ: দেরি দেখে তাকে মেনে নিই আমরা।
সালেক খোকন: পুরো টিমের একসঙ্গে বসা হয়েছিল?
ইকবাল রশীদ: না। নিজেদের মধ্যে সিটিং রেগুলার হত। তবে টোটাল টিমের সিটিং কখনও হয়নি। হেলিকপ্টারে যারা আছে, তারা এক টিম; তারা জানে না ফাইটারে কোন টিম। ফাইটারও জানে না কমিউনিকেশন টিমকে। কমিউনিকেশনও জানে না গ্রাউন্ডে কারা। অল আর আইসোলেটেড। এটা ছিল একটা সুন্দর পরিকল্পনা।
সালেক খোকন: এরপর কী ঘটল?
ইকবাল রশীদ: ২ নভেম্বর ১৯৭৫। রাত তখন ১০টা বা ১১টা। বাসায় এসে লিয়াকত বলে যায়, “তোমরা প্রস্তুতি নাও। আমরা ভোরে অ্যাকশনে যাব।” আমাদের সঙ্গে অন্য কোনো গ্রুপের কানেকশন ছিল না। কমান্ডার হিসেবে লিয়াকতই লিয়াজোঁ রাখত মেজর হাফিজ ও আর্মির গ্রুপটির সঙ্গে।
আমার স্ত্রী তখন ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তাকে রেখেই বেরিয়ে যাই। পুরো টিমকে খবর দিলাম। ওই রাতে আমরা এয়ারফোর্সের কোনো গাড়ি ব্যবহার করিনি। কারণ তাতে জানাজানি হওয়ার ভয় ছিল। বাংলাদেশ বিমানের ক্যাপ্টেন ছিলেন কামাল মাহমুদ। যাতায়াতের জন্য তিনি বিমানের গাড়ির ব্যবস্থা করেছিলেন।
সালেক খোকন: সকালেই অ্যাকশনে গেলেন, সঙ্গে কারা কারা ছিলেন?
ইকবাল রশীদ: সকাল আনুমানিক ৬টা ৩০ মিনিট। দুটো এমআই-এইট হেলিকপ্টার ফুললি আর্মড, উইথ রকেটস অ্যান্ড গানস রেডি টু গো ফর অ্যাকশন। আমার সাথে ওঠেন স্কোয়াড্রন লিডার বদরুল আলম বীরউত্তম। কিন্তু সে থাকবে এটা পরিকল্পনায় আগে ছিল না। পুরো কমিউনিকেশন বন্ধ করে দিয়েছিল ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মিজান। আমরা ফ্লাই করে বঙ্গভবনের দিকে যেতে থাকি। এরপর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট জামাল ও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সালাউদ্দিন ওড়ায় দুটো মিগ। বঙ্গভবনের ভেতরে তখন মেজর ডালিম ও নূরসহ (এবিএম নূর চৌধুরী) বঙ্গবন্ধুর খুনিরা। প্রেসিডেন্ট হাউজ ও রেসকোর্সের ওপরে গিয়ে চারবার ট্যাংকগুলোকে গানসাইটে আনি রকেট মারার জন্য। চারবারই আমরা কল করলাম। চারবারই আমাদের কমান্ডার লিয়াকত বললেন– “নো। খালেদ মোশাররফ ডাজন্ট ওয়ান্ট এনি ব্লাডশেড।”
তখনই অবাক হলাম। তাহলে আমরা কি এখানে খেলতে এসেছি! তিনি বললেন– “মিউচুউয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং চলছে। তারা সারেন্ডার করবে। তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নেব।”
সালেক খোকন: আপনারা তখন কী করলেন?
ইকবাল রশীদ: হতাশ হয়ে নেমে আসলাম। এসে জানতে চাইলাম– তারা কি সারেন্ডার করেছে? জানানো হল– না তারা কথা বলছে। জেনারেল ওসমানীর [মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি আতাউল গণি ওসমানী ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রিত্ব এবং আওয়ামী লীগের সদস্যপদ ত্যাগ করেন। ১৯৭৫ সালে মোশতাক আহমেদের মন্ত্রিসভায় তিনি প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন] মধ্যস্থতায় বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ও ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের মধ্যে নেগোসিয়েশন চলছে, ফোর্থ বেঙ্গল হেড কোয়ার্টার্সে। আমরা জানি না ওখানে কী হচ্ছিল।
সালেক খোকন: এয়ারপোর্ট কি তখনও আপনাদের নিয়ন্ত্রণে?
ইকবাল রশীদ: হ্যাঁ, পুরো এয়ারপোর্ট এমওডিসির (মিনিস্ট্রি অব ডিফেন্স কনস্টেবিউলারি) গার্ডদের দিয়ে আমরা ঘিরে রাখি। যাতে কেউ ঢুকতে না পারে। এমওডিসির ভেতর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল বেশি। ফলে এয়ারপোর্ট তখনও আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
সালেক খোকন: তাহলে নির্দেশ না পাওয়ায় আপনারা অ্যাকশনে যেতে পারেননি?
ইকবাল রশীদ: এ কারণেই বলছি এয়ারফোর্স ব্যর্থ হয়নি। আমরা আমাদের দায়িত্ব শতভাগ পালন করেছি। অ্যাকশনে গেলে ওরা সবাই শেষ হয়ে যেত। সে প্রস্তুতি নিয়েই ফ্লাই করেছিলাম। হত্যাকারীদের সঙ্গে দরকষাকষি করছিলেন ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ, নেগোশিয়েট করছিলেন কীভাবে তাদের দেশের বাইরে পাঠাবেন। সব শুনে আমরা শুধু অবাক হয়েছি। কিন্তু সেটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। বিমানবাহিনীর আমরা আমাদের কাজটা সঠিকভাবেই করেছি।
সালেক খোকন: নেমে এসে এয়ারপোর্টেই কি অপেক্ষায় ছিলেন?
ইকবাল রশীদ: হ্যাঁ। কিছুক্ষণ পর লিয়াকত এসে বলে, তাওয়াবকে (মুহাম্মদ গোলাম তাওয়াব) পাওয়া যাচ্ছে না, লেটস অ্যারেস্ট হিম। তিনি তখন এয়ার চিফ। সুলতান মাহমুদ বীরউত্তম সাহেব [এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ। পরে বিমানবাহিনীর প্রধান হয়েছিলেন, এইচ এম এরশাদের সামরিক সরকারে মন্ত্রীও হয়েছিলেন] খবর দিলেন তাওয়াব সাহেব ডিজিএফআই এর চিফ কে এম আমিনুল ইসলামের বাসায় রক্ষিত অবস্থায় আছেন। তখন তাকে ধরতে আমি ও লিয়াকত যাই বেঙ্গল রেজিমেন্টের বেশ কিছু সোলজারসহ।
সালেক খোকন: গ্রেপ্তার করতে কোনো বাধার মুখে পড়েছিলেন?
ইকবাল রশীদ: না। তাওয়াব সাহেবকে আমি গান পয়েন্টে নিয়ে গাড়িতে তুলি। গাড়িতে বসে সে আমার হাত ধরে বলে, “ইকবাল, প্লিজ আমাকে অ্যাম্বাসেডর করে পাঠিয়ে দাও।” আমি বলি, “আমি কে অ্যাম্বাসেডর করার।” ভেবেছিলাম, ফোর্থ বেঙ্গলে নিয়ে তাকে আচ্ছামত ধোলাই করা হবে। কিন্তু সেটা ঘটল না।
সালেক খোকন: কী ঘটল সেখানে?
ইকবাল রশীদ: ফোর্থ বেঙ্গলের সিওর রুমে ঢোকার আগে একটা সিঁড়ি ছিল। ডান দিকের কোনায় দাঁড়ানো রংপুর থেকে আসা ১০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কর্নেল কে এন হুদা বীরবিক্রম [মুক্তিযুদ্ধের ৮ নম্বর সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার। ১৯৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ২৭ নম্বর আসামি করা হয় তাকে], লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ টি এম হায়দার বীরউত্তম [মুক্তিযুদ্ধে দুই নম্বর সেক্টরের সহ-অধিনায়ক ও পরে সেক্টর কমান্ডার] এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাফর ইমাম বীরবিক্রম। হুদা সাহেব ডেকে বললেন, “ইকবাল, এভরিথিং ইজ ওভার। নাথিং ইজ হ্যাপেনড।”
এরপর যা ঘটল, সেটা খুব ইন্টারেস্টিং এবং তা আমার পুরো লাইফ চেইঞ্জ করে দেয়।
তাওয়াব সাহেব আমার গান পয়েন্টে। তিনি সিঁড়ি দিয়ে উঠছেন। পেছনে আমি। উপরে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ এসেই উনাকে একটা স্যালুট দিলেন। এরপর বললেন, “স্যার, দ্য কোরাম ইজ কমপ্লিট নাউ।” এই কথার মানে কী, আমি আজও বুঝিনি।
সালেক খোকন: তাওয়াব সাহেব তখন কী করলেন?
ইকবাল রশীদ: প্রথমে তিনি পেছনে আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালেন। এরপর মুচকি হাসি হেসে সামনে তাকিয়ে খালেদ মোশাররফকে বললেন, “হোয়াট এ ওয়ান্ডারফুল জব ইউ হ্যাভ ডান খালেদ।”
আমি তখন আমার ভবিষ্যৎ পরিণতি উপলব্ধি করার চেষ্টা করলাম।
সালেক খোকন: এরপরই কি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হল?
ইকবাল রশীদ: দেখেন, প্রথম ছিল ওসমানী আর খালেদ মোশাররফ। এরপর তাওয়াব এসে খালেদকে বলে, “তুমি সব করছ, তোমার জেনারেল হওয়া উচিত। খুনোখুনি করে কী করবা, ছেড়ে দাও ওদের।” বিকালে এফ টোয়েন্টি সেভেন জাহাজ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনি মেজর ডালিম, ফারুকসহ সকলকে বার্মা পাঠিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি চলে। পুরো নেগোসিয়েশন ও প্ল্যানিংয়ে ছিলেন ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ, তাওয়াব আর ওসমানী সাহেব।
ওইদিন সকাল ১১টার দিকে খবর পেলাম, জেলে চার নেতা– সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামান খুন হয়েছেন। তারপরও কীভাবে খুনিদের এই দেশে রেখেছিল? হাউ ক্যান খালেদ ডু দ্যাট। কেন তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন? এসব প্রশ্নের উত্তর আজ প্রজন্মকে জানাতে হবে।
সালেক খোকন: কেউ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেনি?
ইকবাল রশীদ: না। তবে এয়ারফোর্সের পাইলট হিসেবে আমরা ছোট একটি পরিকল্পনা করি।
সালেক খোকন: কী পরিকল্পনা?
ইকবাল রশীদ: দুজন পাইলট ঠিক করে রাখলাম। ওরা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের টেকঅফ করে নিয়ে যাবে সৈয়দপুরে। এটাই ছিল প্ল্যান। সেখানে মেজর হারুনুর রশীদ রানওয়েসহ সবকিছু রেডি করে রাখেন। পরিকল্পনা মোতাবেক সব হচ্ছিল। কিন্তু কীভাবে যেন তাওয়াব এটা টের পেয়ে যায়। ডালিম, ফারুকসহ খুনিদের নিয়ে ফ্লাই করার ঠিক আগ মুহূর্তে তাওয়াব এসে বলে, ‘ক্রু চেঞ্জ’। আমরা খুব অবাক হই। ক্রু কাকে বসানো হল জানেন? ফারুকের ব্রাদার ইন ল আশফাককে। এভাবেই ৩ নভেম্বর সন্ধ্যার দিকে বঙ্গবন্ধুর খুনিরা নিরাপদে ঢাকা থেকে বার্মা হয়ে থাইল্যান্ড চলে যায়। আমাদের চোখের সামনে, মুখে জুতা মেরে খুনিরা চলে গেল বিদেশে। এর দায় কাকে দেবেন বলেন?
সালেক খোকন: এরপর তো ৭ নভেম্বর এল, কী ঘটেছিল ক্যান্টনমেন্টে?
ইকবাল রশীদ: ওইদিন ক্যান্টনমেন্টে ফায়ারিং শুরু করে কর্নেল তাহেরের (কর্নেল আবু তাহের বীরউত্তম) গ্রুপ। আমার বাসায়ও অ্যাটাক হয়। তার আগেই পরিবার নিয়ে সরে পড়ি এক বন্ধুর বাড়িতে। ওই দিনই গুলি করে মেরে ফেলা হয় ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ টি এম হায়দার ও কর্নেল কে এন হুদাকে। তাওয়াব সাহেব তখন তুঙ্গে। কারণ জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তিনি হাত মিলিয়েছেন।
সালেক খোকন: অ্যারেস্ট হলেন কীভাবে?
ইকবাল রশীদ: ৭-৮ দিন পর খবর আসে, এয়ার চিফ তাওয়াব সাহেব কথা বলতে চান। প্রথমে অফিসারদের স্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানান পদ্মা গেস্ট হাউজে। তাদের উপস্থিতিতেই আমাদের ডেকে নিয়ে অ্যারেস্ট করেন কোর্ট মার্শালের জন্য।
সালেক খোকন: কোর্ট মার্শালের দায়িত্বে ছিলেন কারা?
ইকবাল রশীদ: ৫ জন জাজ ছিলেন, সবাই রিপ্যাট্রিয়েটেড (পাকিস্তান ফেরত) অফিসার। হামিদুর রহমান, সাইফুল আজম, হাবিবুর রহমান– এরা ছিলেন জাজ। আমরা এটাকে বলি ক্যাঙ্গারু কোর্ট। সিদ্ধান্ত হয়েই আছে, শুধু আমাদের ওরা সাজা শোনাবে।
সালেক খোকন: কী শাস্তি দেওয়া হল আপনাদের?
ইকবাল রশীদ: প্রথমে ট্রায়াল হয়। আমাদের কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার লিয়াকত আলী খানকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। পরে সেটা কমিয়ে যাবজ্জীবন করে। আমাকে ও বদরুল আলম বীর উত্তমকে যাবজ্জীবন, বাকিদের ৫ বছর, দুই বছর, এক বছর করে জেল দেওয়া হয়। এরপরই পাঠিয়ে দেওয়া হয় ঢাকা জেলে, সেল নম্বর ০১ এ।
সালেক খোকন: পরে ছাড়া পেলেন কীভাবে?
ইকবাল রশীদ: জিয়াউর রহমান কোনো এক কারণে তাওয়াবকে দেশ থেকে বের করে দিলে এয়ার চিফ হন মোহাম্মদ খাদেমুল বাশার সাহেব। একাত্তরে সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। ফলে ১৯৭৬ সালের মে মাসের দিকে আমাদের জেল থেকে বের করে আনেন তিনি।
সালেক খোকন: ৩ নভেম্বর ব্যর্থ হওয়ার কারণ কী বলে মনে করেন?
ইকবাল রশীদ: অ্যাবসোলিউটলি ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ। তাওয়াব এবং ওসমানীর দ্বারা তিনি ম্যানিপ্যুলেটেড হন। সময়ক্ষেপণ করেছেন অনেক। তিনি কি মার্শাল ল ডিক্লেয়ার করতে চেয়েছেন? কিন্তু সেটা তো আমাদের প্ল্যানে ছিল না। কর্নেল শাফায়াত জামিলের কাছে আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জানতে চেয়েছি খালেদ মোশাররফ আসলে কী চেয়েছিলেন? তিনিও জানেন না। তার সাথেও নাকি কোনো কথা বলেননি। তাহলে কেন তিনি ওই রেসপনসিবিলিটি নিলেন? কেন তিনদিন রেডিও বন্ধ রাখা হয়েছিল? কেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে প্রেসিডেন্ট করেছিলেন? খালেদ মোশাররফ কেন কিছুই ডিক্লেয়ার করলেন না বরং নিজের জীবনটাও নষ্ট করলেন। হুদা ও হায়দারের মত অফিসার তার সঙ্গে থাকার কারণেই নিহত হন। তিনি ইয়ং ট্রুপসের ওপর ফেইথ রাখতে পারেননি। এ কারণে আর্মি থেকে শাফায়াত জামিল, মেজর হাফিজ, ক্যাপ্টেন তাজ, ক্যাপ্টেন হাফিজ, দোস মোহাম্মদসহ আরও অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন।
সালেক খোকন: আপনারা চাকরির বেনিফিট কি পেয়েছিলেন?
ইকবাল রশীদ: এখনও পাইনি। জেল থেকে ফিরে ডিসমিসড অফিসার হিসেবেই প্রথম কিছুদিন ঘোরাফেরা করি। পরে বিদেশে চাকরি পেয়ে চলে যাই। প্রথমে আমাদের বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয় ১৯৭৫ সালে। পরে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত সার্ভিস কন্টিনিউ করা হয়। সে হিসেবে পুরো পেনশন বেনিফিট আমরা পাই। কিন্তু এর পরে একটা চিঠি জারি করা হয়, যেখানে লেখা ছিল কোনো বেনিফিট আমরা পাব না। ফলে কোনো পেনশন বা বেনিফিট আজ পর্যন্ত আমরা পাইনি। আমি মনে করি, আমাদের প্রতি অন্যায় করা হয়েছে এবং এখনও তা বলবৎ আছে।
সালেক খোকন: ৩ নভেম্বরে সেনাবাহিনীর যারা (অভ্যুত্থানচেষ্টায়) যুক্ত ছিলেন, চাকরিতে তাদেরও কি একই অবস্থা হয়েছে?
ইকবাল রশীদ: না। ওইদিন যদি এয়ারফোর্স মুভ না করত, আর্মি অগ্রসর হতে পারত না। তাদের ফাইট করার ক্ষমতাও ছিল না। অথচ দেখেন এ ঘটনার পরও আর্মির সবাই পেনশন পাচ্ছে। এয়ারফোর্সের কেউ পাচ্ছি না। তাদের (আর্মি) শাস্তিও হয় নাই। হয়েছে শুধুই এয়ারফোর্সের সদস্যদের।
সালেক খোকন: ৩ নভেম্বরকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
ইকবাল রশীদ: এয়ারফোর্স সবসময় ছিল বঙ্গবন্ধুর ফেভারিট। তাই ডিফেন্স থেকে ৩ নভেম্বর ছিল বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদ, যা করেছিল এয়ারফোর্স পাইলটরা। সফল হতে না পারলেও ক্ষমতা ও সুবিধা লাভের কলঙ্ক এয়ারফোর্স পাইলটরা গায়ে লাগাননি। এটাই গর্বের বলে মনে করি।
সালেক খোকন: সরকারের কাছে আপনাদের কোনো চাওয়া আছে?
ইকবাল রশীদ: ৩ নভেম্বরের ইতিহাসটা সঠিকভাবে যেন উঠে আসে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সামরিক বাহিনীতে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা ও হত্যার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হোক। গবেষণার মাধ্যমে সকল সত্য উন্মোচিত হওয়া প্রয়োজন। আল্লাহর দোহাই, আমরা এয়ারফোর্স পাইলটরা আর্থিকভাবে সবাই ভালো আছি। কিন্তু এয়ারফোর্স আমাদের কখনও ডাকে না। ৩ নভেম্বরে যুক্ত এয়ারফোর্সের সবাই পেনশন পাব– এটাই তো মনের সান্ত্বনা। এয়ারফোর্স তাদের অনুষ্ঠানে একজন এক্স-এয়ারফোর্স হিসেবে দাওয়াত করে সম্মানিত করবে– এই চাওয়াটা কি খুব বেশি কিছু?
সালেক খোকন: এ বিষয়ে সরকার বা ঊর্ধ্বতন কাউকে কি জানিয়েছেন?
ইকবাল রশীদ: বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নানের সঙ্গে এ নিয়ে বসেছিলাম। তিনিও আন্তরিকতার সঙ্গে বিষয়গুলো দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। এছাড়া ৩ নভেম্বরের এয়ারফোর্স পাইলটদের বিষয়টি যদি বঙ্গবন্ধু কন্যা পর্যন্ত যায়, আমি আশাবাদী তিনিও উদ্যোগ নেবেন।
সালেক খোকন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ইকবাল রশীদ: ধন্যবাদ আপনাকেও।
লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে, প্রকাশকাল: ০৩ নভেম্বর ২০২২
© 2022, https:.