রহস্যঘেরা এক জিম্মি অভিযান
ভারতীয় হাইকমিশনারকে জিম্মি করার কেন ওই অভিযান? কীভাবে পরিকল্পনা হয় সেটির? এমন নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কর্নেল তাহেরের ছোট ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের (বীরপ্রতীক) মুখোমুখি হন লেখক ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক সালেক খোকন
পঁচাত্তরের নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে অভ্যুত্থান আর পাল্টা অভ্যুত্থান বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয় সামরিক শাসনের অন্ধকার এক সময়ের দিকে। সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে যারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের প্রতিশোধ নেওয়ার কথা ভাবছিলেন, তাদেরই একটি অংশ ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে ৩ নভেম্বর ঘটনাপ্রবাহের গতিপথ পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা করেন অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। ফলে বন্দি হন সেই সময়ের সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান। কিন্তু তিন দিনের মাথায় ৭ নভেম্বর পাল্টা অভ্যুত্থানে নিহত হন খালেদ মোশাররফ। কর্নেল তাহের ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) নেতৃত্বে সেই ঘটনাপ্রবাহ জিয়াকে নিয়ে যায় ক্ষমতার কেন্দ্রে। যে অভ্যুত্থানের কারণে নিশ্চিত মৃত্যু থেকে রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়েছিলেন জিয়া, উল্টো সেই অভ্যুত্থান ঘটানোর অভিযোগে ২৪ নভেম্বর কর্নেল তাহের, মেজর জলিলসহ প্রায় সব শীর্ষস্থানীয় জাসদ নেতাকে গ্রেপ্তার করেন তিনি। ২৬ নভেম্বর সকালে কর্নেল তাহেরসহ জাসদ নেতাদের মুক্তির দাবিতে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার সমর সেনকে জিম্মি করার চেষ্টা করেন জাসদ গণবাহিনীর ছয় সদস্যের সশস্ত্র একটি দল। কিন্তু তারা ব্যর্থ হন। ঘটনাস্থলেই চারজন নিহত হন এবং আহত অবস্থায় বেঁচে যান দুজন সৈয়দ বাহারুল হাসান সবুজ ও ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল। বেঁচে যাওয়া দুজনের মধ্যে সবুজের বক্তব্য বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে উঠে এলেও ওইদিনের ঘটনা ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের ভাষ্য আগে বিশদ জানা যায়নি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল (বীরপ্রতীক) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত নেত্রকোনা-৫ আসনের (পূর্বধলা) সংসদ সদস্য। একাত্তরে তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন এগারো নম্বর সেক্টরে। এ সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল আবু তাহের (তখন মেজর ছিলেন) তার বড় ভাই। তাদের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার কাজলা গ্রামে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন একাদশ শ্রেণির ছাত্র। শেখ কামালের হাত ধরেই তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ছাত্রাবস্থাতে গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন এ বীর মুক্তিযোদ্ধা।
আলাপচারিতার শুরুতেই কথা হয় জাসদ ও গণবাহিনী গঠন প্রসঙ্গে। বেলাল নিজের মত তুলে ধরেন ঠিক এভাবে ‘দেখুন, আমি ও বাহার জাসদে যুক্ত ছিলাম না। কিন্তু কর্নেল তাহের, আনোয়ার ভাই, সাঈদ ভাইদের মতো মুক্তিযোদ্ধারা কেন জাসদ করল সেটাও চিন্তায় আনা দরকার। বঙ্গবন্ধু উদ্যোগ নিলে হয়তো জাসদ হতো না। তখন উনাকেও ঘিরে ছিল মোশতাক চক্র। আবার সেই সময় জাসদ যে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের কথা বলত সেটা অনেকের কাছেই পরিষ্কার ছিল না।’
জাসদ করতেন না, তাহলে জাসদের কার্যক্রমে কেন অংশ নিয়েছিলেন?
‘পারিবারিকভাবে তো যুক্ত ছিলাম। কিন্তু চিন্তাভাবনা করে অফিশিয়ালি যুক্ত থাকা হয়নি। আমি ও বাহার অফিশিয়ালি জাসদ-গণবাহিনীর সঙ্গেও যুক্ত ছিলাম না। মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম। অপারেশন পরিকল্পনা, এক্সপ্লোসিভ ও অস্ত্র চালানোর ট্রেনিং ছিল। শুধুমাত্র ভাই কর্নেল তাহেরকে সেভ করতেই যুক্ত হয়েছিলাম। বড় ভাইকে মুক্ত করতে জীবন দেওয়ার শপথও নিয়েছিলাম। আমাদের কাজ করার ক্ষেত্রেও জাসদ বা গণবাহিনীর সদস্যদের কোনো আপত্তি ছিল না তখন।’
পঁচাত্তরের ২৬ নভেম্বর আপনারা ভারতীয় হাইকমিশনে অভিযান চালান। ওই অভিযানে আপনি আহতও হন এবং আপনার বড় ভাই শাখাওয়াত হোসেন বাহারসহ চারজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এমন অভিযানের প্রস্তুতি কি আগেই ছিল?
‘একটা সুইসাইডাল স্কোয়াড (আত্মঘাতী দল) আগেই গঠন করা ছিল।’
কেন?
‘বড় কোনো নেতাকে যদি ধরে নিয়ে যায়। তাহলে ওই স্কোয়াডটা কাজ করবে, বিদেশি কাউকে জিম্মি করে তাকে ছাড়ানোর জন্য। এ ধরনের একটা চিন্তা আগেই ছিল। মূলত আনোয়ার ভাই (আনোয়ার হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি) ছয়জনের ওই স্কোয়াড তৈরি করে দেন। তখন তিনি ছিলেন জাসদ-গণবাহিনীর ঢাকা সিটির কমান্ডার।’
সুইসাইডাল স্কোয়াডে কারা কারা ছিলেন?
‘ছয়জনের ছদ্মনাম ছিল এমন আসাদ, বাচ্চু, মাসুদ, হারুন, আমি ফিরোজ আর সবুজ।’
কার কোন নাম?
‘শাখাওয়াত হোসেন বাহারের ছদ্মনাম ছিল আসাদ, নজরুল ইসলামের ছদ্মনাম বাচ্চু, মাসুদ উদ্দিনের নাম মাসুদ, হারুনুর রশিদের ছদ্মনাম ছিল হারুন। আমার নাম ফিরোজ আর সৈয়দ বাহারুল হাসান সবুজের ছদ্মনাম সবুজই ছিল।’
অভিযানের লক্ষ্য কী ছিল?
‘একজন অ্যাম্বাসেডরকে (রাষ্ট্রদূত) জিম্মি করার মাধ্যমে কর্নেল তাহেরসহ জাসদ নেতাদের মুক্ত করতে জিয়া সরকারকে বাধ্য করানোর পরিকল্পনা ছিল। আগেই টার্গেট ছিলেন বোস্টার (ডেভিস ইউজিন বোস্টার), যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন অ্যাম্বাসেডর। তাকে জিম্মি করতে রেইকিও সম্পন্ন করা হয়। ধানম-ি মাঠের উল্টো দিকে ইউনিসেফের একটি অফিস ছিল। ওখানেই বোস্টার থাকতেন। প্রতিদিন সেখান থেকেই যেতেন আদমজী বিল্ডিংয়ে। আমেরিকান অ্যাম্বাসি তখন ছিল ওখানে। মোটরসাইকেলে তাকে ফলো (অনুসরণ) করতাম। শুনেছি তিনি ছিলেন কমান্ডো। সেজন্য তার অ্যাকটিভিটিগুলো (গতিবিধি) ভালোভাবে জেনে নিই। বিকেল বেলা তিনি স্কোয়াশ খেলতে যেতেন ঢাকা ক্লাবে। গ্যালারিতে বসে তার খেলাও দেখেছি। এভাবে তাকে চোখে চোখে রাখি। আর নির্দেশের অপেক্ষায় থাকি।’
তাহলে কেন ভারতীয় হাইকমিশনে অপারেশন (অভিযান) করলেন?
‘পুরো পরিকল্পনাটি ছিল আনোয়ার ভাইয়ের। একদিন তিনি ডেকে বললেন অপারেশন করতে। আমরা তো আগেই প্রস্তুত, বোস্টারকে জিম্মি করতে। উনি বললেন, বোস্টার নয়, ইন্ডিয়ান হাইকমিশনার সমর সেনকে করতে হবে। শুনে থমকে গেলাম। বলে কি! কর্নেল তাহের সবসময় বলতেন, কোনো কারণে ভারতীয় অ্যাম্বাসি অ্যাটাক করবা না। কারণ ওরা প্রতিবেশী দেশ। এতে ইন্টারভেশন (হস্তক্ষেপ) হয়ে যেতে পারে। ওই অজুহাতে ওরা ভেতরে ঢুকে পড়তে পারে।’
‘আনোয়ার ভাইকে বলে ফেললাম, না, এটা করা ঠিক হবে না। তাছাড়া সমর সেনকে আমরা কোনো সময় রেইকি করিনি।’ উনি বললেন, ‘রেইকি করো। সময় দিলাম একদিন’। বললাম, ‘একদিনের রেইকিতে কোনো অপারেশন করিনি।’ তিনি বললেন, ‘করতে হবে, ইটস এন অর্ডার। ডু ইট’।
এ বিষয়ে তার কি কোনো ব্যাখ্যা ছিল?
‘ছিল। ৭ নভেম্বরের পর জাসদের ওপর একটা কালার দিয়ে দেওয়া হয় যে, এরা ইন্ডিয়ার (ভারত) দালাল। মানুষ তা বিশ্বাসও করত। আনোয়ার ভাইয়ের মনে হয়েছে, কর্নেল তাহেরকে মুক্ত করার অংশ হিসেবেই ইন্ডিয়ান হাইকমিশনে অপারেশন করলে ওই অপবাদটা কমবে। এছাড়া তিনি বোঝালেন, ইন্ডিয়ান হাইকমিশনারকে যদি জিম্মি করা হয় তাহলে কেউ ধারণাও করতে পারবে না যে এটা জাসদের কাজ।’
রেইকি কীভাবে করলেন?
‘ইন্ডিয়ান হাইকমিশন তখন ছিল ধানম-ি দুই নম্বরে। সহযোদ্ধা মাসুদের একটা কানেকশন (সংযোগ) ছিল সেখানে। অ্যাম্বাসির সেক্রেটারি মি. মুখীর সঙ্গে তার পরিচয় ছিল। ফলে সে খুব সহজে গিয়ে রেইকিটা করে আসে। ফিরে এসে জানাল, ‘ছয়জনকে আমাদের ওভারকাম করতে হবে। সমর সেনের সঙ্গে চারজন সিকিউরিটি গার্ড থাকে। তাদের হাতে অস্ত্র থাকে ইন্ডিয়ান এসএমজি। সমর সেন গাড়ি নিয়ে আসতেন মেয়েসহ। তাকে নামিয়ে দিয়েই মেয়েকে নিয়ে গাড়ি চলে যেত। পেছনে আরেকটি গাড়িতে থাকত গার্ডরা।’
আপনাদের পরিকল্পনাটি কেমন ছিল?
‘পরিকল্পনা ছিল সমর সেনকে ভেতরে নিয়ে সমস্ত হাইকমিশনের কন্ট্রোল (নিয়ন্ত্রণ) আমাদের হাতে নিয়ে নেওয়ার। ছয়জনের স্কোয়াডটি তিনজন করে দুটো ভাগে ভাগ হব। তিনজন গিয়ে দাঁড়াবে ইন্ডিয়ান হাইকমিশনের উল্টোদিকে, জার্মান কালচারাল সেন্টারের কাছে। সমর সেনের গাড়ির পিছু পিছু অন্য তিনজন ভেতরে ঢুকবে। তখন পেছনের তিনজন এসে জয়েন করবে। এভাবেই আমরা ভেতরে ঢুকে যাব।’
পরিকল্পনা মতোই কি সব ঘটল?
‘হ্যাঁ। ২৬ নভেম্বর ১৯৭৫। সকাল ১০টার দিকে অ্যাকশনে গেলাম। আমি, বাহার ও সবুজ গেইটের সামনে, অ্যাডভান্স পার্টিতে (অগ্রগামী দল)। অস্ত্র ছিল পিস্তল ও রিভলবার। একটা মার্সিডিজ গাড়িতে করে সমর সেন গেইটের ভেতরে ঢুকেন। কাজের অজুহাতে আমরাও ভেতরে যাই। তিনি গাড়ি থেকে নামেন। পেছন থেকে আমাদের তিনজনের গ্রুপ এসে চারজন সিকিউরিটি গার্ডের স্টেনগানগুলো নিয়ে নেয়। আমরা তা দেখলাম। সমর সেন বেশ লম্বা। দোতলায় উঠতে উনি সিঁড়িতে পা রাখলেন। তখনই আমি এক পাশে তার হাত ধরে রিভলবার ঠেকালাম। অন্যপাশে সবুজ ও পেছনে বাহারও রিভলবার ঠেকায়। তখনই আমি বললাম, ‘মিস্টার সেন টেল ইওর ম্যান নট টু ফায়ার। আদারওয়াইজ, আই শ্যাল কিল ইউ’। উনি এদিক ওদিকে তাকিয়ে কাঁপছেন। লম্বা হওয়াতে তাকে আমরা ফিজিক্যালি গ্রিপে (কব্জা) পাচ্ছিলাম না। ফলে এক সময় তিনি পড়ে যান।’
“ঠিক তখনই একটা সিঙ্গেল শট ফায়ার হয়। তাকিয়ে দেখি চারপাশে ‘ব্লাকক্যাটে’ ভরা। ভেতরের রুম থেকে অস্ত্র হাতে আরও লোকজন বের হচ্ছে। চারজন সিকিউরিটি ছাড়াও সেখানে যে উনিশ জন ‘ব্ল্যাকক্যাট’ সৈন্য ছিল এটা আমাদের জানা ছিল না। মূলত বঙ্গবন্ধু হত্যার পরই অ্যাম্বাসিতে এই ‘ব্লাকক্যাট’ দেয় ইন্ডিয়ান গভর্নমেন্ট। তারা লুকিয়ে থাকত ভেতরে। পেছন থেকে ওরা প্রথম ফায়ার করে বাহারকে। সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। গুলি খেয়েও বাহার বলতে থাকে, ‘ডোন্ট কিল সমর সেন’। কারণ তাকে মারলে যদি ইন্ডিয়া ইন্টারভেশন করে। এ চিন্তাটা তখনো বাহারের ছিল।”
‘হাইকমিশনে ঢোকার সময় সাদা পোশাকে যে দারোয়ান ছিল তার হাতেও দেখি পিস্তল। সেও ফায়ার করছিল। অনেক গুলি চলছে। হঠাৎ মনে হলো কেউ আমাকে জোরে ধাক্কা দিয়েছে। অনুভব করলাম একটা গুলি এসে লেগেছে ডান কোমরে। সবুজের শরীরের নানা জায়গায়ও লাগে ৬-৭টা বুলেট। প্রচ- ব্লিডিং হচ্ছিল ওর। ওইসময় সমর সেনেরও গুলি লাগে। নিচে পড়ে থাকে আমাদের বাকি চারজনের ডেড বডি। অর্ধেক দোতলা থেকে আমরাও সমর সেনসহ এসে পড়ি নিচে। সিকিউরিটি গার্ডরা দ্রুত তুলে নেয় তাকে।’
এরপর কী ঘটল?
‘সবুজকে নিয়ে আমি একটা রুমে আশ্রয় নিই। রুমের দরজার পাশে চিকন গ্লাস দেওয়া। ওইদিক দিয়ে ফায়ার করে ইন্ডিয়ান সিকিউরিটি গার্ড। আর জানালা দিয়ে ফায়ার করছিল বাংলাদেশের পুলিশ। এত গুলি আসছিল যে রুমের জিনিসগুলো উড়ে উড়ে যাচ্ছিল। সেখানে আরও দুজন বৌদ্ধ লোক ছিল। কোনো কাজে এসেছিল তারা। তাদের নিয়ে এক কোনায় লুকিয়ে থাকি আমরা। চিন্তা তখন একটাই বাঁচতে হবে।’
‘রিভলবারটা কার্পেটের নিচে ফেলে দিই। ২৫-৩০ মিনিট পর গুলি থামতেই সারেন্ডার (আত্মসমর্পণ) করি। প্রথমে স্বীকার করিনি। বলেছিলাম আমরা সাধারণ লোক, ভিসার জন্য এসেছি। বাইরে যেতেই দেখি আর্মি চলে এসেছে। ওরা পিকআপ ভ্যানে আমাদের তুলে নেয় সিএমএইচে (সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল)। হাইকমিশনে অপারেশন সাকসেসফুল (সফল) হলে রেডিওতে কী বক্তব্য দেওয়া হবে সেটাও রাখা ছিল পেছনের পকেটে। যাওয়ার পথে কৌশলে সেটি ফেলে দিই। আমার কোমর থেকে গুলি বের করে আনা হয় সিএমএইচে। পরে সেখানেই গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই মামলায় পাঁচ বছরের সাজা হয়েছিল আমার আর সবুজের। জেল খেটেছি কোনো আফসোস নেই। কিন্তু তাহের ভাইকে তো মুক্ত করতে পারলাম না। বরং বাহারের মতো বন্ধু ও ভাইকে হারিয়েছি ওইদিন। সে স্মৃতি এখনো আমাকে কাঁদায়। ওই অপারেশনটা ছিল একটি মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত।’
ওই ঘটনায় কর্নেল তাহেরের মত কি জানতে পেরেছিলেন?
‘তাহের ভাইয়ের সঙ্গে শেষ দেখা হয় কারাগারে, আট (নম্বর) সেলে। তার ফাঁসির আগেরদিন। ভারতীয় হাইকমিশন অ্যাটাকের বিষয়টিতে উনি বেশ বিরক্ত হয়েছিলেন। এক কথায় বললেন, ‘ইউ হ্যাভ ডান এ গ্রেট ব্লান্ডার। কাজটা ঠিক হয়নি।’
কর্নেল তাহেরকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
‘মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল তাহের শতভাগ সফল। জাসদে তার যেটুকু দায়িত্ব ছিল, তার যে অ্যাসাইনমেন্ট (কর্তব্য) ছিল, তিনি তা শতভাগ পালন করেছিলেন। কিন্তু জাসদের বাকি নেতারা তা করেননি। ফলে আমরা আমাদের ভাইকে হারিয়েছি। ফাঁসির মঞ্চে তিনি হাসিমুখে গিয়েছিলেন। আমার মনে হয়, কর্নেল তাহের মৃত্যুটাকে আলিঙ্গন করেছেন। হয়তো তিনি ভেবেছেন যে তার মৃত্যুর মধ্য দিয়েই উনি যে স্বপ্নটা দেখেছেন সেটা প্রজন্মের কাছে বেঁচে থাকবে।’
লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক দেশ রূপান্তরে, প্রকাশকাল: ২৬ নভেম্বর ২০২২
© 2022, https:.